চক মসজিদ, মুর্শিদাবাদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''চক মসজিদ, মুর্শিদাবাদ'''  মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম বৃহৎ একটি মসজিদ। ১১৮১ হিজরিতে (১৭৬৭ খ্রি) নির্মিত এ মসজিদ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ শহরের কেন্দ্রে হাজার দুয়ারী প্রাসাদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কেল্লা নিজামতের দেওয়ালের শেষ সীমান্তে অবস্থিত।  শিলালিপির প্রমাণে জানা যায় যে, [[মীরজাফর আলী খান|'''মীরজাফর''']] (১৭৫৭-১৭৬০ এবং ১৭৬৩-১৭৬৫) এর স্ত্রী [[মুন্নী বেগম|মুন্নী বেগম]] মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং এ কারণে এটি ‘বেগম মসজিদ’ নামেও পরিচিত। মুর্শিদকুলী খানের ‘চিহিল সেতুন’ বা চল্লিশ স্তম্ভ বিশিষ্ট সভাকক্ষের স্থানে  শয়খ খলিলুল্লাহর তত্ত্বাবধানে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। ‘চিহিল সেতুন’টি এখন আর নেই।
[[Image:ChawkMosqueMurshidabad.jpg|thumb|400px|right|চক মসজিদ, মুর্শিদাবাদ]]
'''চক মসজিদ, মুর্শিদাবাদ'''  মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম বৃহৎ একটি মসজিদ। ১১৮১ হিজরিতে (১৭৬৭ খ্রি) নির্মিত এ মসজিদ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ শহরের কেন্দ্রে হাজার দুয়ারী প্রাসাদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কেল্লা নিজামতের দেওয়ালের শেষ সীমান্তে অবস্থিত।  শিলালিপির প্রমাণে জানা যায় যে, [[মীরজাফর আলী খান| মীরজাফর]] (১৭৫৭-১৭৬০ এবং ১৭৬৩-১৭৬৫) এর স্ত্রী [[মুন্নী বেগম|মুন্নী বেগম]] মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং এ কারণে এটি ‘বেগম মসজিদ’ নামেও পরিচিত। মুর্শিদকুলী খানের ‘চিহিল সেতুন’ বা চল্লিশ স্তম্ভ বিশিষ্ট সভাকক্ষের স্থানে  শয়খ খলিলুল্লাহর তত্ত্বাবধানে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। ‘চিহিল সেতুন’টি এখন আর নেই।


একটি বিচ্ছিন্ন শিলালিপির ফলক চক মসজিদ কমপ্লেক্সে পাওয়া গেছে। এতে নাসখ্ রীতিতে আরবি ভাষায় ধর্মীয় বাণী লিপিবদ্ধ আছে। শিলালিপিতে উল্লিখিত তারিখ ১২০৬ হিজরি (১৭৯১-৯২ খ্রি)। কিন্তু এতে কোনো রাজবংশ বা শাসকের নাম ছিল না।
একটি বিচ্ছিন্ন শিলালিপির ফলক চক মসজিদ কমপ্লেক্সে পাওয়া গেছে। এতে নাসখ্ রীতিতে আরবি ভাষায় ধর্মীয় বাণী লিপিবদ্ধ আছে। শিলালিপিতে উল্লিখিত তারিখ ১২০৬ হিজরি (১৭৯১-৯২ খ্রি)। কিন্তু এতে কোনো রাজবংশ বা শাসকের নাম ছিল না।


মসজিদটি একটি দেওয়াল ঘেরা অঙ্গনের মধ্যে অবস্থিত। এর পূর্বদিকে সুন্দরভাবে পলেস্তারায় অলঙ্কৃত একটি প্রক্ষিপ্ত প্রবেশপথ আছে। সীমানা দেওয়ালের কোণাগুলি অষ্টভুজাকৃতির চন্দ্রাতপ দ্বারা অলঙ্কৃত করা হয়েছে। ৩৮.১০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৬.১০ মিটার প্রস্থ এবং উচ্চতায় ১৩.৭২ মিটারের ইমারতটি দেখতে খুবই সুন্দর। প্রবেশপথটির পেছনে রয়েছে একটি প্রশস্ত অঙ্গন। এখানে ধর্মীয় শিক্ষা দানের জন্য কয়েকটি কক্ষ আছে।  
মসজিদটি একটি দেওয়াল ঘেরা অঙ্গনের মধ্যে অবস্থিত। এর পূর্বদিকে সুন্দরভাবে পলেস্তারায় অলঙ্কৃত একটি প্রক্ষিপ্ত প্রবেশপথ আছে। সীমানা দেওয়ালের কোণাগুলি অষ্টভুজাকৃতির চন্দ্রাতপ দ্বারা অলঙ্কৃত করা হয়েছে। ৩৮.১০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৬.১০ মিটার প্রস্থ এবং উচ্চতায় ১৩.৭২ মিটারের ইমারতটি দেখতে খুবই সুন্দর। প্রবেশপথটির পেছনে রয়েছে একটি প্রশস্ত অঙ্গন। এখানে ধর্মীয় শিক্ষা দানের জন্য কয়েকটি কক্ষ আছে।
 
[[Image:ChawkMosqueMurshidabad.jpg|thumb|400px|right|চক মসজিদ, মুর্শিদাবাদ]]


মসজিদটির ছাদ সাতটি গোলাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। এর কেন্দ্রীয় গম্বুজটি সর্ববৃহৎ এবং পার্শ্বস্থ ছয়টি গম্বুজকে উচ্চতা কমিয়ে ক্রমাগত ঢালু করে উভয় পার্শ্বে স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদের উভয় প্রান্তের গম্বুজ দুটি তুলনামূলকভাবে গোলাকার ছিল না, বরং অনেকটা তাজিয়ার মতো মোটা ও আয়তাকারের ছিল। মসজিদের পার্শ্বদেশস্থ দুটি উচু ও সরু মিনার উপরে স্থাপিত স্তম্ভাবলম্বিত ছত্রীসহ ইমারতের উলম্বতাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাঁচটি গম্বুজের মধ্যে তিনটির শীর্ষভাগ পদ্ম ও কলসচূঁড়া দ্বারা পরিশোভিত। সবগুলি গম্বুজই লতানো পাপড়ি দ্বারা অলঙ্কৃত গোলাকার পিপার উপর স্থাপিত ছিল।
মসজিদটির ছাদ সাতটি গোলাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। এর কেন্দ্রীয় গম্বুজটি সর্ববৃহৎ এবং পার্শ্বস্থ ছয়টি গম্বুজকে উচ্চতা কমিয়ে ক্রমাগত ঢালু করে উভয় পার্শ্বে স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদের উভয় প্রান্তের গম্বুজ দুটি তুলনামূলকভাবে গোলাকার ছিল না, বরং অনেকটা তাজিয়ার মতো মোটা ও আয়তাকারের ছিল। মসজিদের পার্শ্বদেশস্থ দুটি উচু ও সরু মিনার উপরে স্থাপিত স্তম্ভাবলম্বিত ছত্রীসহ ইমারতের উলম্বতাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাঁচটি গম্বুজের মধ্যে তিনটির শীর্ষভাগ পদ্ম ও কলসচূঁড়া দ্বারা পরিশোভিত। সবগুলি গম্বুজই লতানো পাপড়ি দ্বারা অলঙ্কৃত গোলাকার পিপার উপর স্থাপিত ছিল।
১২ নং লাইন: ১১ নং লাইন:
মসজিদটির সাতটি একক সুচাঁলো খিলান প্রবেশপথ আছে। এগুলির শীর্ষদেশে রয়েছে খাজকৃত খিলান যা কুলুঙ্গিত খিলান পটহের মধ্যে পলেস্তারায় অলঙ্কৃত ছিল। প্রত্যেকটি ফাসাদ ফুলেল ও জ্যামিতিক নকশা এবং পলেস্তারা রিলিফের মধ্যে খাঁজ খিলান আকৃতির কুলুঙ্গি নকশা দ্বারা সজ্জিত। খিলান ও কুলুঙ্গিগুলির বর্ডারসমূহ ফুলেল নকশা অথবা জ্যামিতিক নকশার বন্ধনী দ্বারা আবৃত। মসজিদের পূর্বদিকে সাতটি ‘বে’র মধ্যে মাঝের তিনটি ‘বে’ পার্শ্বস্থগুলি হতে প্রক্ষিপ্ত এবং সেগুলি বপ্র পর্যন্ত উঠে গেছে এবং ফাসাদের একঘেয়েমী পরিহার করার জন্য অভিক্ষেপগুলির উভয় পার্শ্বে বন্ধনী নকশা সমৃদ্ধ সরু সংযুক্ত স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। সাতটি ‘বে’-র খাঁজ খিলানগুলির উপরের দেওয়াল বহিঃগাত্রে পলেস্তারা অলঙ্করণসহ আয়তাকার নকশা দেখা যায়। মাঝের অভিক্ষপটির উপরের অংশ ফাঁকা রয়েছে। স্পষ্টত মনে হয় যে, শিলালিপি সংযুক্ত করার জন্যই জায়গাটি রাখা হয়েছিল। সেটি এখন আর নেই। মসজিদের বপ্রকে মারলোন নকশার সারিসহ ছিদ্রযুক্ত করা হয়েছে যা মুগল মসজিদগুলিতে দেখা যায়।
মসজিদটির সাতটি একক সুচাঁলো খিলান প্রবেশপথ আছে। এগুলির শীর্ষদেশে রয়েছে খাজকৃত খিলান যা কুলুঙ্গিত খিলান পটহের মধ্যে পলেস্তারায় অলঙ্কৃত ছিল। প্রত্যেকটি ফাসাদ ফুলেল ও জ্যামিতিক নকশা এবং পলেস্তারা রিলিফের মধ্যে খাঁজ খিলান আকৃতির কুলুঙ্গি নকশা দ্বারা সজ্জিত। খিলান ও কুলুঙ্গিগুলির বর্ডারসমূহ ফুলেল নকশা অথবা জ্যামিতিক নকশার বন্ধনী দ্বারা আবৃত। মসজিদের পূর্বদিকে সাতটি ‘বে’র মধ্যে মাঝের তিনটি ‘বে’ পার্শ্বস্থগুলি হতে প্রক্ষিপ্ত এবং সেগুলি বপ্র পর্যন্ত উঠে গেছে এবং ফাসাদের একঘেয়েমী পরিহার করার জন্য অভিক্ষেপগুলির উভয় পার্শ্বে বন্ধনী নকশা সমৃদ্ধ সরু সংযুক্ত স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। সাতটি ‘বে’-র খাঁজ খিলানগুলির উপরের দেওয়াল বহিঃগাত্রে পলেস্তারা অলঙ্করণসহ আয়তাকার নকশা দেখা যায়। মাঝের অভিক্ষপটির উপরের অংশ ফাঁকা রয়েছে। স্পষ্টত মনে হয় যে, শিলালিপি সংযুক্ত করার জন্যই জায়গাটি রাখা হয়েছিল। সেটি এখন আর নেই। মসজিদের বপ্রকে মারলোন নকশার সারিসহ ছিদ্রযুক্ত করা হয়েছে যা মুগল মসজিদগুলিতে দেখা যায়।


আয়তাকার প্রার্থনা কক্ষের দুটি অতিরিক্ত প্রবেশপথ আছে। এ প্রবেশপথ দুটির একটি উত্তর দিকে এবং অন্যটি দক্ষিণ দিকে। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ বাইরের মতোই পলেস্তার রিলিফে অলংকৃত। গম্বুজগুলির ভার পার্শ্বস্থ খাজ খিলান ও স্কুইঞ্চের উপর ন্যস্ত। এগুলি পলেস্তারায় পাতা নকশাপূর্ণ। মিহরাবগুলিও একইভাবে অলংকৃত। বাংলায় মুগল রীতির স্থাপত্যে পলেস্তারা অলংকরণ সম্পাদনের কাজ দেখা যায় ঢাকার [[খাজা শাহবাজ মসজিদ-সমাধি কমপ্লেক্স|খাজা শাহবাজ মসজিদ]][[খাজা শাহবাজ মসজিদ-সমাধি কমপ্লেক্স|ও সমাধি কমপ্লেক্স]] (১৬৭৯ খ্রি) এবং বর্ধমানের খাজা আনওয়ার সমাধি ও মসজিদে।  [সুতপা সিনহা]
আয়তাকার প্রার্থনা কক্ষের দুটি অতিরিক্ত প্রবেশপথ আছে। এ প্রবেশপথ দুটির একটি উত্তর দিকে এবং অন্যটি দক্ষিণ দিকে। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ বাইরের মতোই পলেস্তার রিলিফে অলংকৃত। গম্বুজগুলির ভার পার্শ্বস্থ খাজ খিলান ও স্কুইঞ্চের উপর ন্যস্ত। এগুলি পলেস্তারায় পাতা নকশাপূর্ণ। মিহরাবগুলিও একইভাবে অলংকৃত। বাংলায় মুগল রীতির স্থাপত্যে পলেস্তারা অলংকরণ সম্পাদনের কাজ দেখা যায় ঢাকার [[খাজা শাহবাজ মসজিদ-সমাধি কমপ্লেক্স|খাজা শাহবাজ মসজিদ-সমাধি কমপ্লেক্স]] (১৬৭৯ খ্রি) এবং বর্ধমানের খাজা আনওয়ার সমাধি ও মসজিদে।  [সুতপা সিনহা]


[[en:Chawk Mosque, Murshidabad]]
[[en:Chawk Mosque, Murshidabad]]

০৫:৫০, ২ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

চক মসজিদ, মুর্শিদাবাদ

চক মসজিদ, মুর্শিদাবাদ  মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম বৃহৎ একটি মসজিদ। ১১৮১ হিজরিতে (১৭৬৭ খ্রি) নির্মিত এ মসজিদ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ শহরের কেন্দ্রে হাজার দুয়ারী প্রাসাদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কেল্লা নিজামতের দেওয়ালের শেষ সীমান্তে অবস্থিত।  শিলালিপির প্রমাণে জানা যায় যে, মীরজাফর (১৭৫৭-১৭৬০ এবং ১৭৬৩-১৭৬৫) এর স্ত্রী মুন্নী বেগম মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং এ কারণে এটি ‘বেগম মসজিদ’ নামেও পরিচিত। মুর্শিদকুলী খানের ‘চিহিল সেতুন’ বা চল্লিশ স্তম্ভ বিশিষ্ট সভাকক্ষের স্থানে  শয়খ খলিলুল্লাহর তত্ত্বাবধানে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। ‘চিহিল সেতুন’টি এখন আর নেই।

একটি বিচ্ছিন্ন শিলালিপির ফলক চক মসজিদ কমপ্লেক্সে পাওয়া গেছে। এতে নাসখ্ রীতিতে আরবি ভাষায় ধর্মীয় বাণী লিপিবদ্ধ আছে। শিলালিপিতে উল্লিখিত তারিখ ১২০৬ হিজরি (১৭৯১-৯২ খ্রি)। কিন্তু এতে কোনো রাজবংশ বা শাসকের নাম ছিল না।

মসজিদটি একটি দেওয়াল ঘেরা অঙ্গনের মধ্যে অবস্থিত। এর পূর্বদিকে সুন্দরভাবে পলেস্তারায় অলঙ্কৃত একটি প্রক্ষিপ্ত প্রবেশপথ আছে। সীমানা দেওয়ালের কোণাগুলি অষ্টভুজাকৃতির চন্দ্রাতপ দ্বারা অলঙ্কৃত করা হয়েছে। ৩৮.১০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৬.১০ মিটার প্রস্থ এবং উচ্চতায় ১৩.৭২ মিটারের ইমারতটি দেখতে খুবই সুন্দর। প্রবেশপথটির পেছনে রয়েছে একটি প্রশস্ত অঙ্গন। এখানে ধর্মীয় শিক্ষা দানের জন্য কয়েকটি কক্ষ আছে।

মসজিদটির ছাদ সাতটি গোলাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। এর কেন্দ্রীয় গম্বুজটি সর্ববৃহৎ এবং পার্শ্বস্থ ছয়টি গম্বুজকে উচ্চতা কমিয়ে ক্রমাগত ঢালু করে উভয় পার্শ্বে স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদের উভয় প্রান্তের গম্বুজ দুটি তুলনামূলকভাবে গোলাকার ছিল না, বরং অনেকটা তাজিয়ার মতো মোটা ও আয়তাকারের ছিল। মসজিদের পার্শ্বদেশস্থ দুটি উচু ও সরু মিনার উপরে স্থাপিত স্তম্ভাবলম্বিত ছত্রীসহ ইমারতের উলম্বতাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাঁচটি গম্বুজের মধ্যে তিনটির শীর্ষভাগ পদ্ম ও কলসচূঁড়া দ্বারা পরিশোভিত। সবগুলি গম্বুজই লতানো পাপড়ি দ্বারা অলঙ্কৃত গোলাকার পিপার উপর স্থাপিত ছিল।

মসজিদটির সাতটি একক সুচাঁলো খিলান প্রবেশপথ আছে। এগুলির শীর্ষদেশে রয়েছে খাজকৃত খিলান যা কুলুঙ্গিত খিলান পটহের মধ্যে পলেস্তারায় অলঙ্কৃত ছিল। প্রত্যেকটি ফাসাদ ফুলেল ও জ্যামিতিক নকশা এবং পলেস্তারা রিলিফের মধ্যে খাঁজ খিলান আকৃতির কুলুঙ্গি নকশা দ্বারা সজ্জিত। খিলান ও কুলুঙ্গিগুলির বর্ডারসমূহ ফুলেল নকশা অথবা জ্যামিতিক নকশার বন্ধনী দ্বারা আবৃত। মসজিদের পূর্বদিকে সাতটি ‘বে’র মধ্যে মাঝের তিনটি ‘বে’ পার্শ্বস্থগুলি হতে প্রক্ষিপ্ত এবং সেগুলি বপ্র পর্যন্ত উঠে গেছে এবং ফাসাদের একঘেয়েমী পরিহার করার জন্য অভিক্ষেপগুলির উভয় পার্শ্বে বন্ধনী নকশা সমৃদ্ধ সরু সংযুক্ত স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। সাতটি ‘বে’-র খাঁজ খিলানগুলির উপরের দেওয়াল বহিঃগাত্রে পলেস্তারা অলঙ্করণসহ আয়তাকার নকশা দেখা যায়। মাঝের অভিক্ষপটির উপরের অংশ ফাঁকা রয়েছে। স্পষ্টত মনে হয় যে, শিলালিপি সংযুক্ত করার জন্যই জায়গাটি রাখা হয়েছিল। সেটি এখন আর নেই। মসজিদের বপ্রকে মারলোন নকশার সারিসহ ছিদ্রযুক্ত করা হয়েছে যা মুগল মসজিদগুলিতে দেখা যায়।

আয়তাকার প্রার্থনা কক্ষের দুটি অতিরিক্ত প্রবেশপথ আছে। এ প্রবেশপথ দুটির একটি উত্তর দিকে এবং অন্যটি দক্ষিণ দিকে। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ বাইরের মতোই পলেস্তার রিলিফে অলংকৃত। গম্বুজগুলির ভার পার্শ্বস্থ খাজ খিলান ও স্কুইঞ্চের উপর ন্যস্ত। এগুলি পলেস্তারায় পাতা নকশাপূর্ণ। মিহরাবগুলিও একইভাবে অলংকৃত। বাংলায় মুগল রীতির স্থাপত্যে পলেস্তারা অলংকরণ সম্পাদনের কাজ দেখা যায় ঢাকার খাজা শাহবাজ মসজিদ-সমাধি কমপ্লেক্স (১৬৭৯ খ্রি) এবং বর্ধমানের খাজা আনওয়ার সমাধি ও মসজিদে।  [সুতপা সিনহা]