চৌদ্দদফা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
(Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]")
 
৩৫ নং লাইন: ৩৫ নং লাইন:
|}
|}


চৌদ্দ দফায় অন্তর্ভুক্ত মুসলমানদের ন্যূনতম দাবিগুলো কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ প্রত্যাখ্যান করেন। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদের পরবর্তী অনেক বৈঠকে জিন্নাহর চৌদ্দদফা ফর্মুলা বরাত হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে এবং ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এই দফাগুলো পেশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ম্যাকডোনাল্ড রোয়েদাদে চৌদ্দদফা দাবির কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়। এদের মধ্যে প্রধান ছিল মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন।  [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]
চৌদ্দ দফায় অন্তর্ভুক্ত মুসলমানদের ন্যূনতম দাবিগুলো কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ প্রত্যাখ্যান করেন। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদের পরবর্তী অনেক বৈঠকে জিন্নাহর চৌদ্দদফা ফর্মুলা বরাত হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে এবং ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এই দফাগুলো পেশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ম্যাকডোনাল্ড রোয়েদাদে চৌদ্দদফা দাবির কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়। এদের মধ্যে প্রধান ছিল মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]


[[en:Fourteen Points]]
[[en:Fourteen Points]]

১৬:০৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

চৌদ্দদফা  ব্রিটিশ ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের পটভূমিতে মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে সাংবিধানিক সংস্কার পরিকল্পনা হিসেবে উপস্থাপিত দাবিনামা। এর আগে ১৯২৮ সালে ভারতবর্ষের সাংবিধানিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। একটি সমাধান প্রক্রিয়া সুপারিশের জন্য ওই  সম্মেলনে পন্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরুর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। ‘নেহরু রিপোর্ট’ নামে পরিচিত কমিটির ওই  রিপোর্টে ভারতবর্ষের জন্য ‘ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস’ দাবি করা হয় এবং পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাংলা ও পাঞ্জাবের মুসলমানদের জন্য আইনসভায় আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব নাকচ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের পক্ষ থেকে একটি বিকল্প দাবিনামা পেশ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে ভারতবর্ষের ভবিষ্যত সংবিধান প্রণয়নের ভিত্তি ও মৌলনীতি সম্পর্কিত একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবনার খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯২৯ সালের ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশনে জিন্নাহ তাঁর চৌদ্দদফা প্রস্তাব পেশ করেন। ওই  অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ভারতবর্ষের জন্য ভবিষ্যতে কোনো সংবিধান মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না যদি তাতে জিন্নাহ কর্তৃক উপস্থাপিত চৌদ্দদফা প্রস্তাবের মৌলিক নীতিমালার প্রতিফলন না ঘটে। কাজেই নেহরু রিপোর্টের পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে মুসলমানরা চৌদ্দদফায় বিধৃত তাদের নিজস্ব দাবি তুলে ধরে। বস্ত্তত চৌদ্দদফা ছিল নেহরু রিপোর্টে প্রকাশিত প্রস্তাবের পাল্টা দাবি। চৌদ্দদফা দাবি সাধারণ্যে ‘জিন্নাহর চৌদ্দদফা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

চৌদ্দদফা
১. ভারতবর্ষের ভবিষ্যত সংবিধানের কাঠামো হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় (ফেডারেল) পদ্ধতির। এতে অপরাপর সকল ক্ষমতা প্রদেশগুলোর উপর ন্যস্ত থাকবে;
২. সকল প্রদেশে সমরূপ স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করতে হবে;
৩. প্রতি প্রদেশে সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত ও কার্যকর প্রতিনিধিত্বের এমন সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে দেশের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সকল আইনসভা এবং অপরাপর নির্বাচিত সংস্থা গঠিত হবে যাতে কোনো প্রদেশেই সংখ্যাগুরুরা সংখ্যালঘুতে পরিণত না হয় অথবা সংখ্যাসাম্যও প্রতিষ্ঠিত না হয়;
৪. কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব মোট আসনের এক-তৃতীয়াংশের কম হবে না;
৫. বর্তমানে প্রচলিত পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার ভিত্তিতে আইনসভায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হবে; তবে যেকোন সম্প্রদায় যেকোন সময় পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি পরিহার করে যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে;
৬. কোনো সময়ে ভূখন্ডগত কোনো পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তাতে করে পাঞ্জাব, বাংলা ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনভাবেই ক্ষুণ্ণ করা যাবে না;
৭. সাংবিধানে সব সম্প্রদায়ের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা তথা ধর্মবিশ্বাস, উপাসনা ও ধর্মানুশীলন, প্রচার প্রচারণা, ধর্মীয় সম্মিলন ও ধর্মীয় শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;
৮. কোনো আইনসভা বা অপর কোনো নির্বাচিত সংস্থায় কোনো বিল বা কোনো প্রস্তাব বা এর অংশবিশেষ গৃহীত হবে না যদি ওই আইনসভা বা সংস্থায় কোনো সম্প্রদায়ের সদস্যদের তিন-চতুর্থাংশ তাদের স্বার্থের প্রতিকূল হিসেবে ওই বিলের বা প্রস্তাবের অথবা অংশবিশেষের বিরোধিতা করেন। এ ক্ষেত্রে ঐসব বিষয় সমাধানের জন্য বিকল্প হিসেবে অপর কোনো সম্ভাব্য ও সহজ পদ্ধতি নিরূপণ করা হবে;
৯. সিন্ধুকে বোম্বাই প্রেসিডেন্সি থেকে পৃথক করে স্বতন্ত্র প্রদেশ করতে হবে;
১০. অন্যান্য প্রদেশের ন্যায় উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানে অনুরূপ শাসন সংস্কার প্রবর্তন করতে হবে;
১১. সংবিধানে এমন বিধান সংযোজন করতে হবে যাতে অন্যান্য ভারতীয়ের ন্যায় মুসলমানরাও সরকারি ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সকল চাকরিতে যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভের পর্যাপ্ত সুযোগ পায়;
১২. মুসলিম সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং মুসলমানদের শিক্ষা, ভাষা, ধর্ম, ব্যক্তি আইন ও মুসলিম দাতব্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, এবং সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার অনুদানে এসব দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংবিধানে পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষামূলক বিধান সংযোজন করতে হবে;
১৩. কেন্দ্র ও প্রদেশে অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ মুসলিম মন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তি ব্যতিরেকে কোনো মন্ত্রিসভা গঠন করা যাবে না;
১৪. ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর সম্মতি ব্যতীত কেন্দ্রীয় আইনসভা কর্তৃক সংবিধানে কোনো রদবদল করা যাবে না।

চৌদ্দ দফায় অন্তর্ভুক্ত মুসলমানদের ন্যূনতম দাবিগুলো কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ প্রত্যাখ্যান করেন। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদের পরবর্তী অনেক বৈঠকে জিন্নাহর চৌদ্দদফা ফর্মুলা বরাত হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে এবং ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এই দফাগুলো পেশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ম্যাকডোনাল্ড রোয়েদাদে চৌদ্দদফা দাবির কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়। এদের মধ্যে প্রধান ছিল মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]