মাকড়সা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৩ নং লাইন: ৩ নং লাইন:


<gallery>
<gallery>
Image:Spider13.jpg
Image:Spider13.jpg|''Argyrodes flagellum''


Image:Spider06.jpg
Image:Spider06.jpg|''Leucauge decorata'' (পুরুষ)


Image:Spider10.jpg
Image:Spider10.jpg|''Leucauge decorata'' (স্ত্রী)
</gallery>
 
Argyrodes flagellum#Leucauge decorata(পুরুষ)#Leucauge decorata(স্ত্রী)
 
 
<gallery>
Image:Spider08.jpg


Image:Spider05.jpg
Image:Spider08.jpg|''Nephila mmaculata''


Image:Spider14.jpg
Image:Spider05.jpg|''Tetragnatha'' sp.
</gallery>


Image:Spider14.jpg|''Cyclosa bifida''


Nephila mmaculata#Tetragnatha sp.#Cyclosa bifida
Image:Spider12.jpg|''Cyrtpphora cicatrosa''


<gallery>
Image:Spider09.jpg|''Oxyopas shweta''
Image:Spider12.jpg
 
Image:Spider09.jpg
 
Image:Spider07.jpg
</gallery>


Cyrtpphora cicatrosa#Oxyopas shweta#Oxyopas sp.
Image:Spider07.jpg|''Oxyopas'' sp.
<gallery>
Image:Spider04.jpg


Image:Spider02.jpg
Image:Spider04.jpg|''Pisaurid spider''


Image:Spider03.jpg
Image:Spider02.jpg|''Olios gravelyi''
</gallery>


Pisaurid spider#Olios gravelyi#Phrynarachne katoi
Image:Spider03.jpg|''Phrynarachne katoi''


<gallery>
'Image:Spider15.jpg|''Asemonea andamanensis''
Image:Spider15.jpg


Image:Spider01.jpg
Image:Spider01.jpg|''Salticid spider''


Image:Spider11.jpg
Image:Spider11.jpg|''Salticid spider''
</gallery>
</gallery>
Asemonea andamanensis#Salticid spider#Salticid spider


আজ পর্যন্ত জানা ৩৭,২৯৬ প্রজাতির মাকড়সা ৩,৪৫০ গণ ও ১০৬ গোত্রে শ্রেণীবদ্ধ। প্রতিবছরই নতুন নতুন প্রজাতির বর্ণনা হচ্ছে। এগুলি আছে মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র, তুন্দ্রা থেকে ক্রান্তীয় নিম্নাঞ্চলের বনভূমিতে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
আজ পর্যন্ত জানা ৩৭,২৯৬ প্রজাতির মাকড়সা ৩,৪৫০ গণ ও ১০৬ গোত্রে শ্রেণীবদ্ধ। প্রতিবছরই নতুন নতুন প্রজাতির বর্ণনা হচ্ছে। এগুলি আছে মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র, তুন্দ্রা থেকে ক্রান্তীয় নিম্নাঞ্চলের বনভূমিতে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
৫৭ নং লাইন: ৩৮ নং লাইন:
মাকড়সা মুক্তজীবী, সাধারণত নিঃসঙ্গ ও শিকারি, কীটপতঙ্গ ও এই জাতীয় ক্ষুদে প্রাণী ধরে, যার মধ্যে মানুষের ক্ষতিকর ও রোগবাহক কীটপতঙ্গও থাকে। বড় বড় মাকড়সা ছোট সাপ, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের জালের ফাঁদে ধরে। শিকারি মাকড়সা (নেকড়ে ও কাঁকড়া মাকড়সা) খাদ্যের জন্য ঘুরে বেড়ায়, শিকার জাপটে ধরে বা তার উপরে ঝাঁপ দেয়। অন্যরা শিকার জালের ফাঁদে আটকায়। উদর নিঃসৃত উৎসেচকের সাহায্যে শিকারকে আংশিক হজম করে এরা তা চুষে খায়। কোন কোন প্রজাতি স্বজাতিভুক, পূর্বরাগ ও যৌন মিলন শেষে স্ত্রী মাকড়সা সঙ্গী পুরুষটিকে খেয়ে ফেলে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মাকড়সা দিবাচর, দিনেই সক্রিয়।
মাকড়সা মুক্তজীবী, সাধারণত নিঃসঙ্গ ও শিকারি, কীটপতঙ্গ ও এই জাতীয় ক্ষুদে প্রাণী ধরে, যার মধ্যে মানুষের ক্ষতিকর ও রোগবাহক কীটপতঙ্গও থাকে। বড় বড় মাকড়সা ছোট সাপ, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের জালের ফাঁদে ধরে। শিকারি মাকড়সা (নেকড়ে ও কাঁকড়া মাকড়সা) খাদ্যের জন্য ঘুরে বেড়ায়, শিকার জাপটে ধরে বা তার উপরে ঝাঁপ দেয়। অন্যরা শিকার জালের ফাঁদে আটকায়। উদর নিঃসৃত উৎসেচকের সাহায্যে শিকারকে আংশিক হজম করে এরা তা চুষে খায়। কোন কোন প্রজাতি স্বজাতিভুক, পূর্বরাগ ও যৌন মিলন শেষে স্ত্রী মাকড়সা সঙ্গী পুরুষটিকে খেয়ে ফেলে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মাকড়সা দিবাচর, দিনেই সক্রিয়।


'''সারণি'''  বাংলাদেশে মাকড়সার বিভিন্ন গোত্রে গণ ও প্রজাতি
''সারণি''  বাংলাদেশে মাকড়সার বিভিন্ন গোত্রে গণ ও প্রজাতি।
 
{| class="table table-bordered table-hover"
'''গোত্র''''''            ''' '''   ''''''গণের ''''''    ''''''প্রজাতির ''''''              ''' '''                      ''' '''সংখ্যা'''  '''  ''''''সংখ্যা''''''               ''' '''        '''''' স্বভাব ও বাসস্থল'''
|-
 
| গোত্র   || গণের সংখ্যা  || প্রজাতির সংখ্যা || স্বভাব ও বাসস্থল
Theraphosidae           ১              ১                 নিশাচর; বনে ছড়ানো গাছের গুঁড়ি ও পাতায় তৈরি রেশম বাসায় লুকিয়ে থাকে।Scytodidae                  ১              ৩                নিশাচর; দিনে মোড়ানো পাতায় লুকিয়ে থাকে; বন, বাগান ও ধানক্ষেতে পাতার বাসিন্দা।Pholcidae                   ২              ৩                পাতার তলায়, ঘরের প্রায় অন্ধকার কোণে জালে বসে থাকে।Oonopidae                 ১               ১                 পাথর, মাটি বা গাছের বাকলের নিচে থাকে; কেউ কেউ ঝরা পাতা বা                                                                     আবর্জনার তলায়; ঘাস, ঝোপঝাড় ও নানা জাতের গাছের পাতায়ও দেখা যায়।Hersiliidae                 ১              ৫                গাছের কান্ড ও পুরানো দেয়ালে বোনা ছোট, এবড়োথেবড়ো জালে থাকে।Uloboridae                ৩              ৭                ক্ষেতের ঝোপঝাড়, ফলবাগান, বনের বাসিন্দা।Theridiidae                ১৩            ৩৬              নানা জায়গায় দেখা যায়। কেউ কেউ চোর-স্বভাবের, থাকে অন্য মাকড়সার জালে।Linyphiidae               ৭              ১১               বন, নিচু গাছগাছড়া বা ঘাস, ধানক্ষেত ইত্যাদিতে থাকে।Tetragnathidae          ৮             ৩৫              নানা ধরনের ঝোপঝাড়ের বাসিন্দা। খাল, জলাশয়, পুকুর ইত্যাদির আশপাশে দেখা                                                                     যায়। ক্ষেতখামার ও স্থলভাগের কীটপতঙ্গ শিকারে দক্ষ।Araneidae                 ১৯            ৯০              বেশির ভাগই পাতার বাসিন্দা, থাকে উঁচু গাছে কিংবা গুল্ম, ওষধি, ঘাস, শস্যক্ষেত                                                                     এবং বাড়ি ও দালানকোঠায়।Lycosidae                  ৫              ১৯               নিশাচর; নেকড়ে মাকড়সা নামেই পরিচিত, নির্বিশেষ ভূচর, আছে সমুদ্রতীর থেকে                                                                      পাহাড়চূড়াসহ                                                                      সর্বত্র, যে কোন স্থানীয় বাসস্থানে। দক্ষ শিকারি, শিকার খোঁজে মাঠে, ঝোপঝাড়ে,                                                                      ক্ষেতখামারে।Pisauridae                 ২              ২                বড় আকারের শিকারি মাকড়সা এবং বনবাদাড় ও তৃণক্ষেত্রের বাসিন্দা।Oxyopidae                 ১              ১৮              বনবিড়াল মাকড়সা (লিন্স্ক স্পাইডার) নামে পরিচিত। দক্ষ শিকারি, গাছগাছড়া ও                                                                     ফুলের উপর ছুটে বেড়ায়।Agelenidae                 ১              ১                 ভ্রাম্যমাণ দলভুক্ত। মাঠের ঘাস ও ঝোপঝাড়ে শিকার করে বেড়ায়।Clubionidae               ৪              ২২              নিশাচর শিকারি মাকড়সা। পাতা, গাছের শিথিল বাকল কিংবা মাটিতে ঝরা পাতার                                                                     জঞ্জালে থাকে।Corinnidae                ২              ৩                মাটিতে পড়া গাছ বা পাতার জঞ্জালের বাসিন্দা। Trochanteriidae         ১              ১                 ধানক্ষেত বা বনের ঝোপঝাড়ে থাকে।Gnaphosidae             ৪              ৬                নিশাচর শিকারি। সর্বত্রই দেখা যায়, বেশির ভাগই মাটিতে থাকে। নানা জাতের                                                                     কীটপতঙ্গ খায়।Sparassidae               ৪             ১১               নিশাচর শিকারি। ধানক্ষেত, ঘাসজমি, বন, গুহা ও গৃহে থাকে।Philodromidae           ১              ৬                ফুলগাছেই বেশি থাকে। ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার ধরে।Thomisidae               ২৪            ৪৮              নানা জাতের গাছে, বিশেষত ফুলগাছের ঝোপঝাড়ে থাকে। মাটিতে এবং গাছেও                                                                     ঘুরে বেড়ায়। আত্মগোপন ও অনুকরণে সুদক্ষ। শরীরের রং ও দাগ অনেক সময়                                                                     পরিবেশের সঙ্গে চমৎকার মিশে যায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার ধরে।Salticidae                   ২৯            ৮৩              গাছ, কাঠের গুঁড়ি, বেড়া ও দালানের দেয়ালে প্রায়ই দেখা যায়। কোন প্রজাতি                                                                      বৃক্ষচর, কোনটি থাকে মাটিতে ছড়ানো জঞ্জাল বা নিচু ঝোপঝাড়ে।'''মোট                           ''' '''১৩৪         ''' '''৪১২'''
|-
| Theraphosidae  || ১  || ১  || নিশাচর; বনে ছড়ানো গাছের গুঁড়ি ও পাতায় তৈরি রেশম বাসায় লুকিয়ে থাকে ।
|-
|  Scytodidae|| ১  || ৩  || নিশাচর; দিনে মোড়ানো পাতায় লুকিয়ে থাকে; বন, বাগান ও ধানেেত পাতার বাসিন্দা।
|-
| Pholcidae  || ২  || ৩  || পাতার তলায়, ঘরের প্রায় অন্ধকার কোণে জালে বসে থাকে ।
|-
|    Oonopidae  || ১  || ১  || পাথর, মাটি বা গাছের বাকলের নিচে থাকে; কেউ কেউ ঝরা পাতা বা আবর্জনার তলায়; ঘাস, ঝোপঝাড় ও নানা জাতের গাছের পাতায়ও দেখা যায়।
|-
|  Hersiliidae    || ১  || ৫  || গাছের কাণ্ড ও পুরানো দেয়ালে বোনা ছোট, এবড়োথেবড়ো জালে থাকে। 
|-
|    Uloboridae || ৩  || ৭  || ক্ষেতের ঝোপঝাড়, ফলবাগান, বনের বাসিন্দা।
|-
| Theridiidae || ১৩  || ৩৬  || নানা জায়গায় দেখা যায়। কেউ কেউ চোর-স্বভাবের, থাকে অন্য মাকড়সার জালে।
|-
| Linyphiidae || ৭  || ১১  || বন, নিচু গাছগাছড়া বা ঘাস, ধানতে ইত্যাদিতে থাকে ।
|-
| Tetragnathidae || ৮  || ৩৫  || নানা ধরনের ঝোপঝাড়ের বাসিন্দা। খাল, জলাশয়, পুকুর ইত্যাদির আশপাশে দেখা যায়। তেখামার ও স্থলভাগের কীটপতঙ্গ শিকারে দক্ষ ।
|-
|    Araneidae  || ১৯  || ৯০  || বেশির ভাগই পাতার বাসিন্দা, থাকে উঁচু গাছে কিংবা গুল্ম, ওষধি, ঘাস, শস্যতে এবং বাড়ি ও দালানকোঠায়।
|-
| Lycosidae  || ৫  || ১৯  || নিশাচর; নেকড়ে মাকড়সা নামেই পরিচিত, নির্বিশেষ ভূচর, আছে সমুদ্রতীর থেকে পাহাড়চূড়াসহ সর্বত্র, যে কোন স্থানীয় বাসস্থানে। শিকারি, শিকার খোঁজে মাঠে, ঝোপঝাড়ে, তেখামারে।
|-
|  Pisauridae || ২  || ২  || বড় আকারের শিকারি মাকড়সা এবং বনবাদাড় ও তৃণেেত্রর বাসিন্দা
|-
| Oxyopidae || ১  || ১৮  || বনবিড়াল মাকড়সা (লিন্স্ক স্পাইডার) নামে পরিচিত। শিকারি, গাছগাছড়া ও ফুলের উপর ছুটে বেড়ায়।
|-
| Agelenidae || ১  || ১  || ভ্রাম্যমাণ দলভুক্ত। মাঠের ঘাস ও ঝোপঝাড়ে শিকার করে বেড়ায়।
|-
| Clubionidae || ৪  || ২২  || নিশাচর শিকারি মাকড়সা। পাতা, গাছের শিথিল বাকল কিংবা মাটিতে ঝরা পাতার জঞ্জালে থাকে।
|-
| Corinnidae || ২  || ৩  || মাটিতে পড়া গাছ বা পাতার জঞ্জালের বাসিন্দা।
|-
| Trochanteriidae  || ১  || ১  || ধানতে বা বনের ঝোপঝাড়ে থাকে।
|-
| Gnaphosidae || ৪  || ৬  || নিশাচর শিকারি। সর্বত্রই দেখা যায়, বেশির ভাগই মাটিতে থাকে। নানা জাতের কীটপতঙ্গ খায়।
|-
| Sparassidae  || ৪  || ১১  || নিশাচর শিকারি। ধানতে, ঘাসজমি, বন, গুহা ও গৃহে থাকে।
|-
| Philodromidae  || ১  || ৬  || ফুলগাছেই বেশি থাকে। ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার ধরে।
|-
| Thomisidae  || ২৪  || ৪৮  || নানা জাতের গাছে, বিশেষত ফুলগাছের ঝোপঝাড়ে থাকে। মাটিতে এবং গাছেও ঘুরে বেড়ায়। আত্মগোপন ও অনুকরণে সুদ। শরীরের রং ও দাগ অনেক সময় পরিবেশের সঙ্গে চমৎকার মিশে যায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার ধরে।
|-
| Salticidae || ২৯  || ৮৩  || গাছ, কাঠের গুঁড়ি, বেড়া ও দালানের দেয়ালে প্রায়ই দেখা যায়। কোন প্রজাতি বৃচর, কোনটি থাকে মাটিতে ছড়ানো জঞ্জাল বা নিচু ঝোপঝাড়ে।
|-
| মোট     || ১৩৪  || ৪১২   || 
|}


মাকড়সা আদিম প্রাণিবর্গের অন্তর্ভুক্ত। এদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে ডিভোনিয়ান যুগের লাল শিলাস্তরে। ইউরোপ ও আমেরিকার কার্বনিফেরাস যুগের শিলা থেকেও এদের অনেক প্রজাতি সংগৃহীত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে Insecta ও Arachnida শ্রেণি দুটি সন্ধীপদীদের বিবর্তনের গোড়ার দিকেই পৃথক হয়ে গিয়েছিল।
মাকড়সা আদিম প্রাণিবর্গের অন্তর্ভুক্ত। এদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে ডিভোনিয়ান যুগের লাল শিলাস্তরে। ইউরোপ ও আমেরিকার কার্বনিফেরাস যুগের শিলা থেকেও এদের অনেক প্রজাতি সংগৃহীত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে Insecta ও Arachnida শ্রেণি দুটি সন্ধীপদীদের বিবর্তনের গোড়ার দিকেই পৃথক হয়ে গিয়েছিল।


<gallery>
<gallery>
Image:Spiderwithnet05.jpg
Image:Spiderwithnet05.jpg|''Nephila'' sp.


Image:Spiderwithnet11.jpg
Image:Spiderwithnet11.jpg|''Agriope pulchella''


Image:Spiderwithnet04.jpg
Image:Spiderwithnet04.jpg|''Agriope'' sp.
</gallery>


Nephila sp.#Agriope pulchella#Agriope sp.
Image:Spiderwithnet07.jpg|''Cyclosa insulana''


<gallery>
Image:Spiderwithnet01.jpg|Space-web of ''C. cicatrosa''
Image:Spiderwithnet07.jpg


Image:Spiderwithnet01.jpg
Image:Spiderwithnet10.jpg|''Araneid spider''
 
Image:Spiderwithnet10.jpg
</gallery>
</gallery>
Cyclosa insulana#Space-web of C. cicatrosa#Araneid spider


বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত জানা মোট ৪১২ প্রজাতির মাকড়সা ১৩৪ গণ ও ২২ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত (সারণি)। Araneidae ও Salticidae গোত্র দুটিই প্রধান, তাতে যথাক্রমে আছে ৯০ ও ৮৩ প্রজাতি, অতঃপর ক্রমান্বয়ে Thomisidae (৪৮), Theridiidae (৩৬), Tetragnathidae (৩৫), Clubionidae (২২), Lycosidae (১৯) এবং Oxyopidae(১৮)।
বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত জানা মোট ৪১২ প্রজাতির মাকড়সা ১৩৪ গণ ও ২২ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত (সারণি)। Araneidae ও Salticidae গোত্র দুটিই প্রধান, তাতে যথাক্রমে আছে ৯০ ও ৮৩ প্রজাতি, অতঃপর ক্রমান্বয়ে Thomisidae (৪৮), Theridiidae (৩৬), Tetragnathidae (৩৫), Clubionidae (২২), Lycosidae (১৯) এবং Oxyopidae(১৮)।
১০৩ নং লাইন: ১২৪ নং লাইন:
বোলতা হলো মাকড়সার প্রধান শত্রু এবং তারা মাকড়সা ও তাদের ডিমের পরজীবী। কোন কোন জাতের বোলতা তাদের লার্ভার খাদ্য হিসেবে বাসায় মাকড়সা জমা করে রাখে, অন্যরা ডিম পাড়ে মাকড়সার ডিমের থলেতে। অনেক মাকড়সাই নিরাপত্তার তাগিদে ডিমের থলিগুলি পাহারা দেয়।
বোলতা হলো মাকড়সার প্রধান শত্রু এবং তারা মাকড়সা ও তাদের ডিমের পরজীবী। কোন কোন জাতের বোলতা তাদের লার্ভার খাদ্য হিসেবে বাসায় মাকড়সা জমা করে রাখে, অন্যরা ডিম পাড়ে মাকড়সার ডিমের থলেতে। অনেক মাকড়সাই নিরাপত্তার তাগিদে ডিমের থলিগুলি পাহারা দেয়।


'''ধানক্ষেতের মাকড়সা''' (Rice-field spider)  Araneae বর্গের বিভিন্ন প্রজাতির মাকড়সা ধানক্ষেতের পরিবেশে বসবাস করে। এসব মাকড়সা থাকে কৃষি ও প্রাকৃতিক বাস্ত্ততন্ত্রে। ফসল বা উদ্ভিদসমৃদ্ধ প্রতি একর জমিতে থাকতে পারে প্রায় ৫০,০০০ সদস্য। মাকড়সারা সেরা প্রাকৃতিক তাঁতি, বোনে রেশম সুতার চমৎকার জাল, ধরে ক্ষেতের অসংখ্য কীটপতঙ্গ।
'''''ধানক্ষেতের মাকড়সা''''' (Rice-field spider)  Araneae বর্গের বিভিন্ন প্রজাতির মাকড়সা ধানক্ষেতের পরিবেশে বসবাস করে। এসব মাকড়সা থাকে কৃষি ও প্রাকৃতিক বাস্ত্ততন্ত্রে। ফসল বা উদ্ভিদসমৃদ্ধ প্রতি একর জমিতে থাকতে পারে প্রায় ৫০,০০০ সদস্য। মাকড়সারা সেরা প্রাকৃতিক তাঁতি, বোনে রেশম সুতার চমৎকার জাল, ধরে ক্ষেতের অসংখ্য কীটপতঙ্গ।


দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির ধানক্ষেত থেকে ২৬ গোত্রের ১৩১ গণের ৩৪২ প্রজাতির মাকড়সা শনাক্ত করা হয়েছে। ১৯৮৯-৯০ সালে সালনায় অবস্থিত সাবেক স্নাতকোত্তর কৃষিবিদ্যা ইনস্টিটিউট (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (JICA) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক সমীক্ষায় বাংলাদেশের ধানক্ষেতে ১০ গোত্রের ৫৫ প্রজাতির মাকড়সা শনাক্ত করা হয়েছিল। সর্বাধিক সংখ্যায় ছিল Oxyopidae গোত্রের প্রজাতিরা, অতঃপর Tetragnathidae গোত্রের সদস্যরা। দেখা গেছে, নেকড়ে মাকড়সা নামে সুপরিচিত (''Pardosa pseudoannulata'') ধানের প্রধান ক্ষতিকর বাদামি গাছ ফড়িং-এর (Nilaparvata lugens) সবচেয়ে বড় শত্রু এবং অনুকূল পরিবেশে এই জাতের পোকা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সহায়ক। বাংলাদেশে ধানক্ষেতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মাকড়সা: ''Coleasoma blandum'' (Theridiidae), ''Oedothorax formosanus'' (Linyphiidae), ''Araneus inustus'' (Araneidae), ''Neoscona theisi'' (Araneidae), ''Argiope minuta'' (Araneidae), ''Cyclosa mulmeinensis'' (Araneidae), ''Tetragnatha javana'' (Tetragnathidae) এবং ''Oxyopes javanus'' (Oxyopidae)। ''Thomisidae এবং Salticidae'' গোত্রের প্রজাতিরা সেচকৃত ধানক্ষেতে সহজদৃষ্ট।  [মো. আহসান হাবীব]
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির ধানক্ষেত থেকে ২৬ গোত্রের ১৩১ গণের ৩৪২ প্রজাতির মাকড়সা শনাক্ত করা হয়েছে। ১৯৮৯-৯০ সালে সালনায় অবস্থিত সাবেক স্নাতকোত্তর কৃষিবিদ্যা ইনস্টিটিউট (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (JICA) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক সমীক্ষায় বাংলাদেশের ধানক্ষেতে ১০ গোত্রের ৫৫ প্রজাতির মাকড়সা শনাক্ত করা হয়েছিল। সর্বাধিক সংখ্যায় ছিল Oxyopidae গোত্রের প্রজাতিরা, অতঃপর Tetragnathidae গোত্রের সদস্যরা। দেখা গেছে, নেকড়ে মাকড়সা নামে সুপরিচিত (''Pardosa pseudoannulata'') ধানের প্রধান ক্ষতিকর বাদামি গাছ ফড়িং-এর (Nilaparvata lugens) সবচেয়ে বড় শত্রু এবং অনুকূল পরিবেশে এই জাতের পোকা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সহায়ক। বাংলাদেশে ধানক্ষেতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মাকড়সা: ''Coleasoma blandum'' (Theridiidae), ''Oedothorax formosanus'' (Linyphiidae), ''Araneus inustus'' (Araneidae), ''Neoscona theisi'' (Araneidae), ''Argiope minuta'' (Araneidae), ''Cyclosa mulmeinensis'' (Araneidae), ''Tetragnatha javana'' (Tetragnathidae) এবং ''Oxyopes javanus'' (Oxyopidae)। ''Thomisidae এবং Salticidae'' গোত্রের প্রজাতিরা সেচকৃত ধানক্ষেতে সহজদৃষ্ট।  [মো. আহসান হাবীব]


''আরও দেখুন'' কীটপতঙ্গ।
''আরও দেখুন'' [[কীটপতঙ্গ|কীটপতঙ্গ]]।


[[en:Spider]]
[[en:Spider]]

০৯:৪২, ৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মাকড়সা (Spider)  চার জোড়া পা এবং পেডিসেল বা বোঁটা দ্বারা যুক্ত শিরবক্ষ ও অবিভক্ত উদর নিয়ে গঠিত Arachnida শ্রেণীর Araneae বর্গের সদস্য। শিরবক্ষ একটি বর্মে ঢাকা থাকে, আটটি বা কম সংখ্যক একক চোখ আছে। শুঙ্গ নেই, সংবেদন কর্মকান্ড অংশত চালায় হাঁটার পা দিয়ে। মাথার নিচের দিকে রয়েছে দু’জোড়া উপাঙ্গ সামনের জোড়া দুই খন্ডের ও নিম্নমুখী, এগুলির সামনের খন্ডের গড়ন বিষদাঁতের মতো ও বিষগ্রন্থিতে যুক্ত, যা দিয়ে মাকড়সা শিকার ধরে ও বিষ ঢুকিয়ে সেটাকে অসাড় করে পরবর্তীকালে জারকরসে গলিয়ে ওই মন্ড শুষে নেয়। উপাঙ্গের দ্বিতীয় জোড়া পুরুষ মাকড়সায় যৌনসঙ্গমের প্রত্যঙ্গে রূপান্তরিত। পেটের তলায় সামনের দিকে আছে রেশমগ্রন্থির সঙ্গে যুক্ত তিন জোড়া ক্ষুদে সুতা কাটার যন্ত্র (স্পিনারেট)। রেশমগ্রন্থি থেকে উৎপন্ন প্রোটিনসমৃদ্ধ আঠালো তরল বাতাসের সংস্পর্শে শক্ত রেশম সুতায় পরিণত হয় এবং তা দিয়ে মাকড়সা গুঁটি, ডিমের খোলস, সুড়ঙ্গের জাল এবং শিকার ধরার জাল বানায় ও শিকারকে মুড়ে রাখে। হালকা সুতা দিয়ে বিশেষত বাচ্চা মাকড়সারা উপরে ওঠে এবং বাতাসে ভেসে থাকে।

আজ পর্যন্ত জানা ৩৭,২৯৬ প্রজাতির মাকড়সা ৩,৪৫০ গণ ও ১০৬ গোত্রে শ্রেণীবদ্ধ। প্রতিবছরই নতুন নতুন প্রজাতির বর্ণনা হচ্ছে। এগুলি আছে মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র, তুন্দ্রা থেকে ক্রান্তীয় নিম্নাঞ্চলের বনভূমিতে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।

মাকড়সা মুক্তজীবী, সাধারণত নিঃসঙ্গ ও শিকারি, কীটপতঙ্গ ও এই জাতীয় ক্ষুদে প্রাণী ধরে, যার মধ্যে মানুষের ক্ষতিকর ও রোগবাহক কীটপতঙ্গও থাকে। বড় বড় মাকড়সা ছোট সাপ, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের জালের ফাঁদে ধরে। শিকারি মাকড়সা (নেকড়ে ও কাঁকড়া মাকড়সা) খাদ্যের জন্য ঘুরে বেড়ায়, শিকার জাপটে ধরে বা তার উপরে ঝাঁপ দেয়। অন্যরা শিকার জালের ফাঁদে আটকায়। উদর নিঃসৃত উৎসেচকের সাহায্যে শিকারকে আংশিক হজম করে এরা তা চুষে খায়। কোন কোন প্রজাতি স্বজাতিভুক, পূর্বরাগ ও যৌন মিলন শেষে স্ত্রী মাকড়সা সঙ্গী পুরুষটিকে খেয়ে ফেলে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মাকড়সা দিবাচর, দিনেই সক্রিয়।

সারণি  বাংলাদেশে মাকড়সার বিভিন্ন গোত্রে গণ ও প্রজাতি।

গোত্র গণের সংখ্যা প্রজাতির সংখ্যা স্বভাব ও বাসস্থল
Theraphosidae নিশাচর; বনে ছড়ানো গাছের গুঁড়ি ও পাতায় তৈরি রেশম বাসায় লুকিয়ে থাকে ।
Scytodidae নিশাচর; দিনে মোড়ানো পাতায় লুকিয়ে থাকে; বন, বাগান ও ধানেেত পাতার বাসিন্দা।
Pholcidae পাতার তলায়, ঘরের প্রায় অন্ধকার কোণে জালে বসে থাকে ।
Oonopidae পাথর, মাটি বা গাছের বাকলের নিচে থাকে; কেউ কেউ ঝরা পাতা বা আবর্জনার তলায়; ঘাস, ঝোপঝাড় ও নানা জাতের গাছের পাতায়ও দেখা যায়।
Hersiliidae গাছের কাণ্ড ও পুরানো দেয়ালে বোনা ছোট, এবড়োথেবড়ো জালে থাকে।
Uloboridae ক্ষেতের ঝোপঝাড়, ফলবাগান, বনের বাসিন্দা।
Theridiidae ১৩ ৩৬ নানা জায়গায় দেখা যায়। কেউ কেউ চোর-স্বভাবের, থাকে অন্য মাকড়সার জালে।
Linyphiidae ১১ বন, নিচু গাছগাছড়া বা ঘাস, ধানতে ইত্যাদিতে থাকে ।
Tetragnathidae ৩৫ নানা ধরনের ঝোপঝাড়ের বাসিন্দা। খাল, জলাশয়, পুকুর ইত্যাদির আশপাশে দেখা যায়। তেখামার ও স্থলভাগের কীটপতঙ্গ শিকারে দক্ষ ।
Araneidae ১৯ ৯০ বেশির ভাগই পাতার বাসিন্দা, থাকে উঁচু গাছে কিংবা গুল্ম, ওষধি, ঘাস, শস্যতে এবং বাড়ি ও দালানকোঠায়।
Lycosidae ১৯ নিশাচর; নেকড়ে মাকড়সা নামেই পরিচিত, নির্বিশেষ ভূচর, আছে সমুদ্রতীর থেকে পাহাড়চূড়াসহ সর্বত্র, যে কোন স্থানীয় বাসস্থানে। দ শিকারি, শিকার খোঁজে মাঠে, ঝোপঝাড়ে, তেখামারে।
Pisauridae বড় আকারের শিকারি মাকড়সা এবং বনবাদাড় ও তৃণেেত্রর বাসিন্দা
Oxyopidae ১৮ বনবিড়াল মাকড়সা (লিন্স্ক স্পাইডার) নামে পরিচিত। দ শিকারি, গাছগাছড়া ও ফুলের উপর ছুটে বেড়ায়।
Agelenidae ভ্রাম্যমাণ দলভুক্ত। মাঠের ঘাস ও ঝোপঝাড়ে শিকার করে বেড়ায়।
Clubionidae ২২ নিশাচর শিকারি মাকড়সা। পাতা, গাছের শিথিল বাকল কিংবা মাটিতে ঝরা পাতার জঞ্জালে থাকে।
Corinnidae মাটিতে পড়া গাছ বা পাতার জঞ্জালের বাসিন্দা।
Trochanteriidae ধানতে বা বনের ঝোপঝাড়ে থাকে।
Gnaphosidae নিশাচর শিকারি। সর্বত্রই দেখা যায়, বেশির ভাগই মাটিতে থাকে। নানা জাতের কীটপতঙ্গ খায়।
Sparassidae ১১ নিশাচর শিকারি। ধানতে, ঘাসজমি, বন, গুহা ও গৃহে থাকে।
Philodromidae ফুলগাছেই বেশি থাকে। ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার ধরে।
Thomisidae ২৪ ৪৮ নানা জাতের গাছে, বিশেষত ফুলগাছের ঝোপঝাড়ে থাকে। মাটিতে এবং গাছেও ঘুরে বেড়ায়। আত্মগোপন ও অনুকরণে সুদ। শরীরের রং ও দাগ অনেক সময় পরিবেশের সঙ্গে চমৎকার মিশে যায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার ধরে।
Salticidae ২৯ ৮৩ গাছ, কাঠের গুঁড়ি, বেড়া ও দালানের দেয়ালে প্রায়ই দেখা যায়। কোন প্রজাতি বৃচর, কোনটি থাকে মাটিতে ছড়ানো জঞ্জাল বা নিচু ঝোপঝাড়ে।
মোট ১৩৪ ৪১২

মাকড়সা আদিম প্রাণিবর্গের অন্তর্ভুক্ত। এদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে ডিভোনিয়ান যুগের লাল শিলাস্তরে। ইউরোপ ও আমেরিকার কার্বনিফেরাস যুগের শিলা থেকেও এদের অনেক প্রজাতি সংগৃহীত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে Insecta ও Arachnida শ্রেণি দুটি সন্ধীপদীদের বিবর্তনের গোড়ার দিকেই পৃথক হয়ে গিয়েছিল।

বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত জানা মোট ৪১২ প্রজাতির মাকড়সা ১৩৪ গণ ও ২২ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত (সারণি)। Araneidae ও Salticidae গোত্র দুটিই প্রধান, তাতে যথাক্রমে আছে ৯০ ও ৮৩ প্রজাতি, অতঃপর ক্রমান্বয়ে Thomisidae (৪৮), Theridiidae (৩৬), Tetragnathidae (৩৫), Clubionidae (২২), Lycosidae (১৯) এবং Oxyopidae(১৮)।

মাকড়সার দেহের দৈর্ঘ্য ০.৫ মিমি-১০ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। উষ্ণমন্ডলীয় ট্যারানটুলার দলে রয়েছে বৃহত্তম প্রজাতিরা। শুঙ্গ না থাকলেও মুখের পেডিপালপকে ভুলবশত শুঙ্গ মনে হতে পারে। পেডিপালপ শিকার উদরস্থ করতে কাজে লাগে। স্ত্রী মাকড়সার পালপ সরু।

পেটের তলায় অবস্থিত ট্রাকিয়া বা বুক-লাঙ্গস দ্বারা অথবা উভয় অঙ্গ দ্বারা শ্বসনকার্য চালায়। মাকড়সার বুক-লাঙ্গস অভ্যন্তরীণ ও স্থলজ পরিবেশের জন্য অভিযোজিত।

মাকড়সা শরীরের বাইরে খাদ্য হজম করে। ধৃত শিকারের শরীরে উদরের জারকরস ঢুকিয়ে দিলে কিছুক্ষণ পর কোষকলা গলে যায় ও প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে মাকড়সা জারিত খাদ্যবস্ত্তর কোষকলার পুরোটাই শুষে নেয় এবং তা দ্রুত শরীরে আত্তীভূত হয়।

অধিকাংশ মাকড়সার বিষগ্রন্থি থাকলেও এই বিষ সাধারণত মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর নয়, তবে ব্যতিক্রম হলো ব্ল্যাক উইডো ও ব্রাউন রেক্লুজ মাকড়সা। প্রথমটির বিষ মানুষের স্নায়ুতন্ত্র অসাড় করে দেয় এবং দ্বিতীয়টির দংশনে দংশিত স্থানে পচন ধরে।

আজীবন রেশম সুতা তৈরির ক্ষমতা মাকড়সার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। জালবাসী মাকড়সারাই সর্বাধিক পরিমাণ রেশম সুতা উৎপাদন করে ও শিকার ধরার বিস্তৃত জাল বোনে। জাল বোনা ছাড়াও মাকড়সা নানা কাজে সুতা ব্যবহার করে। শিকার মুড়ে রাখতে, ডিম ঢাকতে, বাসা বানাতে, সুড়ঙ্গগুলিতে আস্তরণ দিতে সুতা লাগে। কোন পতঙ্গ সুতার উপর দিয়ে হাঁটলে সেগুলি মাকড়সাকে সংকেত দেয়। কোন কোন মাকড়সা বনে কীটপতঙ্গ খোঁজার সময় সুতায় ঝুলে নিরাপদে ডাল বা পাতা টপকায়।

মাকড়সার স্ত্রী ও পুরুষ পৃথক এবং পূর্বরাগ যথেষ্ট ব্যাপক। প্রজাতিভেদে এটি নানা প্রকার। সাদামাটা সঙ্গম থেকে আছে জটিল রাসায়নিক, চাক্ষুষ বা স্পন্দনযুক্ত সংকেত। স্ত্রী মাকড়সা সাধারণত রেশম থলেতে ডিম পাড়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে ডিম না ফোটা পর্যন্ত স্ত্রী মাকড়সা সেটি বয়ে বেড়ায়। বড় আকারের মাকড়সা, বাগানের মাকড়সা ইত্যাদি ডিম পাড়ার মাত্র ১-২ মাস আগে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। স্ত্রী মাকড়সা সাধারণত ১-২টি বড় আকারের থলে উৎপাদন করে, তাতে কয়েক হাজার ডিম পাড়ে। ছোট জাতের মাকড়সারা বড়দের আগেই বয়ঃপ্রাপ্ত হয় এবং জীবনকালের সিংহভাগই প্রজননকর্মে কাটায়, কয়েকটি থলে উৎপাদন করে ও তাতে থাকে অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক ডিম।

আকার ছাড়া বৃদ্ধির সময় মাকড়সার আর বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটে না। বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার আগে অন্তত ২-১৪ বার তারা কৃত্তিকা ছেড়ে বাড়তে থাকে। জীবনকাল বিভিন্ন, সম্ভবত বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই ১ মাস থেকে ১ বছর। ট্যারেন্টুলা মাকড়সা স্বাভাবিক অবস্থায় কত বছর বাঁচে জানা না গেলেও বন্দি অবস্থায় ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। স্ত্রীরা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘজীবী।

বোলতা হলো মাকড়সার প্রধান শত্রু এবং তারা মাকড়সা ও তাদের ডিমের পরজীবী। কোন কোন জাতের বোলতা তাদের লার্ভার খাদ্য হিসেবে বাসায় মাকড়সা জমা করে রাখে, অন্যরা ডিম পাড়ে মাকড়সার ডিমের থলেতে। অনেক মাকড়সাই নিরাপত্তার তাগিদে ডিমের থলিগুলি পাহারা দেয়।

ধানক্ষেতের মাকড়সা (Rice-field spider)  Araneae বর্গের বিভিন্ন প্রজাতির মাকড়সা ধানক্ষেতের পরিবেশে বসবাস করে। এসব মাকড়সা থাকে কৃষি ও প্রাকৃতিক বাস্ত্ততন্ত্রে। ফসল বা উদ্ভিদসমৃদ্ধ প্রতি একর জমিতে থাকতে পারে প্রায় ৫০,০০০ সদস্য। মাকড়সারা সেরা প্রাকৃতিক তাঁতি, বোনে রেশম সুতার চমৎকার জাল, ধরে ক্ষেতের অসংখ্য কীটপতঙ্গ।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির ধানক্ষেত থেকে ২৬ গোত্রের ১৩১ গণের ৩৪২ প্রজাতির মাকড়সা শনাক্ত করা হয়েছে। ১৯৮৯-৯০ সালে সালনায় অবস্থিত সাবেক স্নাতকোত্তর কৃষিবিদ্যা ইনস্টিটিউট (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (JICA) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক সমীক্ষায় বাংলাদেশের ধানক্ষেতে ১০ গোত্রের ৫৫ প্রজাতির মাকড়সা শনাক্ত করা হয়েছিল। সর্বাধিক সংখ্যায় ছিল Oxyopidae গোত্রের প্রজাতিরা, অতঃপর Tetragnathidae গোত্রের সদস্যরা। দেখা গেছে, নেকড়ে মাকড়সা নামে সুপরিচিত (Pardosa pseudoannulata) ধানের প্রধান ক্ষতিকর বাদামি গাছ ফড়িং-এর (Nilaparvata lugens) সবচেয়ে বড় শত্রু এবং অনুকূল পরিবেশে এই জাতের পোকা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সহায়ক। বাংলাদেশে ধানক্ষেতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মাকড়সা: Coleasoma blandum (Theridiidae), Oedothorax formosanus (Linyphiidae), Araneus inustus (Araneidae), Neoscona theisi (Araneidae), Argiope minuta (Araneidae), Cyclosa mulmeinensis (Araneidae), Tetragnatha javana (Tetragnathidae) এবং Oxyopes javanus (Oxyopidae)। Thomisidae এবং Salticidae গোত্রের প্রজাতিরা সেচকৃত ধানক্ষেতে সহজদৃষ্ট।  [মো. আহসান হাবীব]

আরও দেখুন কীটপতঙ্গ