সুন্দরী গাছ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''সুন্দরী গাছ''' দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহে অবস্থিত সুন্দরবনের Sterculiaceae গোত্রের প্রধান প্রজাতি ''Heritiera fomes''। সুন্দরবনের প্রায় ৭০% এই প্রজাতির দখলে। সুন্দরবন নামটি সম্ভবত সুন্দরী থেকেই উদ্ভূত। এটি বনের জোয়ার পাবিত অঞ্চলে এবং কম লবণাক্ত এলাকায় সুঅভিযোজিত। সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে সুন্দরীর আরেকটি প্রজাতি H. littoralis জন্মে। এ গাছগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ মিটার পর্যন্ত, কান্ড সোজা, পাতা ডিম্বাকার, মূলতন্ত্রে আছে শ্বাসমূল ও বদ্ধ শোষকমূল। ফুল ঘণ্টাকৃতি, ক্ষুদ্র, প্রায় ৫ মিমি চওড়া, একলিঙ্গ, কমলা বা গোলাপি রঙের। ফল গুচ্ছাবদ্ধ। | '''সুন্দরী গাছ''' দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহে অবস্থিত সুন্দরবনের Sterculiaceae গোত্রের প্রধান প্রজাতি ''Heritiera fomes''। সুন্দরবনের প্রায় ৭০% এই প্রজাতির দখলে। সুন্দরবন নামটি সম্ভবত সুন্দরী থেকেই উদ্ভূত। এটি বনের জোয়ার পাবিত অঞ্চলে এবং কম লবণাক্ত এলাকায় সুঅভিযোজিত। সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে সুন্দরীর আরেকটি প্রজাতি H. littoralis জন্মে। এ গাছগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ মিটার পর্যন্ত, কান্ড সোজা, পাতা ডিম্বাকার, মূলতন্ত্রে আছে শ্বাসমূল ও বদ্ধ শোষকমূল। ফুল ঘণ্টাকৃতি, ক্ষুদ্র, প্রায় ৫ মিমি চওড়া, একলিঙ্গ, কমলা বা গোলাপি রঙের। ফল গুচ্ছাবদ্ধ। | ||
[[Image:SundriTree.jpg|right|thumbnail|400px|সুন্দরী গাছ ও ফল]] | |||
গাছটি সুন্দরবনের আশেপাশের জেলাসমূহের লোকদের কাঠ যোগায়। কাঠের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২,৫০,০০০ ঘনফুট। কাঠ শক্ত ও লাল, প্রধানত নৌকা, হার্ডবোর্ড, আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহূত হয়। কাঠ থেকে উন্নতমানের কাঠ-কয়লাও পাওয়া যায়। অত্যধিক সংগ্রহ ও আগা-মরা রোগের প্রকোপে সুন্দরী গাছ কমে যাচ্ছে। প্রায় ৫০% গাছ আগা-মরা রোগে আক্রান্ত হয়। লবণাক্ততা বৃদ্ধিও গাছের সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ। [মোস্তফা কামাল পাশা] | গাছটি সুন্দরবনের আশেপাশের জেলাসমূহের লোকদের কাঠ যোগায়। কাঠের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২,৫০,০০০ ঘনফুট। কাঠ শক্ত ও লাল, প্রধানত নৌকা, হার্ডবোর্ড, আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহূত হয়। কাঠ থেকে উন্নতমানের কাঠ-কয়লাও পাওয়া যায়। অত্যধিক সংগ্রহ ও আগা-মরা রোগের প্রকোপে সুন্দরী গাছ কমে যাচ্ছে। প্রায় ৫০% গাছ আগা-মরা রোগে আক্রান্ত হয়। লবণাক্ততা বৃদ্ধিও গাছের সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ। [মোস্তফা কামাল পাশা] | ||
''সুন্দরী গাছের আগা-মরা রোগ'' (Top dying disease of Sundri) এই রোগে আক্রান্ত গাছের কান্ডের শীর্ষভাগে প্রথম রোগের লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় এবং ক্রমান্বয়ে লক্ষণগুলি গাছের নিম্নাংশে দেখা যায়। অন্যান্য গাছের ক্ষেত্রে গাছ মারা যাবার পূর্বে যেমন লক্ষণগুলি দেখতে পাওয়া যায়, আগা-মরা রোগে আক্রান্ত গাছের ক্ষেত্রে তেমন নয় অর্থাৎ মূল কান্ডের আক্রান্ত জায়গার ঠিক নিচের অংশ থেকে নতুন পাতা গজাতে দেখা যায় না। আক্রান্ত গাছকে অন্যান্য স্বাস্থ্যবান গাছ থেকে পৃথক অর্থাৎ পত্রহীন নেড়া অবস্থায় দেখা যায়। এই লক্ষণের সাথে আক্রান্ত কান্ডে গ্রন্থির আকারে প্রায় এক বা একাধিক স্ফিতির সৃষ্টি হয়। ম্যানগ্রোভের সুন্দরী গাছের শতকরা প্রায় ১৮ ভাগ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং এর ফলে এই রোগ অর্থনৈতিক ক্ষতির এক বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিগত দুই দশক ধরে পরিচালিত অনুসন্ধানে এই রোগের সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করা যায় নি। অধিকাংশ গবেষক/পরিবেশবিদ্যাবিদ সম্মিলিতভাবে কতিপয় পরিবেশগত কারণ উলেখ করেছেন যার ফলে সংক্রমণ দেখা যায় এবং অনুজীবের বসবাস ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ সম্ভব হয়। | |||
ওভারসীজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ODA) কর্তৃক পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে যে, সুন্দরবনের ১৪টি বিভক্ত অংশের (compartment) সবগুলি এই রোগ দ্বারা কমবেশি আক্রান্ত। বিভিন্ন প্রকার অনুসন্ধান থেকে ধারণা করা নিম্নে বর্ণিত কারণগুলি আগা-মরা রোগের জন্য দায়ী। মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া এবং উজান থেকে স্বাদুপানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়া, নদী ও খালের তীরবর্তী অংশে পলির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, বনের জমিতে খনিজ পুষ্টিকর পদার্থের হ্রাস, গাছের শীর্ষদেশে কীটপতঙ্গ অথবা ফাংগাসের আক্রমণ অথবা শিকড়ের অংশে অনুজীবের সংক্রমণ। প্রতিবেদনে উলেখ করা হয়েছে যে, নদী, খাল ও জলাশয়ের তীরে আগা-মরা রোগের আক্রমণের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, সুন্দরবনের মোট ৫,৭১,৫০২ হেক্টর ভূমির মধ্যে প্রায় ৬,০০০ হেক্টর ভূমিতে আগা-মরা রোগে আক্রান্ত সুন্দরী গাছ সাবধানতার সঙ্গে কেটে ফেলে ওই সব স্থানে উপযুক্ত জাতের গাছ লাগিয়ে এই রোগের মোকাবেলা করা যায়। [আবুল খায়ের] | ওভারসীজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ODA) কর্তৃক পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে যে, সুন্দরবনের ১৪টি বিভক্ত অংশের (compartment) সবগুলি এই রোগ দ্বারা কমবেশি আক্রান্ত। বিভিন্ন প্রকার অনুসন্ধান থেকে ধারণা করা নিম্নে বর্ণিত কারণগুলি আগা-মরা রোগের জন্য দায়ী। মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া এবং উজান থেকে স্বাদুপানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়া, নদী ও খালের তীরবর্তী অংশে পলির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, বনের জমিতে খনিজ পুষ্টিকর পদার্থের হ্রাস, গাছের শীর্ষদেশে কীটপতঙ্গ অথবা ফাংগাসের আক্রমণ অথবা শিকড়ের অংশে অনুজীবের সংক্রমণ। প্রতিবেদনে উলেখ করা হয়েছে যে, নদী, খাল ও জলাশয়ের তীরে আগা-মরা রোগের আক্রমণের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, সুন্দরবনের মোট ৫,৭১,৫০২ হেক্টর ভূমির মধ্যে প্রায় ৬,০০০ হেক্টর ভূমিতে আগা-মরা রোগে আক্রান্ত সুন্দরী গাছ সাবধানতার সঙ্গে কেটে ফেলে ওই সব স্থানে উপযুক্ত জাতের গাছ লাগিয়ে এই রোগের মোকাবেলা করা যায়। [আবুল খায়ের] |
০৫:৩৩, ২৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
সুন্দরী গাছ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহে অবস্থিত সুন্দরবনের Sterculiaceae গোত্রের প্রধান প্রজাতি Heritiera fomes। সুন্দরবনের প্রায় ৭০% এই প্রজাতির দখলে। সুন্দরবন নামটি সম্ভবত সুন্দরী থেকেই উদ্ভূত। এটি বনের জোয়ার পাবিত অঞ্চলে এবং কম লবণাক্ত এলাকায় সুঅভিযোজিত। সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে সুন্দরীর আরেকটি প্রজাতি H. littoralis জন্মে। এ গাছগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ মিটার পর্যন্ত, কান্ড সোজা, পাতা ডিম্বাকার, মূলতন্ত্রে আছে শ্বাসমূল ও বদ্ধ শোষকমূল। ফুল ঘণ্টাকৃতি, ক্ষুদ্র, প্রায় ৫ মিমি চওড়া, একলিঙ্গ, কমলা বা গোলাপি রঙের। ফল গুচ্ছাবদ্ধ।
গাছটি সুন্দরবনের আশেপাশের জেলাসমূহের লোকদের কাঠ যোগায়। কাঠের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২,৫০,০০০ ঘনফুট। কাঠ শক্ত ও লাল, প্রধানত নৌকা, হার্ডবোর্ড, আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহূত হয়। কাঠ থেকে উন্নতমানের কাঠ-কয়লাও পাওয়া যায়। অত্যধিক সংগ্রহ ও আগা-মরা রোগের প্রকোপে সুন্দরী গাছ কমে যাচ্ছে। প্রায় ৫০% গাছ আগা-মরা রোগে আক্রান্ত হয়। লবণাক্ততা বৃদ্ধিও গাছের সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ। [মোস্তফা কামাল পাশা]
সুন্দরী গাছের আগা-মরা রোগ (Top dying disease of Sundri) এই রোগে আক্রান্ত গাছের কান্ডের শীর্ষভাগে প্রথম রোগের লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় এবং ক্রমান্বয়ে লক্ষণগুলি গাছের নিম্নাংশে দেখা যায়। অন্যান্য গাছের ক্ষেত্রে গাছ মারা যাবার পূর্বে যেমন লক্ষণগুলি দেখতে পাওয়া যায়, আগা-মরা রোগে আক্রান্ত গাছের ক্ষেত্রে তেমন নয় অর্থাৎ মূল কান্ডের আক্রান্ত জায়গার ঠিক নিচের অংশ থেকে নতুন পাতা গজাতে দেখা যায় না। আক্রান্ত গাছকে অন্যান্য স্বাস্থ্যবান গাছ থেকে পৃথক অর্থাৎ পত্রহীন নেড়া অবস্থায় দেখা যায়। এই লক্ষণের সাথে আক্রান্ত কান্ডে গ্রন্থির আকারে প্রায় এক বা একাধিক স্ফিতির সৃষ্টি হয়। ম্যানগ্রোভের সুন্দরী গাছের শতকরা প্রায় ১৮ ভাগ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং এর ফলে এই রোগ অর্থনৈতিক ক্ষতির এক বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিগত দুই দশক ধরে পরিচালিত অনুসন্ধানে এই রোগের সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করা যায় নি। অধিকাংশ গবেষক/পরিবেশবিদ্যাবিদ সম্মিলিতভাবে কতিপয় পরিবেশগত কারণ উলেখ করেছেন যার ফলে সংক্রমণ দেখা যায় এবং অনুজীবের বসবাস ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ সম্ভব হয়।
ওভারসীজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ODA) কর্তৃক পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে যে, সুন্দরবনের ১৪টি বিভক্ত অংশের (compartment) সবগুলি এই রোগ দ্বারা কমবেশি আক্রান্ত। বিভিন্ন প্রকার অনুসন্ধান থেকে ধারণা করা নিম্নে বর্ণিত কারণগুলি আগা-মরা রোগের জন্য দায়ী। মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া এবং উজান থেকে স্বাদুপানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়া, নদী ও খালের তীরবর্তী অংশে পলির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, বনের জমিতে খনিজ পুষ্টিকর পদার্থের হ্রাস, গাছের শীর্ষদেশে কীটপতঙ্গ অথবা ফাংগাসের আক্রমণ অথবা শিকড়ের অংশে অনুজীবের সংক্রমণ। প্রতিবেদনে উলেখ করা হয়েছে যে, নদী, খাল ও জলাশয়ের তীরে আগা-মরা রোগের আক্রমণের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, সুন্দরবনের মোট ৫,৭১,৫০২ হেক্টর ভূমির মধ্যে প্রায় ৬,০০০ হেক্টর ভূমিতে আগা-মরা রোগে আক্রান্ত সুন্দরী গাছ সাবধানতার সঙ্গে কেটে ফেলে ওই সব স্থানে উপযুক্ত জাতের গাছ লাগিয়ে এই রোগের মোকাবেলা করা যায়। [আবুল খায়ের]
আরও দেখুন বন ও বনবিজ্ঞান; সুন্দরবন।