রহমান, মোহাম্মদ সাইদুর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''রহমান, মোহাম্মদ সাইদুর '''(১৯৪০-২০০৭)  সাংবাদিক, পুঁথি সংগ্রাহক, লোকতত্ত্ববিদ। তিনি মোহাম্মদ সাইদুর নামে সমধিক পরিচিত। কিশোরগঞ্জ জেলার বিন্নগাঁও গ্রামে ১৯৪০ সালের ২৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ কুতুবউদ্দীন আহমদ এবং মাতা আনোয়ারা খাতুন (ফুলবানু)। পিতামহ আসমত আলী ব্যাপারীর সময় থেকে লোকসংস্কৃতির একটি আবহ সৃষ্টি হয় এ পরিবারে।
'''রহমান, মোহাম্মদ সাইদুর''' (১৯৪০-২০০৭)  সাংবাদিক, পুঁথি সংগ্রাহক, লোকতত্ত্ববিদ। তিনি মোহাম্মদ সাইদুর নামে সমধিক পরিচিত। কিশোরগঞ্জ জেলার বিন্নগাঁও গ্রামে ১৯৪০ সালের ২৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ কুতুবউদ্দীন আহমদ এবং মাতা আনোয়ারা খাতুন (ফুলবানু)। পিতামহ আসমত আলী ব্যাপারীর সময় থেকে লোকসংস্কৃতির একটি আবহ সৃষ্টি হয় এ পরিবারে।


মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আরম্ভ বিন্নগাঁও প্রাইমারি স্কুলে। পরে তমালতলা প্রাইমারি বিদ্যাপীঠ, কিশোরগঞ্জ মাইনর স্কুল (বর্তমান পিটিআই) এবং আজিমউদ্দিন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। কম্যুনিস্ট নেতা নগেন সরকার, অজয় রায়, রবি নিয়োগী (শেরপুর), আলতাফ আলী প্রমুখের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় তিনি সাংবাদিকতাও শুরু করেন। তিনি স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে, ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পূর্বদেশ-এ সংবাদ পরিবেশন করেন। সাপ্তাহিক চিত্রালীতেও তিনি স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে যুক্ত ছিলেন এবং কিশোরগঞ্জ বার্তার সম্পাদনার কাজও করেন। ১৯৫৬ সালে মওলানা ভাসানীর কাগমারী সম্মেলনে তিনি জারিগানের দল নিয়ে যোগদান করেন।
মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আরম্ভ বিন্নগাঁও প্রাইমারি স্কুলে। পরে তমালতলা প্রাইমারি বিদ্যাপীঠ, কিশোরগঞ্জ মাইনর স্কুল (বর্তমান পিটিআই) এবং আজিমউদ্দিন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। কম্যুনিস্ট নেতা নগেন সরকার, অজয় রায়, রবি নিয়োগী (শেরপুর), আলতাফ আলী প্রমুখের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় তিনি সাংবাদিকতাও শুরু করেন। তিনি স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে, ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পূর্বদেশ-এ সংবাদ পরিবেশন করেন। সাপ্তাহিক চিত্রালীতেও তিনি স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে যুক্ত ছিলেন এবং কিশোরগঞ্জ বার্তার সম্পাদনার কাজও করেন। ১৯৫৬ সালে মওলানা ভাসানীর কাগমারী সম্মেলনে তিনি জারিগানের দল নিয়ে যোগদান করেন।
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
মোহাম্মদ সাইদুর চন্দ্রাবতী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে চন্দ্রাবতীর ভণিতায় কিছু গানও লোকমুখ থেকে সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে দিয়ে তাঁর সংগ্রাহক-জীবনের সূত্রপাত হয়। তিনি দশটি লোককাহিনী সংগ্রহ ও বাঁধাই করে বাংলা একাডেমীতে জমা দেন। তিনি ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে বাংলা একাডেমীতে লোকসাহিত্য-সংগ্রাহক পদে যোগদান করেন এখানকার একটি সমৃদ্ধ লোকশিল্প যাদুঘর গড়ে তোলার মূলে তার সংগ্রহগুলোর অবদান অপরিসীম। বাংলা একাডেমী ছাড়া তিনি লোকশিল্প সংগ্রহে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এ ছাড়াও তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সাহচর্যে থেকে নক্সী কাঁথার একটি ভান্ডার গড়ে তোলেন। তিনি তাঁর নিজ গ্রাম বিন্নগাঁওয়ে একটি লোকশিল্প যাদুঘর গড়ে তুলেছেন। তিনি কারুশিল্পী পরিষদের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমীতে তাঁর একক লোকশিল্প সংগ্রহ প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৮ সালে লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল আর্ট গ্যালারিতে ওপেন এয়ার প্রদর্শনীতে তাঁর নিজস্ব লোকশিল্প সংগ্রহের প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৯ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত যৌথভাবে ‘নকসী কাঁথা প্রদর্শনী’ করেন। এ উপলক্ষে তাঁর কয়েকটি লোকশিল্পের বিষয়ভিত্তিক সচিত্র ইংরেজি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
মোহাম্মদ সাইদুর চন্দ্রাবতী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে চন্দ্রাবতীর ভণিতায় কিছু গানও লোকমুখ থেকে সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে দিয়ে তাঁর সংগ্রাহক-জীবনের সূত্রপাত হয়। তিনি দশটি লোককাহিনী সংগ্রহ ও বাঁধাই করে বাংলা একাডেমীতে জমা দেন। তিনি ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে বাংলা একাডেমীতে লোকসাহিত্য-সংগ্রাহক পদে যোগদান করেন এখানকার একটি সমৃদ্ধ লোকশিল্প যাদুঘর গড়ে তোলার মূলে তার সংগ্রহগুলোর অবদান অপরিসীম। বাংলা একাডেমী ছাড়া তিনি লোকশিল্প সংগ্রহে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এ ছাড়াও তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সাহচর্যে থেকে নক্সী কাঁথার একটি ভান্ডার গড়ে তোলেন। তিনি তাঁর নিজ গ্রাম বিন্নগাঁওয়ে একটি লোকশিল্প যাদুঘর গড়ে তুলেছেন। তিনি কারুশিল্পী পরিষদের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমীতে তাঁর একক লোকশিল্প সংগ্রহ প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৮ সালে লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল আর্ট গ্যালারিতে ওপেন এয়ার প্রদর্শনীতে তাঁর নিজস্ব লোকশিল্প সংগ্রহের প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৯ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত যৌথভাবে ‘নকসী কাঁথা প্রদর্শনী’ করেন। এ উপলক্ষে তাঁর কয়েকটি লোকশিল্পের বিষয়ভিত্তিক সচিত্র ইংরেজি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।


সাইদুর রহমান তাঁর কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ এবং ২০০২ সালে কারুশিল্পী পরিষদ থেকে সম্মাননা পান। ২০০৭ সালের ৩ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।
সাইদুর রহমান তাঁর কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ এবং ২০০২ সালে কারুশিল্পী পরিষদ থেকে সম্মাননা পান। ২০০৭ সালের ৩ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়। [শওকত হোসেন]
 
[শওকত হোসেন]


[[en:Rahman, Mohammad Saidur]]
[[en:Rahman, Mohammad Saidur]]

০৮:৫৭, ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

রহমান, মোহাম্মদ সাইদুর (১৯৪০-২০০৭)  সাংবাদিক, পুঁথি সংগ্রাহক, লোকতত্ত্ববিদ। তিনি মোহাম্মদ সাইদুর নামে সমধিক পরিচিত। কিশোরগঞ্জ জেলার বিন্নগাঁও গ্রামে ১৯৪০ সালের ২৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ কুতুবউদ্দীন আহমদ এবং মাতা আনোয়ারা খাতুন (ফুলবানু)। পিতামহ আসমত আলী ব্যাপারীর সময় থেকে লোকসংস্কৃতির একটি আবহ সৃষ্টি হয় এ পরিবারে।

মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আরম্ভ বিন্নগাঁও প্রাইমারি স্কুলে। পরে তমালতলা প্রাইমারি বিদ্যাপীঠ, কিশোরগঞ্জ মাইনর স্কুল (বর্তমান পিটিআই) এবং আজিমউদ্দিন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। কম্যুনিস্ট নেতা নগেন সরকার, অজয় রায়, রবি নিয়োগী (শেরপুর), আলতাফ আলী প্রমুখের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় তিনি সাংবাদিকতাও শুরু করেন। তিনি স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে, ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পূর্বদেশ-এ সংবাদ পরিবেশন করেন। সাপ্তাহিক চিত্রালীতেও তিনি স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে যুক্ত ছিলেন এবং কিশোরগঞ্জ বার্তার সম্পাদনার কাজও করেন। ১৯৫৬ সালে মওলানা ভাসানীর কাগমারী সম্মেলনে তিনি জারিগানের দল নিয়ে যোগদান করেন।

মোহাম্মদ সাইদুর চন্দ্রাবতী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে চন্দ্রাবতীর ভণিতায় কিছু গানও লোকমুখ থেকে সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে দিয়ে তাঁর সংগ্রাহক-জীবনের সূত্রপাত হয়। তিনি দশটি লোককাহিনী সংগ্রহ ও বাঁধাই করে বাংলা একাডেমীতে জমা দেন। তিনি ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে বাংলা একাডেমীতে লোকসাহিত্য-সংগ্রাহক পদে যোগদান করেন এখানকার একটি সমৃদ্ধ লোকশিল্প যাদুঘর গড়ে তোলার মূলে তার সংগ্রহগুলোর অবদান অপরিসীম। বাংলা একাডেমী ছাড়া তিনি লোকশিল্প সংগ্রহে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এ ছাড়াও তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সাহচর্যে থেকে নক্সী কাঁথার একটি ভান্ডার গড়ে তোলেন। তিনি তাঁর নিজ গ্রাম বিন্নগাঁওয়ে একটি লোকশিল্প যাদুঘর গড়ে তুলেছেন। তিনি কারুশিল্পী পরিষদের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমীতে তাঁর একক লোকশিল্প সংগ্রহ প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৮ সালে লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল আর্ট গ্যালারিতে ওপেন এয়ার প্রদর্শনীতে তাঁর নিজস্ব লোকশিল্প সংগ্রহের প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৯ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত যৌথভাবে ‘নকসী কাঁথা প্রদর্শনী’ করেন। এ উপলক্ষে তাঁর কয়েকটি লোকশিল্পের বিষয়ভিত্তিক সচিত্র ইংরেজি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

সাইদুর রহমান তাঁর কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ এবং ২০০২ সালে কারুশিল্পী পরিষদ থেকে সম্মাননা পান। ২০০৭ সালের ৩ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়। [শওকত হোসেন]