ঠাকুর, সৌম্যেন্দ্রনাথ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''ঠাকুর'''''', ''''''সৌম্যেন্দ্রনাথ '''(১৯০১-১৯৭৪)  সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও বাগ্মী। ১৯০১ সালের ৮ অক্টোবর  জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মহর্ষি  [[১০২২৩৫|দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] তাঁর প্রপিতামহ এবং  [[১০২২৩৬|রবীন্দ্রনাথ]] সম্পর্কে পিতামহ। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর সৌম্যেন্দ্রনাথ ক্লোবেল ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন এবং মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক (১৯১৭) ও  [[১০৩৩৪৫|প্রেসিডেন্সি কলেজ]] থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন।
'''ঠাকুর, সৌম্যেন্দ্রনাথ '''(১৯০১-১৯৭৪)  সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও বাগ্মী। ১৯০১ সালের ৮ অক্টোবর  জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] তাঁর প্রপিতামহ এবং  [[ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ|রবীন্দ্রনাথ]] সম্পর্কে পিতামহ। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর সৌম্যেন্দ্রনাথ ক্লোবেল ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন এবং মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক (১৯১৭) ও  [[প্রেসিডেন্সি কলেজ|প্রেসিডেন্সি কলেজ]] থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন।


সৌম্যেন্দ্রনাথ পারিবারিক বাধা অতিক্রম করে বিপ্লবী বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯২১ সালে তিনি আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত ছাত্র সম্মেলনে যোগদান করেন এবং তখন থেকেই বাম রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে বইপত্র পাঠ করে কমিউনিস্ট মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন। এ সময় তিনি ‘শ্রমিক কৃষক দল’-এর মুখপত্র  [[লাঙল|লাঙল ]]এবং একই সঙ্গে  [[আহমেদ, কমরেড মুজাফ্ফর|মুজাফ্ফর আহমেদ]] ও  [[১০০৫৫৯|কাজী নজরুল ইসলাম]]এর সংস্পর্শে আসেন। এই পত্রিকাতেই তাঁর অনূদিত কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো প্রকাশিত হয়। তিনি এ দলের দ্বিতীয় অধিবেশনে (১৯২৭) সভাপতি হন।  
সৌম্যেন্দ্রনাথ পারিবারিক বাধা অতিক্রম করে বিপ্লবী বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯২১ সালে তিনি আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত ছাত্র সম্মেলনে যোগদান করেন এবং তখন থেকেই বাম রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে বইপত্র পাঠ করে কমিউনিস্ট মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন। এ সময় তিনি ‘শ্রমিক কৃষক দল’-এর মুখপত্র  [[লাঙল|লাঙল ]]এবং একই সঙ্গে  [[আহমেদ, কমরেড মুজাফ্ফর|মুজাফ্ফর আহমেদ]] ও  [[ইসলাম, কাজী নজরুল|কাজী নজরুল ইসলাম]]এর সংস্পর্শে আসেন। এই পত্রিকাতেই তাঁর অনূদিত কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো প্রকাশিত হয়। তিনি এ দলের দ্বিতীয় অধিবেশনে (১৯২৭) সভাপতি হন।  


এ সময় সৌম্যেন্দ্রনাথের ওপর  [[১০৫২৬১|মানবেন্দ্রনাথ রায়]]এর বিশেষ প্রভাব পড়ে। পিতা তাঁর মতি-গতি পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ১৯২৭ সালে তাঁকে ইউরোপ পাঠিয়ে দেন, কিন্তু তার ফল হয় বিপরীত। তিনি ১৯২৮ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট কংগ্রেসে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ফলে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জেল থেকে মুক্তির পর একই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তিনি জার্মানি যান এবং সেখানে একটি কবিতার বই প্রকাশ করার কারণে হিটলার সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। এবারে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব ও প্রচেষ্টায় মুক্তি পেয়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের কিছুকাল পরে তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার হন। এভাবে প্রায় আট বছর তিনি কারাভোগ করেন।
এ সময় সৌম্যেন্দ্রনাথের ওপর  [[রায়, মানবেন্দ্রনাথ|মানবেন্দ্রনাথ রায়]]এর বিশেষ প্রভাব পড়ে। পিতা তাঁর মতি-গতি পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ১৯২৭ সালে তাঁকে ইউরোপ পাঠিয়ে দেন, কিন্তু তার ফল হয় বিপরীত। তিনি ১৯২৮ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট কংগ্রেসে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ফলে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জেল থেকে মুক্তির পর একই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তিনি জার্মানি যান এবং সেখানে একটি কবিতার বই প্রকাশ করার কারণে হিটলার সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। এবারে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব ও প্রচেষ্টায় মুক্তি পেয়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের কিছুকাল পরে তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার হন। এভাবে প্রায় আট বছর তিনি কারাভোগ করেন।


১৯২৭ সালে সৌম্যেন্দ্রনাথ ‘দি রেভলিউশনারি কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া’ গঠন করেন। তিনি রাজনীতির সঙ্গে সাহিত্য ও সঙ্গীতচর্চাও চালিয়ে যান। বিখ্যাত কল্লোল গোষ্ঠীর তিনি একজন বিশিষ্ট লেখক ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থা: বিপ্লবী রাশিয়া (১৯৩২),'' ''ত্রয়ী (রম্যাঁ রল্যাঁ, গর্কি ও অাঁরি বারবস্-এর সঙ্গে আলোচনা, ১৯৪৭)'', ''যাত্রী (১৯৫০,'' ''আত্মজীবনী),'' ''রবীন্দ্রনাথের গান (১৯৫২), ভারতের শিল্পবিপ্লব ও রামমোহন,'' ''রাশিয়ার কবিতা (অনুবাদ, ১৯৪৫)'', ''কমিউনিজম অ্যান্ড ফ্যাসিজম (১৯৪১),'' ''ট্যাকটিক্স অ্যান্ড স্ট্রাটেজী অব রেভলিউশন (১৯৪৮) ইত্যাদি। তিনি ফরাসি ও জার্মান ভাষায়ও গ্রন্থ রচনা করেন। ফ্যাসিবাদের ওপর তাঁর বিভিন্ন সংকলন গ্রন্থের মধ্যে হিটলারিজম অ্যান্ড দি এরিয়ান রুল ইন জার্মানী অন্যতম। ১৯৭৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [বদিউজ্জামান]
১৯২৭ সালে সৌম্যেন্দ্রনাথ ‘দি রেভলিউশনারি কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া’ গঠন করেন। তিনি রাজনীতির সঙ্গে সাহিত্য ও সঙ্গীতচর্চাও চালিয়ে যান। বিখ্যাত কল্লোল গোষ্ঠীর তিনি একজন বিশিষ্ট লেখক ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থা: বিপ্লবী রাশিয়া (১৯৩২),'' ''ত্রয়ী (রম্যাঁ রল্যাঁ, গর্কি ও অাঁরি বারবস্-এর সঙ্গে আলোচনা, ১৯৪৭)'', ''যাত্রী (১৯৫০,'' ''আত্মজীবনী),'' ''রবীন্দ্রনাথের গান (১৯৫২), ভারতের শিল্পবিপ্লব ও রামমোহন,'' ''রাশিয়ার কবিতা (অনুবাদ, ১৯৪৫)'', ''কমিউনিজম অ্যান্ড ফ্যাসিজম (১৯৪১),'' ''ট্যাকটিক্স অ্যান্ড স্ট্রাটেজী অব রেভলিউশন (১৯৪৮) ইত্যাদি। তিনি ফরাসি ও জার্মান ভাষায়ও গ্রন্থ রচনা করেন। ফ্যাসিবাদের ওপর তাঁর বিভিন্ন সংকলন গ্রন্থের মধ্যে হিটলারিজম অ্যান্ড দি এরিয়ান রুল ইন জার্মানী অন্যতম। ১৯৭৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [বদিউজ্জামান]
<!-- imported from file: ঠাকুর, সৌম্যেন্দ্রনাথ.html-->


[[en:Tagore, Soumyendranath]]
[[en:Tagore, Soumyendranath]]

১০:৪৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ঠাকুর, সৌম্যেন্দ্রনাথ (১৯০১-১৯৭৪)  সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও বাগ্মী। ১৯০১ সালের ৮ অক্টোবর  জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] তাঁর প্রপিতামহ এবং  রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে পিতামহ। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর সৌম্যেন্দ্রনাথ ক্লোবেল ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন এবং মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক (১৯১৭) ও  প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন।

সৌম্যেন্দ্রনাথ পারিবারিক বাধা অতিক্রম করে বিপ্লবী বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯২১ সালে তিনি আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত ছাত্র সম্মেলনে যোগদান করেন এবং তখন থেকেই বাম রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে বইপত্র পাঠ করে কমিউনিস্ট মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন। এ সময় তিনি ‘শ্রমিক কৃষক দল’-এর মুখপত্র  লাঙল এবং একই সঙ্গে  মুজাফ্ফর আহমেদ ও  কাজী নজরুল ইসলামএর সংস্পর্শে আসেন। এই পত্রিকাতেই তাঁর অনূদিত কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো প্রকাশিত হয়। তিনি এ দলের দ্বিতীয় অধিবেশনে (১৯২৭) সভাপতি হন।

এ সময় সৌম্যেন্দ্রনাথের ওপর  মানবেন্দ্রনাথ রায়এর বিশেষ প্রভাব পড়ে। পিতা তাঁর মতি-গতি পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ১৯২৭ সালে তাঁকে ইউরোপ পাঠিয়ে দেন, কিন্তু তার ফল হয় বিপরীত। তিনি ১৯২৮ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট কংগ্রেসে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ফলে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জেল থেকে মুক্তির পর একই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তিনি জার্মানি যান এবং সেখানে একটি কবিতার বই প্রকাশ করার কারণে হিটলার সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। এবারে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব ও প্রচেষ্টায় মুক্তি পেয়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের কিছুকাল পরে তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার হন। এভাবে প্রায় আট বছর তিনি কারাভোগ করেন।

১৯২৭ সালে সৌম্যেন্দ্রনাথ ‘দি রেভলিউশনারি কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া’ গঠন করেন। তিনি রাজনীতির সঙ্গে সাহিত্য ও সঙ্গীতচর্চাও চালিয়ে যান। বিখ্যাত কল্লোল গোষ্ঠীর তিনি একজন বিশিষ্ট লেখক ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থা: বিপ্লবী রাশিয়া (১৯৩২), ত্রয়ী (রম্যাঁ রল্যাঁ, গর্কি ও অাঁরি বারবস্-এর সঙ্গে আলোচনা, ১৯৪৭), যাত্রী (১৯৫০, আত্মজীবনী), রবীন্দ্রনাথের গান (১৯৫২), ভারতের শিল্পবিপ্লব ও রামমোহন, রাশিয়ার কবিতা (অনুবাদ, ১৯৪৫), কমিউনিজম অ্যান্ড ফ্যাসিজম (১৯৪১), ট্যাকটিক্স অ্যান্ড স্ট্রাটেজী অব রেভলিউশন (১৯৪৮) ইত্যাদি। তিনি ফরাসি ও জার্মান ভাষায়ও গ্রন্থ রচনা করেন। ফ্যাসিবাদের ওপর তাঁর বিভিন্ন সংকলন গ্রন্থের মধ্যে হিটলারিজম অ্যান্ড দি এরিয়ান রুল ইন জার্মানী অন্যতম। ১৯৭৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [বদিউজ্জামান]