লিনলিথগো, মার্কুইস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''লিনলিথগো, মার্কুইস''' (১৮৮৭-১৯৫২) ১৯৩৬ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৪৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৮৭ সালে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইটনে লেখাপড়া করেন। মার্কুইস লিনলিথগো গোলটেবিল বৈঠকের সদস্য ছিলেন এবং ১৯৩০, ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি অধিবেশনের প্রত্যেকটিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। সভাপতি হিসেবে তিনি ১৯৩৩ সালের সফলতম ও সমাপনী অধিবেশনের কার্যবিবরণী নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ভারতীয় রাজনীতির একজন বড় বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। | '''লিনলিথগো, মার্কুইস''' (১৮৮৭-১৯৫২) ১৯৩৬ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৪৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৮৭ সালে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইটনে লেখাপড়া করেন। মার্কুইস লিনলিথগো গোলটেবিল বৈঠকের সদস্য ছিলেন এবং ১৯৩০, ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি অধিবেশনের প্রত্যেকটিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। সভাপতি হিসেবে তিনি ১৯৩৩ সালের সফলতম ও সমাপনী অধিবেশনের কার্যবিবরণী নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ভারতীয় রাজনীতির একজন বড় বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। | ||
[[Image:LinlithgowLord.jpg|thumb|right|মার্কুইস লিনলিথগো]] | |||
লিনলিথগো ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা কর্তৃক যথানিয়মে ভারতের গভর্নর জেনারেল ও রাজপ্রতিনিধি হিসেবে লর্ড উইলিংডনের উত্তরাধিকারী মনোনীত হন। ১৯৩৭ সালে ভারতের সকল প্রদেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। বাংলাসহ ভারতের সকল প্রদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে দায়িত্বপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি তাৎপর্যপূর্ণ অনেক শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধন করেন। বোম্বাই থেকে সিন্ধুকে পৃথক করে একটি পৃথক প্রদেশ গঠন করা হয়। উড়িষ্যাকে গভর্নর শাসিত নতুন প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ভারত থেকে বার্মাকে পৃথক করা হয় এবং বার্মার জন্য একটি পৃথক সংবিধান প্রণীত হয়। | লিনলিথগো ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা কর্তৃক যথানিয়মে ভারতের গভর্নর জেনারেল ও রাজপ্রতিনিধি হিসেবে লর্ড উইলিংডনের উত্তরাধিকারী মনোনীত হন। ১৯৩৭ সালে ভারতের সকল প্রদেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। বাংলাসহ ভারতের সকল প্রদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে দায়িত্বপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি তাৎপর্যপূর্ণ অনেক শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধন করেন। বোম্বাই থেকে সিন্ধুকে পৃথক করে একটি পৃথক প্রদেশ গঠন করা হয়। উড়িষ্যাকে গভর্নর শাসিত নতুন প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ভারত থেকে বার্মাকে পৃথক করা হয় এবং বার্মার জন্য একটি পৃথক সংবিধান প্রণীত হয়। | ||
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন ছিল লিনলিথগো প্রশাসনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পরিবর্তন। ব্রিটিশ ভারতের এগারোটি প্রদেশকে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্য বানানো হয়। কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতবিরোধ পরিকল্পনাটিকে প্রায় ভন্ডুল করে দেয়। সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বাস্তবায়ন কখনও সম্ভব হয়নি। প্রদেশগুলিতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রাদেশিক নেতৃবৃন্দ প্রদেশের বিষয়াবলি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং একারণে মিত্রশক্তির পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ রাজ সাফল্যজনকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিতে সক্ষম হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় তিনি দৃঢ়চেতা ছিলেন। এর ফলে তাঁর শাসনকালে ও পরবর্তীসময়ে বাংলা এবং অন্যান্য প্রাদেশিক সরকারের সর্বস্তরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির উপস্থিতি স্থির ছিল। এ সকল সংস্কারের মাধ্যমে লিনলিথগো ব্রিটিশ ও ভারতবাসীদের মধ্যে এক নতুন সম্পর্কের দ্বার উন্মোচন করেন। কোন সশস্ত্র সংঘর্ষ ছাড়াই ভারত তখন পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য প্রস্ত্তত ছিল। [সিরাজুল ইসলাম] | যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন ছিল লিনলিথগো প্রশাসনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পরিবর্তন। ব্রিটিশ ভারতের এগারোটি প্রদেশকে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্য বানানো হয়। কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতবিরোধ পরিকল্পনাটিকে প্রায় ভন্ডুল করে দেয়। সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বাস্তবায়ন কখনও সম্ভব হয়নি। প্রদেশগুলিতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রাদেশিক নেতৃবৃন্দ প্রদেশের বিষয়াবলি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং একারণে মিত্রশক্তির পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ রাজ সাফল্যজনকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিতে সক্ষম হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় তিনি দৃঢ়চেতা ছিলেন। এর ফলে তাঁর শাসনকালে ও পরবর্তীসময়ে বাংলা এবং অন্যান্য প্রাদেশিক সরকারের সর্বস্তরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির উপস্থিতি স্থির ছিল। এ সকল সংস্কারের মাধ্যমে লিনলিথগো ব্রিটিশ ও ভারতবাসীদের মধ্যে এক নতুন সম্পর্কের দ্বার উন্মোচন করেন। কোন সশস্ত্র সংঘর্ষ ছাড়াই ভারত তখন পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য প্রস্ত্তত ছিল। [সিরাজুল ইসলাম] |
০৬:১৫, ১১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
লিনলিথগো, মার্কুইস (১৮৮৭-১৯৫২) ১৯৩৬ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৪৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৮৭ সালে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইটনে লেখাপড়া করেন। মার্কুইস লিনলিথগো গোলটেবিল বৈঠকের সদস্য ছিলেন এবং ১৯৩০, ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি অধিবেশনের প্রত্যেকটিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। সভাপতি হিসেবে তিনি ১৯৩৩ সালের সফলতম ও সমাপনী অধিবেশনের কার্যবিবরণী নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ভারতীয় রাজনীতির একজন বড় বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
লিনলিথগো ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা কর্তৃক যথানিয়মে ভারতের গভর্নর জেনারেল ও রাজপ্রতিনিধি হিসেবে লর্ড উইলিংডনের উত্তরাধিকারী মনোনীত হন। ১৯৩৭ সালে ভারতের সকল প্রদেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। বাংলাসহ ভারতের সকল প্রদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে দায়িত্বপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি তাৎপর্যপূর্ণ অনেক শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধন করেন। বোম্বাই থেকে সিন্ধুকে পৃথক করে একটি পৃথক প্রদেশ গঠন করা হয়। উড়িষ্যাকে গভর্নর শাসিত নতুন প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ভারত থেকে বার্মাকে পৃথক করা হয় এবং বার্মার জন্য একটি পৃথক সংবিধান প্রণীত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন ছিল লিনলিথগো প্রশাসনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পরিবর্তন। ব্রিটিশ ভারতের এগারোটি প্রদেশকে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্য বানানো হয়। কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতবিরোধ পরিকল্পনাটিকে প্রায় ভন্ডুল করে দেয়। সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বাস্তবায়ন কখনও সম্ভব হয়নি। প্রদেশগুলিতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রাদেশিক নেতৃবৃন্দ প্রদেশের বিষয়াবলি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং একারণে মিত্রশক্তির পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ রাজ সাফল্যজনকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিতে সক্ষম হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় তিনি দৃঢ়চেতা ছিলেন। এর ফলে তাঁর শাসনকালে ও পরবর্তীসময়ে বাংলা এবং অন্যান্য প্রাদেশিক সরকারের সর্বস্তরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির উপস্থিতি স্থির ছিল। এ সকল সংস্কারের মাধ্যমে লিনলিথগো ব্রিটিশ ও ভারতবাসীদের মধ্যে এক নতুন সম্পর্কের দ্বার উন্মোচন করেন। কোন সশস্ত্র সংঘর্ষ ছাড়াই ভারত তখন পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য প্রস্ত্তত ছিল। [সিরাজুল ইসলাম]