মতিঝিল কমপ্লেক্স, মুর্শিদাবাদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''মতিঝিল কমপ্লেক্স, মুর্শিদাবাদ'''  মতিঝিল বা মুক্তাহ্রদ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে লালবাগের প্রায় দেড় কিমি দক্ষিণে এবং হাজারদুয়ারী প্রাসাদের প্রায় তিন কিমি দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। র‌্যানেলের মতে অশ্বক্ষুরাকৃতির হ্রদটি ছিল ভাগীরথী নদীর একটি সর্পিল বাঁকা গতিপথ। নদীটি একসময় এ এলাকার কাছ দিয়ে প্রবাহিত ছিল। হ্রদটি যে স্থানে বাঁক নিয়েছে সেখানে ‘সাঙ্গ-ই-দালান’ (পাথরের প্রাসাদ) নামে একটি নয়নাভিরাম প্রাসাদ, একটি উঁচু তোরণ, একটি মসজিদ এবং আরও কিছু সংখ্যক ইমারত নওয়াব [[আলীবর্দী খান|আলীবর্দী খান]] এর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা [[খান, নওয়াজিশ মুহম্মদ|নওয়াজিশ মুহম্মদ খান]] ওরফে শাহ্মাত জং কর্তৃক নির্মিত হয়। নওয়াজিশ খানের প্রাসাদটিতে ব্যবহূত নির্মাণ সামগ্রী বিশেষ করে কৃষ্ণ পাথরের স্তম্ভগুলি গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে আনা হয়েছিল এবং একারণেই এর নামকরণ করা হয়েছিল সাঙ্গ-ই-দালান। তাঁর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে নওয়াব [[সিরাজউদ্দৌলা |সিরাজউদ্দৌলা]] কর্তৃক প্রাসাদটি দখলীকৃত এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আগ পর্যন্ত তাঁর (নওয়াজিশের) বিধবা পত্নী [[ঘসেটি বেগম |ঘসেটি বেগম]] এখানে বসবাস করতেন।
'''মতিঝিল কমপ্লেক্স, মুর্শিদাবাদ'''  মতিঝিল বা মুক্তাহ্রদ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে লালবাগের প্রায় দেড় কিমি দক্ষিণে এবং হাজারদুয়ারী প্রাসাদের প্রায় তিন কিমি দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। র‌্যানেলের মতে অশ্বক্ষুরাকৃতির হ্রদটি ছিল ভাগীরথী নদীর একটি সর্পিল বাঁকা গতিপথ। নদীটি একসময় এ এলাকার কাছ দিয়ে প্রবাহিত ছিল। হ্রদটি যে স্থানে বাঁক নিয়েছে সেখানে ‘সাঙ্গ-ই-দালান’ (পাথরের প্রাসাদ) নামে একটি নয়নাভিরাম প্রাসাদ, একটি উঁচু তোরণ, একটি মসজিদ এবং আরও কিছু সংখ্যক ইমারত নওয়াব [[আলীবর্দী খান|আলীবর্দী খান]] এর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা [[খান, নওয়াজিশ মুহম্মদ|নওয়াজিশ মুহম্মদ খান]] ওরফে শাহ্মাত জং কর্তৃক নির্মিত হয়। নওয়াজিশ খানের প্রাসাদটিতে ব্যবহূত নির্মাণ সামগ্রী বিশেষ করে কৃষ্ণ পাথরের স্তম্ভগুলি গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে আনা হয়েছিল এবং একারণেই এর নামকরণ করা হয়েছিল সাঙ্গ-ই-দালান। তাঁর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে নওয়াব [[সিরাজউদ্দৌলা |সিরাজউদ্দৌলা]] কর্তৃক প্রাসাদটি দখলীকৃত এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আগ পর্যন্ত তাঁর (নওয়াজিশের) বিধবা পত্নী [[ঘসেটি বেগম |ঘসেটি বেগম]] এখানে বসবাস করতেন।


[[Image:NawajishKhanMosqueMotijheel.jpg|thumb|right|400px|নওয়াজিশ খান মসজিদ]]
নওয়াজিশ খানের মসজিদটি ‘কালা মসজিদ’ নামেও পরিচিত। হ্রদের বাঁকের উত্তরাংশে এর অবস্থান। নিদর্শনটির ফাসাদে নিবদ্ধ একটি ফারসি লিপিতে উল্লিখিত তথ্যানুযায়ী এটি ১১৬৩ হিজরিতে (১৭৪৯-৫০ খ্রি) নির্মিত। তবে শাসক বা রাজবংশের কোন উল্লেখ সেখানে নেই। জানা যায় যে, একখন্ড পবিত্র কুরআন এই মসজিদে সংরক্ষিত আছে এবং বিশ্বাস করা হয় যে, এটি নওয়াজিশ খান নিজ হস্তাক্ষরে লিখেছিলেন।
নওয়াজিশ খানের মসজিদটি ‘কালা মসজিদ’ নামেও পরিচিত। হ্রদের বাঁকের উত্তরাংশে এর অবস্থান। নিদর্শনটির ফাসাদে নিবদ্ধ একটি ফারসি লিপিতে উল্লিখিত তথ্যানুযায়ী এটি ১১৬৩ হিজরিতে (১৭৪৯-৫০ খ্রি) নির্মিত। তবে শাসক বা রাজবংশের কোন উল্লেখ সেখানে নেই। জানা যায় যে, একখন্ড পবিত্র কুরআন এই মসজিদে সংরক্ষিত আছে এবং বিশ্বাস করা হয় যে, এটি নওয়াজিশ খান নিজ হস্তাক্ষরে লিখেছিলেন।
[[Image:NawajishKhanMosqueMotijheel.jpg|thumb|right|নওয়াজিশ খান মসজিদ]]


মসজিদটি আয়তাকার পরিকল্পনায় তৈরি এবং তিনটি অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজের সাহায্যে আবৃত। পলকাটা নকশার গম্বুজগুলি অষ্টকোণাকার ড্রামের উপর ন্যস্ত এবং গম্বুজগুলির শীর্ষভাগ পদ্ম ও কলসচূড়া দ্বারা পরিশোভিত। মসজিদের চারকোণে চারটি অষ্টকোণাকার মিনার (পার্শ্ববুরুজ) উপরের দিকে উঠে গেছে। এদের শীর্ষদেশ সরু স্তম্ভের উপর তৈরি বাল্ব আকৃতির ছত্রী দ্বারা আবৃত। মিনারগুলির গাত্র অগভীর কুলুঙ্গি মোটিফ ও মোল্ডিং ব্যান্ড নকশায় অলংকৃত। ফাসাদটি পরিমার্জিতরূপে অলঙ্কৃত, তবে ব্যাতিক্রম শুধু ফ্রিজগুলি এবং খিলানের পাশের উল্লম্ব প্যানেলসমূহ, যেগুলি যথাক্রমে কার্টুশ ও কুলুঙ্গি মোটিফে অলঙ্কৃত। প্রধান প্রবেশদ্বারটি মূল দেওয়াল থেকে সম্মুখভাগে অভিক্ষিপ্ত এবং এর উভয় পাশে রয়েছে গুলদস্তা। অলঙ্কৃত মারলোন সহযোগে তৈরি ব্যাটেলমেন্ট প্যারাপেট এই নিদর্শনটিকে অধিকতর সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে।
মসজিদটি আয়তাকার পরিকল্পনায় তৈরি এবং তিনটি অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজের সাহায্যে আবৃত। পলকাটা নকশার গম্বুজগুলি অষ্টকোণাকার ড্রামের উপর ন্যস্ত এবং গম্বুজগুলির শীর্ষভাগ পদ্ম ও কলসচূড়া দ্বারা পরিশোভিত। মসজিদের চারকোণে চারটি অষ্টকোণাকার মিনার (পার্শ্ববুরুজ) উপরের দিকে উঠে গেছে। এদের শীর্ষদেশ সরু স্তম্ভের উপর তৈরি বাল্ব আকৃতির ছত্রী দ্বারা আবৃত। মিনারগুলির গাত্র অগভীর কুলুঙ্গি মোটিফ ও মোল্ডিং ব্যান্ড নকশায় অলংকৃত। ফাসাদটি পরিমার্জিতরূপে অলঙ্কৃত, তবে ব্যাতিক্রম শুধু ফ্রিজগুলি এবং খিলানের পাশের উল্লম্ব প্যানেলসমূহ, যেগুলি যথাক্রমে কার্টুশ ও কুলুঙ্গি মোটিফে অলঙ্কৃত। প্রধান প্রবেশদ্বারটি মূল দেওয়াল থেকে সম্মুখভাগে অভিক্ষিপ্ত এবং এর উভয় পাশে রয়েছে গুলদস্তা। অলঙ্কৃত মারলোন সহযোগে তৈরি ব্যাটেলমেন্ট প্যারাপেট এই নিদর্শনটিকে অধিকতর সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে।

০৮:২৬, ২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মতিঝিল কমপ্লেক্স, মুর্শিদাবাদ  মতিঝিল বা মুক্তাহ্রদ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে লালবাগের প্রায় দেড় কিমি দক্ষিণে এবং হাজারদুয়ারী প্রাসাদের প্রায় তিন কিমি দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। র‌্যানেলের মতে অশ্বক্ষুরাকৃতির হ্রদটি ছিল ভাগীরথী নদীর একটি সর্পিল বাঁকা গতিপথ। নদীটি একসময় এ এলাকার কাছ দিয়ে প্রবাহিত ছিল। হ্রদটি যে স্থানে বাঁক নিয়েছে সেখানে ‘সাঙ্গ-ই-দালান’ (পাথরের প্রাসাদ) নামে একটি নয়নাভিরাম প্রাসাদ, একটি উঁচু তোরণ, একটি মসজিদ এবং আরও কিছু সংখ্যক ইমারত নওয়াব আলীবর্দী খান এর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা নওয়াজিশ মুহম্মদ খান ওরফে শাহ্মাত জং কর্তৃক নির্মিত হয়। নওয়াজিশ খানের প্রাসাদটিতে ব্যবহূত নির্মাণ সামগ্রী বিশেষ করে কৃষ্ণ পাথরের স্তম্ভগুলি গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে আনা হয়েছিল এবং একারণেই এর নামকরণ করা হয়েছিল সাঙ্গ-ই-দালান। তাঁর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা কর্তৃক প্রাসাদটি দখলীকৃত এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আগ পর্যন্ত তাঁর (নওয়াজিশের) বিধবা পত্নী ঘসেটি বেগম এখানে বসবাস করতেন।

নওয়াজিশ খান মসজিদ

নওয়াজিশ খানের মসজিদটি ‘কালা মসজিদ’ নামেও পরিচিত। হ্রদের বাঁকের উত্তরাংশে এর অবস্থান। নিদর্শনটির ফাসাদে নিবদ্ধ একটি ফারসি লিপিতে উল্লিখিত তথ্যানুযায়ী এটি ১১৬৩ হিজরিতে (১৭৪৯-৫০ খ্রি) নির্মিত। তবে শাসক বা রাজবংশের কোন উল্লেখ সেখানে নেই। জানা যায় যে, একখন্ড পবিত্র কুরআন এই মসজিদে সংরক্ষিত আছে এবং বিশ্বাস করা হয় যে, এটি নওয়াজিশ খান নিজ হস্তাক্ষরে লিখেছিলেন।

মসজিদটি আয়তাকার পরিকল্পনায় তৈরি এবং তিনটি অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজের সাহায্যে আবৃত। পলকাটা নকশার গম্বুজগুলি অষ্টকোণাকার ড্রামের উপর ন্যস্ত এবং গম্বুজগুলির শীর্ষভাগ পদ্ম ও কলসচূড়া দ্বারা পরিশোভিত। মসজিদের চারকোণে চারটি অষ্টকোণাকার মিনার (পার্শ্ববুরুজ) উপরের দিকে উঠে গেছে। এদের শীর্ষদেশ সরু স্তম্ভের উপর তৈরি বাল্ব আকৃতির ছত্রী দ্বারা আবৃত। মিনারগুলির গাত্র অগভীর কুলুঙ্গি মোটিফ ও মোল্ডিং ব্যান্ড নকশায় অলংকৃত। ফাসাদটি পরিমার্জিতরূপে অলঙ্কৃত, তবে ব্যাতিক্রম শুধু ফ্রিজগুলি এবং খিলানের পাশের উল্লম্ব প্যানেলসমূহ, যেগুলি যথাক্রমে কার্টুশ ও কুলুঙ্গি মোটিফে অলঙ্কৃত। প্রধান প্রবেশদ্বারটি মূল দেওয়াল থেকে সম্মুখভাগে অভিক্ষিপ্ত এবং এর উভয় পাশে রয়েছে গুলদস্তা। অলঙ্কৃত মারলোন সহযোগে তৈরি ব্যাটেলমেন্ট প্যারাপেট এই নিদর্শনটিকে অধিকতর সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে।

পূর্বদিকে খাঁজ খিলানের দ্বারা নির্মিত তিনটি প্রবেশপথ সরাসরি এক আইল বিশিষ্ট নামায ঘরের দিকে উন্মুক্ত। কিবলা দেওয়ালে তিনটি মিহরাব আছে। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয়টি পাশেরগুলি থেকে বড়। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ পরিচ্ছন্ন, ভালভাবে সংরক্ষিত এবং ভেতরে দেওয়ালের উপরের স্টাকো নকশা এখনও দৃশ্যমান। মসজিদটি ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সংরক্ষিত নিদর্শন।

মসজিদের পূর্বদিকে একটি দেওয়াল ঘেরা স্থানে নওয়াজিশ খান, তাঁর পালক পুত্র একরামউদ্দৌলা এবং একরামের শিক্ষক ও নওয়াজিশ খানের সেনাপতির কবর আছে। দেওয়াল ঘেরা স্থানের বাইরে সাদামাটাভাবে নির্মিত একরামের সেবিকার একটি আলাদা কবর রয়েছে। মসজিদের পশ্চিমে এবং বেষ্টনীদেওয়ালের বাইরে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত উঁচু রাজকীয় তোরণ এখনও দন্ডায়মান। এটিও নওয়াজিশ খান কর্তৃক নির্মিত। মসজিদ সংলগ্ন আরেকটি ইমারত আছে। এটি ছিল কোষাগার বলে মনে করা হয়।  [সুতপা সিনহা]