নাসিরউদ্দীন, মোহাম্মদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''নাসিরউদ্দীন'''''', ''''''মোহাম্মদ '''(১৮৮৮-১৯৯৪)  সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তার অধিকারী। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। কিন্তু ব্যক্তিগত পড়াশোনা ও জ্ঞানী-গুণীদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তিনি বিশ শতকের প্রথম দিকে মুসলিম সমাজের একজন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। চাঁদপুর জেলার পাইকারদি গ্রামে তাঁর জন্ম।
[[Image:NasiruddinMd.jpg|thumb|400px|right|মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন]]
'''নাসিরউদ্দীন, মোহাম্মদ''' (১৮৮৮-১৯৯৪)  সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তার অধিকারী। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। কিন্তু ব্যক্তিগত পড়াশোনা ও জ্ঞানী-গুণীদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তিনি বিশ শতকের প্রথম দিকে মুসলিম সমাজের একজন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। চাঁদপুর জেলার পাইকারদি গ্রামে তাঁর জন্ম।


প্রথম জীবনে তিনি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি বীমা কোম্পানির কাজ ছেড়ে নতুন পেশার সন্ধানে কলকাতায় গমন করেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেন। ১৯১৮ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি [[সওগাত|সওগাত]] নামে একটি সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে ১৯২২ সালে সাময়িকীটির প্রকাশনা স্থগিত রাখা হয়। ১৯২৬ সালে অবশ্য এর প্রকাশনা পুনরায় শুরু হয় এবং তখন থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। ১৯২৬ সালে তিনি সওগাত সাহিত্য মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করেন। বিদ্রোহী কবি [[ইসলাম, কাজী নজরুল|কাজী নজরুল ইসলাম]], [[বেগম রোকেয়া|বেগম রোকেয়া]], [[মাহমুদ, শামসুন্নাহার|শামসুন্নাহার মাহমুদ]], [[কামাল, বেগম সুফিয়া|সুফিয়া কামাল]] এবং আরও অনেকে সওগাতকে তাঁদের প্রগতিশীল ও ভিন্ন মত প্রকাশের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেন।  
প্রথম জীবনে তিনি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি বীমা কোম্পানির কাজ ছেড়ে নতুন পেশার সন্ধানে কলকাতায় গমন করেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেন। ১৯১৮ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি [[সওগাত|সওগাত]] নামে একটি সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে ১৯২২ সালে সাময়িকীটির প্রকাশনা স্থগিত রাখা হয়। ১৯২৬ সালে অবশ্য এর প্রকাশনা পুনরায় শুরু হয় এবং তখন থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। ১৯২৬ সালে তিনি সওগাত সাহিত্য মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করেন। বিদ্রোহী কবি [[ইসলাম, কাজী নজরুল|কাজী নজরুল ইসলাম]], [[বেগম রোকেয়া|বেগম রোকেয়া]], [[মাহমুদ, শামসুন্নাহার|শামসুন্নাহার মাহমুদ]], [[কামাল, বেগম সুফিয়া|সুফিয়া কামাল]] এবং আরও অনেকে সওগাতকে তাঁদের প্রগতিশীল ও ভিন্ন মত প্রকাশের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেন।  
৬ নং লাইন: ৭ নং লাইন:
গোঁড়া মুসলিমদের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন লেখক, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও শিক্ষিত মুসলিম নারীদের ছবি সওগাতে ছাপান। কার্টুনের মাধ্যমে ব্যাজ্ঞাত্মক ভঙ্গিতে সমাজের অব্যবস্থাকে তিনি তীব্রভাবে তুলে ধরেন। তখনকার দিনে মুসলিম নারীর ছবি ছাপানোটা ছিল এক অসাধারণ ঘটনা।  
গোঁড়া মুসলিমদের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন লেখক, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও শিক্ষিত মুসলিম নারীদের ছবি সওগাতে ছাপান। কার্টুনের মাধ্যমে ব্যাজ্ঞাত্মক ভঙ্গিতে সমাজের অব্যবস্থাকে তিনি তীব্রভাবে তুলে ধরেন। তখনকার দিনে মুসলিম নারীর ছবি ছাপানোটা ছিল এক অসাধারণ ঘটনা।  


১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতায় ‘সওগাত কালার প্রিন্টিং প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের মধ্যে নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং মুসলিম সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সওগাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে নাসিরুদ্দীন ১৯৪৬ সালে বেগম নামে একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। দেশবিভাগের পর নাসিরউদ্দীন পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে সওগাত পত্রিকা আবারও নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। #[[Image:নাসিরউদ্দীন, মোহাম্মদ_html_88407781.png]]
১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতায় ‘সওগাত কালার প্রিন্টিং প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের মধ্যে নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং মুসলিম সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সওগাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে নাসিরুদ্দীন ১৯৪৬ সালে বেগম নামে একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। দেশবিভাগের পর নাসিরউদ্দীন পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে সওগাত পত্রিকা আবারও নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে।
 
[[Image:NasiruddinMd.jpg]]
 
#মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন


মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছিলেন বাংলা একাডেমির ফেলো, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ‘বোর্ড অব ট্রাস্টি’-র সদস্য এবং ‘নজরুল ইন্সটিটিউট’-এর বোর্ড অব ট্রাস্টি-র চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমির সম্মাননা পুরষ্কার, ১৯৭৭ সালে  একুশে পদক এবং  স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার প্রাপ্ত হন। ১৯৭৬ সালে সৃজনশীল লেখক ও সাংবাদিকদের পুরষ্কৃত করার লক্ষ্যে তিনি নিজ নামে নাসিরউদ্দীন স্বর্ণ পদক প্রদান শুরু করেন। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ১৯৯৪ সালের ২১ মে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  [এম নূরুল কাইউম]  
মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছিলেন বাংলা একাডেমির ফেলো, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ‘বোর্ড অব ট্রাস্টি’-র সদস্য এবং ‘নজরুল ইন্সটিটিউট’-এর বোর্ড অব ট্রাস্টি-র চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমির সম্মাননা পুরষ্কার, ১৯৭৭ সালে  একুশে পদক এবং  স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার প্রাপ্ত হন। ১৯৭৬ সালে সৃজনশীল লেখক ও সাংবাদিকদের পুরষ্কৃত করার লক্ষ্যে তিনি নিজ নামে নাসিরউদ্দীন স্বর্ণ পদক প্রদান শুরু করেন। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ১৯৯৪ সালের ২১ মে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  [এম নূরুল কাইউম]  


<!-- imported from file: নাসিরউদ্দীন, মোহাম্মদ.html-->
[[en:Nasiruddin, Mohammad]]
[[en:Nasiruddin, Mohammad]]


[[en:Nasiruddin, Mohammad]]
[[en:Nasiruddin, Mohammad]]

১০:০৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন

নাসিরউদ্দীন, মোহাম্মদ (১৮৮৮-১৯৯৪)  সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তার অধিকারী। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। কিন্তু ব্যক্তিগত পড়াশোনা ও জ্ঞানী-গুণীদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তিনি বিশ শতকের প্রথম দিকে মুসলিম সমাজের একজন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। চাঁদপুর জেলার পাইকারদি গ্রামে তাঁর জন্ম।

প্রথম জীবনে তিনি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি বীমা কোম্পানির কাজ ছেড়ে নতুন পেশার সন্ধানে কলকাতায় গমন করেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেন। ১৯১৮ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি সওগাত নামে একটি সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে ১৯২২ সালে সাময়িকীটির প্রকাশনা স্থগিত রাখা হয়। ১৯২৬ সালে অবশ্য এর প্রকাশনা পুনরায় শুরু হয় এবং তখন থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। ১৯২৬ সালে তিনি সওগাত সাহিত্য মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, সুফিয়া কামাল এবং আরও অনেকে সওগাতকে তাঁদের প্রগতিশীল ও ভিন্ন মত প্রকাশের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেন।

গোঁড়া মুসলিমদের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন লেখক, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও শিক্ষিত মুসলিম নারীদের ছবি সওগাতে ছাপান। কার্টুনের মাধ্যমে ব্যাজ্ঞাত্মক ভঙ্গিতে সমাজের অব্যবস্থাকে তিনি তীব্রভাবে তুলে ধরেন। তখনকার দিনে মুসলিম নারীর ছবি ছাপানোটা ছিল এক অসাধারণ ঘটনা।

১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতায় ‘সওগাত কালার প্রিন্টিং প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের মধ্যে নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং মুসলিম সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সওগাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে নাসিরুদ্দীন ১৯৪৬ সালে বেগম নামে একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। দেশবিভাগের পর নাসিরউদ্দীন পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে সওগাত পত্রিকা আবারও নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে।

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছিলেন বাংলা একাডেমির ফেলো, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ‘বোর্ড অব ট্রাস্টি’-র সদস্য এবং ‘নজরুল ইন্সটিটিউট’-এর বোর্ড অব ট্রাস্টি-র চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমির সম্মাননা পুরষ্কার, ১৯৭৭ সালে  একুশে পদক এবং  স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার প্রাপ্ত হন। ১৯৭৬ সালে সৃজনশীল লেখক ও সাংবাদিকদের পুরষ্কৃত করার লক্ষ্যে তিনি নিজ নামে নাসিরউদ্দীন স্বর্ণ পদক প্রদান শুরু করেন। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ১৯৯৪ সালের ২১ মে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  [এম নূরুল কাইউম]