নকশি পাটি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''নকশি পাটি''' নকশা করা পাটি। পাটি বাঙালি সংস্কৃতির এক বিশেষ উপাদান। এর ব্যবহার বহু প্রাচীন ও বহুবিধ। বাঙালি সংস্কৃতিতে আধুনিক আসবাবপত্রের অনুপ্রবেশের পূর্বে পাটির ব্যবহার ছিল পর্যাপ্ত। দৈনন্দিন প্রয়োজন এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে পাটি ব্যবহূত হতো। অতীতের ন্যায় বর্তমানেও বিবাহে অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে পাটি উপহার দেওয়া হয়। এ পাটিতেই যখন নকশা তুলে আকর্ষণীয় করা হয় তখন তাকে বলা হয় নকশি পাটি। নকশি কাঁথার মতো নকশি পাটিতেও গাছ, লতাপাতা, পশুপাখির অবয়ব, জ্যামিতিক নকশা, মসজিদের চূড়া, [[পালকি|পালকি]], নৌকা, কাঁকই, [[হাতি|হাতি]] ইত্যাদি মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়। পাটি তৈরিতে সুতা, বেত, নলখাগড়া, হোগলা, বাঁশের বেতি, তালপাতা ও হাতির দাঁতের ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে বর্তমানে সুতা, [[বেত|বেত]] ও হোগলার পাটিই বহুল ব্যবহূত। সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলায় মুর্তা গাছের মসৃণ বেতি দিয়ে তৈরি পাটির নাম শীতলপাটি। ফরিদপুর ও পাবনা | '''নকশি পাটি''' নকশা করা পাটি। পাটি বাঙালি সংস্কৃতির এক বিশেষ উপাদান। এর ব্যবহার বহু প্রাচীন ও বহুবিধ। বাঙালি সংস্কৃতিতে আধুনিক আসবাবপত্রের অনুপ্রবেশের পূর্বে পাটির ব্যবহার ছিল পর্যাপ্ত। দৈনন্দিন প্রয়োজন এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে পাটি ব্যবহূত হতো। অতীতের ন্যায় বর্তমানেও বিবাহে অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে পাটি উপহার দেওয়া হয়। এ পাটিতেই যখন নকশা তুলে আকর্ষণীয় করা হয় তখন তাকে বলা হয় নকশি পাটি। নকশি কাঁথার মতো নকশি পাটিতেও গাছ, লতাপাতা, পশুপাখির অবয়ব, জ্যামিতিক নকশা, মসজিদের চূড়া, [[পালকি|পালকি]], নৌকা, কাঁকই, [[হাতি|হাতি]] ইত্যাদি মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়। পাটি তৈরিতে সুতা, বেত, নলখাগড়া, হোগলা, বাঁশের বেতি, তালপাতা ও হাতির দাঁতের ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে বর্তমানে সুতা, [[বেত|বেত]] ও হোগলার পাটিই বহুল ব্যবহূত। সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলায় মুর্তা গাছের মসৃণ বেতি দিয়ে তৈরি পাটির নাম শীতলপাটি। ফরিদপুর ও পাবনা জেলায় নলখাগড়া দিয়ে তৈরি পাটির নাম তালাইপাটি। [[বাঁশ|বাঁশ]] ও তালপাতা দিয়ে যে চাটাইপাটি তৈরি হয় তাতে নকশা করা হয় না। নকশি পাটিতে বুটি একটি সাধারণ মোটিফ। | ||
[[Image:NakshiPati.jpg|thumb|400px|right|নকশি পাটি]] | |||
মুর্তার পাটি মুর্তা গাছকে অঞ্চলভেদে মোস্তাক, পাটিপাতা, পাটিবেত ও পাইতারাও বলে। এ গাছ বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামের জলাশয়ের ধারে জন্মে। তবে বর্তমানে এর দ্বারা তৈরি নকশি পাটি অনেকটা সিলেট ও নোয়াখালী জেলায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। | মুর্তার পাটি মুর্তা গাছকে অঞ্চলভেদে মোস্তাক, পাটিপাতা, পাটিবেত ও পাইতারাও বলে। এ গাছ বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামের জলাশয়ের ধারে জন্মে। তবে বর্তমানে এর দ্বারা তৈরি নকশি পাটি অনেকটা সিলেট ও নোয়াখালী জেলায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। | ||
৮ নং লাইন: | ৯ নং লাইন: | ||
মুর্তা পাটির বুননপদ্ধতি প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমে জমিনের জো তুলে তাতে রঙিন বেতি দিয়ে নকল তোলা হয়। পরে জমিন তৈরি হলে তার চতুর্দিকে অন্য রঙের বেতি দিয়ে মুড়ি দেওয়া হয়। প্রতিটি পাটির বুননপদ্ধতি অত্যন্ত শিল্পসম্মত। এ পাটি কয়েক ধরণের হয়ে থাকে- | মুর্তা পাটির বুননপদ্ধতি প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমে জমিনের জো তুলে তাতে রঙিন বেতি দিয়ে নকল তোলা হয়। পরে জমিন তৈরি হলে তার চতুর্দিকে অন্য রঙের বেতি দিয়ে মুড়ি দেওয়া হয়। প্রতিটি পাটির বুননপদ্ধতি অত্যন্ত শিল্পসম্মত। এ পাটি কয়েক ধরণের হয়ে থাকে- | ||
নামাজের | ''নামাজের পাটি'' এ ধরনের পাটি সাধারণত প্রস্থে সাড়ে তিন হাত ও দৈর্ঘে সাড়ে চার হাত হয়ে থাকে। এ পাটি মসজিদ, ফুললতা, লতাপাতা ও বর্ডার নকশায় সমৃদ্ধ। | ||
''বিছানা চাটাই'' প্রস্থে পাঁচ হাত ও দৈর্ঘে ছয় হাত হয়ে থাকে। এটি সিলেটি জো, ফুল তোলা নকশা, চারকোণা নকশা ও তেছরি নকশায় অলঙ্কৃত। | |||
''আসন পাটি'' দুধরণের হয়ে থাকে– একটি প্রস্থে তিন হাত ও দৈর্ঘে চার হাত এবং অন্যটি প্রস্থে দেড় হাত ও দৈর্ঘ্যে দুই হাত। মেন্দি পাতা, চিরা-জো, তারা-জো, লতাপাতা এবং ফুলতোলা নকশা ছাড়াও শিল্পীরা অনেক সময় নিজের নাম, সন্তানের নাম, মা-বাবা ও ভাইবোনের নাম বুননের মাধ্যমে তুলে থাকেন। পাটিতে নকশার বুননপদ্ধতি অনেকটা জামদানি নকশার অনুরূপ। | |||
''বেতের পাটি'' সর্বাধিক সমাদৃত। এ পাটি তৈরির জন্য প্রথমে সবুজ বেত কেটে সোডার পানি দিয়ে ধুয়ে শুকানো হয়। তারপর পাতলা করে চিরে সেদ্ধ করে পুনরায় শুকানো হয়। শুকানোর পর বেতিগুলিকে প্রয়োজনানুসারে বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত করে পাটি বোনা হয়। প্রধান বুনটের বেতি এক রঙের হলে পা’ড়েনের বেতি অন্য রঙের হয়ে থাকে। বেশির ভাগ পাটিতেই বৃক্ষ, লতা, পশুপাখি, জ্যামিতিক নকশা ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয়। নকশাগুলি সাধারণত পাটির মধ্যবর্তী অংশে আয়তাকার ক্ষেত্রের মধ্যে করা হয় এবং চতুর্দিকে থাকে নানান ধরনের বর্ডার নকশা। অনেক সময় বৃত্তাকৃতির নকশার মধ্যে পদ্মসদৃশ নকশাও করা হয়। কোনো কোনো পাটিতে চৌপাট থাকে, যেখানে সমান চারটি চতুর্ভুজ ও চারটি সমান খালি জায়গা থাকে। বেতের পাটিই শীতলপাটি নামে পরিচিত এবং এর জনপ্রিয়তাই সর্বাধিক। | |||
''হোগলা পাতার পাটি'' হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের স্বাদু ও সামান্য লোনা পানির জলাশয়ের পাড়ে দুই প্রজাতির হোগলা জন্মে: ''Typha angusta'' ও ''T. elephantiana''। এ পাটিগুলি সাধারণত শয্যা তৈরি, শস্য শুকানো, বিভিন্ন দ্রব্য ঢেকে রাখা, নামায পড়া ইত্যাদি কাজের জন্য তৈরি করা হয়। গ্রামাঞ্চলে এক সময় বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ২/৩ শত মানুষ এক সঙ্গে বসার জন্য ১০০ মিটার লম্বা হোগলার পাটি তৈরি হতো। এ ধরনের পাটিতে বিশেষ কোনো নকশা করা না হলেও তৈরিশেষে নিজস্ব একটা জ্যামিতিক নকশা ফুটে ওঠে। | |||
''হাতির দাঁতের পাটি'' বাংলাদেশের একটি উন্নতমানের লোকশিল্প। সিলেট অঞ্চল এক সময় এ শিল্পকর্মের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। সেখানে হাতির দাঁতের অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে পাটিও তৈরি হতো। ঢাকার নবাব পরিবার বিয়ের আসরে ব্যবহারের জন্য সিলেট থেকে একটি পাটি সংগ্রহ করেছিল। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এরূপ একটি পাটি সংরক্ষিত আছে। শীতল পাটির মতোই এর বুনন। হাতির দাঁত থেকে সূক্ষ্ম অাঁশ তুলে এ ধরনের পাটি বোনা হতো। বর্তমানে এ শিল্প বিলুপ্ত। | |||
হাতির দাঁতের পাটি'' | |||
পাটি তৈরির কাজে সাধারণত মহিলারা জড়িত। তারা গৃহকর্মের অবসরে বিভিন্ন ধরণের পাটি তৈরি করে সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮০০০ মানুষ এ পাটি তৈরির কাজে নিয়োজিত। [জিনাত মাহরুখ বানু] | পাটি তৈরির কাজে সাধারণত মহিলারা জড়িত। তারা গৃহকর্মের অবসরে বিভিন্ন ধরণের পাটি তৈরি করে সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮০০০ মানুষ এ পাটি তৈরির কাজে নিয়োজিত। [জিনাত মাহরুখ বানু] | ||
[[en:Nakshi Pati]] | [[en:Nakshi Pati]] |
০৭:৩৫, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
নকশি পাটি নকশা করা পাটি। পাটি বাঙালি সংস্কৃতির এক বিশেষ উপাদান। এর ব্যবহার বহু প্রাচীন ও বহুবিধ। বাঙালি সংস্কৃতিতে আধুনিক আসবাবপত্রের অনুপ্রবেশের পূর্বে পাটির ব্যবহার ছিল পর্যাপ্ত। দৈনন্দিন প্রয়োজন এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে পাটি ব্যবহূত হতো। অতীতের ন্যায় বর্তমানেও বিবাহে অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে পাটি উপহার দেওয়া হয়। এ পাটিতেই যখন নকশা তুলে আকর্ষণীয় করা হয় তখন তাকে বলা হয় নকশি পাটি। নকশি কাঁথার মতো নকশি পাটিতেও গাছ, লতাপাতা, পশুপাখির অবয়ব, জ্যামিতিক নকশা, মসজিদের চূড়া, পালকি, নৌকা, কাঁকই, হাতি ইত্যাদি মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়। পাটি তৈরিতে সুতা, বেত, নলখাগড়া, হোগলা, বাঁশের বেতি, তালপাতা ও হাতির দাঁতের ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে বর্তমানে সুতা, বেত ও হোগলার পাটিই বহুল ব্যবহূত। সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলায় মুর্তা গাছের মসৃণ বেতি দিয়ে তৈরি পাটির নাম শীতলপাটি। ফরিদপুর ও পাবনা জেলায় নলখাগড়া দিয়ে তৈরি পাটির নাম তালাইপাটি। বাঁশ ও তালপাতা দিয়ে যে চাটাইপাটি তৈরি হয় তাতে নকশা করা হয় না। নকশি পাটিতে বুটি একটি সাধারণ মোটিফ।
মুর্তার পাটি মুর্তা গাছকে অঞ্চলভেদে মোস্তাক, পাটিপাতা, পাটিবেত ও পাইতারাও বলে। এ গাছ বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামের জলাশয়ের ধারে জন্মে। তবে বর্তমানে এর দ্বারা তৈরি নকশি পাটি অনেকটা সিলেট ও নোয়াখালী জেলায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
মুর্তা গাছের একটি কান্ড থেকে সাত/আটটি সরু বেতি বের করা যায়। এগুলি রোদে শুকিয়ে পাকাপোক্ত ও চকচকে ভাব আনার জন্য তেঁতুল ও কাউপাতা দিয়ে সেদ্ধ করা হয়। অনেক সময় ভাতের মাড়ও ব্যবহার করা হয়। নকশা তোলার জন্য ব্যবহূত বেতিতে রং দিয়ে সেগুলি রঙিন করা হয়। জমিনে ব্যবহূত বেতিতে রঙের প্রয়োজন হয় না। মুর্তা গাছের পাটি যেমন আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত, তেমনি দৃষ্টিনন্দন।
মুর্তা পাটির বুননপদ্ধতি প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমে জমিনের জো তুলে তাতে রঙিন বেতি দিয়ে নকল তোলা হয়। পরে জমিন তৈরি হলে তার চতুর্দিকে অন্য রঙের বেতি দিয়ে মুড়ি দেওয়া হয়। প্রতিটি পাটির বুননপদ্ধতি অত্যন্ত শিল্পসম্মত। এ পাটি কয়েক ধরণের হয়ে থাকে-
নামাজের পাটি এ ধরনের পাটি সাধারণত প্রস্থে সাড়ে তিন হাত ও দৈর্ঘে সাড়ে চার হাত হয়ে থাকে। এ পাটি মসজিদ, ফুললতা, লতাপাতা ও বর্ডার নকশায় সমৃদ্ধ।
বিছানা চাটাই প্রস্থে পাঁচ হাত ও দৈর্ঘে ছয় হাত হয়ে থাকে। এটি সিলেটি জো, ফুল তোলা নকশা, চারকোণা নকশা ও তেছরি নকশায় অলঙ্কৃত।
আসন পাটি দুধরণের হয়ে থাকে– একটি প্রস্থে তিন হাত ও দৈর্ঘে চার হাত এবং অন্যটি প্রস্থে দেড় হাত ও দৈর্ঘ্যে দুই হাত। মেন্দি পাতা, চিরা-জো, তারা-জো, লতাপাতা এবং ফুলতোলা নকশা ছাড়াও শিল্পীরা অনেক সময় নিজের নাম, সন্তানের নাম, মা-বাবা ও ভাইবোনের নাম বুননের মাধ্যমে তুলে থাকেন। পাটিতে নকশার বুননপদ্ধতি অনেকটা জামদানি নকশার অনুরূপ।
বেতের পাটি সর্বাধিক সমাদৃত। এ পাটি তৈরির জন্য প্রথমে সবুজ বেত কেটে সোডার পানি দিয়ে ধুয়ে শুকানো হয়। তারপর পাতলা করে চিরে সেদ্ধ করে পুনরায় শুকানো হয়। শুকানোর পর বেতিগুলিকে প্রয়োজনানুসারে বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত করে পাটি বোনা হয়। প্রধান বুনটের বেতি এক রঙের হলে পা’ড়েনের বেতি অন্য রঙের হয়ে থাকে। বেশির ভাগ পাটিতেই বৃক্ষ, লতা, পশুপাখি, জ্যামিতিক নকশা ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয়। নকশাগুলি সাধারণত পাটির মধ্যবর্তী অংশে আয়তাকার ক্ষেত্রের মধ্যে করা হয় এবং চতুর্দিকে থাকে নানান ধরনের বর্ডার নকশা। অনেক সময় বৃত্তাকৃতির নকশার মধ্যে পদ্মসদৃশ নকশাও করা হয়। কোনো কোনো পাটিতে চৌপাট থাকে, যেখানে সমান চারটি চতুর্ভুজ ও চারটি সমান খালি জায়গা থাকে। বেতের পাটিই শীতলপাটি নামে পরিচিত এবং এর জনপ্রিয়তাই সর্বাধিক।
হোগলা পাতার পাটি হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের স্বাদু ও সামান্য লোনা পানির জলাশয়ের পাড়ে দুই প্রজাতির হোগলা জন্মে: Typha angusta ও T. elephantiana। এ পাটিগুলি সাধারণত শয্যা তৈরি, শস্য শুকানো, বিভিন্ন দ্রব্য ঢেকে রাখা, নামায পড়া ইত্যাদি কাজের জন্য তৈরি করা হয়। গ্রামাঞ্চলে এক সময় বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ২/৩ শত মানুষ এক সঙ্গে বসার জন্য ১০০ মিটার লম্বা হোগলার পাটি তৈরি হতো। এ ধরনের পাটিতে বিশেষ কোনো নকশা করা না হলেও তৈরিশেষে নিজস্ব একটা জ্যামিতিক নকশা ফুটে ওঠে।
হাতির দাঁতের পাটি বাংলাদেশের একটি উন্নতমানের লোকশিল্প। সিলেট অঞ্চল এক সময় এ শিল্পকর্মের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। সেখানে হাতির দাঁতের অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে পাটিও তৈরি হতো। ঢাকার নবাব পরিবার বিয়ের আসরে ব্যবহারের জন্য সিলেট থেকে একটি পাটি সংগ্রহ করেছিল। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এরূপ একটি পাটি সংরক্ষিত আছে। শীতল পাটির মতোই এর বুনন। হাতির দাঁত থেকে সূক্ষ্ম অাঁশ তুলে এ ধরনের পাটি বোনা হতো। বর্তমানে এ শিল্প বিলুপ্ত।
পাটি তৈরির কাজে সাধারণত মহিলারা জড়িত। তারা গৃহকর্মের অবসরে বিভিন্ন ধরণের পাটি তৈরি করে সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮০০০ মানুষ এ পাটি তৈরির কাজে নিয়োজিত। [জিনাত মাহরুখ বানু]