উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৩ নং লাইন: | ৩ নং লাইন: | ||
মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান (মিলিয়ন টাকায়) | মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান (মিলিয়ন টাকায়) | ||
{| class="table table-bordered table-hover" | {| class="table table-bordered table-hover" | ||
|- | |- | ||
| বিবরণ || ২০১৮ || ২০১৯ || ২০২০ | |||
|- | |||
| অনুমোদিত মূলধন || ৬০০০ || ৬০০০ || ১০০০০ | | অনুমোদিত মূলধন || ৬০০০ || ৬০০০ || ১০০০০ | ||
|- | |- |
০৪:২০, ৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড দেশের অন্যতম পুরাতন ও বৃহত্তম বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন একটি তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কর্পোরেশনটি একই বছরের ২২ জুন কার্যক্রম শুরু করে। ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ তারিখে এটি ঢাকা ক্লিয়ারিং হাউস-এর সদস্য হয়। কর্পোরেশনটি ১.৪২ মিলিয়ন টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে এবং প্রথম বছর ১০ মিলিয়ন টাকা আমানত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। এটি সম্পূর্ণভাবে বাঙালি তথা পূর্ব পাকিস্তানের কতিপয় ক্ষুদ্র আয়সম্পন্ন উদ্যোক্তা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা এর পরিশোধিত মূলধনের পুরোটাই যোগান দেয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ব্যাংকস (ন্যাশনালাইজেশন) অধ্যাদেশ ১৯৭২-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশনকে অন্যান্য ব্যাংকের ন্যায় জাতীয়করণ করে এবং উত্তরা ব্যাংক নাম দিয়ে এর ৯৫% মালিকানা গ্রহণ করে। এ সময়ে বাংলাদেশে ব্যাংকটির মোট ১৮২টি শাখা ছিল। ১৯৮৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটিকে একটি লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করা হয় এবং বেসরকারি খাতের শেয়ারহোল্ডারদের নিকট শেয়ার মালিকানা হস্তান্তর করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর ২,০০০ তারিখে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড-এর অনুমোদিত মূলধন ২০০ মিলিয়ন টাকায় বৃদ্ধি করা হয় এবং তা প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের ২ মিলিয়ন সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত ছিল। প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, এমডি এবং ১২ জন পরিচালক সমন্বয়ে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ কর্তক ব্যাংকটি পরিচালিত হয়। এটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এর তালিকাভুক্ত।
মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান (মিলিয়ন টাকায়)
বিবরণ | ২০১৮ | ২০১৯ | ২০২০ |
অনুমোদিত মূলধন | ৬০০০ | ৬০০০ | ১০০০০ |
পরিশোধিত মূলধন | ৪০০০.৮ | ৪০৮০.৮ | ৫০১৯.৪ |
রিজার্ভ | ১০৭৮১.৪ | ১১৫৮১.৪ | ১২৪৪৯.৭ |
আমানত | ১৫৩০৫৭.৮ | ১৫৬৯২১.১ | ১৮১২৭৫.৫ |
ক) তলবি আমানত | ৬৭৮৫৫.২ | ৬৪৮৩২.২ | ৭১১৮৯.৬ |
খ) মেয়াদি আমানত | ৮৫২০২.৬ | ৯২০৮৮.৯ | ১১০৮৫.৯ |
ঋণ ও অগ্রিম | ১১৮৭৮৯.৭ | ১২৪৬৭০.৭ | ১৩৩৮৫৪ |
বিনিয়োগ | ২৮৬৬৯.৩ | ২৯৯০৩.১ | ৩১৩৪৭.৩ |
মোট পরিসম্পদ | ১৯০০২৯.৯ | ১৯৩১৬১.৬ | ২২২৬০০.২ |
মোট আয় | ১৭০৯৭.৫ | ১৭২২৫.২ | ১৫৭৩২.৩ |
মোট ব্যয় | ১৩১৮৬ | ১২৪১৮.৯ | ১১৮৫০ |
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা পরিচালনা | ১১১৯৩০.৩ | ১১২২৭৯ | ১১২৩৫২.৪ |
ক) রপ্তানি | ১৭১১৫.৭ | ২৩৩২২.২ | ৬১৫৯৪.২ |
খ) আমদানি | ৫৬০১৮ | ৫৬৩০৭.৭ | ২৬০২২.১ |
গ) রেমিট্যান্স | ৩৮৭৯৬.৬ | ৩২৬৪৯.১ | ২৪৭৩৬.১ |
মোট জনশক্তি (সংখ্যায়) | ৩৫২৭ | ৩৫১৫ | ৩৮০১ |
ক) কর্মকর্তা | ২৯৫৮ | ৩০১৮ | ২৮৯৭ |
খ) কর্মচারি | ৫৬৯ | ৪৯৭ | ৯০৪ |
বিদেশি প্রতিসংগী ব্যাংক (সংখ্যায়) | ৫৩৬ | ৫২৬ | ৩৮০ |
শাখা (সংখ্যায়) | ২৩৫ | ২৩৯ | ২৪১ |
ক) দেশে | ২৩৫ | ২৩৯ | ২৪১ |
খ) বিদেশে | ০ | ০ | ০ |
কৃষিখাতে | |||
ক) ঋণ বিতরণ | ১৭২৬.৮ | ২০৯২.৭ | ২৯৭৮.২ |
খ) আদায় | ১১১৬.৩ | ২৪৪৮.৪ | ২০৬০.৮ |
শিল্পখাতে | |||
ক) ঋণ বিতরণ | ৩৭২৭৮.৬ | ১৮২৬৮.৬ | ৩১৬৯১.২ |
খ) আদায় | ৩৪৫১৮.৪ | ৩৮৪৪৯.৬ | ২৯৬৪২.১ |
খাতভিত্তিক ঋণের স্থিতি | |||
ক) কৃষি ও মৎস্য | ২৮০৫.৫ | ২৪২৩.৭ | ৩৩৯৮.১ |
খ) শিল্প | ১০৪৭৫.৬ | ৬৬২৪.২ | ৮৬২৪.১ |
গ) ব্যবসা বাণিজ্য | ৫২৭৫০.৩ | ৫০৯৪২.৬ | ৫৪১৬৪.২ |
ঘ) দারিদ্র্য বিমোচন | ১৫৯.৩ | ৩.৫ | |
সি.এস.আর | ৯২.৯ | ৩৮.২ | ৭৯.২ |
উৎস আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২১।
উত্তরা ব্যাংক সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ন্যায় ব্যাংকিং কার্যক্রম ছাড়াও সরকারের ক্রয় ও রাজস্ব আহরণ কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের ৬৬২টি বৈদেশিক এজেন্ট ও প্রতিনিধি এবং ৩৮০টি এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে কাতারের দোহায় অবস্থিত এরাবিয়ান এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। অপরদিকে আমেরিকাভিত্তিক আন্তর্জাাতিক অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান গড়হবু এৎধস-এর সাথে উত্তরা ব্যাংকের সম্পাদিত চুক্তির আওতায় পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রবাসীরা বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারেন। প্রেরিত অর্থ স্বল্প সময়ে ব্যাংকের ২৪১টি শাখার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়/বিনিয়োগে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা মেয়াদি আমানত (NFCD), বৈদেশিক মুদ্রা চলতি আমানত (FCCD), ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড (WEDB) এবং অনিবাসী বিনিয়োগ টাকা হিসাব (NRITA) চালু করেছে। এসব তদারকির জন্য প্রধান কার্যালয়ে হোম রেমিট্যান্স সেল (HRC) রয়েছে। যে কোনো বাংলাদেশী নাগরিক ভ্রমণকালে বৈধ উপায়ে যে কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা এবং ভ্রমণ কোটা থেকে উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তরা ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলার শাখাগুলোতে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসাব (RFCD) খুলতে পারেন। ২০২০ সালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৪,৭৩৬ মিলিয়ন টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৩২,৬৪৯ মিলিয়ন টাকা। উত্তরা ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত এক্সপ্রেস পেমেন্ট স্কীম-এর অধীনে বিশ্বের যে কোনো প্রাšত থেকে প্রেরিত অর্থ আসার দু’ঘণ্টার মধ্যে প্রাপকের অ্যাকাউন্টে জমা নিশ্চিত করা হয়। ব্যাংকের ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ স্কীম-এর মাধ্যমে যে সকল গ্রাহকের উত্তরা ব্যাংকে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই তাঁরা তাঁদের পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেমিট্যান্স কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড প্রদর্শনপূর্বক বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ কাউন্টারে নগদ গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া পূর্ব সমঝোতার ভিত্তিতে অর্থ প্রেরণকারী কোম্পানি কর্তৃক প্রেরিত ড্রাফট প্রাপকের ঠিকানায় পৌঁছিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ টাকা পরিশোধের জন্য ইনস্ট্যান্ট ড্রাফট নামে একটি স্কীমও চালু রয়েছে।
বৈদেশিক বাণিজ্যে দ্রুততম সেবা প্রদানের জন্য প্রধান কার্যালয় এবং প্রায় সকল শাখায় ই-মেইল ও ইন্টারনেট চালু রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিভাগসহ ৩৮টি শাখায় SWIFT-এর কার্যক্রম চালু আছে। গ্রাহকদের সেবা প্রদানের জন্য ২০০৮ সালে উত্তরা ব্যাংক Q-Cash, UBL-ATM ডেবিট কার্ড চালু করে, যার মাধ্যমে গ্রাহকবৃন্দ ২৪ ঘণ্টা নগদ টাকা ওঠানোর সুবিধা পাচ্ছেন। ব্যাংকের একটি নিজস্ব এটিএম বুথ রয়েছে এবং সমগ্র দেশে ১২১টি Q-Cash এটিএম বুথ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের সকল এটিএম বুথ-এর মাধ্যমে এ সুবিধা চালু রয়েছে। এছাড়া ২০০৮ সালে ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ খাতে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানের জন্য ‘নারী স্বর্নিভর ঋণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে।
ব্যাংক যে সকল ক্ষেত্রে তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে সেগুলো প্রধানত আমদানি ও রপ্তানি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, স্টীল রি-রোলিং কারখানা, তৈরি পোশাক শিল্প, টেক্সটাইল, ভোজ্যতেল, সিমেন্ট কারখানা ইত্যাদি। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দিতে ব্যাংক কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যবসায়িক লেনদেন ও সহ-জামানতের উপর গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি প্রদত্ত ঋণের মান উন্নত রাখা এবং ঋণ শ্রেণীকৃত হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করার জন্য ঋণ তদারকি বিভাগের কার্যক্রম জোরদারকরা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের মোট ঋণের তুলনায় শ্রেণীকৃত ঋণের হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। ব্যাংক সিন্ডিকেটেড অর্থসংস্থানের আওতায় যে সব কোম্পানিকে ঋণ প্রদান করেছে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্র্যাক, ঢাকা টেলিফোন কোং লিঃ, র্যাংকস্ টেল লিঃ, বিএসআরএম স্টীলস্ লিমিটেড, গ্রামীণ ফোন লিমিটেড, ওয়ারিদ টেলিকম লিমিটেড, সেবা টেলিকম লিমিটেড, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এনার্জি লিমিটেড, আকবর কম্পোজিট লিমিটেড, রাইজিং স্পিনিং লিমিটেড, মালঞ্চ হোল্ডিং লিমিটেড ও বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড ইত্যাদি।
দেশের শহর ও গ্রামের স্বল্প আয়ের লোকদের আর্থিক প্রয়োজন নিরসনে এবং বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থানের নিমিত্ত ব্যাংকের বিশেষ ঋণদান কর্মসূচি রয়েছে। ব্যাংক বিত্তহীন জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার ভাগলপুর শাখার মাধ্যমে দুগ্ধ উৎপাদন ও হাঁস-মুরগি পালন খাতে ঋণ প্রদান করে আসছে। ১৯৯৬ সালের অক্টোবর থেকে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড উত্তরণ শীর্ষক ভোগ্যপণ্য ক্রয় সহায়তা প্রকল্প চালু রেখেছে যা দেশের প্রান্তিক গ্রাহকদের মাঝে দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
২০২০ সালে ব্যাংকের আমানত ও ঋণ অগ্রিমের স্থিতির অংশ ছিল ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত ও ঋণ অগ্রিমের স্থিতির যথাক্রমে ১.২ এবং ১.১ শতাংশ এবং আমানত ও ঋণ অগ্রিমের গড় সুদহার ব্যবধান দাঁড়ায় ৪.৯ শতাংশ। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]