ক্যাডার সার্ভিস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১১ নং লাইন: | ১১ নং লাইন: | ||
১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কর্তৃক ক্যাডার ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৮৯ সালের ১২ জুলাই থেকে সিনিয়র সার্ভিসেস পুল ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়। ২৮টি ক্যাডারের জন্য কেবল উপসচিব ও যুগ্মসচিবের পদসমূহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ থাকে। ওই সময় থেকে একত্রীকরণ ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০০ সালের জানুয়ারি নাগাদ সিভিল সার্ভিস ক্যাডারের সংখ্যা দাঁড়ায় উনত্রিশ। [এ.এম.এম শওকত আলী] | ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কর্তৃক ক্যাডার ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৮৯ সালের ১২ জুলাই থেকে সিনিয়র সার্ভিসেস পুল ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়। ২৮টি ক্যাডারের জন্য কেবল উপসচিব ও যুগ্মসচিবের পদসমূহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ থাকে। ওই সময় থেকে একত্রীকরণ ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০০ সালের জানুয়ারি নাগাদ সিভিল সার্ভিস ক্যাডারের সংখ্যা দাঁড়ায় উনত্রিশ। [এ.এম.এম শওকত আলী] | ||
'''গ্রন্থপঞ্জি''' ''Bangladesh Gazette'' (Extraordinary), January 27, 1996; AMM Shawkat Ali, ''Aspects of Public Administration in Bangladesh'', Dhaka, 1993. | |||
[[en:Cadre Service]] | [[en:Cadre Service]] |
০৯:০১, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
ক্যাডার সার্ভিস সরকারি চাকুরিজীবীদের সুনির্দিষ্ট গ্রুপ, সার্ভিস বা ক্যাডারে শ্রেণিকরণ। সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে এরূপ সুস্পষ্ট বিভাজন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যবাহী দেশসমূহের বৈশিষ্ট্য বলে প্রতীয়মান হয়। ভারতে এ পদ্ধতি শুরু হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের প্রথমদিকে। এ ব্যবস্থা কতকটা পরিবর্তিত আকারে পাকিস্তানি আমল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং আজকের বাংলাদেশেও চালু রয়েছে।
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের গোড়ার দিকে সরকারি চাকুরিজীবীদের দুটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী ছিল। যেসব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চুক্তি বা সনদ সম্পাদন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকুরিতে যোগদান করত তাদের ‘সনদী’ এবং অন্যদিকে যারা চুক্তি সম্পাদন ছাড়া চাকুরি গ্রহণ করত তাদের ‘অসনদী’ কর্মকর্তা বলা হতো। অসনদী কর্মচারীরা সাধারণত নিম্নতর পদে নিয়োগ লাভ করত। পরবর্তীকালে ১৮৮৬-৮৭ সালের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (চেয়ারম্যান, চার্লস ইউ আইচিসন) সুপারিশের ভিত্তিতে ইম্পিরিয়্যাল সিভিল সার্ভিস অব ইন্ডিয়া গঠিত হলে কার্যত সনদী ও অসনদী পার্থক্যের অবসান ঘটে। অবশ্য পরে ইম্পিরিয়্যাল সিভিল সার্ভিসের নতুন নামকরণ হয় সিভিল সার্ভিস অব ইন্ডিয়া। তবে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আই.সি.এস) অভিধাটি অপরিবর্তিত থেকে যায় এবং ‘সনদী’ সরকারি চাকুরিজীবী বলতে তাদেরকেই বোঝাত। আইচিসন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দুটি ক্যাডার নিয়ে প্রাদেশিক সিভিল সার্ভিসও গঠন করা হয় এবং তা ছিল প্রাদেশিক সিভিল সার্ভিস ও অধস্তন সিভিল সার্ভিস। পরবর্তীকালে প্রশাসন দপ্তরগুলোতে ক্যাডার সংগঠনের পরিকল্পনা প্রয়োগের ফলে এ সার্ভিসের আরও উন্নয়ন সাধিত হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, বন ও গণপূর্ত দপ্তরে ইম্পিরিয়্যাল ও প্রাদেশিক দুটি শাখা ছিল। এভাবেই আইচিসন কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক সিভিল সার্ভিসে ক্যাডার পদ্ধতির গোড়াপত্তন হয়।
উনিশ শতকের শেষদিক থেকে ক্যাডার সার্ভিসের গঠন ও চাকুরি কাঠামো নানা কারণে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৩৪ সালের মধ্যে ভারতীয় প্রশাসন ব্যবস্থায় ক্রমান্বয়ে সাতটি সর্ব-ভারতীয় সার্ভিস এবং পাঁচটি কেন্দ্রীয় দপ্তর সৃষ্টি হয় এবং এগুলির সবই ছিল ভারত সচিবের নিয়ন্ত্রণে এবং তিনটি কেন্দ্রীয় দপ্তর ছিল যৌথভাবে প্রাদেশিক ও রাজকীয় নিয়ন্ত্রণে। আই.সি.এস ও ভারতীয় পুলিশ সার্ভিস ব্যতীত সাতটি সর্ব-ভারতীয় সার্ভিস ‘স্থানান্তরিত সার্ভিস’ হিসেবে চিহ্নিত ছিল, অর্থাৎ এসব সার্ভিসের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও নিয়োগের কর্তৃত্ব ভারত সচিবের কাছ থেকে প্রাদেশিক সরকারের এখতিয়ারে স্থানান্তরিত হয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯২৪ সালের দিকে লী কমিশন রিপোর্টে সর্ব-ভারতীয় এবং প্রথম শ্রেণির কেন্দ্রীয় সার্ভিসসমূহ সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস নামে আখ্যায়িত হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পাকিস্তানে সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস অভিধাটি ব্যবহূত হয় এবং নিখিল পাকিস্তান সার্ভিসের ধারণাটিও অক্ষুণ্ণ থাকে। শেষোক্তটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান এবং পুলিশ সার্ভিস অব পাকিস্তান, আর সেন্ট্রাল সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত ছিল পাকিস্তান ফরেন সার্ভিস এবং বৃহত্তর পরিসরে ফিন্যান্স ও অন্যান্য সার্ভিস। ফিন্যান্স সার্ভিসের আওতাভুক্ত ছিল পাকিস্তান অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস সার্ভিস, পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাউন্টস সার্ভিস, পাকিস্তান ট্যাক্সেশন সার্ভিস এবং পাকিস্তান কাস্টমস্ অ্যান্ড এক্সাইজ সার্ভিস। এগুলি ছাড়া কেন্দ্রীয় সার্ভিসে ছিল পাকিস্তান পোস্টাল সার্ভিস, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস, সেন্ট্রাল ইনফরমেশন সার্ভিস, সেন্ট্রাল ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস, পাকিস্তান ট্রেড সার্ভিস ও টেলিগ্রাফ ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস। এ সার্ভিসগুলির প্রতিটিরই ছিল পদের সংখ্যার নিরিখে মোট কর্মচারীর সংখ্যানুযায়ী নিজস্ব ক্যাডার ও গঠনবিধি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই দেশের সিভিল সার্ভিসের উপযোগী কাঠামোর সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রশাসন ও চাকুরি পুনর্গঠন কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তনের কারণে কমিটির সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নি। এক বছর পর নবগঠিত পে অ্যান্ড সার্ভিস কমিশন উপরে আনুভূমিকভাবে বিন্যস্ত ২৮ ক্যাডারসহ সার্ভিসের চার স্তরবিশিষ্ট কাঠামো সুপারিশ করে। কমিশন সর্বতোমুখী অভিজ্ঞতা, প্রশাসনিক নেতৃত্ব ও উচ্চ সমন্বয় ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে সিনিয়র সার্ভিসেস পুল নামের একটি উচ্চতর ক্যাডার গঠনেরও সুপারিশ করে। সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই কিছু পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থাও রাখা হয়।
১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কর্তৃক ক্যাডার ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৮৯ সালের ১২ জুলাই থেকে সিনিয়র সার্ভিসেস পুল ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়। ২৮টি ক্যাডারের জন্য কেবল উপসচিব ও যুগ্মসচিবের পদসমূহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ থাকে। ওই সময় থেকে একত্রীকরণ ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০০ সালের জানুয়ারি নাগাদ সিভিল সার্ভিস ক্যাডারের সংখ্যা দাঁড়ায় উনত্রিশ। [এ.এম.এম শওকত আলী]
গ্রন্থপঞ্জি Bangladesh Gazette (Extraordinary), January 27, 1996; AMM Shawkat Ali, Aspects of Public Administration in Bangladesh, Dhaka, 1993.