লাহিড়ী, রামতনু: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''লাহিড়ী, রামতনু''' (১৮১৩-১৮৯৮) শিক্ষক, সংস্কারক, সংগঠক। নদীয়ার কৃষ্ণনগরে এক কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা [[হিন্দু কলেজ|হিন্দু কলেজ]]এ শিক্ষা লাভ করেন। রামতনু লাহিড়ী সেসব শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবীর একজন ছিলেন, যাঁরা উনিশ শতকে বাংলায় বিভিন্ন সংস্কার আন্দোলনের ভিত তৈরি করেছিলেন। নানা দিক থেকে উনিশ শতককে বলা যায় স্কুল শিক্ষকদের যুগ। তখন [[ডিরোজিও, হেনরী|হেনরি ডিরোজিও]] থেকে শুরু করে পন্ডিত [[ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর|ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর]], প্যারীচরণ সরকার, পন্ডিত [[শাস্ত্রী, শিবনাথ|শিবনাথ শাস্ত্রী]] এবং [[হেয়ার, ডেভিড|ডেভিড হেয়ার]] পর্যন্ত বিখ্যাত স্কুল শিক্ষকগণ বাংলায় এক নবজাগরণের সৃষ্টি করেন। শিক্ষক হিসেবে রামতনু ছিলেন সে যুগের একজন আদর্শ প্রতিনিধি। | '''লাহিড়ী, রামতনু''' (১৮১৩-১৮৯৮) শিক্ষক, সংস্কারক, সংগঠক। নদীয়ার কৃষ্ণনগরে এক কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা [[হিন্দু কলেজ|হিন্দু কলেজ]]এ শিক্ষা লাভ করেন। রামতনু লাহিড়ী সেসব শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবীর একজন ছিলেন, যাঁরা উনিশ শতকে বাংলায় বিভিন্ন সংস্কার আন্দোলনের ভিত তৈরি করেছিলেন। নানা দিক থেকে উনিশ শতককে বলা যায় স্কুল শিক্ষকদের যুগ। তখন [[ডিরোজিও, হেনরী|হেনরি ডিরোজিও]] থেকে শুরু করে পন্ডিত [[ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর|ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর]], প্যারীচরণ সরকার, পন্ডিত [[শাস্ত্রী, শিবনাথ|শিবনাথ শাস্ত্রী]] এবং [[হেয়ার, ডেভিড|ডেভিড হেয়ার]] পর্যন্ত বিখ্যাত স্কুল শিক্ষকগণ বাংলায় এক নবজাগরণের সৃষ্টি করেন। শিক্ষক হিসেবে রামতনু ছিলেন সে যুগের একজন আদর্শ প্রতিনিধি। | ||
[[Image:LahiriRamtanu.jpg|thumb|400px|রামতনু লাহিড়ী]] | |||
রামতনুর পিতা রামকৃষ্ণ লাহিড়ী ছিলেন নদীয়ারাজের একজন দেওয়ান। এগারো বছর বয়স পর্যন্ত রামতনু গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া করেন। পরে তিনি অগ্রজ কেশবচন্দ্র লাহিড়ীর সঙ্গে [[কলকাতা|কলকাতা]] যান এবং ডেভিড হেয়ারের পৃষ্ঠপোষকতায় হেয়ার স্কুলে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ পান। ১৮২৮ সালে তিনি বৃত্তি নিয়ে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলার অন্যতম বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডিরোজিওর সান্নিধ্য লাভ করেন। ১৮৩৩ সালে রামতনু হিন্দু কলেজের শিক্ষক হন এবং ১৮৪৬ সালে সরকারি কৃষ্ণনগর কলেজে যোগদান করেন। ওই বছরই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রামতনু তাঁর দীর্ঘ শিক্ষক জীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান করেছেন। সবশেষে বরিশাল জিলা স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকাকালে ১৮৬৫ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। | রামতনুর পিতা রামকৃষ্ণ লাহিড়ী ছিলেন নদীয়ারাজের একজন দেওয়ান। এগারো বছর বয়স পর্যন্ত রামতনু গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া করেন। পরে তিনি অগ্রজ কেশবচন্দ্র লাহিড়ীর সঙ্গে [[কলকাতা|কলকাতা]] যান এবং ডেভিড হেয়ারের পৃষ্ঠপোষকতায় হেয়ার স্কুলে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ পান। ১৮২৮ সালে তিনি বৃত্তি নিয়ে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলার অন্যতম বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডিরোজিওর সান্নিধ্য লাভ করেন। ১৮৩৩ সালে রামতনু হিন্দু কলেজের শিক্ষক হন এবং ১৮৪৬ সালে সরকারি কৃষ্ণনগর কলেজে যোগদান করেন। ওই বছরই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রামতনু তাঁর দীর্ঘ শিক্ষক জীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান করেছেন। সবশেষে বরিশাল জিলা স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকাকালে ১৮৬৫ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। | ||
০৬:০৬, ১১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
লাহিড়ী, রামতনু (১৮১৩-১৮৯৮) শিক্ষক, সংস্কারক, সংগঠক। নদীয়ার কৃষ্ণনগরে এক কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা হিন্দু কলেজএ শিক্ষা লাভ করেন। রামতনু লাহিড়ী সেসব শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবীর একজন ছিলেন, যাঁরা উনিশ শতকে বাংলায় বিভিন্ন সংস্কার আন্দোলনের ভিত তৈরি করেছিলেন। নানা দিক থেকে উনিশ শতককে বলা যায় স্কুল শিক্ষকদের যুগ। তখন হেনরি ডিরোজিও থেকে শুরু করে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্যারীচরণ সরকার, পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী এবং ডেভিড হেয়ার পর্যন্ত বিখ্যাত স্কুল শিক্ষকগণ বাংলায় এক নবজাগরণের সৃষ্টি করেন। শিক্ষক হিসেবে রামতনু ছিলেন সে যুগের একজন আদর্শ প্রতিনিধি।
রামতনুর পিতা রামকৃষ্ণ লাহিড়ী ছিলেন নদীয়ারাজের একজন দেওয়ান। এগারো বছর বয়স পর্যন্ত রামতনু গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া করেন। পরে তিনি অগ্রজ কেশবচন্দ্র লাহিড়ীর সঙ্গে কলকাতা যান এবং ডেভিড হেয়ারের পৃষ্ঠপোষকতায় হেয়ার স্কুলে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ পান। ১৮২৮ সালে তিনি বৃত্তি নিয়ে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলার অন্যতম বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডিরোজিওর সান্নিধ্য লাভ করেন। ১৮৩৩ সালে রামতনু হিন্দু কলেজের শিক্ষক হন এবং ১৮৪৬ সালে সরকারি কৃষ্ণনগর কলেজে যোগদান করেন। ওই বছরই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রামতনু তাঁর দীর্ঘ শিক্ষক জীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান করেছেন। সবশেষে বরিশাল জিলা স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকাকালে ১৮৬৫ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
রামমোহনের প্রভাবে রামতনু পৈতা ত্যাগ করে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। এ কারণে তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই সামাজিকভাবে অপমানিত হতেন। কিন্তু শিক্ষিত ব্যক্তিরা তাঁকে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে এবং তাঁর অনুপম চরিত্রের জন্য গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর শিষ্যরা তাঁকে তাঁর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও অত্যন্ত সম্মান করতেন। শিষ্যদের অন্যতম শিবনাথ শাস্ত্রী ১৯০৪ সালে রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ নামে নিজের সমাজ-সমীক্ষামূলক গবেষণা গ্রন্থের নামকরণের মাধ্যমে গুরুকে স্মরণীয় করে রেখেছেন।
রামতনু ব্রাহ্মধর্মের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি তাঁর ছাত্রদের হিতোপদেশ অপেক্ষা বুদ্ধি ও নীতির দ্বারা বেশি প্রভাবিত করেন। সরকারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্কুলে বদলি হয়েছেন। সর্বত্রই তিনি তাঁর ছাত্র এবং সহকর্মীদের দ্বারা একজন আদর্শ শিক্ষক, জ্ঞান ও চিন্তার নতুন উৎস এবং একজন অসাধারণ সংগঠক হিসেবে অভিনন্দিত হয়েছেন। তিনি তাঁর শিক্ষা, একাগ্রতা, পুনর্জাগরণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দিক নির্দেশনার দ্বারা ছাত্রদের একটি প্রজন্ম তৈরি করেন, যাঁরা পরবর্তীকালে শিক্ষা, রাজনীতি, সাংবাদিকতা এবং অন্যান্য পেশায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। [সিরাজুল ইসলাম]