বসু, রাজনারায়ণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১৪ নং লাইন: | ১৪ নং লাইন: | ||
তিনি অনেকগুলি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তার মধ্যে হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা (১৮৭৩); সে কাল আর এ কাল (১৮৭৪); হিন্দু অথবা প্রেসিডেন্সী কলেজের ইতিবৃত্ত (১৮৭৬); বাঙ্গলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা (১৮৭৮), বিবিধ প্রবন্ধ (১৮৮২), এবং বৃদ্ধ হিন্দুর আশা (১৮৮৭) প্রধান। তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পরে তাঁর আত্মজীবনী—রাজনারায়ণ বসুর আত্মচরিত প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি তাঁর জীবন এবং সময়ের নির্ভরশীল বর্ণনা দেন। এসব গ্রন্থ ছাড়াও, তিনি ব্রাহ্মধর্ম নিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে কয়েকটি ইংরেজি ভাষায় লিখিত। | তিনি অনেকগুলি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তার মধ্যে হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা (১৮৭৩); সে কাল আর এ কাল (১৮৭৪); হিন্দু অথবা প্রেসিডেন্সী কলেজের ইতিবৃত্ত (১৮৭৬); বাঙ্গলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা (১৮৭৮), বিবিধ প্রবন্ধ (১৮৮২), এবং বৃদ্ধ হিন্দুর আশা (১৮৮৭) প্রধান। তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পরে তাঁর আত্মজীবনী—রাজনারায়ণ বসুর আত্মচরিত প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি তাঁর জীবন এবং সময়ের নির্ভরশীল বর্ণনা দেন। এসব গ্রন্থ ছাড়াও, তিনি ব্রাহ্মধর্ম নিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে কয়েকটি ইংরেজি ভাষায় লিখিত। | ||
রাজনারায়ণ ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সামালোচক। এ জন্যে মাইকেল মধুসূধন দত্ত তাঁর বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন। বস্ত্তত, তিনি তাঁর একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে, রাজনারায়ণ সমকালীন যেকোনো বাঙালির চেয়ে সাহিত্যের অনেক ভালো বিশ্লেষক ছিলেন। তা ছাড়া, মাইকেল স্বীকার করেন যে, রাজনারায়ণের সমালোচনার প্রভাব তাঁর কবিতার ওপর পড়েছিল। রাজনারায়ণ ১৮৯৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। | রাজনারায়ণ ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সামালোচক। এ জন্যে মাইকেল মধুসূধন দত্ত তাঁর বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন। বস্ত্তত, তিনি তাঁর একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে, রাজনারায়ণ সমকালীন যেকোনো বাঙালির চেয়ে সাহিত্যের অনেক ভালো বিশ্লেষক ছিলেন। তা ছাড়া, মাইকেল স্বীকার করেন যে, রাজনারায়ণের সমালোচনার প্রভাব তাঁর কবিতার ওপর পড়েছিল। রাজনারায়ণ ১৮৯৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। [গোলাম মুরশিদ] | ||
[গোলাম মুরশিদ | |||
[[en:Basu, Rajnarayan]] | [[en:Basu, Rajnarayan]] |
০৭:৪৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
বসু, রাজনারায়ণ (১৮২৬-১৮৯৯) শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, জাতীয়তাবাদী চিন্তাবিদ। চবিবশ পরগণা জেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নন্দকিশোর রামমোহন রায়-এর স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া শিখেছিলেন এবং রামমোহনের কিছু আধুনিক চিন্তায় প্রভাবিত হন। রাজনারায়ণ লেখাপড়া করেছিলেন প্রধানত কলকাতার হেয়ার স্কুল এবং হিন্দু কলেজে (১৮৪০-৪৫)। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি হিন্দু কলেজের উচ্চতর বৃত্তি লাভ করেন। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষা এবং সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন তিনি। তবে ছাত্র জীবনে একবার তিনি পানাসক্ত হয়ে পড়েন। ফলে অসুস্থ হয়ে আগেই কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন।
ছাত্রাবস্থায় রাজনারায়ণ এক ধরনের স্বরূপের সংকটে পড়েন, বিশেষ করে ধর্ম নিয়ে। ১৮৪৫ সালের ডিসেম্বরে তাঁর পিতা মারা গেলে, এই সংকট আরও ঘনীভূত হয়। তিনি পরের বছরের শুরুতে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন। এ সময়ে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে উপনিষদের ইংরেজি অনুবাদক হিসেবে ব্রাহ্মসমাজের কাজে নিয়োগ করেন। প্রায় দু বছর এ কাজ করলেও, তাঁর সত্যিকারের কর্মজীবন শুরু হয় সংস্কৃত কলেজে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে (মে ১৮৪৯)। তারপর ১৮৫১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি মেদিনীপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৬৮ সালে অসুস্থতার কারণে তিনি এই কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
যথেষ্ট মাত্রায় পাশ্চাত্য প্রভাবিত এবং ইয়ংবেঙ্গল দলের সদস্য হিসেবে পরিচিত হলেও, পরে তিনি জাতীয়তাবাদীতে পরিণত হন। এ ব্যাপারে তাঁর বন্ধু দেবেন্দ্রনাথের প্রভাব তাঁর ওপরে পড়েছিলো বলে মনে হয়। দেবেন্দ্রনাথ সমাজচিন্তার দিক দিয়ে রক্ষণশীল ছিলেন এবং প্রাচীন ভারতের সভ্যতা-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করতেন। পরে রাজনারায়ণও দেবেন্দ্রনাথকে আরও বেশি রক্ষণশীল হতে সাহায্য করেন। ব্রাহ্মসমাজের মহিলাদের উপাসনার সময়ে প্রকাশ্যে পুরুষদের সঙ্গে একত্রে বসা উচিত কিনা, এ প্রশ্নে ব্রাহ্মসমাজ যখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তখন কেশব সেন-পরিচালিত অংশ নববিধান ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়, আর দেবেন্দ্রনাথের নেতৃত্বাধীন মূল রক্ষণশীল অংশের নাম হয় আদি ব্রাহ্মসমাজ। এতে রাজনারায়ণ কিছুকাল প্রধান আচার্য হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
দেশাত্মবোধ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী চিন্তায় আগাগোড়া নিমজ্জিত রাজনারায়ণ বসু মেদিনীপুরে ‘জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা’ এবং বেশ কয়েক বছর পরে কলকাতায় সঞ্জীবনী সভা নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। স্বাজাত্যবোধ এবং জাতীয়তাবোধ উদ্রেক করার জন্যে নবগোপাল মিত্র কর্তৃক স্থাপিত হিন্দু মেলাতেও তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। তরুণ রবীন্দ্রনাথসহ দেবেন্দ্রনাথের অন্য পুত্ররাও এ সভার সঙ্গে যুক্ত হন।
রাজনারায়ণ মন মাতানো বক্তা ছিলেন। বক্তৃতার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর শ্রোতাদের অনেককেই জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। তাঁর হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠতা নামে বক্তৃতায় (১৮৭৩) তিনি হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেন, একই সঙ্গে পাশ্চাত্য-বিরোধী মনোভাবও প্রকাশ করেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো : দেবেন্দ্রনাথ সাধারণত কোনো জনসভায় না গেলেও তিনি এই বক্তৃতায় সভাপতিত্ব করেন। ১৮৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনারায়ণ বৃদ্ধ হিন্দুর আশা নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তাতে তিনি সমগ্র ভারতবর্ষের হিন্দুদের একত্রিত করে একটি সংগঠনের অধীনে আনার আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় এ প্রতিষ্ঠান গঠিত না হলেও, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা তাঁর মৃত্যুর পরে মোটামুটি একই উদ্দেশ্য নিয়ে হিন্দু মহাসভা স্থাপন করেন (১৯০৬)।
রাজনারায়ণের আর একটি পরিচয় হলো সমাজ-সংস্কারক হিসেবে। ১৮৫০-এর দশকে তিনি বিধবাবিবাহের উৎসাহী একজন সমর্থক ছিলেন। তাছাড়া, ১৮৬০-এর দশকে তিনি ‘মদ্যপান নিবারণী সভা’ গঠন করেন। মেদিনীপুরে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয়, একটি গ্রন্থাগার, একটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র এবং একটি বির্তক সভা স্থাপন করেন।
তিনি অনেকগুলি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তার মধ্যে হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা (১৮৭৩); সে কাল আর এ কাল (১৮৭৪); হিন্দু অথবা প্রেসিডেন্সী কলেজের ইতিবৃত্ত (১৮৭৬); বাঙ্গলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা (১৮৭৮), বিবিধ প্রবন্ধ (১৮৮২), এবং বৃদ্ধ হিন্দুর আশা (১৮৮৭) প্রধান। তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পরে তাঁর আত্মজীবনী—রাজনারায়ণ বসুর আত্মচরিত প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি তাঁর জীবন এবং সময়ের নির্ভরশীল বর্ণনা দেন। এসব গ্রন্থ ছাড়াও, তিনি ব্রাহ্মধর্ম নিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে কয়েকটি ইংরেজি ভাষায় লিখিত।
রাজনারায়ণ ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সামালোচক। এ জন্যে মাইকেল মধুসূধন দত্ত তাঁর বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন। বস্ত্তত, তিনি তাঁর একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে, রাজনারায়ণ সমকালীন যেকোনো বাঙালির চেয়ে সাহিত্যের অনেক ভালো বিশ্লেষক ছিলেন। তা ছাড়া, মাইকেল স্বীকার করেন যে, রাজনারায়ণের সমালোচনার প্রভাব তাঁর কবিতার ওপর পড়েছিল। রাজনারায়ণ ১৮৯৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। [গোলাম মুরশিদ]