টমসন, স্যার অগাস্টাস রিভার্স: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''টমসন | '''টমসন, স্যার অগাস্টাস রিভার্স''' (১৮২৯-১৮৯০) একজন বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বাংলার [[লেফটেন্যান্ট গভর্নর|লেফটেন্যান্ট গভর্নর]] (১৮৮২-১৮৮৭)। বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের সদস্য জে. পাওনি টমসনের পুত্র এবং প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের ব্যক্তিগত সচিব জর্জ নিসবেত টমসনের পৌত্র রিভার্স টমসন শিক্ষা লাভ করেন ইটন এবং হেইলিবেরি কলেজে। ১৮৫০ সালে টমসন কলকাতায় পৌঁছেন এবং ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। | ||
১৮৮২ সালে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার আগে, অগাস্টাস রিভার্স টমসন বঙ্গীয় সরকারের | ১৮৮২ সালে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার আগে, অগাস্টাস রিভার্স টমসন বঙ্গীয় সরকারের সেক্রেটারি (১৮৬৯-১৮৭৫), ব্রিটিশ শাসিত বার্মার চিফ কমিশনার (১৮৭৫-১৮৭৮) এবং সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য (১৮৭৮-১৮৮২) পদে দায়িত্ব পালন করেন। বেশ কিছু ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্য টমসনের প্রশাসনকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা যায়, যেমন বাংলা থেকে বার্মা ও অন্যান্য এলাকায় শ্রমিক যাতায়াত নিয়ন্ত্রণকারী ১৮৮২ সালের অন্তর্দেশীয় বহির্গমন আইন (Inland Emigration Law), প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা বিস্তার নীতিমালার খসড়া প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ভারতীয় শিক্ষা কমিশন, ১৮৮২ (Indian Education Commission), জমির উপর স্বত্ব নির্ধারণ করে জমি সংক্রান্ত বিবাদসমূহ কমানোর উদ্দেশ্যে প্রণীত [[বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন, ১৮৮৫|বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন]] ১৮৮৫ (Bengal Tenancy Act) এবং সবচেয়ে বির্তকিত ইলবার্ট বিল (Ilbert Bill)। টমসন ছিলেন তীব্রভাবে বিলটির বিরোধী এবং সে জন্যই তিনি উপনিবেশিক রাজ্যের স্বার্থে এর প্রয়োজনীয় সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দেখান। তিনি বিলটির মূল ধারাসমূহের বেশ কয়েকটির পরিবর্তনের জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেন, যা কাউন্সিলে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, শুধু স্থানীয় আইসিএস সদস্যদেরই মফস্বল এলাকায় ইউরোপীয়দের বিচার করার অধিকার থাকা উচিত। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পূর্বে এ ধারণা এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সামরিক ছাউনিসমূহে অবস্থিত বিচারালয়গুলিতে দেশীয় আইসিএস অফিসারগণকেও ইউরোপীয়দের বিচারের অধিকার দেয়া হয় নি। | ||
স্যার রিভার্স টমসন যখন লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সভাপতি ছিলেন তখন আনীত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি প্রস্তাব ছিল স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বিল এবং পৌর আইন। ১৮৮৫ সালে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বিলটি আইনে পরিণত হয়। এ আইনের আওতায় জেলা বোর্ড ও লোকাল বোর্ড গঠিত হয়। এ বোর্ডসমূহের কর্মসূচির মধ্যে ছিল রাস্তা ঘাট এবং যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষা, হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয়, স্বাস্থ্য সেবা, টীকাদান, দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণ বিতরণ, আদমশুমারি, ডাক বাংলোর রক্ষণাবেক্ষণ, মেলা এবং শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন ইত্যাদি। ১৮৮৪ সালের পৌর আইন বিদ্যমান আইনকে সুবিন্যস্ত ও সম্প্রসারিত করার জন্য প্রণীত হয়। ১৮৮৭ সালের মার্চ মাসে টমসন তাঁর দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। ১৮৯০ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। [সিরাজুল ইসলাম] | স্যার রিভার্স টমসন যখন লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সভাপতি ছিলেন তখন আনীত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি প্রস্তাব ছিল স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বিল এবং পৌর আইন। ১৮৮৫ সালে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বিলটি আইনে পরিণত হয়। এ আইনের আওতায় জেলা বোর্ড ও লোকাল বোর্ড গঠিত হয়। এ বোর্ডসমূহের কর্মসূচির মধ্যে ছিল রাস্তা ঘাট এবং যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষা, হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয়, স্বাস্থ্য সেবা, টীকাদান, দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণ বিতরণ, আদমশুমারি, ডাক বাংলোর রক্ষণাবেক্ষণ, মেলা এবং শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন ইত্যাদি। ১৮৮৪ সালের পৌর আইন বিদ্যমান আইনকে সুবিন্যস্ত ও সম্প্রসারিত করার জন্য প্রণীত হয়। ১৮৮৭ সালের মার্চ মাসে টমসন তাঁর দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। ১৮৯০ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। [সিরাজুল ইসলাম] | ||
[[en:Thompson, Sir Augustus Rivers]] | [[en:Thompson, Sir Augustus Rivers]] |
০৬:১৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
টমসন, স্যার অগাস্টাস রিভার্স (১৮২৯-১৮৯০) একজন বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর (১৮৮২-১৮৮৭)। বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের সদস্য জে. পাওনি টমসনের পুত্র এবং প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের ব্যক্তিগত সচিব জর্জ নিসবেত টমসনের পৌত্র রিভার্স টমসন শিক্ষা লাভ করেন ইটন এবং হেইলিবেরি কলেজে। ১৮৫০ সালে টমসন কলকাতায় পৌঁছেন এবং ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।
১৮৮২ সালে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার আগে, অগাস্টাস রিভার্স টমসন বঙ্গীয় সরকারের সেক্রেটারি (১৮৬৯-১৮৭৫), ব্রিটিশ শাসিত বার্মার চিফ কমিশনার (১৮৭৫-১৮৭৮) এবং সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য (১৮৭৮-১৮৮২) পদে দায়িত্ব পালন করেন। বেশ কিছু ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্য টমসনের প্রশাসনকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা যায়, যেমন বাংলা থেকে বার্মা ও অন্যান্য এলাকায় শ্রমিক যাতায়াত নিয়ন্ত্রণকারী ১৮৮২ সালের অন্তর্দেশীয় বহির্গমন আইন (Inland Emigration Law), প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা বিস্তার নীতিমালার খসড়া প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ভারতীয় শিক্ষা কমিশন, ১৮৮২ (Indian Education Commission), জমির উপর স্বত্ব নির্ধারণ করে জমি সংক্রান্ত বিবাদসমূহ কমানোর উদ্দেশ্যে প্রণীত বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন ১৮৮৫ (Bengal Tenancy Act) এবং সবচেয়ে বির্তকিত ইলবার্ট বিল (Ilbert Bill)। টমসন ছিলেন তীব্রভাবে বিলটির বিরোধী এবং সে জন্যই তিনি উপনিবেশিক রাজ্যের স্বার্থে এর প্রয়োজনীয় সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দেখান। তিনি বিলটির মূল ধারাসমূহের বেশ কয়েকটির পরিবর্তনের জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেন, যা কাউন্সিলে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, শুধু স্থানীয় আইসিএস সদস্যদেরই মফস্বল এলাকায় ইউরোপীয়দের বিচার করার অধিকার থাকা উচিত। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পূর্বে এ ধারণা এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সামরিক ছাউনিসমূহে অবস্থিত বিচারালয়গুলিতে দেশীয় আইসিএস অফিসারগণকেও ইউরোপীয়দের বিচারের অধিকার দেয়া হয় নি।
স্যার রিভার্স টমসন যখন লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সভাপতি ছিলেন তখন আনীত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি প্রস্তাব ছিল স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বিল এবং পৌর আইন। ১৮৮৫ সালে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বিলটি আইনে পরিণত হয়। এ আইনের আওতায় জেলা বোর্ড ও লোকাল বোর্ড গঠিত হয়। এ বোর্ডসমূহের কর্মসূচির মধ্যে ছিল রাস্তা ঘাট এবং যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষা, হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয়, স্বাস্থ্য সেবা, টীকাদান, দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণ বিতরণ, আদমশুমারি, ডাক বাংলোর রক্ষণাবেক্ষণ, মেলা এবং শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন ইত্যাদি। ১৮৮৪ সালের পৌর আইন বিদ্যমান আইনকে সুবিন্যস্ত ও সম্প্রসারিত করার জন্য প্রণীত হয়। ১৮৮৭ সালের মার্চ মাসে টমসন তাঁর দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। ১৮৯০ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। [সিরাজুল ইসলাম]