মুলাদী উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
(হালনাগাদ) |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''মুলাদী উপজেলা''' ([[ | '''মুলাদী উপজেলা''' ([[বরিশাল জেলা]]) আয়তন: ২৬০.৮৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৭´ থেকে ২৩°০৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৭´ থেকে ৯০°২৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গোসাঁইরহাট উপজেলা, দক্ষিণে বরিশাল সদর উপজেলা, পূর্বে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে কালকিনি, গৌরনদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা। | ||
''জনসংখ্যা'' | ''জনসংখ্যা'' ১৭৪৭৭৫; পুরুষ ৮২৫৪৫, মহিলা ৯২২৩০। মুসলিম ১৭১৪৮৫, হিন্দু ৩২৭৫, বৌদ্ধ ৮, খ্রিস্টান ২ এবং অন্যান্য ৫। | ||
''জলাশয়'' নয়া ভাঙ্গনী, আড়িয়াল খাঁ ও খালিয়ার নদী উল্লেখযোগ্য। | ''জলাশয়'' নয়া ভাঙ্গনী, আড়িয়াল খাঁ ও খালিয়ার নদী উল্লেখযোগ্য। | ||
১৬ নং লাইন: | ১৬ নং লাইন: | ||
| শহর || গ্রাম || শহর || গ্রাম | | শহর || গ্রাম || শহর || গ্রাম | ||
|- | |- | ||
| ১ || ৭ | | ১ || ৭ || ৭৭ || ১০২ || ২০৪৯০ || ১৫৪২৮৫ || ৬৭০ || ৬২.৬ || ৫৫.১ | ||
|} | |} | ||
{| class="table table-bordered table-hover" | {| class="table table-bordered table-hover" | ||
|- | |- | ||
| colspan=" | | colspan="10" | উপজেলা শহর | ||
|- | |- | ||
| আয়তন (বর্গ কিমি) || | | আয়তন (বর্গ কিমি) || ওয়ার্ড | ||
|মহল্লা|| লোকসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) || শিক্ষার হার (%) | |||
|- | |- | ||
| | | ১৬.৯৬ || ৯ || ১৪ || ২০৪৯০ || ১২০৮ || ৬২.৬ | ||
|} | |} | ||
{| class="table table-bordered table-hover" | {| class="table table-bordered table-hover" | ||
৩৪ নং লাইন: | ৩৫ নং লাইন: | ||
| পুরুষ || মহিলা | | পুরুষ || মহিলা | ||
|- | |- | ||
| কাজীর চর ৪৭ | | কাজীর চর ৪৭ || ৮০৪১ || ৯২৮৫ || ১০৩০২ || ৫৫.৯ | ||
|- | |- | ||
| গাছুয়া ৩৫ | | গাছুয়া ৩৫ || ৫৮৪৪ || ৭৪৭০ || ৮৪৬৭ || ৫৫.৭ | ||
|- | |- | ||
| চর কালেখাঁন ২৩ | | চর কালেখাঁন ২৩ || ৫১৭৬ || ৮৯৬১ || ১০০৬২ || ৫৩.৪ | ||
|- | |- | ||
| নাজিরপুর ৭১ | | নাজিরপুর ৭১ || ৮১৫৬ || ১০৬৯২ || ১১৮২৫ || ৫৬.৮ | ||
|- | |- | ||
| বাটামারা ১১ | | বাটামারা ১১ || ৭৬৪০ || ১০১০৫ || ১১৮৩৫ || ৫৮.৩ | ||
|- | |- | ||
| মুলাদী ৫৯ | | মুলাদী ৫৯ || ৭২৩৬ || ১০২৯৩ || ১১২৬৩ || ৫৬.৫ | ||
|- | |- | ||
| সফিপুর ৮৩ | | সফিপুর ৮৩ || ১০৬৪৮ || ১৫৫২৪ || ১৮২০১ || ৫০.৯ | ||
|} | |} | ||
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট | ''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। | ||
[[Image:MuladiUpazila.jpg|thumb|400px|right]] | [[Image:MuladiUpazila.jpg|thumb|400px|right]] | ||
''প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ'' গাছা মিয়াবাড়ীর মসজিদ, সৈয়দেরগাঁও গ্রামের প্রাচীন মসজিদ, গঙ্গাপুর গ্রামের সুলতান খার মসজিদ। | ''প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ'' গাছা মিয়াবাড়ীর মসজিদ, সৈয়দেরগাঁও গ্রামের প্রাচীন মসজিদ, গঙ্গাপুর গ্রামের সুলতান খার মসজিদ। | ||
''ঐতিহাসিক | ''ঐতিহাসিক ঘটনা'' মুলাদী উপজেলা এক সময় ছিল ঢাকা-জামালপুর রাজস্ব জেলার অন্তর্গত। ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত এ জেলায় একটি মাত্র মধ্যস্বত্ব ছিল এবং ১৯০৮ সাল নাগাদ এ অঞ্চলে অনেকগুলো মধ্যস্বত্ব সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে তালুকদার ও হাওলাদার শ্রেণীই ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী মধ্যস্বত্ব। ১৯৫১ সালে জমিদারি উচ্ছেদ হলে মুলাদী থানায় একজন রাজস্ব সার্কেল অফিসার নিযুক্ত হয়। ১৯০৫ সালের বঙ্গ-ভঙ্গ আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন এবং বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে মুলাদী উপজেলার অধিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। | ||
''মুক্তিযুদ্ধ'' ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুলাদিতে পাকসেনারা নদীর দুই পাশ দিয়ে মর্টার ও মেশিনগানের গুলিতে ৪২ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা নন্দীল বাজারে পাকবাহিনীর গানবোট ডুবিয়ে দেওয়ায় সেখানে তারা ব্যাপক হত্যাকা- চালায়। কালীগঞ্জ এলাকায় সপ্তাহব্যাপী পাকবাহিনী ধ্বংস যজ্ঞ চালায়। উপজেলায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে যেসব যুদ্ধ হয় সেগুলির মধ্যে মুলাদী থানা আক্রমণ এবং আড়িয়াল খাঁ নদীতে (হোসনাবাদ চর লঞ্চঘাটে) সংঘটিত যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। খাসেরহাটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ১টি গণসমাধি রয়েছে। | |||
'' | ''বিস্তারিত দেখুন'' মুলাদী উপজেলা, ''বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ'', বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮। | ||
''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান'' মসজিদ ৪৪০, মন্দির ১৮, গির্জা ১, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কাজীবাড়ি জামে মসজিদ, আইনউদ্দিন ফকিরের মাযার, জাহেনদ্দি ফকিরের মাযার। | ''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান'' মসজিদ ৪৪০, মন্দির ১৮, গির্জা ১, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কাজীবাড়ি জামে মসজিদ, আইনউদ্দিন ফকিরের মাযার, জাহেনদ্দি ফকিরের মাযার। | ||
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার | ''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৫৬.০%; পুরুষ ৫৬.১%, মহিলা ৫৫.৯%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৭, কিন্ডার গার্টেন ১, মাদ্রাসা ১৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মুলাদী কলেজ, কাজীর চর কলেজ, কাজীর চর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুলাদী জি এম বালিকা বিদ্যালয়, ভেদুরিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯২), তয়ক-টমচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪৫), গাছুয়া পরপদ্মা সিনিয়র মাদ্রাসা। | ||
''সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান'' লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ১, নাট্যদল ২, থিয়েটার সংগঠন ১, খেলার মাঠ ১০, ক্লাব ১৮। | ''সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান'' লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ১, নাট্যদল ২, থিয়েটার সংগঠন ১, খেলার মাঠ ১০, ক্লাব ১৮। | ||
৮১ নং লাইন: | ৭৮ নং লাইন: | ||
''মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার'' মৎস্য ৫০, গবাদিপশু ৭, হাঁস-মুরগি ২৭। | ''মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার'' মৎস্য ৫০, গবাদিপশু ৭, হাঁস-মুরগি ২৭। | ||
''যোগাযোগ বিশেষত্ব'' পাকারাস্তা | ''যোগাযোগ বিশেষত্ব'' পাকারাস্তা ২৯.২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৮.৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৭৪.১ কিমি; নৌপথ ২০ কিমি। | ||
''শিল্প ও কলকারখানা'' রাইসমিল ২৫, স’মিল ৪০, চিড়াকল ১, ডালকল ২, আটাকল ১, আইস ফ্যাক্টরি ৫, ওয়েল্ডিং কারখানা ১৬। | ''শিল্প ও কলকারখানা'' রাইসমিল ২৫, স’মিল ৪০, চিড়াকল ১, ডালকল ২, আটাকল ১, আইস ফ্যাক্টরি ৫, ওয়েল্ডিং কারখানা ১৬। | ||
৯১ নং লাইন: | ৮৮ নং লাইন: | ||
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য'' পান, সুপারি, ডাল, ধান, আমড়া। | ''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য'' পান, সুপারি, ডাল, ধান, আমড়া। | ||
''বিদ্যুৎ ব্যবহার'' এ উপজেলার সবক’টি | ''বিদ্যুৎ ব্যবহার'' এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৯.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। | ||
''পানীয়জলের উৎস'' নলকূপ ৯১. | ''পানীয়জলের উৎস'' নলকূপ ৯১.৮%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ৭.৭%। | ||
''স্যানিটেশন ব্যবস্থা'' এ উপজেলায় | ''স্যানিটেশন ব্যবস্থা'' এ উপজেলায় ৮৫.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৩.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই। | ||
''স্বাস্থ্যকেন্দ্র'' উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩। | ''স্বাস্থ্যকেন্দ্র'' উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩। | ||
১০৩ নং লাইন: | ১০০ নং লাইন: | ||
''এনজিও'' ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, দিশা, আরডিও। [মো. মিজানুর রহমান] | ''এনজিও'' ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, দিশা, আরডিও। [মো. মিজানুর রহমান] | ||
'''তথ্যসূত্র''' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মুলাদী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭। | '''তথ্যসূত্র''' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মুলাদী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭। | ||
[[en:Muladi Upazila]] | [[en:Muladi Upazila]] |
০৯:০৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মুলাদী উপজেলা (বরিশাল জেলা) আয়তন: ২৬০.৮৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৭´ থেকে ২৩°০৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৭´ থেকে ৯০°২৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গোসাঁইরহাট উপজেলা, দক্ষিণে বরিশাল সদর উপজেলা, পূর্বে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে কালকিনি, গৌরনদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৭৪৭৭৫; পুরুষ ৮২৫৪৫, মহিলা ৯২২৩০। মুসলিম ১৭১৪৮৫, হিন্দু ৩২৭৫, বৌদ্ধ ৮, খ্রিস্টান ২ এবং অন্যান্য ৫।
জলাশয় নয়া ভাঙ্গনী, আড়িয়াল খাঁ ও খালিয়ার নদী উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন মুলাদী থানা গঠিত হয় ১৮৯৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২৪ মার্চ ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৭ | ৭৭ | ১০২ | ২০৪৯০ | ১৫৪২৮৫ | ৬৭০ | ৬২.৬ | ৫৫.১ |
উপজেলা শহর | |||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১৬.৯৬ | ৯ | ১৪ | ২০৪৯০ | ১২০৮ | ৬২.৬ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাজীর চর ৪৭ | ৮০৪১ | ৯২৮৫ | ১০৩০২ | ৫৫.৯ | ||||
গাছুয়া ৩৫ | ৫৮৪৪ | ৭৪৭০ | ৮৪৬৭ | ৫৫.৭ | ||||
চর কালেখাঁন ২৩ | ৫১৭৬ | ৮৯৬১ | ১০০৬২ | ৫৩.৪ | ||||
নাজিরপুর ৭১ | ৮১৫৬ | ১০৬৯২ | ১১৮২৫ | ৫৬.৮ | ||||
বাটামারা ১১ | ৭৬৪০ | ১০১০৫ | ১১৮৩৫ | ৫৮.৩ | ||||
মুলাদী ৫৯ | ৭২৩৬ | ১০২৯৩ | ১১২৬৩ | ৫৬.৫ | ||||
সফিপুর ৮৩ | ১০৬৪৮ | ১৫৫২৪ | ১৮২০১ | ৫০.৯ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ গাছা মিয়াবাড়ীর মসজিদ, সৈয়দেরগাঁও গ্রামের প্রাচীন মসজিদ, গঙ্গাপুর গ্রামের সুলতান খার মসজিদ।
ঐতিহাসিক ঘটনা মুলাদী উপজেলা এক সময় ছিল ঢাকা-জামালপুর রাজস্ব জেলার অন্তর্গত। ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত এ জেলায় একটি মাত্র মধ্যস্বত্ব ছিল এবং ১৯০৮ সাল নাগাদ এ অঞ্চলে অনেকগুলো মধ্যস্বত্ব সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে তালুকদার ও হাওলাদার শ্রেণীই ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী মধ্যস্বত্ব। ১৯৫১ সালে জমিদারি উচ্ছেদ হলে মুলাদী থানায় একজন রাজস্ব সার্কেল অফিসার নিযুক্ত হয়। ১৯০৫ সালের বঙ্গ-ভঙ্গ আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন এবং বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে মুলাদী উপজেলার অধিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুলাদিতে পাকসেনারা নদীর দুই পাশ দিয়ে মর্টার ও মেশিনগানের গুলিতে ৪২ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা নন্দীল বাজারে পাকবাহিনীর গানবোট ডুবিয়ে দেওয়ায় সেখানে তারা ব্যাপক হত্যাকা- চালায়। কালীগঞ্জ এলাকায় সপ্তাহব্যাপী পাকবাহিনী ধ্বংস যজ্ঞ চালায়। উপজেলায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে যেসব যুদ্ধ হয় সেগুলির মধ্যে মুলাদী থানা আক্রমণ এবং আড়িয়াল খাঁ নদীতে (হোসনাবাদ চর লঞ্চঘাটে) সংঘটিত যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। খাসেরহাটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ১টি গণসমাধি রয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন মুলাদী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৪০, মন্দির ১৮, গির্জা ১, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কাজীবাড়ি জামে মসজিদ, আইনউদ্দিন ফকিরের মাযার, জাহেনদ্দি ফকিরের মাযার।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৬.০%; পুরুষ ৫৬.১%, মহিলা ৫৫.৯%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৭, কিন্ডার গার্টেন ১, মাদ্রাসা ১৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মুলাদী কলেজ, কাজীর চর কলেজ, কাজীর চর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুলাদী জি এম বালিকা বিদ্যালয়, ভেদুরিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯২), তয়ক-টমচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪৫), গাছুয়া পরপদ্মা সিনিয়র মাদ্রাসা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ১, নাট্যদল ২, থিয়েটার সংগঠন ১, খেলার মাঠ ১০, ক্লাব ১৮।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৮%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০১%, শিল্প ০.৮৪%, ব্যবসা ১০.৬৬%, পরিবহণ ১.০৩%, চাকরি ১০.১০%, ধর্মীয় সেবা ০.৩২%, নির্মাণ ১.৩৮%, রেন্ট ও রেমিটেন্স ২.০৭% এবং অন্যান্য ৫.৭৮%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৭.৬৭%, ভূমিহীন ২২.৩৩%। শহরে ৫৩.৬৯% এবং গ্রামে ৭৯.১৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ডাল, পান, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, অড়হর, চীনা, তামাক, সরিষা, কাউন, চীনাবাদাম, রসুন, আখ।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম, তাল, সুপারি, নারিকেল, আমড়া, পেঁপে, লেবু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫০, গবাদিপশু ৭, হাঁস-মুরগি ২৭।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৯.২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৮.৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৭৪.১ কিমি; নৌপথ ২০ কিমি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল ২৫, স’মিল ৪০, চিড়াকল ১, ডালকল ২, আটাকল ১, আইস ফ্যাক্টরি ৫, ওয়েল্ডিং কারখানা ১৬।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৫, তাঁতশিল্প ৭, মৃৎশিল্প ৯০, সূচিশিল্প ১৮২, বাঁশের কাজ ৬৫, কাঠের কাজ ২১২।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৪, মেলা ৫। মুলাদী বন্দর হাট ও খাসের হাট এবং কাজীর চর আদম আলী ফকিরের মেলা, মুনসি বাড়ির মেলা ও জালালপুরের মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, সুপারি, ডাল, ধান, আমড়া।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৯.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৮%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ৭.৭%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ৮৫.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৩.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৬১ ও ১৯৬৫ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয় এবং আমন ধান ও পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, দিশা, আরডিও। [মো. মিজানুর রহমান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মুলাদী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।