জয়নুদ্দীন, শেখ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:ZainuddinSheikh.jpg|thumb|right|''সারস''        শিল্পী- শেখ জয়নুদ্দীন]]
'''জয়নুদ্দীন, শেখ'''  চিত্রশিল্পী। কলকাতায় কোম্পানি আমলে যে কজন স্থানীয় শিল্পী ইউরোপীয় মনিবদের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে শেখ জয়নুদ্দীন উল্লেখযোগ্য। তিনি আঠারো শতকের শেষের দিকে কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পের স্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর শিল্পী জীবনের অনেকগুলি বছর অতিবাহিত করেন। ইম্পের স্ত্রী তাঁর পশুপাখির সংগ্রহশালার প্রামাণিক স্কেচ ও ছবি অাঁকার জন্য পাটনা থেকে আগত যে তিনজন শিল্পী নিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে জয়নুদ্দীন সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। এসকল শিল্পী ছিলেন ক্ষয়িষ্ণু মুগল পরম্পরার পাটনা কলমের (পাটনা শৈলী) শিল্পী। কিন্তু ইউরোপীয় শিল্পী ও পৃষ্ঠপোষকদের সংস্পর্শে এসে এরা জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ইউরোপীয় রীতি পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এদের অনেকেই তাঁদের শিল্পকৃতিতে মুগল ও ইউরোপীয় অঙ্কন শৈলী পাশাপাশি ব্যবহার করেন। উপরিউক্ত ধারার শিল্পী ছিলেন শেখ জয়নুদ্দীন।
'''জয়নুদ্দীন, শেখ'''  চিত্রশিল্পী। কলকাতায় কোম্পানি আমলে যে কজন স্থানীয় শিল্পী ইউরোপীয় মনিবদের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে শেখ জয়নুদ্দীন উল্লেখযোগ্য। তিনি আঠারো শতকের শেষের দিকে কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পের স্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর শিল্পী জীবনের অনেকগুলি বছর অতিবাহিত করেন। ইম্পের স্ত্রী তাঁর পশুপাখির সংগ্রহশালার প্রামাণিক স্কেচ ও ছবি অাঁকার জন্য পাটনা থেকে আগত যে তিনজন শিল্পী নিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে জয়নুদ্দীন সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। এসকল শিল্পী ছিলেন ক্ষয়িষ্ণু মুগল পরম্পরার পাটনা কলমের (পাটনা শৈলী) শিল্পী। কিন্তু ইউরোপীয় শিল্পী ও পৃষ্ঠপোষকদের সংস্পর্শে এসে এরা জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ইউরোপীয় রীতি পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এদের অনেকেই তাঁদের শিল্পকৃতিতে মুগল ও ইউরোপীয় অঙ্কন শৈলী পাশাপাশি ব্যবহার করেন। উপরিউক্ত ধারার শিল্পী ছিলেন শেখ জয়নুদ্দীন।


১৭৭৭ থেকে ১৭৮২ সালের মধ্যে জয়নুদ্দীন ইংল্যান্ডে তৈরি হোয়াইটম্যান কাগজে ব্রিটিশ রীতির স্বচ্ছ জলরং-এ যে পশুপাখির চিত্ররাজি নির্মাণ করেছেন, তাতে মুগল পাটনা কলমের ছাপ সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। শিল্পী জয়নুদ্দীনের দক্ষ ও সুচারু তুলি চালনায় বিসর্পিল পেলব রেখায় যে টিয়া ও সারস অঙ্কন করেছেন, তাতে মুগল দরবারের প্রথিতযশা শিল্পী ওস্তাদ মনসুর-এর শৈলীর রেশ দেখা যায়। শিল্পী জয়নুদ্দীন তাঁর শিল্পকৃতিতে মুগল রেখাঙ্কনের পরম্পরা ও ব্রিটিশ রীতির স্বচ্ছ জল রং-এর সুখকর সমন্বয় ঘটান।  
১৭৭৭ থেকে ১৭৮২ সালের মধ্যে জয়নুদ্দীন ইংল্যান্ডে তৈরি হোয়াইটম্যান কাগজে ব্রিটিশ রীতির স্বচ্ছ জলরং-এ যে পশুপাখির চিত্ররাজি নির্মাণ করেছেন, তাতে মুগল পাটনা কলমের ছাপ সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। শিল্পী জয়নুদ্দীনের দক্ষ ও সুচারু তুলি চালনায় বিসর্পিল পেলব রেখায় যে টিয়া ও সারস অঙ্কন করেছেন, তাতে মুগল দরবারের প্রথিতযশা শিল্পী ওস্তাদ মনসুর-এর শৈলীর রেশ দেখা যায়। শিল্পী জয়নুদ্দীন তাঁর শিল্পকৃতিতে মুগল রেখাঙ্কনের পরম্পরা ও ব্রিটিশ রীতির স্বচ্ছ জল রং-এর সুখকর সমন্বয় ঘটান।


[[Image:ZainuddinSheikh.jpg|thumb|right|সারস        শিল্পী- শেখ জয়নুদ্দীন]]
তাঁর অঙ্কিত পাহাড়ি ইঁদুর, ঝুলন্ত বাঁদুর, টিয়া, সারস ইত্যাদি শুধু নয়নাভিরামই নয়, বরং নান্দনিক গুণেও সমুজ্জ্বল। শিল্পী শেখ জয়নুদ্দীনের অঙ্কিত বেশ কিছু পশুপাখি সিরিজের চিত্র বর্তমানে অক্সফোর্ডের এ্যাশমোলিয়ান জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। [নাজমা খান মজলিস]
 
 
তাঁর অঙ্কিত পাহাড়ি ইঁদুর, ঝুলন্ত বাঁদুর, টিয়া, সারস ইত্যাদি শুধু নয়নাভিরামই নয়, বরং নান্দনিক গুণেও সমুজ্জ্বল। শিল্পী শেখ জয়নুদ্দীনের অঙ্কিত বেশ কিছু পশুপাখি সিরিজের চিত্র বর্তমানে অক্সফোর্ডের এ্যাশমোলিয়ান জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
 
[নাজমা খান মজলিস]


[[en:Zainuddin, Sheikh]]
[[en:Zainuddin, Sheikh]]

১০:৫২, ১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সারস        শিল্পী- শেখ জয়নুদ্দীন

জয়নুদ্দীন, শেখ  চিত্রশিল্পী। কলকাতায় কোম্পানি আমলে যে কজন স্থানীয় শিল্পী ইউরোপীয় মনিবদের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে শেখ জয়নুদ্দীন উল্লেখযোগ্য। তিনি আঠারো শতকের শেষের দিকে কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পের স্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর শিল্পী জীবনের অনেকগুলি বছর অতিবাহিত করেন। ইম্পের স্ত্রী তাঁর পশুপাখির সংগ্রহশালার প্রামাণিক স্কেচ ও ছবি অাঁকার জন্য পাটনা থেকে আগত যে তিনজন শিল্পী নিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে জয়নুদ্দীন সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। এসকল শিল্পী ছিলেন ক্ষয়িষ্ণু মুগল পরম্পরার পাটনা কলমের (পাটনা শৈলী) শিল্পী। কিন্তু ইউরোপীয় শিল্পী ও পৃষ্ঠপোষকদের সংস্পর্শে এসে এরা জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ইউরোপীয় রীতি পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এদের অনেকেই তাঁদের শিল্পকৃতিতে মুগল ও ইউরোপীয় অঙ্কন শৈলী পাশাপাশি ব্যবহার করেন। উপরিউক্ত ধারার শিল্পী ছিলেন শেখ জয়নুদ্দীন।

১৭৭৭ থেকে ১৭৮২ সালের মধ্যে জয়নুদ্দীন ইংল্যান্ডে তৈরি হোয়াইটম্যান কাগজে ব্রিটিশ রীতির স্বচ্ছ জলরং-এ যে পশুপাখির চিত্ররাজি নির্মাণ করেছেন, তাতে মুগল পাটনা কলমের ছাপ সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। শিল্পী জয়নুদ্দীনের দক্ষ ও সুচারু তুলি চালনায় বিসর্পিল পেলব রেখায় যে টিয়া ও সারস অঙ্কন করেছেন, তাতে মুগল দরবারের প্রথিতযশা শিল্পী ওস্তাদ মনসুর-এর শৈলীর রেশ দেখা যায়। শিল্পী জয়নুদ্দীন তাঁর শিল্পকৃতিতে মুগল রেখাঙ্কনের পরম্পরা ও ব্রিটিশ রীতির স্বচ্ছ জল রং-এর সুখকর সমন্বয় ঘটান।

তাঁর অঙ্কিত পাহাড়ি ইঁদুর, ঝুলন্ত বাঁদুর, টিয়া, সারস ইত্যাদি শুধু নয়নাভিরামই নয়, বরং নান্দনিক গুণেও সমুজ্জ্বল। শিল্পী শেখ জয়নুদ্দীনের অঙ্কিত বেশ কিছু পশুপাখি সিরিজের চিত্র বর্তমানে অক্সফোর্ডের এ্যাশমোলিয়ান জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। [নাজমা খান মজলিস]