দাস, রাখাল চন্দ্র: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''দাস | '''দাস, রাখাল চন্দ্র''' (১৯৩২-১৯৭১) চিকিৎসক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার ধানীখোলা গ্রামে ১৯৩২ সালের ১ আগস্ট তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম গুরুদয়াল দাস এবং মাতা অনন্তময়ী দাস। রাখাল চন্দ্র দাস গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি দরিরামপুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক এবং ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে আইএসসি পাস করেন। তিনি ময়মনসিংহের লিটন মেডিক্যাল স্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে এল এম এফ এবং ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। | ||
[[Image:DasRakhalChandra.jpg|thumb|400px|right|রাখাল চন্দ্র দাস]] | [[Image:DasRakhalChandra.jpg|thumb|400px|right|রাখাল চন্দ্র দাস]] |
০৫:০১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
দাস, রাখাল চন্দ্র (১৯৩২-১৯৭১) চিকিৎসক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার ধানীখোলা গ্রামে ১৯৩২ সালের ১ আগস্ট তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম গুরুদয়াল দাস এবং মাতা অনন্তময়ী দাস। রাখাল চন্দ্র দাস গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি দরিরামপুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক এবং ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে আইএসসি পাস করেন। তিনি ময়মনসিংহের লিটন মেডিক্যাল স্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে এল এম এফ এবং ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।
এলএমএফ ডিগ্রি লাভের পর রাখাল চন্দ্র ১৯৫৫ সালে ময়মনসিংহের মহারাজ সূর্যকান্ত হাসপাতালে সহকারি সার্জন হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি সিলেট জেলার কুলাউড়া থানার দিলদারপুর চা বাগান হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার (১৯৫৭-১৯৫৯) এবং ময়মনসিংহের ত্রিশালে ধানীখোলা দাতব্য হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার (১৯৫৯-১৯৬৬) পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৮ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পর তিনি ধানীখোলা বাজারে গুরুদয়াল ফার্মেসি নামে একটি ঔষধের দোকান খোলেন এবং ঐ ফার্মেসি সংলগ্ন চেম্বারে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। কিন্তু অব্যবসায়িক মনোভাবের কারণে তিনি তাঁর ফার্মেসি ব্যবসাকে লাভজনক করে তুলতে পারেন নি। এলাকার গরীব রুগীদের বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসা সেবা এবং বিনামূল্যে ঔষুধ দানের ফলে অচিরেই তিনি ব্যবসায়ে লোকসান দিতে থাকেন এবং একসময় ব্যবসায়ের পুজি নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে ফার্মেসি বন্ধ করে ১৯৬৯ সালে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে মির্জাপুর ইস্পাহানী চা বাগান হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসারের চাকরি গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সামরিক বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের পর পাকসেনারা সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। তারা এপ্রিল মাসে শ্রীমঙ্গলে ঘাঁটি স্থাপন করে হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন শুরু করে। চা বাগানের শ্রমিক-কর্মীরা সন্নিহিত গ্রামের লোকজনের সহায়তায় চা বাগান এলাকায় পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা বড় বড় পাথর ফেলে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে এবং রাস্তার সংযোগ সেতু ও কালভার্ট ভেঙে দেয়। গাছপালা ও ঝোপের আড়াল থেকে তীর ছুঁড়ে তারা চা বাগান এলাকায় পাকবাহিনীর অগ্রগতি প্রতিহত করে। এই সংঘর্ষে প্রায় প্রতিদিনই কিছু কিছু লোক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসতে থাকে। রাখাল চন্দ্র দাস আহতদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের একটি বিশেষ টিম গঠন করেন।
১৯৭১ সালের ১২ মে সকালবেলা পাকবাহিনী অতর্কিতে চা বাগান এলাকায় ঢুকে হাসপাতাল ঘেরাও করে। ক্যাপ্টেন তারেকের নেতৃত্বে একদল সেনা হাসপাতালে ঢুকে ডাক্তারদের কেবিন তছনছ করে এবং ওয়ার্ডে রুগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রাখাল চন্দ্র দাসকে ধরে নিয়ে যায়। জানা যায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পাকবাহিনীর নিকট চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের যে তালিকা পেশ করে তাতে রাখাল চন্দ্র দাসের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি।
রাখাল চন্দ্র দাস ছিলেন সংস্কৃতিসেবী, একজন নামকরা ক্রীড়াবিদ, নাট্যাভিনেতা এবং লেখক। বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নালে তাঁর বেশসংখ্যক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ছিলেন রেডক্রস সোসাইটি, স্কাউট্স অ্যাসোসিয়েশন ও লায়নস ক্লাবের সদস্য। রাখাল চন্দ্র দাস তাঁর আত্মজীবনী লিখে গেছেন। তিনি তাঁর নিজ এলাকায় কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। এদের মধ্যে রয়েছে ধানীখোলা মুকুল সমিতি এবং ধানীখোলা মিলন সমাজ। তিনি ধানীখোলা মিলন সমাজের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]