মাছ ধরার সরঞ্জাম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''মাছ ধরার সরঞ্জাম '''(Fishing gear)'''  '''মাছ ধরা, সংগ্রহ বা আহরণে ব্যবহূত যে কোন ধরনের সাজসরঞ্জাম, হাতিয়ার বা যন্ত্রকৌশল।
'''মাছ ধরার সরঞ্জাম''' (Fishing gear) মাছ ধরা, সংগ্রহ বা আহরণে ব্যবহূত যে কোন ধরনের সাজসরঞ্জাম, হাতিয়ার বা যন্ত্রকৌশল।


বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকে হাত দিয়েও মাছ ধরে। শীতকালে গ্রামাঞ্চলে মৌসুমি জলাশয় বা বিলে নানা সরঞ্জাম দিয়ে বা সরঞ্জাম ছাড়া প্রায়শ একত্রে লোকেদের মাছ ধরা একটি সুপরিচিত দৃশ্য।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকে হাত দিয়েও মাছ ধরে। শীতকালে গ্রামাঞ্চলে মৌসুমি জলাশয় বা বিলে নানা সরঞ্জাম দিয়ে বা সরঞ্জাম ছাড়া প্রায়শ একত্রে লোকেদের মাছ ধরা একটি সুপরিচিত দৃশ্য।
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
বাংলাদেশে মাছ ধরার চিরায়ত প্রধান পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপ:
বাংলাদেশে মাছ ধরার চিরায়ত প্রধান পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপ:


জখম করার হাতিয়ার  এ ধরনের সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে বর্শাজাতীয় হাতিয়ার, যা ছোড়া যায় অথবা যা দিয়ে সরাসরি মাছ গাঁথা হয়, ক্ল্যাম্প ও সাঁড়াশি। জখম করে মাছ ধরার চিরায়ত সরঞ্জাম: এককাঁটা; তেকাঁটা; অাঁকড়া এবং কোঁচ।
''জখম করার হাতিয়ার''  এ ধরনের সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে বর্শাজাতীয় হাতিয়ার, যা ছোড়া যায় অথবা যা দিয়ে সরাসরি মাছ গাঁথা হয়, ক্ল্যাম্প ও সাঁড়াশি। জখম করে মাছ ধরার চিরায়ত সরঞ্জাম: এককাঁটা; তেকাঁটা; অাঁকড়া এবং কোঁচ।


বিষ প্রয়োগ ও বিস্ফোরকের সাহায্যে মাছ মারা ''' '''সুন্দরবনের কিছু এলাকায় কতকগুলি রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে মাছ মারার খবর পাওয়া যায়। মাছ শিকারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ।
বিষ প্রয়োগ ও বিস্ফোরকের সাহায্যে মাছ মারা ''' '''সুন্দরবনের কিছু এলাকায় কতকগুলি রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে মাছ মারার খবর পাওয়া যায়। মাছ শিকারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ।


টানাবড়শি  স্বাদুপানিতে ও সমুদ্রে লম্বা সুতার টানাবড়শি এবং ছিপে বড়শির ব্যবহার, গ্রামের ধানক্ষেতে ও বিলে অনেকগুলি বড়শিসহ একটি দীর্ঘ সুতা ভাসিয়ে রাখা ইত্যাদি বাংলাদেশের বড়শি দিয়ে শিকারের সাধারণ নমুনা। বড়শি দিয়ে মাছ শিকারে মাছকে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম টোপ দিয়ে আকৃষ্ট করা হয় অথবা চারা ফেলে প্রলুব্ধ করা হয়।
''টানাবড়শি''  স্বাদুপানিতে ও সমুদ্রে লম্বা সুতার টানাবড়শি এবং ছিপে বড়শির ব্যবহার, গ্রামের ধানক্ষেতে ও বিলে অনেকগুলি বড়শিসহ একটি দীর্ঘ সুতা ভাসিয়ে রাখা ইত্যাদি বাংলাদেশের বড়শি দিয়ে শিকারের সাধারণ নমুনা। বড়শি দিয়ে মাছ শিকারে মাছকে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম টোপ দিয়ে আকৃষ্ট করা হয় অথবা চারা ফেলে প্রলুব্ধ করা হয়।


মাছ ধরার ফাঁদ ''' '''গ্রামাঞ্চলে বাঁশের শলা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চাঁই তৈরি করা হয়। এতে থাকে বিভিন্ন আকৃতির খোপ। এতে মাছ ঢোকানোর কৌশল আছে, কিন্তু বের হওয়ার কোন উপায় নেই।
''মাছ ধরার ফাঁদ'' গ্রামাঞ্চলে বাঁশের শলা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চাঁই তৈরি করা হয়। এতে থাকে বিভিন্ন আকৃতির খোপ। এতে মাছ ঢোকানোর কৌশল আছে, কিন্তু বের হওয়ার কোন উপায় নেই।


গ্রামাঞ্চলে বর্ষাকালে বন্যার সময় লোকে মাছ ধরার ফাঁদ পাতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের ফাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইকবর চাঁই, বেগা, ডুবা ফাঁদ, দারকি, উন্টা, তেপাই, ধীল, চেং, চাঁই, চান্দি বাইর, বানা, পলো, রাবনি, চারো ইত্যাদি।
গ্রামাঞ্চলে বর্ষাকালে বন্যার সময় লোকে মাছ ধরার ফাঁদ পাতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের ফাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইকবর চাঁই, বেগা, ডুবা ফাঁদ, দারকি, উন্টা, তেপাই, ধীল, চেং, চাঁই, চান্দি বাইর, বানা, পলো, রাবনি, চারো ইত্যাদি।
'''জাল''' ''' '''আকার ও আকৃতি, ফোকরের আয়তন, পানিতে পাতার অবস্থান ও ব্যবহার পদ্ধতির ভিত্তিতে বাংলাদেশে ব্যবহূত জালকে নানাভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।


[[Image:FishingGear01.jpg|thumb|right|মইয়াজাল]]
[[Image:FishingGear01.jpg|thumb|right|মইয়াজাল]]
''জাল''  আকার ও আকৃতি, ফোকরের আয়তন, পানিতে পাতার অবস্থান ও ব্যবহার পদ্ধতির ভিত্তিতে বাংলাদেশে ব্যবহূত জালকে নানাভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।


[[Image:FishingGear02.jpg|thumb|right|ঝাঁকিজাল]]
''ব্যাগজাল'' (Bag net) একটি কাঠামো দ্বারা খাড়া অবস্থায় খোলা থাকে এবং পানির স্রোতে অনুভূমিকভাবে প্রসারিত হয়। স্রোতের বিপরীতে পাতা হয়। বেহুন্দিজাল ও সাবাড়জাল বা আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট একই আকৃতির অন্যান্য জাল তলায় হাত দিয়ে টানা হয়।
 
''ব্যাগজাল'' (Bag net) ''' '''একটি কাঠামো দ্বারা খাড়া অবস্থায় খোলা থাকে এবং পানির স্রোতে অনুভূমিকভাবে প্রসারিত হয়। স্রোতের বিপরীতে পাতা হয়। বেহুন্দিজাল ও সাবাড়জাল বা আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট একই আকৃতির অন্যান্য জাল তলায় হাত দিয়ে টানা হয়।
''
''
টানাজাল/ঠেলাজাল'' (Drag net/Push net) ''' '''ত্রিভুজ বাঁশের কাঠামোতে বাঁধা এই জাল ঠেলে ঠেলে বিল ও প্লাবনভূমিতে মাছ ধরার দৃশ্য বহু পুরাতন। স্থানীয় নাম ঠেলাজাল ও মইয়াজাল। বড় ছাঁকিজালও (Trawl net) এক প্রকার টানাজাল।
টানাজাল/ঠেলাজাল'' (Drag net/Push net) ত্রিভুজ বাঁশের কাঠামোতে বাঁধা এই জাল ঠেলে ঠেলে বিল ও প্লাবনভূমিতে মাছ ধরার দৃশ্য বহু পুরাতন। স্থানীয় নাম ঠেলাজাল ও মইয়াজাল। বড় ছাঁকিজালও (Trawl net) এক প্রকার টানাজাল।


''ভাসাজাল'' (Seine net) ''' '''অতি দীর্ঘ ও পাখাসদৃশ বিস্তৃত এবং মোটা রশিযুক্ত জাল। এ ধরনের জালের পার্শ্বভাগগুলি (wings) ও টানা রশি খুব লম্বা। বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের এই জালের স্থানীয় নাম বেড়জাল। এটি খুব বড় আকারের হলে জগৎবেড় বলে। মাছের আকারের উপর জালের ফোকরের আয়তন নির্ভর করে।
''ভাসাজাল'' (Seine net) অতি দীর্ঘ ও পাখাসদৃশ বিস্তৃত এবং মোটা রশিযুক্ত জাল। এ ধরনের জালের পার্শ্বভাগগুলি (wings) ও টানা রশি খুব লম্বা। বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের এই জালের স্থানীয় নাম বেড়জাল। এটি খুব বড় আকারের হলে জগৎবেড় বলে। মাছের আকারের উপর জালের ফোকরের আয়তন নির্ভর করে।


''ঝাঁকিজাল (Cast net)'' ''' '''বাংলাদেশের সর্বত্র ঝাঁকিজাল ব্যবহূত হয়। জাল ছোড়ার পর গোল দেখায়। জালের নিচের কিনারা জুড়ে লোহার বল গাঁথা থাকে বলে এটি ওজনে ভারি হয়। হাত দিয়ে ছুড়ে ব্যবহার করা এই জাল সাধারণত পুকুর, বিল, মোহনা ও উপকূলীয় অগভীর পানিতে ব্যবহূত হয়ে থাকে।
[[Image:FishingGear02.jpg|thumb|right|ঝাঁকিজাল]]
 
''ঝাঁকিজাল''  (Cast net) বাংলাদেশের সর্বত্র ঝাঁকিজাল ব্যবহূত হয়। জাল ছোড়ার পর গোল দেখায়। জালের নিচের কিনারা জুড়ে লোহার বল গাঁথা থাকে বলে এটি ওজনে ভারি হয়। হাত দিয়ে ছুড়ে ব্যবহার করা এই জাল সাধারণত পুকুর, বিল, মোহনা ও উপকূলীয় অগভীর পানিতে ব্যবহূত হয়ে থাকে।
''ধর্মজাল (Lift net)'' ''' '''সাধারণত চৌকো আকৃতির, আড়াআড়ি বাঁধা বাঁশের চারটি ফালির চার আগায় জালের চারকোণা বাঁধা থাকে। বাঁশের ফালির সংযোগস্থলে অন্য একটি বাঁশ বেঁধে এটিকে পানিতে ফেলা অথবা পানি থেকে উঠানোর জন্য লিভারের (liver) মতো ব্যবহার করা হয়। জালটি হস্তচালিত ও সহজে বহনীয়। কখনও কখনও বড় আকারের জালও বানানো হয় এবং এটিকে পানির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থায়ীভাবে বসানো হয়। এগুলি খড়াজাল ও কোনাঘরজাল নামে পরিচিত।
 
[[Image:FishingGear2BuaJal.jpg|thumb|right|মাছ ধরার সরঞ্জাম]]
 
 
[[Image:FishingGear3Ocha.jpg|thumb|right|ধর্মজাল]]


''ধর্মজাল (Lift net)''  সাধারণত চৌকো আকৃতির, আড়াআড়ি বাঁধা বাঁশের চারটি ফালির চার আগায় জালের চারকোণা বাঁধা থাকে। বাঁশের ফালির সংযোগস্থলে অন্য একটি বাঁশ বেঁধে এটিকে পানিতে ফেলা অথবা পানি থেকে উঠানোর জন্য লিভারের (liver) মতো ব্যবহার করা হয়। জালটি হস্তচালিত ও সহজে বহনীয়। কখনও কখনও বড় আকারের জালও বানানো হয় এবং এটিকে পানির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থায়ীভাবে বসানো হয়। এগুলি খড়াজাল ও কোনাঘরজাল নামে পরিচিত।


[[Image:FishingGear1Bitte.jpg|thumb|right|ঠেলাজাল]]
''ফলিং নেট (Falling net)''  মাছের আবাসস্থল ও মাছের আকারের ভিত্তিতে এই জাল বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রধানত এক ধরনের জাল দেখা যায় যা ঝাঁকিজালেরই বড় সংস্করণ। স্থানীয় নাম ওথেড় জাল। এই জালের সুতা বেশ মোটা এবং ফোকর বড়, ব্যবহূত লোহার বলও ওজনে ভারি। এই জালে নদীর গভীর থেকে মাছ ধরা হয়। পাঁচ থেকে দশ জন লোক জালসহ সাঁতার কেটে নদীর নির্দিষ্ট জায়গায় জালটি পাতে। জেলেরা  কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর মাছ ধরার জন্য ডুব দিতে শুরু করে। অনেক সময় মাছ ধরে পাড়ে আনে বা জালেই পেঁচিয়ে রাখে এবং জাল না তোলা পর্যন্ত মাছ ওখানেই থাকে। এই ধরনের আরেকটি জালের স্থানীয় নাম ছবিজাল। অগভীর পানিতে ব্যবহূত। এই জাল নাইলনের সুতা ও রশি দিয়ে তৈরি। ভারি রশির সাহায্যে জালের মুখ আলগা রাখা হয়। জালটি মোচাকৃতির ও মোচার দড়ি দিয়ে বাঁধা। জাল পানিতে ফেললে মাছ জালের ভেতরে ঢাকা পড়ে যায় এবং তাতে আটকে পড়ে। চাকজালও এ ধরনের জাল, দেখতে ছবিজালের মতো। বাঁশের ফালির বেড়ে জালের মুখ বাঁধা থাকে। শীতকালে নদী ও বিলে চাকজাল পাতা হয়।
<gallery>
Image:FishingGear2BuaJal.jpg|মাছ ধরার সরঞ্জাম]]


Image:FishingGear3Ocha.jpg|ধর্মজাল]]


[[Image:FishingGear4Polo.jpg|thumb|right|পলো]]
Image:FishingGear1Bitte.jpg|ঠেলাজাল]]


[[Image:FishingGear5Tubo.jpg|thumb|right|আন্টা]]
Image:FishingGear4Polo.jpg|পলো]]


[[Image:FishingGear6VeshalJal.jpg|thumb|right|খড়াজাল]]
Image:FishingGear5Tubo.jpg|আন্টা]]


''ফলিং নেট (Falling net)'' ''' '''মাছের আবাসস্থল ও মাছের আকারের ভিত্তিতে এই জাল বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রধানত এক ধরনের জাল দেখা যায় যা ঝাঁকিজালেরই বড় সংস্করণ। স্থানীয় নাম ওথেড় জাল। এই জালের সুতা বেশ মোটা এবং ফোকর বড়, ব্যবহূত লোহার বলও ওজনে ভারি। এই জালে নদীর গভীর থেকে মাছ ধরা হয়। পাঁচ থেকে দশ জন লোক জালসহ সাঁতার কেটে নদীর নির্দিষ্ট জায়গায় জালটি পাতে। জেলেরা  কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর মাছ ধরার জন্য ডুব দিতে শুরু করে। অনেক সময় মাছ ধরে পাড়ে আনে বা জালেই পেঁচিয়ে রাখে এবং জাল না তোলা পর্যন্ত মাছ ওখানেই থাকে। এই ধরনের আরেকটি জালের স্থানীয় নাম ছবিজাল। অগভীর পানিতে ব্যবহূত। এই জাল নাইলনের সুতা ও রশি দিয়ে তৈরি। ভারি রশির সাহায্যে জালের মুখ আলগা রাখা হয়। জালটি মোচাকৃতির ও মোচার দড়ি দিয়ে বাঁধা। জাল পানিতে ফেললে মাছ জালের ভেতরে ঢাকা পড়ে যায় এবং তাতে আটকে পড়ে। চাকজালও এ ধরনের জাল, দেখতে ছবিজালের মতো। বাঁশের ফালির বেড়ে জালের মুখ বাঁধা থাকে। শীতকালে নদী ও বিলে চাকজাল পাতা হয়।
Image:FishingGear6VeshalJal.jpg|খড়াজাল]]
</gallery>


''ফাঁসজাল (Gill net)'' ''' '''গ্রামাঞ্চলের নদী, প্লাবনভূমি ও ধানক্ষেতে বহুল ব্যবহূত, পাতা হয় নদী ও বিলের স্বল্প বা গভীর পানিতে। এক ধরনের ফাঁসজাল দিয়ে কই মাছ ধরা হয় বলে তার নাম কইজাল।
''ফাঁসজাল (Gill net)'' গ্রামাঞ্চলের নদী, প্লাবনভূমি ও ধানক্ষেতে বহুল ব্যবহূত, পাতা হয় নদী ও বিলের স্বল্প বা গভীর পানিতে। এক ধরনের ফাঁসজাল দিয়ে কই মাছ ধরা হয় বলে তার নাম কইজাল।


''ছাঁদন-জাল (Entangling net)'' ''' '''এটিও এক ধরনের ফাঁসজাল। গোটা মাছ এতে জড়িয়ে যায়। বহুল আলোচিত কারেন্টজাল এ ধরনের ছাঁদন জালেরই একটি উদাহরণ। নানা আকারের একনালী সুতা দিয়ে তৈরি বলে মাছ জালের দিকে এগুতেই খুব সহজে তাতে জড়িয়ে পড়ে।  [এম.এস শাহ]
''ছাঁদন-জাল (Entangling net)'' এটিও এক ধরনের ফাঁসজাল। গোটা মাছ এতে জড়িয়ে যায়। বহুল আলোচিত কারেন্টজাল এ ধরনের ছাঁদন জালেরই একটি উদাহরণ। নানা আকারের একনালী সুতা দিয়ে তৈরি বলে মাছ জালের দিকে এগুতেই খুব সহজে তাতে জড়িয়ে পড়ে।  [এম.এস শাহ]


[[en:Fishing Gear]]
[[en:Fishing Gear]]

১০:২৪, ৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মাছ ধরার সরঞ্জাম (Fishing gear) মাছ ধরা, সংগ্রহ বা আহরণে ব্যবহূত যে কোন ধরনের সাজসরঞ্জাম, হাতিয়ার বা যন্ত্রকৌশল।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকে হাত দিয়েও মাছ ধরে। শীতকালে গ্রামাঞ্চলে মৌসুমি জলাশয় বা বিলে নানা সরঞ্জাম দিয়ে বা সরঞ্জাম ছাড়া প্রায়শ একত্রে লোকেদের মাছ ধরা একটি সুপরিচিত দৃশ্য।

বাংলাদেশে মাছ ধরার চিরায়ত প্রধান পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপ:

জখম করার হাতিয়ার  এ ধরনের সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে বর্শাজাতীয় হাতিয়ার, যা ছোড়া যায় অথবা যা দিয়ে সরাসরি মাছ গাঁথা হয়, ক্ল্যাম্প ও সাঁড়াশি। জখম করে মাছ ধরার চিরায়ত সরঞ্জাম: এককাঁটা; তেকাঁটা; অাঁকড়া এবং কোঁচ।

বিষ প্রয়োগ ও বিস্ফোরকের সাহায্যে মাছ মারা  সুন্দরবনের কিছু এলাকায় কতকগুলি রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে মাছ মারার খবর পাওয়া যায়। মাছ শিকারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ।

টানাবড়শি  স্বাদুপানিতে ও সমুদ্রে লম্বা সুতার টানাবড়শি এবং ছিপে বড়শির ব্যবহার, গ্রামের ধানক্ষেতে ও বিলে অনেকগুলি বড়শিসহ একটি দীর্ঘ সুতা ভাসিয়ে রাখা ইত্যাদি বাংলাদেশের বড়শি দিয়ে শিকারের সাধারণ নমুনা। বড়শি দিয়ে মাছ শিকারে মাছকে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম টোপ দিয়ে আকৃষ্ট করা হয় অথবা চারা ফেলে প্রলুব্ধ করা হয়।

মাছ ধরার ফাঁদ গ্রামাঞ্চলে বাঁশের শলা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চাঁই তৈরি করা হয়। এতে থাকে বিভিন্ন আকৃতির খোপ। এতে মাছ ঢোকানোর কৌশল আছে, কিন্তু বের হওয়ার কোন উপায় নেই।

গ্রামাঞ্চলে বর্ষাকালে বন্যার সময় লোকে মাছ ধরার ফাঁদ পাতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের ফাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইকবর চাঁই, বেগা, ডুবা ফাঁদ, দারকি, উন্টা, তেপাই, ধীল, চেং, চাঁই, চান্দি বাইর, বানা, পলো, রাবনি, চারো ইত্যাদি।

মইয়াজাল

জাল আকার ও আকৃতি, ফোকরের আয়তন, পানিতে পাতার অবস্থান ও ব্যবহার পদ্ধতির ভিত্তিতে বাংলাদেশে ব্যবহূত জালকে নানাভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।

ব্যাগজাল (Bag net) একটি কাঠামো দ্বারা খাড়া অবস্থায় খোলা থাকে এবং পানির স্রোতে অনুভূমিকভাবে প্রসারিত হয়। স্রোতের বিপরীতে পাতা হয়। বেহুন্দিজাল ও সাবাড়জাল বা আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট একই আকৃতির অন্যান্য জাল তলায় হাত দিয়ে টানা হয়। টানাজাল/ঠেলাজাল (Drag net/Push net) ত্রিভুজ বাঁশের কাঠামোতে বাঁধা এই জাল ঠেলে ঠেলে বিল ও প্লাবনভূমিতে মাছ ধরার দৃশ্য বহু পুরাতন। স্থানীয় নাম ঠেলাজাল ও মইয়াজাল। বড় ছাঁকিজালও (Trawl net) এক প্রকার টানাজাল।

ভাসাজাল (Seine net) অতি দীর্ঘ ও পাখাসদৃশ বিস্তৃত এবং মোটা রশিযুক্ত জাল। এ ধরনের জালের পার্শ্বভাগগুলি (wings) ও টানা রশি খুব লম্বা। বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের এই জালের স্থানীয় নাম বেড়জাল। এটি খুব বড় আকারের হলে জগৎবেড় বলে। মাছের আকারের উপর জালের ফোকরের আয়তন নির্ভর করে।

ঝাঁকিজাল

ঝাঁকিজাল (Cast net) বাংলাদেশের সর্বত্র ঝাঁকিজাল ব্যবহূত হয়। জাল ছোড়ার পর গোল দেখায়। জালের নিচের কিনারা জুড়ে লোহার বল গাঁথা থাকে বলে এটি ওজনে ভারি হয়। হাত দিয়ে ছুড়ে ব্যবহার করা এই জাল সাধারণত পুকুর, বিল, মোহনা ও উপকূলীয় অগভীর পানিতে ব্যবহূত হয়ে থাকে।

ধর্মজাল (Lift net) সাধারণত চৌকো আকৃতির, আড়াআড়ি বাঁধা বাঁশের চারটি ফালির চার আগায় জালের চারকোণা বাঁধা থাকে। বাঁশের ফালির সংযোগস্থলে অন্য একটি বাঁশ বেঁধে এটিকে পানিতে ফেলা অথবা পানি থেকে উঠানোর জন্য লিভারের (liver) মতো ব্যবহার করা হয়। জালটি হস্তচালিত ও সহজে বহনীয়। কখনও কখনও বড় আকারের জালও বানানো হয় এবং এটিকে পানির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থায়ীভাবে বসানো হয়। এগুলি খড়াজাল ও কোনাঘরজাল নামে পরিচিত।

ফলিং নেট (Falling net) মাছের আবাসস্থল ও মাছের আকারের ভিত্তিতে এই জাল বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রধানত এক ধরনের জাল দেখা যায় যা ঝাঁকিজালেরই বড় সংস্করণ। স্থানীয় নাম ওথেড় জাল। এই জালের সুতা বেশ মোটা এবং ফোকর বড়, ব্যবহূত লোহার বলও ওজনে ভারি। এই জালে নদীর গভীর থেকে মাছ ধরা হয়। পাঁচ থেকে দশ জন লোক জালসহ সাঁতার কেটে নদীর নির্দিষ্ট জায়গায় জালটি পাতে। জেলেরা  কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর মাছ ধরার জন্য ডুব দিতে শুরু করে। অনেক সময় মাছ ধরে পাড়ে আনে বা জালেই পেঁচিয়ে রাখে এবং জাল না তোলা পর্যন্ত মাছ ওখানেই থাকে। এই ধরনের আরেকটি জালের স্থানীয় নাম ছবিজাল। অগভীর পানিতে ব্যবহূত। এই জাল নাইলনের সুতা ও রশি দিয়ে তৈরি। ভারি রশির সাহায্যে জালের মুখ আলগা রাখা হয়। জালটি মোচাকৃতির ও মোচার দড়ি দিয়ে বাঁধা। জাল পানিতে ফেললে মাছ জালের ভেতরে ঢাকা পড়ে যায় এবং তাতে আটকে পড়ে। চাকজালও এ ধরনের জাল, দেখতে ছবিজালের মতো। বাঁশের ফালির বেড়ে জালের মুখ বাঁধা থাকে। শীতকালে নদী ও বিলে চাকজাল পাতা হয়।

ফাঁসজাল (Gill net) গ্রামাঞ্চলের নদী, প্লাবনভূমি ও ধানক্ষেতে বহুল ব্যবহূত, পাতা হয় নদী ও বিলের স্বল্প বা গভীর পানিতে। এক ধরনের ফাঁসজাল দিয়ে কই মাছ ধরা হয় বলে তার নাম কইজাল।

ছাঁদন-জাল (Entangling net) এটিও এক ধরনের ফাঁসজাল। গোটা মাছ এতে জড়িয়ে যায়। বহুল আলোচিত কারেন্টজাল এ ধরনের ছাঁদন জালেরই একটি উদাহরণ। নানা আকারের একনালী সুতা দিয়ে তৈরি বলে মাছ জালের দিকে এগুতেই খুব সহজে তাতে জড়িয়ে পড়ে।  [এম.এস শাহ]