ঘড়িয়াল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:GharialReptile.jpg|thumb|400px|right|ঘড়িয়াল [ছবি: এম মনিরুল এইচ খান]]] | [[Image:GharialReptile.jpg|thumb|400px|right|ঘড়িয়াল [''ছবি: এম মনিরুল এইচ খান'']]] | ||
'''ঘড়িয়াল''' Reptilia শ্রেণির Crocodylidae গোত্রভুক্ত ''Gavialis gangeticus'' নামের এক প্রাচীনকালীন সরীসৃপ। এটি মেছো কুমির, ঘট কুমির নামেও পরিচিত। প্রধান খাদ্য মাছ বলেই হয়ত মেছো-কুমির নাম। কারও কারও মতে, মাথা ও তুন্ড দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মাথা ও মুখের মতো বলেই এদের নাম ঘড়িয়াল। অন্যদের মতে, ঘোড়া থেকে নয়, ঘড়া থেকেই ঘড়িয়াল হয়েছে। ঘড়িয়ালের তুন্ডে কোমল হাড় দিয়ে তৈরি একটি অষ্টভুজ উদগত অংশ থাকে যা দেখতে ঘড়ার মতো। গঙ্গা নদীতে বহুদৃষ্ট বলেই বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে gangeticus শব্দটি যুক্ত। | '''ঘড়িয়াল''' Reptilia শ্রেণির Crocodylidae গোত্রভুক্ত ''Gavialis gangeticus'' নামের এক প্রাচীনকালীন সরীসৃপ। এটি মেছো কুমির, ঘট কুমির নামেও পরিচিত। প্রধান খাদ্য মাছ বলেই হয়ত মেছো-কুমির নাম। কারও কারও মতে, মাথা ও তুন্ড দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মাথা ও মুখের মতো বলেই এদের নাম ঘড়িয়াল। অন্যদের মতে, ঘোড়া থেকে নয়, ঘড়া থেকেই ঘড়িয়াল হয়েছে। ঘড়িয়ালের তুন্ডে কোমল হাড় দিয়ে তৈরি একটি অষ্টভুজ উদগত অংশ থাকে যা দেখতে ঘড়ার মতো। গঙ্গা নদীতে বহুদৃষ্ট বলেই বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে gangeticus শব্দটি যুক্ত। | ||
০৯:৩০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
ঘড়িয়াল Reptilia শ্রেণির Crocodylidae গোত্রভুক্ত Gavialis gangeticus নামের এক প্রাচীনকালীন সরীসৃপ। এটি মেছো কুমির, ঘট কুমির নামেও পরিচিত। প্রধান খাদ্য মাছ বলেই হয়ত মেছো-কুমির নাম। কারও কারও মতে, মাথা ও তুন্ড দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মাথা ও মুখের মতো বলেই এদের নাম ঘড়িয়াল। অন্যদের মতে, ঘোড়া থেকে নয়, ঘড়া থেকেই ঘড়িয়াল হয়েছে। ঘড়িয়ালের তুন্ডে কোমল হাড় দিয়ে তৈরি একটি অষ্টভুজ উদগত অংশ থাকে যা দেখতে ঘড়ার মতো। গঙ্গা নদীতে বহুদৃষ্ট বলেই বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে gangeticus শব্দটি যুক্ত।
জলচর এ সরীসৃপটি লাজুক ও শান্ত প্রকৃতির। ঘড়িয়ালের দেহের দৈর্ঘ্য হয় সর্বোচ্চ ৪-৭ মিটার। গঙ্গা নদী ছাড়াও উপমহাদেশের অন্যান্য বড় নদীতেও ঘড়িয়াল দেখা যায়। বাংলাদেশে পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে এবং সেগুলির শাখা-প্রশাখায় একসময় প্রচুর দেখা যেত।
ঘড়িয়ালের দেহের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো লম্বা ও সরু তুন্ড। মুখে উপরের চোয়ালে ৫০টি ছোট কিন্তু খুব ধারালো দাঁত থাকে। নিচের চোয়ালে দাঁতের সংখ্যা ৪৮। ছোট ছোট মাছ ও জলজ পাখি শিকারে এ দাঁত খুব কার্যকর। ঘড়িয়াল নদীতটে বিচরণরত ছাগল, কুকুর ইত্যাদিও শিকার করে। প্রাকৃতিক পরিবেশে কতদিন বাঁচে তা সঠিকভাবে জানা যায় নি। বন্দি অবস্থায় ঘড়িয়াল প্রায় ৪০ বছর বাঁচলেও সম্ভবত এদের আয়ু আরও বেশি।
ঘড়িয়াল নদীর তীরে গর্ত খুঁড়ে তাতে ৪০ বা ততোধিক ডিম পাড়ে এবং মাটি দিয়ে গর্ত ঢেকে দেয়। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। সদ্যজাত ঘড়িয়াল শাবক দৈর্ঘ্যে মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার।
কুমিরের অন্যান্য প্রজাতির মতো ঘড়িয়াল অধিক সময় নদীর তীরে রোদ পোহায় না। অন্যান্য কুমিরের মতো এর পা মাটিতে হাঁটা চলা করার জন্য তেমন উপযোগী নয়। কারণ ঘড়িয়ালের সামনের পা দুটি পেছনের দু পা থেকে অপেক্ষাকৃত খাটো ও ছোট আকারের। এরা লিপ্তপদী, অর্থাৎ এদের পায়ের পাঁচটি আঙুল সম্প্রসারিত ত্বক দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। এ পা ও লেজের সাহায্যে ঘড়িয়াল ভাল সাঁতার কাটতে পারে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ঘড়িয়ালকে পবিত্র ভেবে একসময় দেবতা বিষ্ণুর পূজায় উৎসর্গ করত। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তখন চামড়া বা মাংসের লোভে ঘড়িয়াল নিধন করা হতো না। ক্রমে ক্রমে ধর্মীয় বিশ্বাস উবে গেলে মানুষ মূল্যবান চামড়ার জন্য একে হত্যা করতে শুরু করে। মহিলাদের হাতব্যাগ, জুতা, গৃহসজ্জার জিনিসপত্র ইত্যাদি এদের চামড়া দিয়ে তৈরি হয়। ঘড়িয়ালের চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করে যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। ফলে মুনাফালোভী শিকারিদের হাতে অসংখ্য ঘড়িয়াল মারা পড়েছে ও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। বর্তমানে প্রাণীটি বিরল এবং বিলুপ্তপ্রায়। [মোঃ সোহরাব আলী]