লিখন উপাদান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''লিখন উপাদান''' (Writing Material) | '''লিখন উপাদান''' (Writing Material) লেখার জন্য ব্যবহূত সামগ্রীসমূহ, যেমন- কাগজ, কলম, কালি প্রভৃতি। কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে প্রাচীন মানুষ পাথর, তাম্রপাত্র, তালপাতা, ভূর্জপত্র, কাপড়, পাটের পাল্প কাগজ এবং পার্চমেন্টকে লিখন উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতো। | ||
'''পাথর''' শিলা অথবা মণিকের ছোট খন্ড। মানুষ কখন থেকে পাথরের উপর লিখতে শুরু করে তা নির্ণয় করা কঠিন। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে উদ্ধারকৃত শিলালিপিটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের আমলে লিখিত। ব্রাহ্মী লিপিতে লিখিত এই শিলালিপিটিকে বাংলার সর্বাধিক প্রাচীন শিলালিপি বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন পুরনো মন্দিরগাত্র, পাথরের ভাষ্কর্যের পাদদেশ এবং মন্দিরের প্রবেশপথে প্রোটো-বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় লেখা উৎকীর্ণ থাকতে দেখা যায়। প্রাচীন কিছু কিছু মসজিদের প্রবেশপথে বেলেপাথর ও ব্যাসাল্ট শিলার গায়ে পারস্য ও আরবি ক্যালিগ্রাফি উৎকীর্ণ থাকতে দেখা যায়। মার্বেল পাথরের গায়ে লেখাগুলি আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। উদ্ধারকৃত বেশকিছু শিলালিপি বাংলাদেশের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রাচীন শিলালিপিগুলিতে দুই ধরনের লিখন পদ্ধতি দেখতে পাওয়া যায়: খোদাইকৃত এবং তুলির সাহায্যে লেখা। | '''''পাথর''''' শিলা অথবা মণিকের ছোট খন্ড। মানুষ কখন থেকে পাথরের উপর লিখতে শুরু করে তা নির্ণয় করা কঠিন। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে উদ্ধারকৃত শিলালিপিটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের আমলে লিখিত। ব্রাহ্মী লিপিতে লিখিত এই শিলালিপিটিকে বাংলার সর্বাধিক প্রাচীন শিলালিপি বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন পুরনো মন্দিরগাত্র, পাথরের ভাষ্কর্যের পাদদেশ এবং মন্দিরের প্রবেশপথে প্রোটো-বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় লেখা উৎকীর্ণ থাকতে দেখা যায়। প্রাচীন কিছু কিছু মসজিদের প্রবেশপথে বেলেপাথর ও ব্যাসাল্ট শিলার গায়ে পারস্য ও আরবি ক্যালিগ্রাফি উৎকীর্ণ থাকতে দেখা যায়। মার্বেল পাথরের গায়ে লেখাগুলি আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। উদ্ধারকৃত বেশকিছু শিলালিপি বাংলাদেশের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রাচীন শিলালিপিগুলিতে দুই ধরনের লিখন পদ্ধতি দেখতে পাওয়া যায়: খোদাইকৃত এবং তুলির সাহায্যে লেখা। | ||
'''তাম্রপাত্র''' (Copper plate) প্রাচীন বাংলার জনগণের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি লিখে রাখার উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে নির্মিত সুবিধাজনক আকৃতির ও মসৃণ তামার পাত্র। কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে ভারত ও বাংলায় লেখার একটি প্রধান উপকরণ হিসেবে তামার পাত্র ব্যবহূত হতো। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত অনেক সংখ্যক তাম্রপাত্র আজও প্রাচীনকালের অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। নাটোর জেলার ধনাইদহ গ্রামে একটি পুকুর খননকালে একটি তাম্রপাত্র আবিস্কৃত হয়। এটি ৪৩৩ খ্রিস্টাব্দে কুমারগুপ্তের সময়কালের বলে অনুমান করা হয়। সংস্কৃত ভাষায় লিখিত এই তাম্রপাত্রে ভূমি অনুদান সম্পর্কিত একটি দানপত্র লেখা রয়েছে এবং এই তাম্রপাত্রটিকে প্রাচীনতম বলে ধারণা করা হয়। তাম্রপাত্রে লেখার কৌশলটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। প্রথমে একটি কাঠকয়লার সাহায্যে তামার পাত্রটির উপর ইপ্সিত বক্তব্য লেখা হতো। একজন দক্ষ কারিগর ধারালো বাটালির সাহায্যে লেখার উপর দিয়ে খোদাইকাজ চালাতো। খোদাই কাজ শেষ হলে কয়লার গুঁড়ার সঙ্গে তেল অথবা গাছের রস মিশিয়ে প্রস্ত্ততকৃত পেস্ট বা লেই লেখার উপর দিয়ে মাখিয়ে দেওয়া হতো এবং খোদাইকৃত অক্ষরগুলির বাইরে থেকে যাওয়া অতিরিক্ত লেই চেঁছে ফেলা দেওয়া হলে লেখাগুলি তামারপাত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠতো। | '''''তাম্রপাত্র''''' (Copper plate) প্রাচীন বাংলার জনগণের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি লিখে রাখার উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে নির্মিত সুবিধাজনক আকৃতির ও মসৃণ তামার পাত্র। কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে ভারত ও বাংলায় লেখার একটি প্রধান উপকরণ হিসেবে তামার পাত্র ব্যবহূত হতো। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত অনেক সংখ্যক তাম্রপাত্র আজও প্রাচীনকালের অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। নাটোর জেলার ধনাইদহ গ্রামে একটি পুকুর খননকালে একটি তাম্রপাত্র আবিস্কৃত হয়। এটি ৪৩৩ খ্রিস্টাব্দে কুমারগুপ্তের সময়কালের বলে অনুমান করা হয়। সংস্কৃত ভাষায় লিখিত এই তাম্রপাত্রে ভূমি অনুদান সম্পর্কিত একটি দানপত্র লেখা রয়েছে এবং এই তাম্রপাত্রটিকে প্রাচীনতম বলে ধারণা করা হয়। তাম্রপাত্রে লেখার কৌশলটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। প্রথমে একটি কাঠকয়লার সাহায্যে তামার পাত্রটির উপর ইপ্সিত বক্তব্য লেখা হতো। একজন দক্ষ কারিগর ধারালো বাটালির সাহায্যে লেখার উপর দিয়ে খোদাইকাজ চালাতো। খোদাই কাজ শেষ হলে কয়লার গুঁড়ার সঙ্গে তেল অথবা গাছের রস মিশিয়ে প্রস্ত্ততকৃত পেস্ট বা লেই লেখার উপর দিয়ে মাখিয়ে দেওয়া হতো এবং খোদাইকৃত অক্ষরগুলির বাইরে থেকে যাওয়া অতিরিক্ত লেই চেঁছে ফেলা দেওয়া হলে লেখাগুলি তামারপাত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠতো। | ||
'''তালপাতা''' (Palm leaf) কাগজ প্রচলনের পূর্বে লিখন উপকরণসমূহের মধ্যে তালপাতা ছিল অন্যতম, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়াসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে লিখন উপাদান হিসেবে তালপাতার ব্যবহার ছিল ব্যাপক। কয়েক শতক পর্যন্ত তালপাতাই ছিল সর্বাধিক ব্যবহূত লিখন উপকরণ। মধ্য এশিয়ার তুরফান এলাকায় প্রাপ্ত দ্বিতীয় শতকে ভারতীয় নাটকের একখন্ড তালপাতার পান্ডুলিপিকে সর্বাধিক প্রাচীন তালপাতার [[পান্ডুলিপি|পান্ডুলিপি]] বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশ এবং ভারতের ক্রান্তীয় জলবায়ুর কারণে বহু প্রাচীন তালপাতার পান্ডুলিপি নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে চতুর্থ, ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে রচিত তালপাতার পান্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে। সেগুলির বেশিরভাগই খন্ডিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে দশম ও দ্বাদশ শতকে লিখিত তালপাতার প্রচুর পান্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, পাল ও সেন আমলে তালপাতা ছিল জনপ্রিয় লিখন উপাদান। | '''''তালপাতা''''' (Palm leaf) কাগজ প্রচলনের পূর্বে লিখন উপকরণসমূহের মধ্যে তালপাতা ছিল অন্যতম, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়াসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে লিখন উপাদান হিসেবে তালপাতার ব্যবহার ছিল ব্যাপক। কয়েক শতক পর্যন্ত তালপাতাই ছিল সর্বাধিক ব্যবহূত লিখন উপকরণ। মধ্য এশিয়ার তুরফান এলাকায় প্রাপ্ত দ্বিতীয় শতকে ভারতীয় নাটকের একখন্ড তালপাতার পান্ডুলিপিকে সর্বাধিক প্রাচীন তালপাতার [[পান্ডুলিপি|পান্ডুলিপি]] বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশ এবং ভারতের ক্রান্তীয় জলবায়ুর কারণে বহু প্রাচীন তালপাতার পান্ডুলিপি নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে চতুর্থ, ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে রচিত তালপাতার পান্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে। সেগুলির বেশিরভাগই খন্ডিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে দশম ও দ্বাদশ শতকে লিখিত তালপাতার প্রচুর পান্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, পাল ও সেন আমলে তালপাতা ছিল জনপ্রিয় লিখন উপাদান। | ||
'''ভূর্জপত্র''' (Birch bark) Betula গণের অন্তর্ভুক্ত যেকোন প্রকার বৃক্ষের মসৃণ ছাল কিংবা ঘন বুনট বিশিষ্ট কাষ্ঠখন্ড। বাংলাদেশে সাধারণ লিখন উপাদান হিসেবে ভূর্জপত্রের ব্যবহারের কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে মন্ত্র লেখার উপাদান হিসেবে ভূর্জপত্র ব্যবহারের উদাহরণ পাওয়া যায়। গ্রীক ঐতিহাসিকদের তথ্য অনুসারে ভারতে লিখন উপাদান হিসেবে ভূর্জপত্র খুবই জনপ্রিয় ছিল। খ্রিস্ট পরবর্তী দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকের প্রাপ্ত ভূর্জপত্রের পান্ডুলিপিকেই প্রাচীনতম বলে ধারণা করা হয়। খন্ডিত এসকল ভূর্জপত্রে খারোষ্ঠি লিপিতে লিখিত ধম্মপদের বর্ণনা রয়েছে। লিখিত উপকরণ হিসেবে ভূর্জপত্রের ব্যবহার মুগল আমলেও অব্যাহত ছিল। পরবর্তীতে কাগজ প্রচলিত হলে তা তালপাতা ও ভূর্জপত্রের স্থান দখল করে। | '''''ভূর্জপত্র''''' (Birch bark) Betula গণের অন্তর্ভুক্ত যেকোন প্রকার বৃক্ষের মসৃণ ছাল কিংবা ঘন বুনট বিশিষ্ট কাষ্ঠখন্ড। বাংলাদেশে সাধারণ লিখন উপাদান হিসেবে ভূর্জপত্রের ব্যবহারের কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে মন্ত্র লেখার উপাদান হিসেবে ভূর্জপত্র ব্যবহারের উদাহরণ পাওয়া যায়। গ্রীক ঐতিহাসিকদের তথ্য অনুসারে ভারতে লিখন উপাদান হিসেবে ভূর্জপত্র খুবই জনপ্রিয় ছিল। খ্রিস্ট পরবর্তী দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকের প্রাপ্ত ভূর্জপত্রের পান্ডুলিপিকেই প্রাচীনতম বলে ধারণা করা হয়। খন্ডিত এসকল ভূর্জপত্রে খারোষ্ঠি লিপিতে লিখিত ধম্মপদের বর্ণনা রয়েছে। লিখিত উপকরণ হিসেবে ভূর্জপত্রের ব্যবহার মুগল আমলেও অব্যাহত ছিল। পরবর্তীতে কাগজ প্রচলিত হলে তা তালপাতা ও ভূর্জপত্রের স্থান দখল করে। | ||
'''বস্ত্রপত্র''' (Cloth fabric) রেশমী, পশমী, তুলা অথবা অন্যান্য উপাদানে তৈরি বস্ত্রখন্ড যা লিখন উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হতো। সঠিক ইতিহাস পাওয়া কঠিন হলেও এতদঞ্চলে লিখন উপাদান হিসেবে বস্ত্রপত্রের ব্যবহার প্রাচীন। আর্দ্র জলবায়ুর কারণে প্রাচীন লিখিত বস্ত্রপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রাচীন কোন বস্ত্রপত্রের সন্ধান পাওয়া যায় নি। বর্তমানকালেও বিশ্বব্যপী চিত্রাঙ্কণ ও লিখন উপাদান হিসেবে বস্ত্রের ব্যবহার অব্যহত রয়েছে। বাংলায় একসময় রাজকীয় ফরমানগুলি জরিখচিত মূল্যবান বস্ত্রখন্ডে লিখিত হতো, যেগুলি বেলনাকৃতি খোলের মধ্যে রক্ষিত থাকতো। | '''''বস্ত্রপত্র''''' (Cloth fabric) রেশমী, পশমী, তুলা অথবা অন্যান্য উপাদানে তৈরি বস্ত্রখন্ড যা লিখন উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হতো। সঠিক ইতিহাস পাওয়া কঠিন হলেও এতদঞ্চলে লিখন উপাদান হিসেবে বস্ত্রপত্রের ব্যবহার প্রাচীন। আর্দ্র জলবায়ুর কারণে প্রাচীন লিখিত বস্ত্রপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রাচীন কোন বস্ত্রপত্রের সন্ধান পাওয়া যায় নি। বর্তমানকালেও বিশ্বব্যপী চিত্রাঙ্কণ ও লিখন উপাদান হিসেবে বস্ত্রের ব্যবহার অব্যহত রয়েছে। বাংলায় একসময় রাজকীয় ফরমানগুলি জরিখচিত মূল্যবান বস্ত্রখন্ডে লিখিত হতো, যেগুলি বেলনাকৃতি খোলের মধ্যে রক্ষিত থাকতো। | ||
'''পার্চমেন্ট''' (Parchment) ভেড়া অথবা ছাগলের চামড়া থেকে তৈরি ভারি কাগজ। লেখার উপাদান হিসেবে বাংলা অথবা ভারতে সাধারণভাবে পার্চমেন্ট কখনোই জনপ্রিয় ছিল না। তবে ১৮৮৬ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট এবং ভারতীয় ভাইসরয়ের সনদসমূহ পার্চমেন্ট কাগজে লিখিত ও মুদ্রিত হতো, যার কিছু নিদর্শন বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত আছে। | '''''পার্চমেন্ট''''' (Parchment) ভেড়া অথবা ছাগলের চামড়া থেকে তৈরি ভারি কাগজ। লেখার উপাদান হিসেবে বাংলা অথবা ভারতে সাধারণভাবে পার্চমেন্ট কখনোই জনপ্রিয় ছিল না। তবে ১৮৮৬ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট এবং ভারতীয় ভাইসরয়ের সনদসমূহ পার্চমেন্ট কাগজে লিখিত ও মুদ্রিত হতো, যার কিছু নিদর্শন বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত আছে। | ||
'''পাটের মন্ড কাগজ''' (Jute pulp paper) ঊনবিংশ শতকে বাংলার বিভিন্ন স্থানে পাটের মন্ড থেকে তৈরি এক ধরনের কাগজ। বাংলাদেশের বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে ব্যাপকভাবে এই প্রকার কাগজ তৈরি হতো, যার প্রধান কাচামাল ছিল পাট। | '''''পাটের মন্ড কাগজ''''' (Jute pulp paper) ঊনবিংশ শতকে বাংলার বিভিন্ন স্থানে পাটের মন্ড থেকে তৈরি এক ধরনের কাগজ। বাংলাদেশের বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে ব্যাপকভাবে এই প্রকার কাগজ তৈরি হতো, যার প্রধান কাচামাল ছিল পাট। | ||
'''কাগজ''' (Paper) কাঠের মন্ড অথবা নলখাগড়ার মন্ড থেকে তৈরি মসৃণ ও পাতলা লিখন উপাদান। বর্তমান সভ্যতার অন্যতম উপাদান কাগজ লিখনসহ আরও বহু প্রয়োজনে বহুলভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। [মোঃ ছাবের আলী] | '''''কাগজ''''' (Paper) কাঠের মন্ড অথবা নলখাগড়ার মন্ড থেকে তৈরি মসৃণ ও পাতলা লিখন উপাদান। বর্তমান সভ্যতার অন্যতম উপাদান কাগজ লিখনসহ আরও বহু প্রয়োজনে বহুলভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। [মোঃ ছাবের আলী] | ||
''আরও দেখুন'' | ''আরও দেখুন'' [[কাগজ|কাগজ]]। | ||
[[en:Writing Material]] | [[en:Writing Material]] |
০৬:০৭, ১১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
লিখন উপাদান (Writing Material) লেখার জন্য ব্যবহূত সামগ্রীসমূহ, যেমন- কাগজ, কলম, কালি প্রভৃতি। কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে প্রাচীন মানুষ পাথর, তাম্রপাত্র, তালপাতা, ভূর্জপত্র, কাপড়, পাটের পাল্প কাগজ এবং পার্চমেন্টকে লিখন উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতো।
পাথর শিলা অথবা মণিকের ছোট খন্ড। মানুষ কখন থেকে পাথরের উপর লিখতে শুরু করে তা নির্ণয় করা কঠিন। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে উদ্ধারকৃত শিলালিপিটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের আমলে লিখিত। ব্রাহ্মী লিপিতে লিখিত এই শিলালিপিটিকে বাংলার সর্বাধিক প্রাচীন শিলালিপি বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন পুরনো মন্দিরগাত্র, পাথরের ভাষ্কর্যের পাদদেশ এবং মন্দিরের প্রবেশপথে প্রোটো-বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় লেখা উৎকীর্ণ থাকতে দেখা যায়। প্রাচীন কিছু কিছু মসজিদের প্রবেশপথে বেলেপাথর ও ব্যাসাল্ট শিলার গায়ে পারস্য ও আরবি ক্যালিগ্রাফি উৎকীর্ণ থাকতে দেখা যায়। মার্বেল পাথরের গায়ে লেখাগুলি আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। উদ্ধারকৃত বেশকিছু শিলালিপি বাংলাদেশের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রাচীন শিলালিপিগুলিতে দুই ধরনের লিখন পদ্ধতি দেখতে পাওয়া যায়: খোদাইকৃত এবং তুলির সাহায্যে লেখা।
তাম্রপাত্র (Copper plate) প্রাচীন বাংলার জনগণের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি লিখে রাখার উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে নির্মিত সুবিধাজনক আকৃতির ও মসৃণ তামার পাত্র। কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে ভারত ও বাংলায় লেখার একটি প্রধান উপকরণ হিসেবে তামার পাত্র ব্যবহূত হতো। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত অনেক সংখ্যক তাম্রপাত্র আজও প্রাচীনকালের অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। নাটোর জেলার ধনাইদহ গ্রামে একটি পুকুর খননকালে একটি তাম্রপাত্র আবিস্কৃত হয়। এটি ৪৩৩ খ্রিস্টাব্দে কুমারগুপ্তের সময়কালের বলে অনুমান করা হয়। সংস্কৃত ভাষায় লিখিত এই তাম্রপাত্রে ভূমি অনুদান সম্পর্কিত একটি দানপত্র লেখা রয়েছে এবং এই তাম্রপাত্রটিকে প্রাচীনতম বলে ধারণা করা হয়। তাম্রপাত্রে লেখার কৌশলটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। প্রথমে একটি কাঠকয়লার সাহায্যে তামার পাত্রটির উপর ইপ্সিত বক্তব্য লেখা হতো। একজন দক্ষ কারিগর ধারালো বাটালির সাহায্যে লেখার উপর দিয়ে খোদাইকাজ চালাতো। খোদাই কাজ শেষ হলে কয়লার গুঁড়ার সঙ্গে তেল অথবা গাছের রস মিশিয়ে প্রস্ত্ততকৃত পেস্ট বা লেই লেখার উপর দিয়ে মাখিয়ে দেওয়া হতো এবং খোদাইকৃত অক্ষরগুলির বাইরে থেকে যাওয়া অতিরিক্ত লেই চেঁছে ফেলা দেওয়া হলে লেখাগুলি তামারপাত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠতো।
তালপাতা (Palm leaf) কাগজ প্রচলনের পূর্বে লিখন উপকরণসমূহের মধ্যে তালপাতা ছিল অন্যতম, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়াসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে লিখন উপাদান হিসেবে তালপাতার ব্যবহার ছিল ব্যাপক। কয়েক শতক পর্যন্ত তালপাতাই ছিল সর্বাধিক ব্যবহূত লিখন উপকরণ। মধ্য এশিয়ার তুরফান এলাকায় প্রাপ্ত দ্বিতীয় শতকে ভারতীয় নাটকের একখন্ড তালপাতার পান্ডুলিপিকে সর্বাধিক প্রাচীন তালপাতার পান্ডুলিপি বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশ এবং ভারতের ক্রান্তীয় জলবায়ুর কারণে বহু প্রাচীন তালপাতার পান্ডুলিপি নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে চতুর্থ, ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে রচিত তালপাতার পান্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে। সেগুলির বেশিরভাগই খন্ডিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে দশম ও দ্বাদশ শতকে লিখিত তালপাতার প্রচুর পান্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, পাল ও সেন আমলে তালপাতা ছিল জনপ্রিয় লিখন উপাদান।
ভূর্জপত্র (Birch bark) Betula গণের অন্তর্ভুক্ত যেকোন প্রকার বৃক্ষের মসৃণ ছাল কিংবা ঘন বুনট বিশিষ্ট কাষ্ঠখন্ড। বাংলাদেশে সাধারণ লিখন উপাদান হিসেবে ভূর্জপত্রের ব্যবহারের কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে মন্ত্র লেখার উপাদান হিসেবে ভূর্জপত্র ব্যবহারের উদাহরণ পাওয়া যায়। গ্রীক ঐতিহাসিকদের তথ্য অনুসারে ভারতে লিখন উপাদান হিসেবে ভূর্জপত্র খুবই জনপ্রিয় ছিল। খ্রিস্ট পরবর্তী দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকের প্রাপ্ত ভূর্জপত্রের পান্ডুলিপিকেই প্রাচীনতম বলে ধারণা করা হয়। খন্ডিত এসকল ভূর্জপত্রে খারোষ্ঠি লিপিতে লিখিত ধম্মপদের বর্ণনা রয়েছে। লিখিত উপকরণ হিসেবে ভূর্জপত্রের ব্যবহার মুগল আমলেও অব্যাহত ছিল। পরবর্তীতে কাগজ প্রচলিত হলে তা তালপাতা ও ভূর্জপত্রের স্থান দখল করে।
বস্ত্রপত্র (Cloth fabric) রেশমী, পশমী, তুলা অথবা অন্যান্য উপাদানে তৈরি বস্ত্রখন্ড যা লিখন উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হতো। সঠিক ইতিহাস পাওয়া কঠিন হলেও এতদঞ্চলে লিখন উপাদান হিসেবে বস্ত্রপত্রের ব্যবহার প্রাচীন। আর্দ্র জলবায়ুর কারণে প্রাচীন লিখিত বস্ত্রপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রাচীন কোন বস্ত্রপত্রের সন্ধান পাওয়া যায় নি। বর্তমানকালেও বিশ্বব্যপী চিত্রাঙ্কণ ও লিখন উপাদান হিসেবে বস্ত্রের ব্যবহার অব্যহত রয়েছে। বাংলায় একসময় রাজকীয় ফরমানগুলি জরিখচিত মূল্যবান বস্ত্রখন্ডে লিখিত হতো, যেগুলি বেলনাকৃতি খোলের মধ্যে রক্ষিত থাকতো।
পার্চমেন্ট (Parchment) ভেড়া অথবা ছাগলের চামড়া থেকে তৈরি ভারি কাগজ। লেখার উপাদান হিসেবে বাংলা অথবা ভারতে সাধারণভাবে পার্চমেন্ট কখনোই জনপ্রিয় ছিল না। তবে ১৮৮৬ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট এবং ভারতীয় ভাইসরয়ের সনদসমূহ পার্চমেন্ট কাগজে লিখিত ও মুদ্রিত হতো, যার কিছু নিদর্শন বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত আছে।
পাটের মন্ড কাগজ (Jute pulp paper) ঊনবিংশ শতকে বাংলার বিভিন্ন স্থানে পাটের মন্ড থেকে তৈরি এক ধরনের কাগজ। বাংলাদেশের বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে ব্যাপকভাবে এই প্রকার কাগজ তৈরি হতো, যার প্রধান কাচামাল ছিল পাট।
কাগজ (Paper) কাঠের মন্ড অথবা নলখাগড়ার মন্ড থেকে তৈরি মসৃণ ও পাতলা লিখন উপাদান। বর্তমান সভ্যতার অন্যতম উপাদান কাগজ লিখনসহ আরও বহু প্রয়োজনে বহুলভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। [মোঃ ছাবের আলী]
আরও দেখুন কাগজ।