নূরনামা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(fix: </u>]])
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''নূরনামা'''  মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাব্যধারা। হযরত মুহাম্মাদ (স.) ও বিশ্বব্রহ্মান্ডের জন্মরহস্য এর মূল বিষয়। এই নূরতত্ত্বের আদি উৎস আল-কুরআন এর ‘নূর’ নামে একটি সূরা (নং ২৫)। এর ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: ‘আল্লাহ্-তায়ালা এই পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মান্ডের আলোস্বরূপ’। সূরা ‘আহসাব’ (নং ৩৩)-এর ৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: ‘মুহাম্মাদ (স.) আলো বিকিরণকারী প্রদীপস্বরূপ’। পরবর্তীকালে কুরআনের এই তত্ত্বের সঙ্গে আধ্যাত্মচিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে মুসলিম দার্শনিকগণ বিভিন্ন মতবাদ প্রচার করেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আল-ফারাবি ও ইবনে সিনা।
'''নূরনামা'''  মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাব্যধারা। হযরত মুহাম্মাদ (স.) ও বিশ্বব্রহ্মান্ডের জন্মরহস্য এর মূল বিষয়। এই নূরতত্ত্বের আদি উৎস আল-কুরআন এর ‘নূর’ নামে একটি সূরা (নং ২৫)। এর ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: ‘আল্লাহ্-তায়ালা এই পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মান্ডের আলোস্বরূপ’। সূরা ‘আহসাব’ (নং ৩৩)-এর ৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: ‘মুহাম্মাদ (স.) আলো বিকিরণকারী প্রদীপস্বরূপ’। পরবর্তীকালে কুরআনের এই তত্ত্বের সঙ্গে আধ্যাত্মচিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে মুসলিম দার্শনিকগণ বিভিন্ন মতবাদ প্রচার করেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আল-ফারাবি ও ইবনে সিনা।


নূরতত্ত্বের সঙ্গে মরমিয়াবাদের সমন্বয় লক্ষ করা যায় আল-গাজ্জালির মিশকাতুল আনাওয়ার নামক দর্শন-গ্রন্থে। বাংলা ভাষায় একাধিক কবি নূরনামা রচনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে সতেরো শতকের কবি আবদুল হাকিমের  [[100967|কাব্য]] বিস্তৃত ও পূর্ণাঙ্গ। যারা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় তাদের সম্পর্কে আবদুল হাকিমের সাহসী উচ্চারণ ‘যেসবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি\’ এই নূরনামা কাব্যেই ধ্বনিত হয়েছে। মধ্যযুগে কাব্যখানি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল, যেজন্য এর অনেক  [[103141|পান্ডুলিপি]] পাওয়া যায়। আঠারো শতকের কবি আবদুল করিম খন্দকারের নূরনামা সম্পূর্ণ হলেও অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত। এছাড়া  [[105574|শেখ পরান]]''' '''(আনু. ১৫৫০-১৬১৫), মীর মুহম্মদ শফী (আনু. ১৫৫৯-১৬৩০) ও দ্বিজ রামতনু রচিত কাব্যের শুরুতে নূরমাহাত্ম্য বা সৃষ্টিরহস্য বর্ণিত হওয়ায় সেগুলিও নূরনামা নামে অভিহিত হয়।  [রাজিয়া সুলতানা]
নূরতত্ত্বের সঙ্গে মরমিয়াবাদের সমন্বয় লক্ষ করা যায় আল-গাজ্জালির মিশকাতুল আনাওয়ার নামক দর্শন-গ্রন্থে। বাংলা ভাষায় একাধিক কবি নূরনামা রচনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে সতেরো শতকের কবি আবদুল হাকিমের  [[কাব্য|কাব্য]] বিস্তৃত ও পূর্ণাঙ্গ। যারা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় তাদের সম্পর্কে আবদুল হাকিমের সাহসী উচ্চারণ ‘যেসবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি\’ এই নূরনামা কাব্যেই ধ্বনিত হয়েছে। মধ্যযুগে কাব্যখানি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল, যেজন্য এর অনেক  [[পান্ডুলিপি|পান্ডুলিপি]] পাওয়া যায়। আঠারো শতকের কবি আবদুল করিম খন্দকারের নূরনামা সম্পূর্ণ হলেও অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত। এছাড়া  শেখ পরান (আনু. ১৫৫০-১৬১৫), মীর মুহম্মদ শফী (আনু. ১৫৫৯-১৬৩০) ও দ্বিজ রামতনু রচিত কাব্যের শুরুতে নূরমাহাত্ম্য বা সৃষ্টিরহস্য বর্ণিত হওয়ায় সেগুলিও নূরনামা নামে অভিহিত হয়।  [রাজিয়া সুলতানা]
__NOTOC__
<!-- imported from file: 102959.html-->


[[en:Nurnama]]
[[en:Nurnama]]

১০:৩৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

নূরনামা  মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাব্যধারা। হযরত মুহাম্মাদ (স.) ও বিশ্বব্রহ্মান্ডের জন্মরহস্য এর মূল বিষয়। এই নূরতত্ত্বের আদি উৎস আল-কুরআন এর ‘নূর’ নামে একটি সূরা (নং ২৫)। এর ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: ‘আল্লাহ্-তায়ালা এই পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মান্ডের আলোস্বরূপ’। সূরা ‘আহসাব’ (নং ৩৩)-এর ৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: ‘মুহাম্মাদ (স.) আলো বিকিরণকারী প্রদীপস্বরূপ’। পরবর্তীকালে কুরআনের এই তত্ত্বের সঙ্গে আধ্যাত্মচিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে মুসলিম দার্শনিকগণ বিভিন্ন মতবাদ প্রচার করেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আল-ফারাবি ও ইবনে সিনা।

নূরতত্ত্বের সঙ্গে মরমিয়াবাদের সমন্বয় লক্ষ করা যায় আল-গাজ্জালির মিশকাতুল আনাওয়ার নামক দর্শন-গ্রন্থে। বাংলা ভাষায় একাধিক কবি নূরনামা রচনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে সতেরো শতকের কবি আবদুল হাকিমের  কাব্য বিস্তৃত ও পূর্ণাঙ্গ। যারা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় তাদের সম্পর্কে আবদুল হাকিমের সাহসী উচ্চারণ ‘যেসবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি\’ এই নূরনামা কাব্যেই ধ্বনিত হয়েছে। মধ্যযুগে কাব্যখানি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল, যেজন্য এর অনেক  পান্ডুলিপি পাওয়া যায়। আঠারো শতকের কবি আবদুল করিম খন্দকারের নূরনামা সম্পূর্ণ হলেও অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত। এছাড়া  শেখ পরান (আনু. ১৫৫০-১৬১৫), মীর মুহম্মদ শফী (আনু. ১৫৫৯-১৬৩০) ও দ্বিজ রামতনু রচিত কাব্যের শুরুতে নূরমাহাত্ম্য বা সৃষ্টিরহস্য বর্ণিত হওয়ায় সেগুলিও নূরনামা নামে অভিহিত হয়।  [রাজিয়া সুলতানা]