লোককাহিনী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১৮ নং লাইন: | ১৮ নং লাইন: | ||
‘শিকলি গল্প’ (Chain tale) নামে আর এক ধরণের গল্প আছে, যাতে একটির পর একটি ঘটনা ছড়ার আকারে আবর্তিত হয়। টুনটুনির বই-এ ‘টুনটুনি ও নাপিত’, ‘নাপিত ও শৃগাল’ (নাক কেটে নরুন পেলাম, তাক ডুমাডুম ডুম) ইত্যাদি এ ধরনের গল্প। [আশরাফ সিদ্দিকী] | ‘শিকলি গল্প’ (Chain tale) নামে আর এক ধরণের গল্প আছে, যাতে একটির পর একটি ঘটনা ছড়ার আকারে আবর্তিত হয়। টুনটুনির বই-এ ‘টুনটুনি ও নাপিত’, ‘নাপিত ও শৃগাল’ (নাক কেটে নরুন পেলাম, তাক ডুমাডুম ডুম) ইত্যাদি এ ধরনের গল্প। [আশরাফ সিদ্দিকী] | ||
আরো | ''আরো দেখুন'' [[রূপকথা|রূপকথা]]; [[লোকসাহিত্য|লোকসাহিত্য]]। | ||
'''গ্রন্থপঞ্জি''' আশরাফ সিদ্দিকী, লোকসাহিত্য, দুই খন্ড, ঢাকা, ১৯৯৪; Thomson, Stith, The Folktale, New York, ১৯৫১। | '''গ্রন্থপঞ্জি''' আশরাফ সিদ্দিকী, লোকসাহিত্য, দুই খন্ড, ঢাকা, ১৯৯৪; Thomson, Stith, The Folktale, New York, ১৯৫১। |
১০:৫৭, ১১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
লোককাহিনী লোকসাহিত্যের একটি শাখা। এগুলি সাধারণত পল্লীর নিরক্ষর জনগণ মুখে মুখে রচনা করে এবং শ্রুতি ও স্মৃতির সাহায্যে বংশপরম্পরায় প্রবহমান থাকে। ইংরেজি Folk tales কথাটি মোটামুটিভাবে সব ধরণের লোককাহিনীকেই বোঝায়। বাংলায় যাকে রূপকথা বা পরিকাহিনী বলা হয়, ইংরেজিতে তা Fairy tales নামে পরিচিত। Fairy tales দ্বারা পরীর গল্প বোঝালেও সব গল্পেই কিন্তু পরী থাকে না। রাক্ষস-খোক্কসের অচেনা পুরীতে গিয়ে রাজপুত্র বা বাদশাজাদা কর্তৃক বীরত্ব প্রদর্শন, অসাধ্য সাধন, ভিন্ন দেশের রাজকন্যা বা শাহজাদিকে উদ্ধার ও বিবাহ, ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা, দৈব সাহায্য ইত্যাদি রূপকথার বৈশিষ্ট্য। জার্মান ভাষায় এরূপ কাহিনীকে বলা হয় Marchen। বাংলায় দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার সম্পাদিত ঠাকুরমার ঝুলি, ঠাকুরদাদার ঝুলি, ঠানদিদির থলে প্রভৃতি এই প্রকার গল্পের সংকলন।
অপর এক ধরণের অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ লোককাহিনী আছে, যেগুলির ঘটনাবলি রূপকথার মতো অবিশ্বাস্য ও রোমাঞ্চকর হলেও ঘটনামূল এবং পাত্র-পাত্রীর নামের সঙ্গে অনেক সময় ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিক সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়, যেমন আরব্য উপন্যাস, পারস্য উপন্যাস, বিক্রমাদিত্য বা তালবেতালের গল্প ইত্যাদি। আরব্য উপন্যাসের বাদশা সোলেমান বা খলিফা হারুন-আল-রশিদ এবং বেতালপঞ্চবিংশতির বিক্রমাদিত্য ঐতিহাসিক ব্যক্তি। এ ধরণের দীর্ঘ কাহিনীকে ইংরেজিতে বলা হয় Novella এবং বাংলায় রোমাঞ্চকথা। রোমাঞ্চকথা এবং রূপকথার মধ্যে সীমারেখা নির্ণয় কঠিন হলে তাকে Novella-Marchen বা রোমাঞ্চ-রূপকথা বলা হয়ে থাকে। বাংলা পুথিসাহিত্যে বর্ণিত সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল প্রভৃতি কাহিনীতে রূপকথা ও রোমাঞ্চকথার সংমিশ্রণ লক্ষ করা যায়।
যেসব গল্পে জীবজন্তু প্রধান সেগুলিকে ‘জীবজন্তুর গল্প’ বলা হয়। তবে সাধারণভাবে সেগুলিকে ‘উপকথা’ও বলে। সমগ্র বিশ্বে জীবজন্তু নিয়ে অজস্র গল্প রচিত হয়েছে। আদিম সমাজে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে নিকট সম্পর্ক ছিল বলে জীবজন্তুও তাদের নিকট অত্যন্ত আপনজন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। Animism বা সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী আদিম মানব স্বভাবতই জীবজন্তুর গল্পে নিজেদের প্রকৃতিকেই তুলে ধরেছে, তাই গল্পগুলির অধিকাংশই হয়ে উঠেছে মানবীকৃত (anthropomorphized); সেখানে জীবজন্তুগুলি যেন মানবীয় গুণাবলিপ্রাপ্ত এবং তারা মানুষের ভাষায়ই কথা বলছে।
যেসব জীবজন্তুর গল্পে উপদেশ বা নীতিকথা প্রচারিত হয়েছে সেগুলিকে ইংরেজিতে বলা হয় Fable, আর বাংলায় ‘নীতিকথা’। ইংরেজি ঈশপের গল্প, সংস্কৃত পঞ্চতন্ত্র ও হিতোপদেশ এরূপ নীতিকথার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ইংরেজিতে যাকে Anecdote বলা হয়, তাও এরূপ নীতিকথা; তবে তা ধর্মগুরু, দেবতা, নবী, সন্ন্যাসী, দরবেশ, পীর প্রভৃতি লোকের উপদেশমূলক কাহিনী, যা থেকে মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করতে পারে। কাজেই এ প্রকারের গল্পকে উপদেশকথা বলা যেতে পারে।
কলেবরে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত এক প্রকার গল্প বিশ্বের সর্বত্র প্রচলিত, ইংরেজিতে যাকে Noodle-story, Numskul-story, Merry-tale, Humourous tale বলা হয়; বাংলায় এগুলিকে বলা হয় ‘রঙ্গকথা’ বা ‘হাসির গল্প’। জসীমউদ্দীনের বাঙালীর হাসির গল্প, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর টুনটুনির বই, আশরাফ সিদ্দিকীর Toontoony and Other Tales ইত্যাদি গ্রন্থে এ শ্রেণির বহু গল্প আছে।
কোনো কোনো গল্পের একটিমাত্র অসীম সাহসী বীরচরিত্র নানারূপ অসাধ্য সাধন করে লোকচিত্ত জয় করে থাকে। গ্রীক সাহিত্যে Hercules, Prometheus, আরব্য উপন্যাসের সিন্দবাদ নাবিক প্রভৃতিকে এ ধরনের নায়ক বলা যায়। এসব কাহিনী Hero-tale নামে পরিচিত, বাংলায় যাকে বলা হয় ‘বীরকথা’। আরব্য উপন্যাস, তালবেতালের গল্প, কিশোরগঞ্জের লোককাহিনী প্রভৃতি গ্রন্থে এরূপ গল্প পাওয়া যায়।
কোনো কোনো স্থানীয় ঘটনা, যা একদা সত্যি ঘটেছিল বলে বিশ্বাস করা হয় এবং যা লোকের মুখে মুখে প্রচারের মাধ্যমে জনপ্রিয়তাও লাভ করে, ইংরেজিতে তা Local legend, Local tradition ইত্যাদি নামে পরিচিত। Pied piper of Hamelin এরূপ গল্পের দৃষ্টান্ত। কিংবদন্তীর দেশে (সুবোধ ঘোষ), কিংবদন্তীর বাংলা (আশরাফ সিদ্দিকী), পূবর্ববঙ্গ-গীতিকার ‘কমলাসুন্দরী’, ‘চৌধুরীর লড়াই’ প্রভৃতি পালায় এরূপ কাহিনীর বৈশিষ্ট্য থাকলেও এ ধরণের খাঁটি কাহিনী খুব একটা সংগৃহীত হয়নি। এগুলিকে ‘স্থানীয় কাহিনী’ বলা হয়।
আরো এক প্রকার লোককাহিনী, যেমন ‘বাঘের গায়ে ডোরাকাটা কেন’, ‘কুটুম পাখির গায়ের রং হলুদ কেন’, বা কোনো বিশেষ বৃক্ষ, নদ-নদী, তারকামন্ডল কেন এবং কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ইত্যাদি বোঝানোর জন্য যেসব কাহিনী বলা হয়, সেগুলিকে আঞ্চলিকভাবে ‘সৃষ্টিকথা’, ইংরেজিতে Etiological tale বা Nature sage বলা হয়। বাংলায় এক প্রকার গল্প আছে যেগুলিকে ‘গাঁজাখুরি গল্প’ (ইংরেজিতে Tales of lying) বলা হয়, যেমন: ‘পি-পু ফি-শু’ (পিঠ পোড়ে, ফিরে শোও), ‘দুই জোয়ানের গল্প’ (যারা তালগাছ ও বটগাছ দিয়ে দাঁতন করে, এক চুমুকে পুকুরের পানি শুকিয়ে ফেলে) ইত্যাদি। এছাড়া বুদ্ধি পরীক্ষার জন্য এক ধরণের গল্প আছে, যেগুলিকে ইংরেজিতে বলা হয় Enigma, বাংলায় ‘ধাঁধামূলক গল্প’। এ ধরণের গল্প নতুন জামাই, নতুন কনে বা রাজদরবারে চাকরিপ্রার্থীদের বুদ্ধি পরীক্ষার জন্য রচিত হতো। গোপাল ভাঁড়ের গল্পে এর নিদর্শন পাওয়া যায়।
‘শিকলি গল্প’ (Chain tale) নামে আর এক ধরণের গল্প আছে, যাতে একটির পর একটি ঘটনা ছড়ার আকারে আবর্তিত হয়। টুনটুনির বই-এ ‘টুনটুনি ও নাপিত’, ‘নাপিত ও শৃগাল’ (নাক কেটে নরুন পেলাম, তাক ডুমাডুম ডুম) ইত্যাদি এ ধরনের গল্প। [আশরাফ সিদ্দিকী]
আরো দেখুন রূপকথা; লোকসাহিত্য।
গ্রন্থপঞ্জি আশরাফ সিদ্দিকী, লোকসাহিত্য, দুই খন্ড, ঢাকা, ১৯৯৪; Thomson, Stith, The Folktale, New York, ১৯৫১।