গুহঠাকুরতা, জ্যোতির্ময়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:GuhathakurtaJyotirmoy.jpg|thumb|right|জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা]] | |||
'''গুহঠাকুরতা, জ্যোতির্ময়''' (১৯২০-১৯৭১) শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী। ১৯২০ সালের ১০ জুলাই [[ময়মনসিংহ জেলা|ময়মনসিংহ]] শহরের বড়বাসায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বরিশালের বানারীপাড়ায়। তাঁর পিতা কুমুদচন্দ্র গুহঠাকুরতা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। জ্যোতির্ময় ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি ১৯৩৬ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আইএসসি শ্রেণিতে একবছর অধ্যয়ন করেন। কিন্তু টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তিনি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। পরে তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩৯ সালে আইএ পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ (১৯৪২) এবং এম.এ (১৯৪৩) ডিগ্রি লাভ করেন। | '''গুহঠাকুরতা, জ্যোতির্ময়''' (১৯২০-১৯৭১) শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী। ১৯২০ সালের ১০ জুলাই [[ময়মনসিংহ জেলা|ময়মনসিংহ]] শহরের বড়বাসায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বরিশালের বানারীপাড়ায়। তাঁর পিতা কুমুদচন্দ্র গুহঠাকুরতা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। জ্যোতির্ময় ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি ১৯৩৬ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আইএসসি শ্রেণিতে একবছর অধ্যয়ন করেন। কিন্তু টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তিনি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। পরে তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩৯ সালে আইএ পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ (১৯৪২) এবং এম.এ (১৯৪৩) ডিগ্রি লাভ করেন। | ||
অধ্যয়ন শেষ হতেই জ্যোতির্ময় কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখান থেকে ওই বছরই তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে চলে আসেন এবং ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত এখানে চাকরি করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ষাটের দশকে তিনি উচ্চতর গবেষণার জন্য ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডন যান এবং ১৯৬৭ সালে ‘Classical Myths in Plays of Swinburne, Bridges, Sturge Moore and Eliot’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে কিংস কলেজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছর কর্মস্থলে যোগদান করে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন এবং আমৃত্যু এ বিভাগেই কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক (১৯৫৮-৬৩) এবং প্রভোস্টের (২০ এপ্রিল ১৯৭০ থেকে) দায়িত্ব পালন করেন। | অধ্যয়ন শেষ হতেই জ্যোতির্ময় কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখান থেকে ওই বছরই তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে চলে আসেন এবং ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত এখানে চাকরি করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ষাটের দশকে তিনি উচ্চতর গবেষণার জন্য ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডন যান এবং ১৯৬৭ সালে ‘Classical Myths in Plays of Swinburne, Bridges, Sturge Moore and Eliot’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে কিংস কলেজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছর কর্মস্থলে যোগদান করে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন এবং আমৃত্যু এ বিভাগেই কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক (১৯৫৮-৬৩) এবং প্রভোস্টের (২০ এপ্রিল ১৯৭০ থেকে) দায়িত্ব পালন করেন। | ||
জ্যোতির্ময় ছিলেন যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী। তিনি ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণায় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের (এমএনরায়/১৮৮৭-১৯৫৪) র্যাডিক্যাল হিউম্যানিজমে বিশ্বাস করতেন। তাঁর রচনাবলিতে এর প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল র্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা সেন্টার অব দি ইন্টারন্যাশনাল কুয়াকারস সার্ভিসেস এবং বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর সদস্য ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি দেরাদুনে অনুষ্ঠিত অল-ইন্ডিয়া হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভা এবং ১৯৬৪ সালে হেগ-এ অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড ইথিক্যাল ইউনিয়নের সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি সাহিত্য, রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় অনেক মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভটি [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। | জ্যোতির্ময় ছিলেন যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী। তিনি ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণায় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের (এমএনরায়/১৮৮৭-১৯৫৪) র্যাডিক্যাল হিউম্যানিজমে বিশ্বাস করতেন। তাঁর রচনাবলিতে এর প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল র্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা সেন্টার অব দি ইন্টারন্যাশনাল কুয়াকারস সার্ভিসেস এবং বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর সদস্য ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি দেরাদুনে অনুষ্ঠিত অল-ইন্ডিয়া হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভা এবং ১৯৬৪ সালে হেগ-এ অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড ইথিক্যাল ইউনিয়নের সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি সাহিত্য, রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় অনেক মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভটি [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। |
০৭:০৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
গুহঠাকুরতা, জ্যোতির্ময় (১৯২০-১৯৭১) শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী। ১৯২০ সালের ১০ জুলাই ময়মনসিংহ শহরের বড়বাসায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বরিশালের বানারীপাড়ায়। তাঁর পিতা কুমুদচন্দ্র গুহঠাকুরতা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। জ্যোতির্ময় ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি ১৯৩৬ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আইএসসি শ্রেণিতে একবছর অধ্যয়ন করেন। কিন্তু টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তিনি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। পরে তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩৯ সালে আইএ পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ (১৯৪২) এবং এম.এ (১৯৪৩) ডিগ্রি লাভ করেন।
অধ্যয়ন শেষ হতেই জ্যোতির্ময় কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখান থেকে ওই বছরই তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে চলে আসেন এবং ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত এখানে চাকরি করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ষাটের দশকে তিনি উচ্চতর গবেষণার জন্য ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডন যান এবং ১৯৬৭ সালে ‘Classical Myths in Plays of Swinburne, Bridges, Sturge Moore and Eliot’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে কিংস কলেজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছর কর্মস্থলে যোগদান করে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন এবং আমৃত্যু এ বিভাগেই কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক (১৯৫৮-৬৩) এবং প্রভোস্টের (২০ এপ্রিল ১৯৭০ থেকে) দায়িত্ব পালন করেন।
জ্যোতির্ময় ছিলেন যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী। তিনি ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণায় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের (এমএনরায়/১৮৮৭-১৯৫৪) র্যাডিক্যাল হিউম্যানিজমে বিশ্বাস করতেন। তাঁর রচনাবলিতে এর প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল র্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা সেন্টার অব দি ইন্টারন্যাশনাল কুয়াকারস সার্ভিসেস এবং বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর সদস্য ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি দেরাদুনে অনুষ্ঠিত অল-ইন্ডিয়া হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভা এবং ১৯৬৪ সালে হেগ-এ অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড ইথিক্যাল ইউনিয়নের সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি সাহিত্য, রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় অনেক মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
জ্যোতির্ময় ছিলেন বিচিত্র বিষয়ে উৎসাহী একজন সংস্কৃতিবান মানুষ। দেশের যেকোনো প্রগতিশীল আন্দোলন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তাঁর ঘনিষ্ঠ সংশ্লিষ্টতা ছিল। এ কারণে তিনি সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [কায়সার হক]