চারপত্র মুড়া: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''চারপত্র মুড়া''' ময়নামতীর একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্থল। এটি লালমাই শৈলশিরার উত্তরাংশে কুমিল্লা সেনানিবাসের প্রায় মধ্যস্থলে অবস্থিত। এখানে খননের ফলে এক ক্ষুদ্র হিন্দু পীঠস্থান বা মন্দিরের (৪৫.৭ মি × ১৬.৮ মি) অস্তিত্ব উদ্ঘাটিত হয়েছে। | '''চারপত্র মুড়া''' ময়নামতীর একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্থল। এটি লালমাই শৈলশিরার উত্তরাংশে কুমিল্লা সেনানিবাসের প্রায় মধ্যস্থলে অবস্থিত। এখানে খননের ফলে এক ক্ষুদ্র হিন্দু পীঠস্থান বা মন্দিরের (৪৫.৭ মি × ১৬.৮ মি) অস্তিত্ব উদ্ঘাটিত হয়েছে। | ||
[[Image:CharpartraMuraMainamoti.jpg|thumb|200px|right|চারপত্র মুড়া, ময়নামতী]] | |||
পরিকল্পনা, আকৃতি, স্থাপত্য ডিজাইন ও অলঙ্করণের দিক থেকে এ মন্দির এক নতুন ধরনের স্থাপত্যকীর্তি। [[ময়নামতী|ময়নামতী]]র বৌদ্ধ স্থাপত্য এবং গুপ্ত আমলের কিংবা অন্য ভারতীয় ধরনের সনাতন হিন্দু [[মন্দির স্থাপত্য|মন্দির স্থাপত্য]] থেকে এ মন্দিরের স্থাপত্য মূলগতভাবে ভিন্ন। মন্দিরটি পর্যবেক্ষণে মনে হয়, এর স্থাপত্যরীতিকে মিশ্র বাংলা স্থাপত্য রীতি বলা চলে যার বিবর্তনশীল উদ্ভব ঘটেছে ক্রমান্বয়ে স্থানীয় বৌদ্ধ স্থাপত্যের নানা উপাদান ও বৈশিষ্ট্য আত্মস্থ করে। | পরিকল্পনা, আকৃতি, স্থাপত্য ডিজাইন ও অলঙ্করণের দিক থেকে এ মন্দির এক নতুন ধরনের স্থাপত্যকীর্তি। [[ময়নামতী|ময়নামতী]]র বৌদ্ধ স্থাপত্য এবং গুপ্ত আমলের কিংবা অন্য ভারতীয় ধরনের সনাতন হিন্দু [[মন্দির স্থাপত্য|মন্দির স্থাপত্য]] থেকে এ মন্দিরের স্থাপত্য মূলগতভাবে ভিন্ন। মন্দিরটি পর্যবেক্ষণে মনে হয়, এর স্থাপত্যরীতিকে মিশ্র বাংলা স্থাপত্য রীতি বলা চলে যার বিবর্তনশীল উদ্ভব ঘটেছে ক্রমান্বয়ে স্থানীয় বৌদ্ধ স্থাপত্যের নানা উপাদান ও বৈশিষ্ট্য আত্মস্থ করে। | ||
এ মন্দিরের স্পষ্টত দুটি অংশ। একটি খোলা স্তম্ভশ্রেণির সজ্জিত হলঘর। এর সম্মুখভাগ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত। পশ্চিমে পেছনের দিকে রয়েছে মন্দিরের অন্য অংশ বা ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠাকার, যথার্থ অর্থে মন্দিরগৃহ। এ শেষের দিকের অংশটি কম ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষয়প্রাপ্ত যা অপেক্ষাকৃত সযত্নে রক্ষিত ও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর সে কারণেই মন্দিরটি যথাযথভাবে খনন করে বের করা গেছে। এ মন্দির কক্ষের বহির্ভাগে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর, জটিল ও বিচিত্র আকৃতির নকশি কাজ লক্ষ করা যায়। নকশিকাজগুলি করা হয়েছে প্রচুর জ্যামিতিক কোণ ও কোণার সমন্বয়ে যা আকার পেয়েছে প্রতিসম নানা অভিক্ষেপে এবং ভারসাম্য লাভ করেছে পার্শ্ব ও উল্লম্ব সমতলে। | এ মন্দিরের স্পষ্টত দুটি অংশ। একটি খোলা স্তম্ভশ্রেণির সজ্জিত হলঘর। এর সম্মুখভাগ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত। পশ্চিমে পেছনের দিকে রয়েছে মন্দিরের অন্য অংশ বা ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠাকার, যথার্থ অর্থে মন্দিরগৃহ। এ শেষের দিকের অংশটি কম ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষয়প্রাপ্ত যা অপেক্ষাকৃত সযত্নে রক্ষিত ও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর সে কারণেই মন্দিরটি যথাযথভাবে খনন করে বের করা গেছে। এ মন্দির কক্ষের বহির্ভাগে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর, জটিল ও বিচিত্র আকৃতির নকশি কাজ লক্ষ করা যায়। নকশিকাজগুলি করা হয়েছে প্রচুর জ্যামিতিক কোণ ও কোণার সমন্বয়ে যা আকার পেয়েছে প্রতিসম নানা অভিক্ষেপে এবং ভারসাম্য লাভ করেছে পার্শ্ব ও উল্লম্ব সমতলে। | ||
তারপরেও গোটা মূল কাঠামো ও ঐতিহ্যিক নির্মাণ পরিকল্পনার মৌলিক বলিষ্ঠতা ও অনুপাতের সাথে বিচিত্র শিল্পসুষমার বিকাশে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষিত হয়েছে। মোট কথা, এ সবের সামগ্রিক প্রকাশ অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। | তারপরেও গোটা মূল কাঠামো ও ঐতিহ্যিক নির্মাণ পরিকল্পনার মৌলিক বলিষ্ঠতা ও অনুপাতের সাথে বিচিত্র শিল্পসুষমার বিকাশে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষিত হয়েছে। মোট কথা, এ সবের সামগ্রিক প্রকাশ অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। |
১০:২৫, ২৩ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
চারপত্র মুড়া ময়নামতীর একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্থল। এটি লালমাই শৈলশিরার উত্তরাংশে কুমিল্লা সেনানিবাসের প্রায় মধ্যস্থলে অবস্থিত। এখানে খননের ফলে এক ক্ষুদ্র হিন্দু পীঠস্থান বা মন্দিরের (৪৫.৭ মি × ১৬.৮ মি) অস্তিত্ব উদ্ঘাটিত হয়েছে।
পরিকল্পনা, আকৃতি, স্থাপত্য ডিজাইন ও অলঙ্করণের দিক থেকে এ মন্দির এক নতুন ধরনের স্থাপত্যকীর্তি। ময়নামতীর বৌদ্ধ স্থাপত্য এবং গুপ্ত আমলের কিংবা অন্য ভারতীয় ধরনের সনাতন হিন্দু মন্দির স্থাপত্য থেকে এ মন্দিরের স্থাপত্য মূলগতভাবে ভিন্ন। মন্দিরটি পর্যবেক্ষণে মনে হয়, এর স্থাপত্যরীতিকে মিশ্র বাংলা স্থাপত্য রীতি বলা চলে যার বিবর্তনশীল উদ্ভব ঘটেছে ক্রমান্বয়ে স্থানীয় বৌদ্ধ স্থাপত্যের নানা উপাদান ও বৈশিষ্ট্য আত্মস্থ করে।
এ মন্দিরের স্পষ্টত দুটি অংশ। একটি খোলা স্তম্ভশ্রেণির সজ্জিত হলঘর। এর সম্মুখভাগ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত। পশ্চিমে পেছনের দিকে রয়েছে মন্দিরের অন্য অংশ বা ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠাকার, যথার্থ অর্থে মন্দিরগৃহ। এ শেষের দিকের অংশটি কম ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষয়প্রাপ্ত যা অপেক্ষাকৃত সযত্নে রক্ষিত ও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর সে কারণেই মন্দিরটি যথাযথভাবে খনন করে বের করা গেছে। এ মন্দির কক্ষের বহির্ভাগে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর, জটিল ও বিচিত্র আকৃতির নকশি কাজ লক্ষ করা যায়। নকশিকাজগুলি করা হয়েছে প্রচুর জ্যামিতিক কোণ ও কোণার সমন্বয়ে যা আকার পেয়েছে প্রতিসম নানা অভিক্ষেপে এবং ভারসাম্য লাভ করেছে পার্শ্ব ও উল্লম্ব সমতলে।
তারপরেও গোটা মূল কাঠামো ও ঐতিহ্যিক নির্মাণ পরিকল্পনার মৌলিক বলিষ্ঠতা ও অনুপাতের সাথে বিচিত্র শিল্পসুষমার বিকাশে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষিত হয়েছে। মোট কথা, এ সবের সামগ্রিক প্রকাশ অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন।
এ সৌধ থেকে খুবই অল্পসংখ্যক অথচ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে, একটি ব্রোঞ্জনির্মিত অলঙ্কৃত শবাধার/রত্নপাত্র (casket), চারটি তাম্রশাসন মঞ্জুরি। এসব তাম্রশাসনের তিনটি প্রদান করেন চন্দ্র রাজবংশের শেষ দুই রাজা ও চতুর্থটির দাতা পরের দিকের দেববংশীয় কোনো রাজা। তাঁরা সবাই এসব দানপত্র দিয়েছেন দেবপর্বতে অবস্থিত লড়হ মাধব (বিষ্ণু) মন্দিরের অনুকূলে। একটি দলিলে স্থানটির নাম পট্টিকেরা হিসেবে উল্লিখিত রয়েছে। আমাদের বর্তমান জ্ঞান ও তথ্যের ভিত্তিতে সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, এ নতুন লোকালয়টি লালমাই-ময়নামতী এলাকাতেই পুরনো দেবপর্বত নগরীর একাংশ জুড়ে অবস্থিত ছিল। আর ওই তাম্রশাসনে উল্লিখিত লড়হমাধব মন্দিরটিকে যুক্তিসঙ্গতভাবেই খননের ফলে উদ্ঘাটিত চারপত্র মুড়া মন্দির বলেই শনাক্ত করা যায়। চন্দ্রবংশীয় রাজা শ্রী লড়হচন্দ্র (আনু. ১০০০-১০২০ খ্রি.) মন্দিরটির নির্মাতা না হয়ে থাকলেও অন্তত তিনি এটির সংস্কারসাধন করেন। যে দেবতার নামে মন্দিরটি উৎসর্গীকৃত সে দেবতার নামানুসারে রাজার নাম রাখা হয়। অথবা যে রাজা এ দেবালয় প্রতিষ্ঠা করেন সে পরম ভক্ত রাজার নামানুসারেই এটির নামকরণ করা হয়। রাজা লড়হচন্দ্র এ দেবতার বিশেষ ভক্ত ছিলেন বলেই মনে হয়। এ রাজাই এখানে প্রাপ্ত চার তাম্রশাসনের দুটি মঞ্জুর করেন। আর চারপত্র মুড়া নামটিও এখানে চার তাম্রশাসন প্রাপ্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। [এম. হারুনুর রশিদ]