রহমান, খান আতাউর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''রহমান, খান আতাউর''' (১৯২৮-১৯৯৭) গায়ক, গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক। জন্ম ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার রামকান্তপুর গ্রামে। স্থানীয় দুটি স্কুলে পড়াশুনা করার পর তিনি ঢাকায় এসে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুল থেকেই ১৯৪৩ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। [[ঢাকা কলেজ|ঢাকা কলেজ]] থেকে ১৯৪৬ সালে তিনি আই.এসসি পাস করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। চিকিৎসা শাস্ত্র পাঠে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তিনি ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এসসি-তে ভর্তি হন। | '''রহমান, খান আতাউর''' (১৯২৮-১৯৯৭) গায়ক, গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক। জন্ম ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার রামকান্তপুর গ্রামে। স্থানীয় দুটি স্কুলে পড়াশুনা করার পর তিনি ঢাকায় এসে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুল থেকেই ১৯৪৩ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। [[ঢাকা কলেজ|ঢাকা কলেজ]] থেকে ১৯৪৬ সালে তিনি আই.এসসি পাস করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। চিকিৎসা শাস্ত্র পাঠে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তিনি ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এসসি-তে ভর্তি হন। | ||
[[Image:RahmanKhanAtaur.jpg|thumb|right|400px|খান আতাউর রহমান]] | |||
বি.এসসি পরীক্ষা না দিয়েই তিনি ১৯৫০ সালে চাকরি নেন করাচির রেডিও পাকিস্তানে। এ সময় খ্যাতনামা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ জহুরী খানের সংস্পর্শে এসে খান আতা সঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে চাকরি ত্যাগ করে তিনি লন্ডন গমন করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ভর্তি হন সিটি লিটারারি ইনস্টিটিউটের নাট্যকলা বিভাগে। একই বছর তিনি পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। খান আতাউর রহমান ইউনেস্কোর বৃত্তি নিয়ে ১৯৫৪ সালে এক শিক্ষা সফরে হল্যান্ড গমন করেন। পুনরায় লন্ডন প্রত্যাবর্তন করে তিনি একটি কলেজে অঙ্ক ও ইংরেজির শিক্ষক নিযুক্ত হন। শিক্ষকতার পাশাপশি খান আতা বিভিন্ন থিয়েটার কোম্পানিতে প্রায় দু বছর কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। সে বছরই এ.জে কারদারের জাগো হুয়া সাভেরা ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রের বিপরীতে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। | বি.এসসি পরীক্ষা না দিয়েই তিনি ১৯৫০ সালে চাকরি নেন করাচির রেডিও পাকিস্তানে। এ সময় খ্যাতনামা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ জহুরী খানের সংস্পর্শে এসে খান আতা সঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে চাকরি ত্যাগ করে তিনি লন্ডন গমন করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ভর্তি হন সিটি লিটারারি ইনস্টিটিউটের নাট্যকলা বিভাগে। একই বছর তিনি পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। খান আতাউর রহমান ইউনেস্কোর বৃত্তি নিয়ে ১৯৫৪ সালে এক শিক্ষা সফরে হল্যান্ড গমন করেন। পুনরায় লন্ডন প্রত্যাবর্তন করে তিনি একটি কলেজে অঙ্ক ও ইংরেজির শিক্ষক নিযুক্ত হন। শিক্ষকতার পাশাপশি খান আতা বিভিন্ন থিয়েটার কোম্পানিতে প্রায় দু বছর কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। সে বছরই এ.জে কারদারের জাগো হুয়া সাভেরা ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রের বিপরীতে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। | ||
খান আতাউর রহমান ছিলেন সুগায়ক ও গীতিকার। তাঁর রচিত ও সুরারোপিত প্রায় পাঁচ শতাধিক আধুনিক, দেশাত্মবোধক, শিশু সঙ্গীত ও বিষয়ভিত্তিক গান আজও সমান জনপ্রিয় ও আবেদনগ্রাহী। বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতে তাঁর ভূমিকা নানামুখী। তিনি গানের বাণীতে এনেছেন আধুনিকতা ও সুরের বিচিত্র নিরীক্ষা, বিশেষত দেশাত্মবোধক সঙ্গীতে তাঁর সুরসৃষ্টির ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। খান আতাউর রহমান একটি বিশেষ গায়কী ঢং প্রবর্তন করেন যা তাঁর ব্যক্তিত্বেরই প্রকাশক। | খান আতাউর রহমান ছিলেন সুগায়ক ও গীতিকার। তাঁর রচিত ও সুরারোপিত প্রায় পাঁচ শতাধিক আধুনিক, দেশাত্মবোধক, শিশু সঙ্গীত ও বিষয়ভিত্তিক গান আজও সমান জনপ্রিয় ও আবেদনগ্রাহী। বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতে তাঁর ভূমিকা নানামুখী। তিনি গানের বাণীতে এনেছেন আধুনিকতা ও সুরের বিচিত্র নিরীক্ষা, বিশেষত দেশাত্মবোধক সঙ্গীতে তাঁর সুরসৃষ্টির ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। খান আতাউর রহমান একটি বিশেষ গায়কী ঢং প্রবর্তন করেন যা তাঁর ব্যক্তিত্বেরই প্রকাশক। |
০৮:৪১, ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
রহমান, খান আতাউর (১৯২৮-১৯৯৭) গায়ক, গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক। জন্ম ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার রামকান্তপুর গ্রামে। স্থানীয় দুটি স্কুলে পড়াশুনা করার পর তিনি ঢাকায় এসে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুল থেকেই ১৯৪৩ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে তিনি আই.এসসি পাস করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। চিকিৎসা শাস্ত্র পাঠে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তিনি ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এসসি-তে ভর্তি হন।
বি.এসসি পরীক্ষা না দিয়েই তিনি ১৯৫০ সালে চাকরি নেন করাচির রেডিও পাকিস্তানে। এ সময় খ্যাতনামা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ জহুরী খানের সংস্পর্শে এসে খান আতা সঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে চাকরি ত্যাগ করে তিনি লন্ডন গমন করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ভর্তি হন সিটি লিটারারি ইনস্টিটিউটের নাট্যকলা বিভাগে। একই বছর তিনি পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। খান আতাউর রহমান ইউনেস্কোর বৃত্তি নিয়ে ১৯৫৪ সালে এক শিক্ষা সফরে হল্যান্ড গমন করেন। পুনরায় লন্ডন প্রত্যাবর্তন করে তিনি একটি কলেজে অঙ্ক ও ইংরেজির শিক্ষক নিযুক্ত হন। শিক্ষকতার পাশাপশি খান আতা বিভিন্ন থিয়েটার কোম্পানিতে প্রায় দু বছর কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। সে বছরই এ.জে কারদারের জাগো হুয়া সাভেরা ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রের বিপরীতে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
খান আতাউর রহমান ছিলেন সুগায়ক ও গীতিকার। তাঁর রচিত ও সুরারোপিত প্রায় পাঁচ শতাধিক আধুনিক, দেশাত্মবোধক, শিশু সঙ্গীত ও বিষয়ভিত্তিক গান আজও সমান জনপ্রিয় ও আবেদনগ্রাহী। বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতে তাঁর ভূমিকা নানামুখী। তিনি গানের বাণীতে এনেছেন আধুনিকতা ও সুরের বিচিত্র নিরীক্ষা, বিশেষত দেশাত্মবোধক সঙ্গীতে তাঁর সুরসৃষ্টির ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। খান আতাউর রহমান একটি বিশেষ গায়কী ঢং প্রবর্তন করেন যা তাঁর ব্যক্তিত্বেরই প্রকাশক।
খান আতাউর রহমান নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম অনেক দিনের চেনা (১৯৬৩)। এরপর তিনি রাজা সন্ন্যাসী, সিরাজউদ্দৌলা, সোয়ে নদীয়া জাগে পানি, সাত ভাই চম্পা, অরুণ বরুণ কিরণমালা, জোয়ার ভাঁটা, আবার তোরা মানুষ হ, সুজন সখী, দিন যায় কথা থাকে, আরশী নগর, পরশ পাথর, এখনও অনেক রাত প্রভৃতি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেন। এ ছাড়া ডানপিটে ছেলে, দুটি পাতা একটি কুঁড়ি, গঙ্গা আমার গঙ্গা, বাংলা কবি জসীমউদ্দীন, চা বাগানের রোজনামচা ও গানের পাখি আববাসউদ্দীন ইত্যাদি স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। নিজের ছবি ছাড়া অন্য বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে তিনি সঙ্গীত পরিচালক, কেন্দ্রীয় চরিত্র ও অভিনেতা হিসেবে কুশলতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে অবদানের জন্য খান আতাউর রহমান নয়টি পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, নিগার পুরস্কার, মস্কো ও তাসখন্দ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৯৭ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [আইউব হোসেন]