টাঙ্গুয়ার হাওর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''টাঙ্গুয়ার হাওর''' (Tanguar Haor) সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলাধীন ১০টি মৌজা নিয়ে বিস্তৃত একটি হাওর। মৌজাগুলো হলো - (১) জগদীশপুর (২) ভবানীপুর (৩) লামাগাঁও (৪) রামসিংহপুর (৫) মহজমপুর (৬) মেইন দাগ (৭) মায়াজুরি (৮) ভাঙাচরা পূর্ব (৯) নোয়াগাঁও (১০) টাঙ্গুয়ার হাওর। এ হাওরটিতে ছোটবড় ১২০টি বিল রয়েছে। ৪৬টি গ্রামসহ পুরো হাওর এলাকার আয়তন প্রায় ১০০ বর্গ কিমি, এর মধ্যে ২৮০২.৩৬ হেক্টর জলাভূমি রয়েছে। | '''টাঙ্গুয়ার হাওর''' (Tanguar Haor) সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলাধীন ১০টি মৌজা নিয়ে বিস্তৃত একটি হাওর। মৌজাগুলো হলো - (১) জগদীশপুর (২) ভবানীপুর (৩) লামাগাঁও (৪) রামসিংহপুর (৫) মহজমপুর (৬) মেইন দাগ (৭) মায়াজুরি (৮) ভাঙাচরা পূর্ব (৯) নোয়াগাঁও (১০) টাঙ্গুয়ার হাওর। এ হাওরটিতে ছোটবড় ১২০টি বিল রয়েছে। ৪৬টি গ্রামসহ পুরো হাওর এলাকার আয়তন প্রায় ১০০ বর্গ কিমি, এর মধ্যে ২৮০২.৩৬ হেক্টর জলাভূমি রয়েছে। | ||
[[Image:WaterLily.jpg|thumb|400px|টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ]] | |||
কেবল সুনামগঞ্জ নয়, গোটা বাংলাদেশেই হাওরটি শীতের অতিথি পাখিদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বিশ্বের বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির পাখি এ বিশাল হাওরে শীতকালে অস্থায়িভাবে আবাস গড়ে তোলে। আগে একসময় রাজা-জমিদাররা পানসি নৌকা নিয়ে এ হাওরে পাখি শিকারে যেতেন। টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের মৎস্যসম্পদের একটি অন্যতম উৎস। এখানে ১৪০টিরও বেশি প্রজাতির স্বাদুপানির মাছ পাওয়া যায়। | কেবল সুনামগঞ্জ নয়, গোটা বাংলাদেশেই হাওরটি শীতের অতিথি পাখিদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বিশ্বের বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির পাখি এ বিশাল হাওরে শীতকালে অস্থায়িভাবে আবাস গড়ে তোলে। আগে একসময় রাজা-জমিদাররা পানসি নৌকা নিয়ে এ হাওরে পাখি শিকারে যেতেন। টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের মৎস্যসম্পদের একটি অন্যতম উৎস। এখানে ১৪০টিরও বেশি প্রজাতির স্বাদুপানির মাছ পাওয়া যায়। | ||
এগুলোর মধ্যে আইড়, গাং মাগুর, বাইম, তারা বাইম, গুতুম, গুলশা, টেংরা, তিতনা, গরিয়া, বেতি, কাকিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৯-২০০০ সালে এ হাওরের শুধু মৎস্য সম্পদ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭০,৭৩,১৮৪ টাকা। স্বাদুপানির বনজ সম্পদ হিজল (''Barringtonia acutangula''), করচ (''Pongamia pinnata''), গুল্লী, বলুয়া, বনতুলসী (''Ocimum americanum''), নলখাগড়া (''Phragmites karka'') প্রভৃতি বিলুপ্তপ্রায় বহু প্রজাতির গাছ-গাছালি এ হাওর এলাকায় রয়েছে। এক হিসাব মতে, টাঙ্গুয়ার হাওরে ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ১৫০ প্রজাতির মাছ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। | এগুলোর মধ্যে আইড়, গাং মাগুর, বাইম, তারা বাইম, গুতুম, গুলশা, টেংরা, তিতনা, গরিয়া, বেতি, কাকিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৯-২০০০ সালে এ হাওরের শুধু মৎস্য সম্পদ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭০,৭৩,১৮৪ টাকা। স্বাদুপানির বনজ সম্পদ হিজল (''Barringtonia acutangula''), করচ (''Pongamia pinnata''), গুল্লী, বলুয়া, বনতুলসী (''Ocimum americanum''), নলখাগড়া (''Phragmites karka'') প্রভৃতি বিলুপ্তপ্রায় বহু প্রজাতির গাছ-গাছালি এ হাওর এলাকায় রয়েছে। এক হিসাব মতে, টাঙ্গুয়ার হাওরে ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ১৫০ প্রজাতির মাছ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। | ||
১২ নং লাইন: | ১১ নং লাইন: | ||
বিগত কয়েক দশক ধরে টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার সামগ্রিক পরিবেশের অবনতি ঘটছে। পরিবেশগত ঐতিহ্য ও গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সরকার বিশাল এ হাওরটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশ সংকটাপন্ন বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে রামসার কনভেনশনের অধীনে ‘রামসার এলাকা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। সেই সূত্র ধরেই টাঙ্গুয়ার হাওরের পানি সংরক্ষণ, কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, প্রাণী এবং অতিথি পাখির জন্য নিরাপদ আবাস তৈরির মাধ্যমে হাওরকে স্বাভাবিক পরিবেশ ও ঐতিহ্য উপযোগী করার জন্য সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। স্পর্শকাতর এ হাওর এলাকায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো উন্নয়ন বা বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি না দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং তা গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া হাওর এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে গ্যাস বা তৈলকূপ খননের ওপরও সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। [নিক্সন তালুকদার] | বিগত কয়েক দশক ধরে টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার সামগ্রিক পরিবেশের অবনতি ঘটছে। পরিবেশগত ঐতিহ্য ও গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সরকার বিশাল এ হাওরটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশ সংকটাপন্ন বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে রামসার কনভেনশনের অধীনে ‘রামসার এলাকা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। সেই সূত্র ধরেই টাঙ্গুয়ার হাওরের পানি সংরক্ষণ, কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, প্রাণী এবং অতিথি পাখির জন্য নিরাপদ আবাস তৈরির মাধ্যমে হাওরকে স্বাভাবিক পরিবেশ ও ঐতিহ্য উপযোগী করার জন্য সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। স্পর্শকাতর এ হাওর এলাকায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো উন্নয়ন বা বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি না দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং তা গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া হাওর এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে গ্যাস বা তৈলকূপ খননের ওপরও সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। [নিক্সন তালুকদার] | ||
[[en:Tanguar Haor]] | [[en:Tanguar Haor]] |
০৯:২৭, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
টাঙ্গুয়ার হাওর (Tanguar Haor) সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলাধীন ১০টি মৌজা নিয়ে বিস্তৃত একটি হাওর। মৌজাগুলো হলো - (১) জগদীশপুর (২) ভবানীপুর (৩) লামাগাঁও (৪) রামসিংহপুর (৫) মহজমপুর (৬) মেইন দাগ (৭) মায়াজুরি (৮) ভাঙাচরা পূর্ব (৯) নোয়াগাঁও (১০) টাঙ্গুয়ার হাওর। এ হাওরটিতে ছোটবড় ১২০টি বিল রয়েছে। ৪৬টি গ্রামসহ পুরো হাওর এলাকার আয়তন প্রায় ১০০ বর্গ কিমি, এর মধ্যে ২৮০২.৩৬ হেক্টর জলাভূমি রয়েছে।
কেবল সুনামগঞ্জ নয়, গোটা বাংলাদেশেই হাওরটি শীতের অতিথি পাখিদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বিশ্বের বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির পাখি এ বিশাল হাওরে শীতকালে অস্থায়িভাবে আবাস গড়ে তোলে। আগে একসময় রাজা-জমিদাররা পানসি নৌকা নিয়ে এ হাওরে পাখি শিকারে যেতেন। টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের মৎস্যসম্পদের একটি অন্যতম উৎস। এখানে ১৪০টিরও বেশি প্রজাতির স্বাদুপানির মাছ পাওয়া যায়।
এগুলোর মধ্যে আইড়, গাং মাগুর, বাইম, তারা বাইম, গুতুম, গুলশা, টেংরা, তিতনা, গরিয়া, বেতি, কাকিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৯-২০০০ সালে এ হাওরের শুধু মৎস্য সম্পদ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭০,৭৩,১৮৪ টাকা। স্বাদুপানির বনজ সম্পদ হিজল (Barringtonia acutangula), করচ (Pongamia pinnata), গুল্লী, বলুয়া, বনতুলসী (Ocimum americanum), নলখাগড়া (Phragmites karka) প্রভৃতি বিলুপ্তপ্রায় বহু প্রজাতির গাছ-গাছালি এ হাওর এলাকায় রয়েছে। এক হিসাব মতে, টাঙ্গুয়ার হাওরে ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ১৫০ প্রজাতির মাছ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে।
টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার অধিবাসীদের অধিকাংশই ভূমিহীন বা প্রান্তিক চাষি। হাওরাঞ্চলের জমিতে কেবল একটি ফসল হওয়ায় মৌসুমি বেকারত্ব এখানে প্রকট। এক ফসলি হলেও জমির উর্বরা শক্তির কারণে এখানে ফলন ভাল হয়ে থাকে। হাওরটি খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় খুব সহজেই ঘূর্ণিঝড় এখানে আঘাত হানে, শিলাবৃষ্টিও হয় প্রচুর। ফলে মাঝে মাঝে শস্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। হাওরের কান্দা নামে পরিচিত এলাকা ব্যতীত অন্যান্য স্থলভাগসমূহ গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহূত হয়। অতীতে এ কান্দাগুলো গভীর গাছপালা দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। পরবর্তীতে বসতভূমি ও কৃষিজমির প্রয়োজনে প্রাকৃতিক বনভূমি ব্যাপকহারে উজাড় হয়ে যাওয়ায় এলাকার পরিবেশগত ভারসাম্য একদিকে যেমন নষ্ট হয়েছে, তেমনি হারিয়ে গেছে জীববৈচিত্র্য।
বিগত কয়েক দশক ধরে টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার সামগ্রিক পরিবেশের অবনতি ঘটছে। পরিবেশগত ঐতিহ্য ও গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সরকার বিশাল এ হাওরটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশ সংকটাপন্ন বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে রামসার কনভেনশনের অধীনে ‘রামসার এলাকা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। সেই সূত্র ধরেই টাঙ্গুয়ার হাওরের পানি সংরক্ষণ, কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, প্রাণী এবং অতিথি পাখির জন্য নিরাপদ আবাস তৈরির মাধ্যমে হাওরকে স্বাভাবিক পরিবেশ ও ঐতিহ্য উপযোগী করার জন্য সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। স্পর্শকাতর এ হাওর এলাকায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো উন্নয়ন বা বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি না দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং তা গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া হাওর এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে গ্যাস বা তৈলকূপ খননের ওপরও সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। [নিক্সন তালুকদার]