ভূসংস্থান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৪ নং লাইন: | ৪ নং লাইন: | ||
দক্ষিণ-পূর্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পার্বত্য এলাকা, উত্তর-পূর্বে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়সমূহ এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত উচ্চভূমি স্বল্প উচ্চতাবিশিষ্ট। চট্টগ্রামের পাহাড়সমূহ দেশের একমাত্র উল্লেখযোগ্য পাহাড়শ্রেণী। এই পাহাড়শ্রেণী অত্যন্ত খাড়াভাবে সরু শৈলশিরা রেখা (গড় প্রশস্ততা ৩৬ মি) নিয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এদের উচ্চতার বিস্তার ৬০০ থেকে ১০০০ মি পর্যন্ত। পাহাড়ি শৈলশিরার মাঝে মাঝে রয়েছে উপত্যকাসমূহ, যেগুলো সাধারণত উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত। চট্টগ্রামের পাহাড়সমূহের পশ্চিমে সমুদ্র তটরেখার সমান্তরালে সরু, আর্দ্র উপকূলীয় সমভূমি অবস্থিত। | দক্ষিণ-পূর্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পার্বত্য এলাকা, উত্তর-পূর্বে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়সমূহ এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত উচ্চভূমি স্বল্প উচ্চতাবিশিষ্ট। চট্টগ্রামের পাহাড়সমূহ দেশের একমাত্র উল্লেখযোগ্য পাহাড়শ্রেণী। এই পাহাড়শ্রেণী অত্যন্ত খাড়াভাবে সরু শৈলশিরা রেখা (গড় প্রশস্ততা ৩৬ মি) নিয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এদের উচ্চতার বিস্তার ৬০০ থেকে ১০০০ মি পর্যন্ত। পাহাড়ি শৈলশিরার মাঝে মাঝে রয়েছে উপত্যকাসমূহ, যেগুলো সাধারণত উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত। চট্টগ্রামের পাহাড়সমূহের পশ্চিমে সমুদ্র তটরেখার সমান্তরালে সরু, আর্দ্র উপকূলীয় সমভূমি অবস্থিত। | ||
'''ভূসংস্থানিক মানচিত্র''' (Topographic map) ভূ-পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনকারী মানচিত্র, যাতে সমোন্নতি রেখা, ছায়াবৃতকরণ (shading), সমান্তরাল রেখা অথবা অন্য কোন চিত্রলৈখিক কৌশলের মাধ্যমে ভূ-প্রকৃতি, উদ্ভিজ্জের বণ্টন, জলাশয়ের অবস্থান অথবা ভূসংস্থান উপস্থাপন করা হয়। বড় স্কেলের ভূসংস্থানিক মানচিত্রে হাটবাজার, পেট্রল পাম্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ রাস্তাঘাট প্রভৃতির অবস্থানও প্রদর্শিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর হচ্ছে সারাদেশে জরিপকার্য পরিচালনা এবং ভূসংস্থানিক মানচিত্র প্রস্ত্তত ও উন্নয়ন সাধনের একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। স্কেলের ধরন অনুযায়ী বাংলাদেশে জাতীয় ভূসংস্থানিক মানচিত্রের চারটি ধারা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ১ : ৫০,০০০ বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র যাতে সমগ্র বাংলাদেশ প্রদর্শিত, ১ : ২৫০,০০০ ক্ষুদ্র স্কেলের সমগ্র বাংলাদেশের মানচিত্র, ১ : ৫০০,০০০ ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র এবং ১ : ১,০০০,০০০ ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র। কমনওয়েলথ দেশগুলোতে জাতীয় ভূসংস্থানিক মানচিত্র প্রণয়নে ১ : ৫০,০০০ প্রতিভূ অনুপাতের একটি সাধারণ স্কেল অনুসরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ১ ইঞ্চি সমান ১ মাইল বা ১ : ৬৩, ৩৬০ প্রতিভূ অনুপাতের পুরাতন মানচিত্রসমূহ রূপান্তর করে কমনওয়েলথের উপরোক্ত স্কেল অনুসরণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে, ১ ইঞ্চি সমান ৪ মাইল স্কেলের পুরাতন মানচিত্রগুলোকে ১ : ২৫০,০০০ স্কেলে রূপান্তর করা হয়েছে। ক্ষুদ্র স্কেলবিশিষ্ট অপর দুই ভূসংস্থানিক মানচিত্র (১ : ৫০০,০০০ এবং ১ : ১,০০০,০০০) ভৌগোলিক মানচিত্র হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়ে থাকে। প্রতি দশ বছর অন্তর অন্তর ১ : ৫০,০০০ স্কেলের মৌলিক জাতীয় ভূসংস্থানিক মানচিত্র ধারাকে সংশোধন করা হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি সাধনের লক্ষ্যে বিমানচিত্রসমূহকে অনুপ্রস্থ জরিপের (Traverse survey) মাধ্যমে স্থাপিত ভূমি নিয়ন্ত্রণ বিন্দুসমূহের ভিত্তিতে পরিশুদ্ধ করা হয়ে থাকে। | '''''ভূসংস্থানিক মানচিত্র''''' (Topographic map) ভূ-পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনকারী মানচিত্র, যাতে সমোন্নতি রেখা, ছায়াবৃতকরণ (shading), সমান্তরাল রেখা অথবা অন্য কোন চিত্রলৈখিক কৌশলের মাধ্যমে ভূ-প্রকৃতি, উদ্ভিজ্জের বণ্টন, জলাশয়ের অবস্থান অথবা ভূসংস্থান উপস্থাপন করা হয়। বড় স্কেলের ভূসংস্থানিক মানচিত্রে হাটবাজার, পেট্রল পাম্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ রাস্তাঘাট প্রভৃতির অবস্থানও প্রদর্শিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর হচ্ছে সারাদেশে জরিপকার্য পরিচালনা এবং ভূসংস্থানিক মানচিত্র প্রস্ত্তত ও উন্নয়ন সাধনের একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। স্কেলের ধরন অনুযায়ী বাংলাদেশে জাতীয় ভূসংস্থানিক মানচিত্রের চারটি ধারা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ১ : ৫০,০০০ বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র যাতে সমগ্র বাংলাদেশ প্রদর্শিত, ১ : ২৫০,০০০ ক্ষুদ্র স্কেলের সমগ্র বাংলাদেশের মানচিত্র, ১ : ৫০০,০০০ ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র এবং ১ : ১,০০০,০০০ ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র। কমনওয়েলথ দেশগুলোতে জাতীয় ভূসংস্থানিক মানচিত্র প্রণয়নে ১ : ৫০,০০০ প্রতিভূ অনুপাতের একটি সাধারণ স্কেল অনুসরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ১ ইঞ্চি সমান ১ মাইল বা ১ : ৬৩, ৩৬০ প্রতিভূ অনুপাতের পুরাতন মানচিত্রসমূহ রূপান্তর করে কমনওয়েলথের উপরোক্ত স্কেল অনুসরণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে, ১ ইঞ্চি সমান ৪ মাইল স্কেলের পুরাতন মানচিত্রগুলোকে ১ : ২৫০,০০০ স্কেলে রূপান্তর করা হয়েছে। ক্ষুদ্র স্কেলবিশিষ্ট অপর দুই ভূসংস্থানিক মানচিত্র (১ : ৫০০,০০০ এবং ১ : ১,০০০,০০০) ভৌগোলিক মানচিত্র হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়ে থাকে। প্রতি দশ বছর অন্তর অন্তর ১ : ৫০,০০০ স্কেলের মৌলিক জাতীয় ভূসংস্থানিক মানচিত্র ধারাকে সংশোধন করা হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি সাধনের লক্ষ্যে বিমানচিত্রসমূহকে অনুপ্রস্থ জরিপের (Traverse survey) মাধ্যমে স্থাপিত ভূমি নিয়ন্ত্রণ বিন্দুসমূহের ভিত্তিতে পরিশুদ্ধ করা হয়ে থাকে। [মোহা. শামসুল আলম] | ||
[মোহা. শামসুল আলম] | |||
[[en:Topography]] | [[en:Topography]] |
০৪:৫৯, ২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
ভূসংস্থান (Topography) ভূ-পৃষ্ঠের কোন স্থানের ভূমিরূপ, যাতে এর ভূ-প্রকৃতি এবং সমোন্নতি রেখাসমূহ, পর্বত ও উপত্যকার বণ্টন, নদনদীর বিন্যাস এবং ভূ-দৃশ্য গঠনকারী অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবিক বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ, তথাপি এখানে যথেষ্ট ভূসংস্থানিক বৈচিত্র্য বিদ্যমান। বাংলাদেশের ভূসংস্থানের প্রধান তিনটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: ১) সুবিস্তৃত পললভূমি যা প্রায়ই বন্যা কবলিত হয়ে থাকে; ২) সামান্য উত্থিত এবং অপেক্ষাকৃত পুরাতন সমভূমি এবং ৩) ক্ষুদ্র পাহাড়ি অঞ্চল যা পার্বত্য খরস্রোতা নদী দ্বারা নিষ্কাশিত। দেশের দক্ষিণে রয়েছে প্রায় ৬০০ কিমি দৈর্ঘ্যের অনিয়মিত বদ্বীপীয় সমুদ্র তটরেখা, যা বঙ্গোপসাগরে পতিত অসংখ্য মোহনাজ নদী (estaurine rivers) ও নদীখাত দ্বারা ভগ্ন ও বিচ্ছিন্ন। সুবিস্তৃত পললভূমিটি বৃহত্তর বঙ্গীয় সমভূমিরই অংশ, যাকে কখনও কখনও নিম্নতর গাঙ্গেয় সমভূমি নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সমভূমির উচ্চতা ১০ মিটারের চেয়েও কম এবং দক্ষিণে উপকূলের নিকটবর্তী অঞ্চলে উচ্চতা ক্রমশ হ্রাস পেয়ে প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছিতে পৌঁছেছে।
দক্ষিণ-পূর্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পার্বত্য এলাকা, উত্তর-পূর্বে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়সমূহ এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত উচ্চভূমি স্বল্প উচ্চতাবিশিষ্ট। চট্টগ্রামের পাহাড়সমূহ দেশের একমাত্র উল্লেখযোগ্য পাহাড়শ্রেণী। এই পাহাড়শ্রেণী অত্যন্ত খাড়াভাবে সরু শৈলশিরা রেখা (গড় প্রশস্ততা ৩৬ মি) নিয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এদের উচ্চতার বিস্তার ৬০০ থেকে ১০০০ মি পর্যন্ত। পাহাড়ি শৈলশিরার মাঝে মাঝে রয়েছে উপত্যকাসমূহ, যেগুলো সাধারণত উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত। চট্টগ্রামের পাহাড়সমূহের পশ্চিমে সমুদ্র তটরেখার সমান্তরালে সরু, আর্দ্র উপকূলীয় সমভূমি অবস্থিত।
ভূসংস্থানিক মানচিত্র (Topographic map) ভূ-পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনকারী মানচিত্র, যাতে সমোন্নতি রেখা, ছায়াবৃতকরণ (shading), সমান্তরাল রেখা অথবা অন্য কোন চিত্রলৈখিক কৌশলের মাধ্যমে ভূ-প্রকৃতি, উদ্ভিজ্জের বণ্টন, জলাশয়ের অবস্থান অথবা ভূসংস্থান উপস্থাপন করা হয়। বড় স্কেলের ভূসংস্থানিক মানচিত্রে হাটবাজার, পেট্রল পাম্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ রাস্তাঘাট প্রভৃতির অবস্থানও প্রদর্শিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর হচ্ছে সারাদেশে জরিপকার্য পরিচালনা এবং ভূসংস্থানিক মানচিত্র প্রস্ত্তত ও উন্নয়ন সাধনের একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। স্কেলের ধরন অনুযায়ী বাংলাদেশে জাতীয় ভূসংস্থানিক মানচিত্রের চারটি ধারা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ১ : ৫০,০০০ বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র যাতে সমগ্র বাংলাদেশ প্রদর্শিত, ১ : ২৫০,০০০ ক্ষুদ্র স্কেলের সমগ্র বাংলাদেশের মানচিত্র, ১ : ৫০০,০০০ ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র এবং ১ : ১,০০০,০০০ ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র। কমনওয়েলথ দেশগুলোতে জাতীয় ভূসংস্থানিক মানচিত্র প্রণয়নে ১ : ৫০,০০০ প্রতিভূ অনুপাতের একটি সাধারণ স্কেল অনুসরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ১ ইঞ্চি সমান ১ মাইল বা ১ : ৬৩, ৩৬০ প্রতিভূ অনুপাতের পুরাতন মানচিত্রসমূহ রূপান্তর করে কমনওয়েলথের উপরোক্ত স্কেল অনুসরণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে, ১ ইঞ্চি সমান ৪ মাইল স্কেলের পুরাতন মানচিত্রগুলোকে ১ : ২৫০,০০০ স্কেলে রূপান্তর করা হয়েছে। ক্ষুদ্র স্কেলবিশিষ্ট অপর দুই ভূসংস্থানিক মানচিত্র (১ : ৫০০,০০০ এবং ১ : ১,০০০,০০০) ভৌগোলিক মানচিত্র হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়ে থাকে। প্রতি দশ বছর অন্তর অন্তর ১ : ৫০,০০০ স্কেলের মৌলিক জাতীয় ভূসংস্থানিক মানচিত্র ধারাকে সংশোধন করা হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি সাধনের লক্ষ্যে বিমানচিত্রসমূহকে অনুপ্রস্থ জরিপের (Traverse survey) মাধ্যমে স্থাপিত ভূমি নিয়ন্ত্রণ বিন্দুসমূহের ভিত্তিতে পরিশুদ্ধ করা হয়ে থাকে। [মোহা. শামসুল আলম]