মিত্র, প্যারীচাঁদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''মিত্র, প্যারীচাঁদ '''(১৮১৪-১৮৮৩)  লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী, ব্যবসায়ী। ১৮১৪ সালের ২২ জুলাই কলকাতায় তাঁর জন্ম। প্যারীচাঁদের পিতা রামনারায়ণ মিত্র প্রথম জীবনে হুগলি জেলার পানিসেহালা থেকে  [[কলকাতা|কলকাতা]] আগমন করেন। আঠারো শতকে ইউরোপীয় বণিকদের তাবেদারির মাধ্যমে যেসকল ভারতীয় বেনিয়া নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেন, রামনারায়ণ মিত্র ছিলেন তাঁদেরই একজন। প্যারীচাঁদ মিত্রের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পারিবারিক পরিমন্ডলে। তিনি পন্ডিত ও মুনশির নিকট যথাক্রমে বাংলা ও  [[ফারসি|ফারসি]] শেখেন। ১৮২৭ সালে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন এবং খ্যাতিমান শিক্ষক হেনরি ডিরোজিওর তত্ত্বাবধানে থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করেন।।
'''মিত্র, প্যারীচাঁদ '''(১৮১৪-১৮৮৩)  লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী, ব্যবসায়ী। ১৮১৪ সালের ২২ জুলাই কলকাতায় তাঁর জন্ম। প্যারীচাঁদের পিতা রামনারায়ণ মিত্র প্রথম জীবনে হুগলি জেলার পানিসেহালা থেকে  [[কলকাতা|কলকাতা]] আগমন করেন। আঠারো শতকে ইউরোপীয় বণিকদের তাবেদারির মাধ্যমে যেসকল ভারতীয় বেনিয়া নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেন, রামনারায়ণ মিত্র ছিলেন তাঁদেরই একজন। প্যারীচাঁদ মিত্রের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পারিবারিক পরিমন্ডলে। তিনি পন্ডিত ও মুনশির নিকট যথাক্রমে বাংলা ও  [[ফারসি|ফারসি]] শেখেন। ১৮২৭ সালে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন এবং খ্যাতিমান শিক্ষক হেনরি ডিরোজিওর তত্ত্বাবধানে থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করেন।।


[[Image:MitraParichand.jpg|right|thumb|200px|right|প্যারীচাঁদ মিত্র]]
কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে ১৮৩৬ সালে প্যারীচাঁদ মিত্রের কর্মজীবন শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে তিনি লাইব্রেরিয়ান এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি পদে অধিষ্ঠিত হন। পাবলিক লাইব্রেরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি প্যারীচাঁদ অত্যন্ত সফলভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি কয়েকটি বিনিয়োগ কোম্পানির অংশীদার ও পরিচালক ছিলেন। সেগুলির মধ্যে ছিল গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল কোম্পানি লিমিটেড, পোর্ট ক্যানিং গ্র্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি এবং হাওড়া ডকিং কোম্পানি। একজন সমাজহিতৈষী ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবে বাঙালির জাগরণে তাঁর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি সমাজের হিতার্থে তিনি বহু সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। জ্ঞানোপার্জিকা সভা (১৮৩০),  [[বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি|বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি]] (১৮৪৩), ডেভিড হেয়ার মেমোরিয়াল সোসাইটি (১৮৪৪), রেস ক্লাব (১৮৪৭), এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড হর্টিকালচারাল সোসাইটি (১৮৪৭),  [[বেথুন সোসাইটি|বেথুন সোসাইটি]] (১৮৫১) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে ১৮৩৬ সালে প্যারীচাঁদ মিত্রের কর্মজীবন শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে তিনি লাইব্রেরিয়ান এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি পদে অধিষ্ঠিত হন। পাবলিক লাইব্রেরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি প্যারীচাঁদ অত্যন্ত সফলভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি কয়েকটি বিনিয়োগ কোম্পানির অংশীদার ও পরিচালক ছিলেন। সেগুলির মধ্যে ছিল গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল কোম্পানি লিমিটেড, পোর্ট ক্যানিং গ্র্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি এবং হাওড়া ডকিং কোম্পানি। একজন সমাজহিতৈষী ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবে বাঙালির জাগরণে তাঁর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি সমাজের হিতার্থে তিনি বহু সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। জ্ঞানোপার্জিকা সভা (১৮৩০),  [[বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি|বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি]] (১৮৪৩), ডেভিড হেয়ার মেমোরিয়াল সোসাইটি (১৮৪৪), রেস ক্লাব (১৮৪৭), এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড হর্টিকালচারাল সোসাইটি (১৮৪৭),  [[বেথুন সোসাইটি|বেথুন সোসাইটি]] (১৮৫১) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।



০৫:৫১, ৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মিত্র, প্যারীচাঁদ (১৮১৪-১৮৮৩)  লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী, ব্যবসায়ী। ১৮১৪ সালের ২২ জুলাই কলকাতায় তাঁর জন্ম। প্যারীচাঁদের পিতা রামনারায়ণ মিত্র প্রথম জীবনে হুগলি জেলার পানিসেহালা থেকে  কলকাতা আগমন করেন। আঠারো শতকে ইউরোপীয় বণিকদের তাবেদারির মাধ্যমে যেসকল ভারতীয় বেনিয়া নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেন, রামনারায়ণ মিত্র ছিলেন তাঁদেরই একজন। প্যারীচাঁদ মিত্রের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পারিবারিক পরিমন্ডলে। তিনি পন্ডিত ও মুনশির নিকট যথাক্রমে বাংলা ও  ফারসি শেখেন। ১৮২৭ সালে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন এবং খ্যাতিমান শিক্ষক হেনরি ডিরোজিওর তত্ত্বাবধানে থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করেন।।

প্যারীচাঁদ মিত্র

কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে ১৮৩৬ সালে প্যারীচাঁদ মিত্রের কর্মজীবন শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে তিনি লাইব্রেরিয়ান এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি পদে অধিষ্ঠিত হন। পাবলিক লাইব্রেরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি প্যারীচাঁদ অত্যন্ত সফলভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি কয়েকটি বিনিয়োগ কোম্পানির অংশীদার ও পরিচালক ছিলেন। সেগুলির মধ্যে ছিল গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল কোম্পানি লিমিটেড, পোর্ট ক্যানিং গ্র্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি এবং হাওড়া ডকিং কোম্পানি। একজন সমাজহিতৈষী ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবে বাঙালির জাগরণে তাঁর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি সমাজের হিতার্থে তিনি বহু সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। জ্ঞানোপার্জিকা সভা (১৮৩০),  বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি (১৮৪৩), ডেভিড হেয়ার মেমোরিয়াল সোসাইটি (১৮৪৪), রেস ক্লাব (১৮৪৭), এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড হর্টিকালচারাল সোসাইটি (১৮৪৭),  বেথুন সোসাইটি (১৮৫১) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

প্যারীচাঁদ মিত্র বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। যেমন: জাস্টিস অব পিস (১৮৬৩), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো (১৮৬৪), জেল ও কিশোর অপরাধীদের সংশোধন কেন্দ্রের পরিদর্শক (১৮৬৪), কলকাতা হাইকোর্টের গ্র্যান্ড জুরি (১৮৬৮-১৮৭০), বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য (১৮৬৮-১৮৭০), কলকাতা মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট প্রভৃতি।

পরবর্তীকালে সাংবাদিকতা ও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্যই প্যারীচাঁদ বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। তিনি দি ইংলিশম্যান, ইন্ডিয়ান ফিল্ড,  হিন্দু প্যাট্রিয়ট, ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া এবং  বেঙ্গল স্পেক্টেটর পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে  আলালের ঘরের দুলাল (১৮৫৭), মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কি উপায় (১৮৫৯), রামারঞ্জিকা (১৮৬০), কৃষিপাঠ (১৮৬১), ডেভিড হেয়ারের জীবনচরিত (১৮৭৮) এবং বামাতোষিণী (১৮৮১)। ইংরেজি গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: A Biographical Sketch of David Hare (১৮৭৭), The Spiritual Stray Leaves (১৮৭৯), Stray Thought of Spiritualism (১৮৭৯), Life of Dewan Ramkamal Sen (১৮৮০) এবং Life of Coles Worthy Grant (১৮৮১)।

সাহিত্যক্ষেত্রে প্যারীচাঁদের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব আলালের ঘরের দুলাল যা বাংলা সাহিত্যের প্রথম  উপন্যাস হিসেবে খ্যাত। রচনারীতি ও ভাষাগত দিক থেকে এ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সূচনা করে। এ উপন্যাসে প্যারীচাঁদ প্রথমবারের মতো বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত গদ্যরীতির নিয়ম ভেঙ্গে চলিত ভাষারীতি প্রয়োগ করেন। সাধারণ মানুষের মুখে ব্যবহূত কথ্য ভাষা আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাসের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।  [সিরাজুল ইসলাম]