হায়দার, লে. কর্নেল এ.টি.এম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''হায়দার, লে কর্নেল এ.টি.এম''' (১৯৪২-১৯৭৫) সামরিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার। ১৯৪২ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার ভবানীপুরে তাঁর জন্ম। পিতা মোহাম্মদ ইসরাইল ছিলেন পুলিশ অফিসার। পরবর্তী সময়ে তিনি কিশোরগঞ্জ আদালতে আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত হন। তাঁর মা ছিলেন হাকিমুন নেসা। | '''হায়দার, লে কর্নেল এ.টি.এম''' (১৯৪২-১৯৭৫) সামরিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার। ১৯৪২ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার ভবানীপুরে তাঁর জন্ম। পিতা মোহাম্মদ ইসরাইল ছিলেন পুলিশ অফিসার। পরবর্তী সময়ে তিনি কিশোরগঞ্জ আদালতে আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত হন। তাঁর মা ছিলেন হাকিমুন নেসা। | ||
[[Image:HaiderLtColoneAT.jpg|thumb|right|লে. কর্নেল এ.টি.এম হায়দার]] | |||
এ.টি.এম হায়দার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পাবনা জেলার বীণাপানি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ১৯৫৮ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের রামানন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৬১ সালে কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে আই.এস-সি পাস করেন। ১৯৬৫ সালে লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি বি.এস-সি ডিগ্রি লাভ করেন। | এ.টি.এম হায়দার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পাবনা জেলার বীণাপানি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ১৯৫৮ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের রামানন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৬১ সালে কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে আই.এস-সি পাস করেন। ১৯৬৫ সালে লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি বি.এস-সি ডিগ্রি লাভ করেন। | ||
এ.টি.এম হায়দার ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে এম.এস.সি প্রথম পর্ব শেষ করার পর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তিনি কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আর্টিলারি ফোর্সে অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি পাকিস্তানের চেরাটে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এস.এস.জি)-বিষয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণ লাভ করেন। পরে তিনি মুলতান ক্যান্টনমেন্টে যোগ দেন এবং ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত থাকেন। ১৯৭০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এ.টি.এম হায়দার ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন এবং কুমিল্লা সেনানিবাসে তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ঢাকায় বদলি হন এবং এর কিছুদিন পরই পুনরায় কুমিল্লা সেনানিবাসে বদলি হন। | এ.টি.এম হায়দার ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে এম.এস.সি প্রথম পর্ব শেষ করার পর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তিনি কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আর্টিলারি ফোর্সে অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি পাকিস্তানের চেরাটে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এস.এস.জি)-বিষয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণ লাভ করেন। পরে তিনি মুলতান ক্যান্টনমেন্টে যোগ দেন এবং ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত থাকেন। ১৯৭০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এ.টি.এম হায়দার ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন এবং কুমিল্লা সেনানিবাসে তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ঢাকায় বদলি হন এবং এর কিছুদিন পরই পুনরায় কুমিল্লা সেনানিবাসে বদলি হন। | ||
এ.টি.এম হায়দার ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখান থেকে তিনি তেলিয়াপাড়া যান এবং কিছু সংখ্যক সৈন্যসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তিনি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কসহ মুসল্লী রেলওয়ে সেতু বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেন। এরপর তিনি মেলাঘরে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের অধীনে সেকেন্ড কমান্ডার নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন হায়দার মেলাঘরে একটি স্টুডেন্ট কোম্পানি গঠন করেন এবং গেরিলাদের কমান্ডো ও বিস্ফোরক বিষয়ক প্রশিক্ষণ দানের দায়িত্ব পালন করেন। | এ.টি.এম হায়দার ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখান থেকে তিনি তেলিয়াপাড়া যান এবং কিছু সংখ্যক সৈন্যসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তিনি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কসহ মুসল্লী রেলওয়ে সেতু বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেন। এরপর তিনি মেলাঘরে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের অধীনে সেকেন্ড কমান্ডার নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন হায়দার মেলাঘরে একটি স্টুডেন্ট কোম্পানি গঠন করেন এবং গেরিলাদের কমান্ডো ও বিস্ফোরক বিষয়ক প্রশিক্ষণ দানের দায়িত্ব পালন করেন। |
০৬:৫২, ২৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
হায়দার, লে কর্নেল এ.টি.এম (১৯৪২-১৯৭৫) সামরিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার। ১৯৪২ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার ভবানীপুরে তাঁর জন্ম। পিতা মোহাম্মদ ইসরাইল ছিলেন পুলিশ অফিসার। পরবর্তী সময়ে তিনি কিশোরগঞ্জ আদালতে আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত হন। তাঁর মা ছিলেন হাকিমুন নেসা।
এ.টি.এম হায়দার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পাবনা জেলার বীণাপানি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ১৯৫৮ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের রামানন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৬১ সালে কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে আই.এস-সি পাস করেন। ১৯৬৫ সালে লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি বি.এস-সি ডিগ্রি লাভ করেন।
এ.টি.এম হায়দার ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে এম.এস.সি প্রথম পর্ব শেষ করার পর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তিনি কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আর্টিলারি ফোর্সে অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি পাকিস্তানের চেরাটে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এস.এস.জি)-বিষয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণ লাভ করেন। পরে তিনি মুলতান ক্যান্টনমেন্টে যোগ দেন এবং ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত থাকেন। ১৯৭০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এ.টি.এম হায়দার ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন এবং কুমিল্লা সেনানিবাসে তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ঢাকায় বদলি হন এবং এর কিছুদিন পরই পুনরায় কুমিল্লা সেনানিবাসে বদলি হন।
এ.টি.এম হায়দার ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখান থেকে তিনি তেলিয়াপাড়া যান এবং কিছু সংখ্যক সৈন্যসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তিনি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কসহ মুসল্লী রেলওয়ে সেতু বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেন। এরপর তিনি মেলাঘরে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের অধীনে সেকেন্ড কমান্ডার নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন হায়দার মেলাঘরে একটি স্টুডেন্ট কোম্পানি গঠন করেন এবং গেরিলাদের কমান্ডো ও বিস্ফোরক বিষয়ক প্রশিক্ষণ দানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে কে-ফোর্স গঠিত হলে ক্যাপ্টেন হায়দার কমান্ডিং অফিসার নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকবাহিনীর আত্নসমর্পণের সময় উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে ১৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠিত হলে এ.টি.এম হায়দার এর অধিনায়ক নিযুক্ত হন এবং মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি লে. কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ২১ অক্টোবর তিনি রুমা সেনানিবাসে বদলি হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর ঢাকা সেনানিবাসে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। ৩ নভেম্বর হায়দার পারিবারিক সমস্যার কারণে ঢাকা আসেন এবং খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের সঙ্গে লে. কর্নেল এ.টি.এম হায়দার নিহত হন। তাঁর মৃতদেহ ১১ নভেম্বর উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ.টি.এম হায়দার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন। [লিলীমা আহমেদ]