গুণমন্ত মসজিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''গুণমন্ত মসজিদ''' ভাগীরথী (পুরনো গঙ্গা) নদীর তীরে মাহদিপুর গ্রামে অবস্থিত। [[গৌড়, নগর|গৌড়]] নগরদুর্গ থেকে ঠিক এক কিলোমিটার দক্ষিণে এবং [[লট্টন মসজিদ|লট্টন মসজিদ]] থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে মসজিদটির অবস্থান। | '''গুণমন্ত মসজিদ''' ভাগীরথী (পুরনো গঙ্গা) নদীর তীরে মাহদিপুর গ্রামে অবস্থিত। [[গৌড়, নগর|গৌড়]] নগরদুর্গ থেকে ঠিক এক কিলোমিটার দক্ষিণে এবং [[লট্টন মসজিদ|লট্টন মসজিদ]] থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে মসজিদটির অবস্থান। | ||
[[Image:GunmantMosqueGaur.jpg|thumb|400px|right|গুণমন্ত মসজিদ, গৌড়]] | |||
মসজিদটির নকশা চতুর্ভুজাকার। এটির ভিত্তি-নকশা হজরত পান্ডুয়ায় অবস্থিত [[আদিনা মসজিদ|আদিনা মসজিদ]]-এর ভিত্তি-নকশার অনুরূপ। বাইরের দিকে মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৪৮ মিটার এবং প্রস্থে ১৮ মিটার। ভেতরের দিকে দৈর্ঘ্যে ৪৪.৫০ মিটার এবং প্রস্থে ১৩. ৬৫ মিটার। | মসজিদটির নকশা চতুর্ভুজাকার। এটির ভিত্তি-নকশা হজরত পান্ডুয়ায় অবস্থিত [[আদিনা মসজিদ|আদিনা মসজিদ]]-এর ভিত্তি-নকশার অনুরূপ। বাইরের দিকে মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৪৮ মিটার এবং প্রস্থে ১৮ মিটার। ভেতরের দিকে দৈর্ঘ্যে ৪৪.৫০ মিটার এবং প্রস্থে ১৩. ৬৫ মিটার। | ||
মসজিদটির পশ্চিম দিকের নামাজ কক্ষটি একটি মধ্যবর্তী মূল অংশ (নেভ) এবং দুটি পার্শ্বকক্ষ নিয়ে মোট তিনটি অংশে বিভক্ত। মধ্যবর্তী অংশ একটি খাঁজকাটা পিপাকৃতি খিলান দ্বারা আচ্ছাদিত, খিলানটি কতকগুলি বৃহদাকার অষ্টভুজ প্রস্তর-স্তম্ভের উপর স্থাপিত। কক্ষের ভেতরে আলো প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে বাঁকানো ব্যাটলমেন্টের উপরে খিলানবিশিষ্ট একটি জানালা আছে এবং এর ফলে ইট নির্মিত কক্ষটির ভেতরের নিখুঁত পোড়ামাটির কারুকাজ এবং পাথরে তার অনুকরণ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। | |||
পার্শ্বভাগ দুটির প্রত্যেকটিতে তিনটি করে পাথরের স্তম্ভ বিশিষ্ট দৈর্ঘ্য বরাবর সরু খিলান পথ আছে এবং ইটের তৈরী নয়টি অর্ধগোলাকৃতি গম্বুজ দ্বারা পার্শ্বভাগ দুটি আচ্ছাদিত। খিলানাকৃতি ছাদের একাংশ থেকে পরিদৃষ্ট হয় যে, মসজিদটির সম্মুখভাগের পুরো অংশ জুড়ে একটি করিডোর ছিল। মসজিদের সাহন কোনো রিওয়াক বা বারান্দা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল না। এসব বৈশিষ্ট্য থেকে বোঝা যায় যে, গুণমন্ত মসজিদের নকশা সে আদি আয়তাকার নকশার সঙ্গে সাদৃশ্যপূণর্, যা দেখা গেছে দামেস্কের বড় মসজিদ, সামারার মসজিদ ও আবু দুলাফের মসজিদে। বাংলায় আদিনা মসজিদেই এ নকশার প্রথম ব্যবহার দেখা যায়। দামেস্কের বড় মসজিদটি ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম পূর্ণাঙ্গ মসজিদ; সেখান থেকেই এসেছে পার্শ্বক বিশিষ্ট নেভ-এর ধারণাটি। ভারতে, বিশেষত গুজরাট অঞ্চলে একই ধরনের বেশ কিছুসংখ্যক মসজিদ নির্মিত হয়েছে। গুজরাটি মসজিদগুলির মূল বৈশিষ্ট্য হলো, সেগুলিতে একটি অপোকৃত উঁচু মধ্যবর্তী নেভ থাকে এবং তার দুপাশে থাকে অপোকৃত নিচু অংশ। | |||
গুণমন্ত মসজিদের অলঙ্করণ সম্বন্ধে [[কানিংহাম, স্যার আলেকজান্ডার| | গুণমন্ত মসজিদের অলঙ্করণ সম্বন্ধে [[কানিংহাম, স্যার আলেকজান্ডার|আলেকজান্ডার কানিংহাম]] লিখেছেন, ‘দৃশ্যত মনে হয়, পেছন ও পাশের দেয়ালগুলি এবং ধনুকাকৃতি খিলানের স্প্রিঙের উপরকার সামনের দেয়ালে চকচকে টালি বসানো ছিল। কারণ, দেয়ালের সামনে আমি বিভিন্ন রঙের অজস্র টুকরা পড়ে থাকতে দেখি। তাছাড়া মাহদিপুর গ্রামে ঘন নীল ও সাদা রঙের টালিতে গড়া ব্যাটলমেন্টের বেশ কয়েকটি বড় বড় টুকরা পাওয়া যায়।’ | ||
গুণমন্ত মসজিদের নির্মাণকাল নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি। তবে মাহদিপুরে একটি অস্থায়ী মসজিদের বাইরে বর্তমানে ফতেহ শাহর আমলের একটি লম্বা শিলালিপির ফলক পড়ে রয়েছে, যেটিতে ৮৮৯ হিজরির উল্লেখ আছে। বলা হয়ে থাকে যে, গ্রামটির দক্ষিণের একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ থেকে একজন হিন্দু ওই শিলালিপিটি এনেছিলেন। যেহেতু লিপিটির প্রাপ্তিস্থান গুণমন্ত মসজিদ থেকে দূরে নয়, তাই কানিংহাম এটিকে গুণমন্ত মসজিদের লিপিফলক বলে মনে করেন। | গুণমন্ত মসজিদের নির্মাণকাল নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি। তবে মাহদিপুরে একটি অস্থায়ী মসজিদের বাইরে বর্তমানে ফতেহ শাহর আমলের একটি লম্বা শিলালিপির ফলক পড়ে রয়েছে, যেটিতে ৮৮৯ হিজরির উল্লেখ আছে। বলা হয়ে থাকে যে, গ্রামটির দক্ষিণের একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ থেকে একজন হিন্দু ওই শিলালিপিটি এনেছিলেন। যেহেতু লিপিটির প্রাপ্তিস্থান গুণমন্ত মসজিদ থেকে দূরে নয়, তাই কানিংহাম এটিকে গুণমন্ত মসজিদের লিপিফলক বলে মনে করেন। |
০৫:০০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
গুণমন্ত মসজিদ ভাগীরথী (পুরনো গঙ্গা) নদীর তীরে মাহদিপুর গ্রামে অবস্থিত। গৌড় নগরদুর্গ থেকে ঠিক এক কিলোমিটার দক্ষিণে এবং লট্টন মসজিদ থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে মসজিদটির অবস্থান।
মসজিদটির নকশা চতুর্ভুজাকার। এটির ভিত্তি-নকশা হজরত পান্ডুয়ায় অবস্থিত আদিনা মসজিদ-এর ভিত্তি-নকশার অনুরূপ। বাইরের দিকে মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৪৮ মিটার এবং প্রস্থে ১৮ মিটার। ভেতরের দিকে দৈর্ঘ্যে ৪৪.৫০ মিটার এবং প্রস্থে ১৩. ৬৫ মিটার।
মসজিদটির পশ্চিম দিকের নামাজ কক্ষটি একটি মধ্যবর্তী মূল অংশ (নেভ) এবং দুটি পার্শ্বকক্ষ নিয়ে মোট তিনটি অংশে বিভক্ত। মধ্যবর্তী অংশ একটি খাঁজকাটা পিপাকৃতি খিলান দ্বারা আচ্ছাদিত, খিলানটি কতকগুলি বৃহদাকার অষ্টভুজ প্রস্তর-স্তম্ভের উপর স্থাপিত। কক্ষের ভেতরে আলো প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে বাঁকানো ব্যাটলমেন্টের উপরে খিলানবিশিষ্ট একটি জানালা আছে এবং এর ফলে ইট নির্মিত কক্ষটির ভেতরের নিখুঁত পোড়ামাটির কারুকাজ এবং পাথরে তার অনুকরণ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
পার্শ্বভাগ দুটির প্রত্যেকটিতে তিনটি করে পাথরের স্তম্ভ বিশিষ্ট দৈর্ঘ্য বরাবর সরু খিলান পথ আছে এবং ইটের তৈরী নয়টি অর্ধগোলাকৃতি গম্বুজ দ্বারা পার্শ্বভাগ দুটি আচ্ছাদিত। খিলানাকৃতি ছাদের একাংশ থেকে পরিদৃষ্ট হয় যে, মসজিদটির সম্মুখভাগের পুরো অংশ জুড়ে একটি করিডোর ছিল। মসজিদের সাহন কোনো রিওয়াক বা বারান্দা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল না। এসব বৈশিষ্ট্য থেকে বোঝা যায় যে, গুণমন্ত মসজিদের নকশা সে আদি আয়তাকার নকশার সঙ্গে সাদৃশ্যপূণর্, যা দেখা গেছে দামেস্কের বড় মসজিদ, সামারার মসজিদ ও আবু দুলাফের মসজিদে। বাংলায় আদিনা মসজিদেই এ নকশার প্রথম ব্যবহার দেখা যায়। দামেস্কের বড় মসজিদটি ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম পূর্ণাঙ্গ মসজিদ; সেখান থেকেই এসেছে পার্শ্বক বিশিষ্ট নেভ-এর ধারণাটি। ভারতে, বিশেষত গুজরাট অঞ্চলে একই ধরনের বেশ কিছুসংখ্যক মসজিদ নির্মিত হয়েছে। গুজরাটি মসজিদগুলির মূল বৈশিষ্ট্য হলো, সেগুলিতে একটি অপোকৃত উঁচু মধ্যবর্তী নেভ থাকে এবং তার দুপাশে থাকে অপোকৃত নিচু অংশ।
গুণমন্ত মসজিদের অলঙ্করণ সম্বন্ধে আলেকজান্ডার কানিংহাম লিখেছেন, ‘দৃশ্যত মনে হয়, পেছন ও পাশের দেয়ালগুলি এবং ধনুকাকৃতি খিলানের স্প্রিঙের উপরকার সামনের দেয়ালে চকচকে টালি বসানো ছিল। কারণ, দেয়ালের সামনে আমি বিভিন্ন রঙের অজস্র টুকরা পড়ে থাকতে দেখি। তাছাড়া মাহদিপুর গ্রামে ঘন নীল ও সাদা রঙের টালিতে গড়া ব্যাটলমেন্টের বেশ কয়েকটি বড় বড় টুকরা পাওয়া যায়।’
গুণমন্ত মসজিদের নির্মাণকাল নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি। তবে মাহদিপুরে একটি অস্থায়ী মসজিদের বাইরে বর্তমানে ফতেহ শাহর আমলের একটি লম্বা শিলালিপির ফলক পড়ে রয়েছে, যেটিতে ৮৮৯ হিজরির উল্লেখ আছে। বলা হয়ে থাকে যে, গ্রামটির দক্ষিণের একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ থেকে একজন হিন্দু ওই শিলালিপিটি এনেছিলেন। যেহেতু লিপিটির প্রাপ্তিস্থান গুণমন্ত মসজিদ থেকে দূরে নয়, তাই কানিংহাম এটিকে গুণমন্ত মসজিদের লিপিফলক বলে মনে করেন।
কিন্তু মসজিদটির কোণগুলিতে অষ্টভুজ মিনার, বাঁকানো ছাদ, বেশ কারুকার্যময় পোড়ামাটির শিল্পকর্ম, পাথরের ওপরে পোড়ামাটির কাজের অনুকরণ, চকচকে টালির প্রচুর ব্যবহার এবং পাথরে আচ্ছাদিত দেয়ালগুলি দেখে আহমদ হাসান দানী মনে করেন যে, মসজিদটি হোসেন শাহী আমলে নির্মিত। [সুলতান আহমেদ]