হক, সৈয়দ আজিজুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''হক, সৈয়দ আজিজুল '''(১৯১২-১৯৯২) আইনজীবী, রাজনীতিক। জন্ম ১৯১২ সালের ১ অক্টোবর বরিশাল জেলার বানরীপাড়া থানার চাখার গ্রামে। পিতা সৈয়দ মোতাহার হোসেন এবং মাতা সৈয়দা আফতাবুন্নেছা খাতুন। সৈয়দ আজিজুূল হকের ডাকনাম নান্না মিঞা। তিনি খলিশাকোঠা স্কুল থেকে ১৯২৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, বরিশাল বি.এম কলেজ থেকে আই এস-সি এবং কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে বি.এ পাস করেন। | '''হক, সৈয়দ আজিজুল''' (১৯১২-১৯৯২) আইনজীবী, রাজনীতিক। জন্ম ১৯১২ সালের ১ অক্টোবর বরিশাল জেলার বানরীপাড়া থানার চাখার গ্রামে। পিতা সৈয়দ মোতাহার হোসেন এবং মাতা সৈয়দা আফতাবুন্নেছা খাতুন। সৈয়দ আজিজুূল হকের ডাকনাম নান্না মিঞা। তিনি খলিশাকোঠা স্কুল থেকে ১৯২৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, বরিশাল বি.এম কলেজ থেকে আই এস-সি এবং কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে বি.এ পাস করেন। | ||
আজিজুল হক প্রথমে কলকাতা করপোরেশনে কিছুকাল চাকরি করেন। এরপর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক মন্ত্রী হলে তাঁর পি.এ হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়ামে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর পদে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। এ সময় তিনি বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে ঐচ্ছিক অবসর নিয়ে ঢাকায় এসে আইন ব্যবসা শুরু করেন। | [[Image:HaqueSyed%20Azizul.jpg|thumb|right|সৈয়দ আজিজুল হক]] | ||
আজিজুল হক প্রথমে কলকাতা করপোরেশনে কিছুকাল চাকরি করেন। এরপর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক মন্ত্রী হলে তাঁর পি.এ হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়ামে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর পদে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। এ সময় তিনি বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে ঐচ্ছিক অবসর নিয়ে ঢাকায় এসে আইন ব্যবসা শুরু করেন। | |||
ছাত্রজীবনেই সৈয়দ আজিজুল হক ছিলেন বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের একজন। পরে তিনি এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে বঙ্গীয় প্রজা সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি কৃষক-প্রজা পার্টিতে কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বরিশালের ঝালকাঠি-উজিরপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং শেরে বাংলার মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ১৯৫৫ সালে তিনি আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। সৈয়দ আজিজুল হক গণপরিষদের মনোনীত সদস্য হিসেবে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেন। | ছাত্রজীবনেই সৈয়দ আজিজুল হক ছিলেন বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের একজন। পরে তিনি এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে বঙ্গীয় প্রজা সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি কৃষক-প্রজা পার্টিতে কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বরিশালের ঝালকাঠি-উজিরপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং শেরে বাংলার মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ১৯৫৫ সালে তিনি আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। সৈয়দ আজিজুল হক গণপরিষদের মনোনীত সদস্য হিসেবে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেন। | ||
সৈয়দ আজিজুল হক ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসন বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রথম যে নয় নেতার বিবৃতি প্রকাশিত হয় তার অন্যতম ছিলেন তিনি। এর পরে তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এবং পরবর্তী পর্যায়ে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন। এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৭০ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহাপ্লাবনের পর তাঁর দলসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সৈয়দ আজিজুল হক তাঁর পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকাতেই অবস্থান করেন। এ সময় তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। | সৈয়দ আজিজুল হক ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসন বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রথম যে নয় নেতার বিবৃতি প্রকাশিত হয় তার অন্যতম ছিলেন তিনি। এর পরে তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এবং পরবর্তী পর্যায়ে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন। এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৭০ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহাপ্লাবনের পর তাঁর দলসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সৈয়দ আজিজুল হক তাঁর পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকাতেই অবস্থান করেন। এ সময় তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। | ||
সৈয়দ আজিজুল হক ১৯৭৫ সালের পর পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-২ আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি চার মেয়াদে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম, রহমতে আলম ইসলাম মিশনসহ কয়েকটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। ১৯৪০ সালে চাখার একে ফজলুল হক কলেজ এবং ১৯৫৬ সালে ঢাকায় সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান ছিল। বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার হাবিবপুরে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয় সৈয়দ আজিজুল হক কলেজ। ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [সৈয়দ মাঈনুল হক] | সৈয়দ আজিজুল হক ১৯৭৫ সালের পর পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-২ আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি চার মেয়াদে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম, রহমতে আলম ইসলাম মিশনসহ কয়েকটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। ১৯৪০ সালে চাখার একে ফজলুল হক কলেজ এবং ১৯৫৬ সালে ঢাকায় সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান ছিল। বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার হাবিবপুরে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয় সৈয়দ আজিজুল হক কলেজ। ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [সৈয়দ মাঈনুল হক] | ||
[[en:Huq, Syed Azizul]] | [[en:Huq, Syed Azizul]] |
০৮:৫৭, ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
হক, সৈয়দ আজিজুল (১৯১২-১৯৯২) আইনজীবী, রাজনীতিক। জন্ম ১৯১২ সালের ১ অক্টোবর বরিশাল জেলার বানরীপাড়া থানার চাখার গ্রামে। পিতা সৈয়দ মোতাহার হোসেন এবং মাতা সৈয়দা আফতাবুন্নেছা খাতুন। সৈয়দ আজিজুূল হকের ডাকনাম নান্না মিঞা। তিনি খলিশাকোঠা স্কুল থেকে ১৯২৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, বরিশাল বি.এম কলেজ থেকে আই এস-সি এবং কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে বি.এ পাস করেন।
আজিজুল হক প্রথমে কলকাতা করপোরেশনে কিছুকাল চাকরি করেন। এরপর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক মন্ত্রী হলে তাঁর পি.এ হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়ামে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর পদে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। এ সময় তিনি বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে ঐচ্ছিক অবসর নিয়ে ঢাকায় এসে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
ছাত্রজীবনেই সৈয়দ আজিজুল হক ছিলেন বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের একজন। পরে তিনি এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে বঙ্গীয় প্রজা সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি কৃষক-প্রজা পার্টিতে কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বরিশালের ঝালকাঠি-উজিরপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং শেরে বাংলার মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ১৯৫৫ সালে তিনি আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। সৈয়দ আজিজুল হক গণপরিষদের মনোনীত সদস্য হিসেবে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেন।
সৈয়দ আজিজুল হক ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসন বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রথম যে নয় নেতার বিবৃতি প্রকাশিত হয় তার অন্যতম ছিলেন তিনি। এর পরে তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এবং পরবর্তী পর্যায়ে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন। এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৭০ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহাপ্লাবনের পর তাঁর দলসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সৈয়দ আজিজুল হক তাঁর পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকাতেই অবস্থান করেন। এ সময় তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন।
সৈয়দ আজিজুল হক ১৯৭৫ সালের পর পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-২ আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি চার মেয়াদে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম, রহমতে আলম ইসলাম মিশনসহ কয়েকটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। ১৯৪০ সালে চাখার একে ফজলুল হক কলেজ এবং ১৯৫৬ সালে ঢাকায় সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান ছিল। বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার হাবিবপুরে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয় সৈয়দ আজিজুল হক কলেজ। ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [সৈয়দ মাঈনুল হক]