বিশ্বাস, দেবব্রত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''বিশ্বাস, দেবব্রত '''(১৯১১-১৯৮০) গায়ক। ১৯১১ সালে ২০ আগস্ট কিশোরগঞ্জে তাঁর জন্ম। ছেলেবেলায় তিনি মায়ের কাছে প্রধানত ভক্তিমূলক রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখেন। পরে পড়াশুনার জন্য কলকাতায় গেলে হিমাংশু দত্ত, অনাদিকুমার দস্তিদার, পঙ্কজ মল্লিক এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মত প্রখ্যাত গায়ক ও সুরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সঙ্গীত শিক্ষার সুযোগ পান। | '''বিশ্বাস, দেবব্রত''' (১৯১১-১৯৮০) গায়ক। ১৯১১ সালে ২০ আগস্ট কিশোরগঞ্জে তাঁর জন্ম। ছেলেবেলায় তিনি মায়ের কাছে প্রধানত ভক্তিমূলক রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখেন। পরে পড়াশুনার জন্য কলকাতায় গেলে হিমাংশু দত্ত, অনাদিকুমার দস্তিদার, পঙ্কজ মল্লিক এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মত প্রখ্যাত গায়ক ও সুরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সঙ্গীত শিক্ষার সুযোগ পান। | ||
গম্ভীর ও উদাত্ত কণ্ঠের অধিকারী দেবব্রত বিশ্বাস ব্যতিক্রমী নিজস্ব গায়কীর অধিকারী ছিলেন। তাঁর প্রকাশভঙ্গি, সূক্ষ্ম নাটকীয়তা ও প্রাণবন্ত তালে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আরোপ করে তিনি গানে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। এভাবে বহু অপরিচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর কণ্ঠে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। | গম্ভীর ও উদাত্ত কণ্ঠের অধিকারী দেবব্রত বিশ্বাস ব্যতিক্রমী নিজস্ব গায়কীর অধিকারী ছিলেন। তাঁর প্রকাশভঙ্গি, সূক্ষ্ম নাটকীয়তা ও প্রাণবন্ত তালে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আরোপ করে তিনি গানে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। এভাবে বহু অপরিচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর কণ্ঠে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। | ||
১০ নং লাইন: | ১০ নং লাইন: | ||
প্রচলিত রীতি অগ্রাহ্য করে দেবব্রত বিশ্বাস গাইতেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। তাঁর আত্মজীবনী ব্রাত্যজনের রুদ্ধ সঙ্গীত (১৯৭৮) গ্রন্থে দেখা যায়, তিনি দেশীবিদেশী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতেন বলে রক্ষণশীল সঙ্গীত শিল্পীরা তাঁর কঠোর সমালোচনা করেন। ফলে বিশ্বভারতীর সঙ্গীত পর্ষদ থেকে তাঁর রেকর্ড অনুমোদন বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করা থেকে বিরত থাকেন। | প্রচলিত রীতি অগ্রাহ্য করে দেবব্রত বিশ্বাস গাইতেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। তাঁর আত্মজীবনী ব্রাত্যজনের রুদ্ধ সঙ্গীত (১৯৭৮) গ্রন্থে দেখা যায়, তিনি দেশীবিদেশী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতেন বলে রক্ষণশীল সঙ্গীত শিল্পীরা তাঁর কঠোর সমালোচনা করেন। ফলে বিশ্বভারতীর সঙ্গীত পর্ষদ থেকে তাঁর রেকর্ড অনুমোদন বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করা থেকে বিরত থাকেন। | ||
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে দেবব্রত বিশ্বাস শরণার্থীদের নানাভাবে সহায়তা করেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তাঁর গানের রয়্যাল্টির পুরো অর্থ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন। ১৯৮০ সালের ১৮ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। | বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে দেবব্রত বিশ্বাস শরণার্থীদের নানাভাবে সহায়তা করেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তাঁর গানের রয়্যাল্টির পুরো অর্থ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন। ১৯৮০ সালের ১৮ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। [গোলাম মুরশিদ] | ||
[গোলাম মুরশিদ] | |||
[[en:Biswas, Debabrata]] | [[en:Biswas, Debabrata]] |
১০:৪৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
বিশ্বাস, দেবব্রত (১৯১১-১৯৮০) গায়ক। ১৯১১ সালে ২০ আগস্ট কিশোরগঞ্জে তাঁর জন্ম। ছেলেবেলায় তিনি মায়ের কাছে প্রধানত ভক্তিমূলক রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখেন। পরে পড়াশুনার জন্য কলকাতায় গেলে হিমাংশু দত্ত, অনাদিকুমার দস্তিদার, পঙ্কজ মল্লিক এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মত প্রখ্যাত গায়ক ও সুরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সঙ্গীত শিক্ষার সুযোগ পান।
গম্ভীর ও উদাত্ত কণ্ঠের অধিকারী দেবব্রত বিশ্বাস ব্যতিক্রমী নিজস্ব গায়কীর অধিকারী ছিলেন। তাঁর প্রকাশভঙ্গি, সূক্ষ্ম নাটকীয়তা ও প্রাণবন্ত তালে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আরোপ করে তিনি গানে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। এভাবে বহু অপরিচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর কণ্ঠে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
দেবব্রত বিশ্বাস ১৯৩০-এর দশকের প্রথমদিকে কনক বিশ্বাসের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে দুটি দেশাত্মবোধক রবীন্দ্রসঙ্গীতের গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশ করেন। ১৯৩৫ সালে স্বয়ং কবির নির্দেশনায় তিনি দুটি নজরুলগীতি রেকর্ড করেন। পরে হিজ মাস্টার্স ভয়েস-এর জন্য রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনেকগুলি ডিস্ক প্রকাশ করেন। দীর্ঘ বিরতির পর রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি একটি কোম্পানির অধীন রেকর্ড প্রকাশ শুরু করেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া তিনি অনেক গণসঙ্গীতও গেয়েছেন। তিনি ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি দুভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এ দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
দেবব্রত বিশ্বাস যখন সঙ্গীতজগতে প্রবেশ করেন তখন মিহি কণ্ঠই সঙ্গীতের জন্য আদর্শ ও জনপ্রিয় বলে বিবেচিত হত। কিন্তু পঙ্কজ মল্লিক ও হেমন্তকুমার মুখোপাধ্যায়সহ তিনি গুরুগম্ভীর ও উদাত্ত কণ্ঠকে গানের গলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় করেন। এ তিন শিল্পী মিলে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে শহরের শিক্ষিতদের বৈঠকখানা থেকে মুক্ত করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন।
প্রচলিত রীতি অগ্রাহ্য করে দেবব্রত বিশ্বাস গাইতেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। তাঁর আত্মজীবনী ব্রাত্যজনের রুদ্ধ সঙ্গীত (১৯৭৮) গ্রন্থে দেখা যায়, তিনি দেশীবিদেশী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতেন বলে রক্ষণশীল সঙ্গীত শিল্পীরা তাঁর কঠোর সমালোচনা করেন। ফলে বিশ্বভারতীর সঙ্গীত পর্ষদ থেকে তাঁর রেকর্ড অনুমোদন বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করা থেকে বিরত থাকেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে দেবব্রত বিশ্বাস শরণার্থীদের নানাভাবে সহায়তা করেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তাঁর গানের রয়্যাল্টির পুরো অর্থ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন। ১৯৮০ সালের ১৮ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। [গোলাম মুরশিদ]