মৃত্তিকা উর্বরতা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''মৃত্তিকা উর্বরতা''' (Soil Fertility) | '''মৃত্তিকা উর্বরতা''' (Soil Fertility) গাছের বৃদ্ধিতে কোন মৌলের দ্বারা সৃষ্ট বিষাক্ত প্রভাব ব্যতীত অপরিহার্য মৌলসমূহ সরবরাহ করার মৃত্তিকার ক্ষমতা। মৃত্তিকাতে জন্মে এমন সব শস্যের জন্য ১৭টি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ১৪টি পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার মৃত্তিকার একটি স্বাভাবিক ক্ষমতাই হলো মৃত্তিকার উর্বরতা। যখন গাছের বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য নিয়ামক, যেমন- আলো, পানি, তাপমাত্রা এবং মৃত্তিকার ভৌত অবস্থা অনুকূল থাকে তখন সুনির্দিষ্ট গাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং সঠিক ভারসাম্যে যৌগ বা মৌল প্রদান করার ক্ষমতা মৃত্তিকার একটি গুণ। সুতরাং উর্বরতা হলো শস্য উৎপাদন করতে কোন মৃত্তিকার পুষ্টি উপাদান সরবরাহের কর্মক্ষম অবস্থা। যেহেতু গাছপালা বিভিন্ন মৃত্তিকাতে এবং বিভিন্ন জলবায়ুগত অবস্থায় বিকশিত হয়, সেহেতু অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজনও এদের জন্য ভিন্ন হয় এবং বিষাক্ত মৌলের প্রতিও এদের সহনশীলতা ভিন্ন হয়ে থাকে। কোন মৃত্তিকা কোন এক প্রকার গাছের জন্য উর্বর হতে পারে, কিন্তু অন্য গাছের জন্য অনুর্বর হয়ে থাকে। অন্যদিকে, মৃত্তিকার উৎপাদনশীলতা হলো একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট শস্য বা ক্রমান্বয়ে জন্মানো শস্য উৎপাদনে মৃত্তিকার ক্ষমতার পরিমাপ। বাংলাদেশের মৃত্তিকার স্বাভাবিক উর্বরতা ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহে প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলো সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হলো। | ||
'''মৃত্তিকা বিক্রিয়া''' বাংলাদেশের মৃত্তিকার গড় পিএইচ মান এসিডীয় এবং এ মানের পরিসর ৫.৫ থেকে ৬.৫। গাঙ্গেয় পলল মৃত্তিকা, বিশেষ করে চুনযুক্ত মৃত্তিকার পিএইচ মান ৭.০-এর চেয়ে বেশি এবং এ মান ৮.৫ পর্যন্ত হতে পারে। এসব মৃত্তিকাতে মুক্ত কার্বনেট ও বাইকার্বনেট থাকে। উঁচুভূমি এবং পাহাড়ের মৃত্তিকা সাধারণত এসিডীয় প্রকৃতির। পিএইচ মানের পার্থক্যের কারণে পুষ্টি উপাদানের লভ্যতা, বিশেষ করে ফসফরাস ও অণুপুষ্টি উপাদানের লভ্যতা প্রভাবিত হয়। অন্যদিকে নিচু ভূমিতে ধান চাষ মৃত্তিকার আদি বিক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয় না, কারণ জলমগ্ন করা হলে মৃত্তিকার পিএইচ মানের পরিসর ৬.৫ থেকে ৭.৫-এর মধ্যে বিদ্যমান থাকে। চা জন্মে এমন মৃত্তিকা ব্যতীত অন্য যেসব মৃত্তিকার পিএইচ মান ৪.৫-এর কম থাকে, সেসব মৃত্তিকাতে চুন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। সাধারণত এসিড সালফেট মৃত্তিকা ও পাহাড়ি মৃত্তিকার পিএইচ মান ৪.৫-এর কম থাকে। উঁচু ভূমিতে উৎপাদিত শস্যগুলো স্থানীয় মৃত্তিকা পিএইচ মানে নিজেদেরকে অভিযোজিত করে নেয়। পিএইচ মানের ভিত্তিতে মৃত্তিকার শ্রেণীবিন্যাসটি হলো: (ক) চরম এসিডীয়, পিএইচ মান ৪-এর কম; (খ) প্রবল এসিডীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৪.৫ থেকে ৫.৫; (গ) মধ্যম এসিডীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৫.৬ থেকে ৬.৫; (ঘ) নিরপেক্ষ, পিএইচ মানের পরিসর ৬.৬ থেকে ৭.৩; (ঙ) মধ্যম ক্ষারীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৭.৪ থেকে ৮.৪; (চ) প্রবল ক্ষারীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৮.৫ থেকে ৯.০ এবং (ছ) অত্যন্ত প্রবল ক্ষারীয়, পিএইচ মান ৯.০। | '''''মৃত্তিকা বিক্রিয়া''''' বাংলাদেশের মৃত্তিকার গড় পিএইচ মান এসিডীয় এবং এ মানের পরিসর ৫.৫ থেকে ৬.৫। গাঙ্গেয় পলল মৃত্তিকা, বিশেষ করে চুনযুক্ত মৃত্তিকার পিএইচ মান ৭.০-এর চেয়ে বেশি এবং এ মান ৮.৫ পর্যন্ত হতে পারে। এসব মৃত্তিকাতে মুক্ত কার্বনেট ও বাইকার্বনেট থাকে। উঁচুভূমি এবং পাহাড়ের মৃত্তিকা সাধারণত এসিডীয় প্রকৃতির। পিএইচ মানের পার্থক্যের কারণে পুষ্টি উপাদানের লভ্যতা, বিশেষ করে ফসফরাস ও অণুপুষ্টি উপাদানের লভ্যতা প্রভাবিত হয়। অন্যদিকে নিচু ভূমিতে ধান চাষ মৃত্তিকার আদি বিক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয় না, কারণ জলমগ্ন করা হলে মৃত্তিকার পিএইচ মানের পরিসর ৬.৫ থেকে ৭.৫-এর মধ্যে বিদ্যমান থাকে। চা জন্মে এমন মৃত্তিকা ব্যতীত অন্য যেসব মৃত্তিকার পিএইচ মান ৪.৫-এর কম থাকে, সেসব মৃত্তিকাতে চুন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। সাধারণত এসিড সালফেট মৃত্তিকা ও পাহাড়ি মৃত্তিকার পিএইচ মান ৪.৫-এর কম থাকে। উঁচু ভূমিতে উৎপাদিত শস্যগুলো স্থানীয় মৃত্তিকা পিএইচ মানে নিজেদেরকে অভিযোজিত করে নেয়। পিএইচ মানের ভিত্তিতে মৃত্তিকার শ্রেণীবিন্যাসটি হলো: (ক) চরম এসিডীয়, পিএইচ মান ৪-এর কম; (খ) প্রবল এসিডীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৪.৫ থেকে ৫.৫; (গ) মধ্যম এসিডীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৫.৬ থেকে ৬.৫; (ঘ) নিরপেক্ষ, পিএইচ মানের পরিসর ৬.৬ থেকে ৭.৩; (ঙ) মধ্যম ক্ষারীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৭.৪ থেকে ৮.৪; (চ) প্রবল ক্ষারীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৮.৫ থেকে ৯.০ এবং (ছ) অত্যন্ত প্রবল ক্ষারীয়, পিএইচ মান ৯.০। | ||
'''জৈবপদার্থের অবস্থা''' মৃত্তিকার জৈবপদার্থের পরিমাণের দিক থেকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা কম জৈবপদার্থ সংবলিত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। এ দেশের মৃত্তিকার গড় জৈবপদার্থের পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম এবং এ মানের পরিসর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ০.০৫ থেকে ০.৯ শতাংশ। পিট অঞ্চল ও কিছু কিছু নিচুভূমি এলাকাতে জৈবপদার্থের গড় পরিমাণ সাধারণত ২ শতাংশের বেশি। দেশের কৃষিতে বিদ্যমান প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহের মধ্যে একটি হলো মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থ সরবরাহ। তৎসত্ত্বেও দেশে ভালো শস্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০০০ সালে দানা শস্যের উৎপাদন ছিল ২৭ মিলিয়ন টনেরও বেশি, যার মধ্যে ৯ মিলিয়ন টন ছিল উদ্বৃত্ত। এটা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র অধিক মাত্রায় সাংশ্লেষিক সার এবং উন্নত জাতের বীজ ব্যবহারের কারণে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকা সাংশ্লেষিক সারের সঙ্গে যখন জৈবপদার্থ প্রয়াগ করা হয় তখন অধিক | '''''জৈবপদার্থের অবস্থা''''' মৃত্তিকার জৈবপদার্থের পরিমাণের দিক থেকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা কম জৈবপদার্থ সংবলিত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। এ দেশের মৃত্তিকার গড় জৈবপদার্থের পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম এবং এ মানের পরিসর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ০.০৫ থেকে ০.৯ শতাংশ। পিট অঞ্চল ও কিছু কিছু নিচুভূমি এলাকাতে জৈবপদার্থের গড় পরিমাণ সাধারণত ২ শতাংশের বেশি। দেশের কৃষিতে বিদ্যমান প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহের মধ্যে একটি হলো মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থ সরবরাহ। তৎসত্ত্বেও দেশে ভালো শস্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০০০ সালে দানা শস্যের উৎপাদন ছিল ২৭ মিলিয়ন টনেরও বেশি, যার মধ্যে ৯ মিলিয়ন টন ছিল উদ্বৃত্ত। এটা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র অধিক মাত্রায় সাংশ্লেষিক সার এবং উন্নত জাতের বীজ ব্যবহারের কারণে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকা সাংশ্লেষিক সারের সঙ্গে যখন জৈবপদার্থ প্রয়াগ করা হয় তখন অধিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। | ||
'''নাইট্রোজেনের অবস্থা''' বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থের পরিমাণ কম থাকার কারণে নাইট্রোজেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম এবং সব মৃত্তিকাতে উৎপাদিত অধিকাংশ শস্য নাইট্রোজেন প্রয়োগের ফলে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। প্রকৃতপক্ষে, নাইট্রোজেন সারই এদেশে ব্যবহূত অতি পরিচিত সার। এদেশে ছয়টি সার কারখানায় মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হয়। ধানসহ অধিকাংশ শস্য সারবিহীন অবস্থায় উৎপাদনের তুলনায় সারসহ সাধারণত দুই থেকে তিন গুণ বেশি উৎপাদিত হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে বাংলাদেশে নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার ২ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও অধিক ছিল। | '''''নাইট্রোজেনের অবস্থা''''' বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থের পরিমাণ কম থাকার কারণে নাইট্রোজেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম এবং সব মৃত্তিকাতে উৎপাদিত অধিকাংশ শস্য নাইট্রোজেন প্রয়োগের ফলে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। প্রকৃতপক্ষে, নাইট্রোজেন সারই এদেশে ব্যবহূত অতি পরিচিত সার। এদেশে ছয়টি সার কারখানায় মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হয়। ধানসহ অধিকাংশ শস্য সারবিহীন অবস্থায় উৎপাদনের তুলনায় সারসহ সাধারণত দুই থেকে তিন গুণ বেশি উৎপাদিত হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে বাংলাদেশে নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার ২ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও অধিক ছিল। | ||
'''ফসফরাসের অবস্থা''' বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে লভ্য ফসফরাসের পরিমাণকে স্বল্প থেকে মধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মৃত্তিকাতে সার প্রয়োগ করা হলে অধিকাংশ শস্য প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। ফসফরাসের লভ্যতা পিএইচের উপর নির্ভরশীল। মৃত্তিকাতে ফসফরাস সরবরাহের উৎস হলো অজৈব সার। কিন্তু এ সারের ব্যবহার নাইট্রোজেন সার সরবরাহের সঙ্গে আনুপাতিক নয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ট্রিপল সুপার ফসফেট (TSP) ও সিঙ্গেল সুপার ফসফেটের (SSP) ব্যবহার ছিল মাত্র ১১২,০০০ টন। | '''''ফসফরাসের অবস্থা''''' বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে লভ্য ফসফরাসের পরিমাণকে স্বল্প থেকে মধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মৃত্তিকাতে সার প্রয়োগ করা হলে অধিকাংশ শস্য প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। ফসফরাসের লভ্যতা পিএইচের উপর নির্ভরশীল। মৃত্তিকাতে ফসফরাস সরবরাহের উৎস হলো অজৈব সার। কিন্তু এ সারের ব্যবহার নাইট্রোজেন সার সরবরাহের সঙ্গে আনুপাতিক নয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ট্রিপল সুপার ফসফেট (TSP) ও সিঙ্গেল সুপার ফসফেটের (SSP) ব্যবহার ছিল মাত্র ১১২,০০০ টন। | ||
'''পটাশিয়ামের অবস্থা''' বাংলাদেশের মৃত্তিকা পটাশিয়াম ঘাটতিসম্পন্ন নয়, কিন্তু অধিকাংশ মৃত্তিকাতে পটাশ সার প্রয়োগে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে দেখা গিয়েছে। অ-পাললিক (non-alluvial) ও উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকাতেই বিশেষভাবে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বাংলাদেশের মৃত্তিকার জন্য অ্যামোনিয়াম অ্যাসিটেট দ্বারা নির্যাসযোগ্য (extractable) পটাশিয়ামের পরিমাণ প্রায় ০.১২ মিলিতুল্য শতাংশকে (me/100g soil) সন্ধিক্ষণ মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। | '''''পটাশিয়ামের অবস্থা''''' বাংলাদেশের মৃত্তিকা পটাশিয়াম ঘাটতিসম্পন্ন নয়, কিন্তু অধিকাংশ মৃত্তিকাতে পটাশ সার প্রয়োগে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে দেখা গিয়েছে। অ-পাললিক (non-alluvial) ও উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকাতেই বিশেষভাবে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বাংলাদেশের মৃত্তিকার জন্য অ্যামোনিয়াম অ্যাসিটেট দ্বারা নির্যাসযোগ্য (extractable) পটাশিয়ামের পরিমাণ প্রায় ০.১২ মিলিতুল্য শতাংশকে (me/100g soil) সন্ধিক্ষণ মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। | ||
'''সালফারের অবস্থা''' অধিকাংশ মৃত্তিকাতেই সালফার প্রয়োগের ফলে শস্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, কিন্তু উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকা, এসিড সালফেট মৃত্তিকা ও কিছু কিছু এসিডীয় মৃত্তিকাতে এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাসমূহে সেচের মাধ্যমে জন্মানো শস্যগুলো সালফার প্রয়োগে লক্ষণীয় প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। প্রায় চার মিলিয়ন হেক্টর জমি সালফার প্রয়োগে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে বলে মনে করা হয়। সালফারের প্রধান উৎস হলো জিপসাম। | '''''সালফারের অবস্থা''''' অধিকাংশ মৃত্তিকাতেই সালফার প্রয়োগের ফলে শস্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, কিন্তু উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকা, এসিড সালফেট মৃত্তিকা ও কিছু কিছু এসিডীয় মৃত্তিকাতে এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাসমূহে সেচের মাধ্যমে জন্মানো শস্যগুলো সালফার প্রয়োগে লক্ষণীয় প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। প্রায় চার মিলিয়ন হেক্টর জমি সালফার প্রয়োগে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে বলে মনে করা হয়। সালফারের প্রধান উৎস হলো জিপসাম। | ||
'''দস্তা ও বোরন''' সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে যে বাংলাদেশের মৃত্তিকা, বিশেষ করে স্থায়িভাবে জলমগ্ন মৃত্তিকা ও যেসব মৃত্তিকাতে সেচ দেওয়া হয় সেসব মৃত্তিকাতে দস্তা ও বোরন প্রয়োগের ফলে শস্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এসব মৃত্তিকার মধ্যে চুনযুক্ত পললভূমি মৃত্তিকা একটি। প্রায় ১.৭ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে দস্তার ঘাটতি রয়েছে বলে হিসাব করা হয়েছে। | '''''দস্তা ও বোরন''''' সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে যে বাংলাদেশের মৃত্তিকা, বিশেষ করে স্থায়িভাবে জলমগ্ন মৃত্তিকা ও যেসব মৃত্তিকাতে সেচ দেওয়া হয় সেসব মৃত্তিকাতে দস্তা ও বোরন প্রয়োগের ফলে শস্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এসব মৃত্তিকার মধ্যে চুনযুক্ত পললভূমি মৃত্তিকা একটি। প্রায় ১.৭ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে দস্তার ঘাটতি রয়েছে বলে হিসাব করা হয়েছে। | ||
'''অন্যান্য অণুপুষ্টি উপাদান''' দস্তা ও বোরনের মতো অন্যান্য অণুপুষ্টি উপাদান প্রয়োগের প্রতিক্রিয়া কোন মৃত্তিকাতে কোন বিশেষ গাছের জন্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু পিট এলাকা ও অন্যান্য মৃত্তিকাতে Mn প্রয়োগের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিবেশ অঞ্চলে Mo প্রয়োগের ফলে শস্যে প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। | '''''অন্যান্য অণুপুষ্টি উপাদান''''' দস্তা ও বোরনের মতো অন্যান্য অণুপুষ্টি উপাদান প্রয়োগের প্রতিক্রিয়া কোন মৃত্তিকাতে কোন বিশেষ গাছের জন্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু পিট এলাকা ও অন্যান্য মৃত্তিকাতে Mn প্রয়োগের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিবেশ অঞ্চলে Mo প্রয়োগের ফলে শস্যে প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। | ||
'''ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা''' বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং অধিকাংশ মৃত্তিকাতেই ১:১ এঁটেল ও মিহি দানাদার মাইকা (ইলাইট) বিদ্যমান। এ কারণে বাংলাদেশের মৃত্তিকার ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা সাধারণত বেশি নয়। ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতার (মিলিতুল্য শতাংশ) ভিত্তিতে তৈরি বাংলাদেশের মৃত্তিকার শ্রেণীবিন্যাসটি হলো: অতি অধিক (৩০); অধিক (১৫-৩০); মধ্যম (৭.৫-১৫.০); কম (৩.০-৭.৫) এবং অতি কম (৩.০)। | '''''ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা''''' বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং অধিকাংশ মৃত্তিকাতেই ১:১ এঁটেল ও মিহি দানাদার মাইকা (ইলাইট) বিদ্যমান। এ কারণে বাংলাদেশের মৃত্তিকার ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা সাধারণত বেশি নয়। ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতার (মিলিতুল্য শতাংশ) ভিত্তিতে তৈরি বাংলাদেশের মৃত্তিকার শ্রেণীবিন্যাসটি হলো: অতি অধিক (৩০); অধিক (১৫-৩০); মধ্যম (৭.৫-১৫.০); কম (৩.০-৭.৫) এবং অতি কম (৩.০)। | ||
'''মৃত্তিকা লবণাক্ততা''' উপকূলীয় অঞ্চলের বিরাট এলাকাতে মৌসুম মাফিক লবণাক্ততার সৃষ্টি হয়। এ এলাকার লবণাক্ততা প্রধানত Cl-SO4 ধরনের। যেহেতু সামুদ্রিক পানির অনুপ্রবেশের দ্বারা লবণাক্ততার সৃষ্টি হয়, সেহেতু উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকাতে বিদ্যমান Ca:Mg অনুপাত ১-এর চেয়ে কম, যা মারাত্মক উর্বরতা সমস্যার সৃষ্টি করে। লবণাক্ত এলাকার অধিকাংশ জমিতেই বছরে একটি শস্য জন্মানো হয়। | '''''মৃত্তিকা লবণাক্ততা''''' উপকূলীয় অঞ্চলের বিরাট এলাকাতে মৌসুম মাফিক লবণাক্ততার সৃষ্টি হয়। এ এলাকার লবণাক্ততা প্রধানত Cl-SO4 ধরনের। যেহেতু সামুদ্রিক পানির অনুপ্রবেশের দ্বারা লবণাক্ততার সৃষ্টি হয়, সেহেতু উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকাতে বিদ্যমান Ca:Mg অনুপাত ১-এর চেয়ে কম, যা মারাত্মক উর্বরতা সমস্যার সৃষ্টি করে। লবণাক্ত এলাকার অধিকাংশ জমিতেই বছরে একটি শস্য জন্মানো হয়। | ||
'''কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের উর্বরতা | '''''কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের উর্বরতা অবস্থা''''' পুরাতন হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমতলভূমি পৃষ্ঠমৃত্তিকার বিক্রিয়া প্রবল এসিডীয় এবং অন্তঃমৃত্তিকার বিক্রিয়া মধ্যম এসিডীয়। জৈবপদার্থের পরিমাণ অন্যান্য পললভূমি মৃত্তিকার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। স্থূল গ্রথনের মৃত্তিকা ব্যতীত মৃত্তিকার স্বাভাবিক উর্বরতা মধ্যম মাত্রার, কিন্তু উর্বরতা বজায় রাখার জন্য উত্তম। মৃত্তিকা উর্বরতা সংক্রান্ত সমস্যার মধ্যে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, সালফার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরনের দ্রুত ক্ষালন অন্তর্ভুক্ত। | ||
সক্রিয় তিস্তা | ''সক্রিয় তিস্তা পললভূমি'' মৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়, জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা মধ্যম। মৃত্তিকা উর্বরতা অবস্থা স্বল্প থেকে মধ্যম। | ||
তিস্তা বিসর্প (meander) | ''তিস্তা বিসর্প (meander) পললভূমি'' মৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়, উঁচু অবস্থানের ভূমির জৈবপদার্থের পরিমাণ স্বল্প, কিন্তু নিচু অবস্থানের মৃত্তিকাতে এর পরিমাণ মধ্যম। উর্বরতার মাত্রা সাধারণত স্বল্প থেকে মধ্যম, কিন্তু অধিকাংশ স্থানের পটাশিয়ামের পরিমাণ ও ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা মধ্যম। | ||
করতোয়া বাঙ্গালী | ''করতোয়া বাঙ্গালী পললভূমি'' মৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়, উঁচু এলাকার জৈবপদার্থের পরিমাণ কম, কিন্তু অববাহিকা এলাকার মধ্যম। স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা মধ্যম। | ||
নিম্ন আত্রাই অববাহিকা মৃত্তিকা এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ, ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা ও উর্বরতা অবস্থা মধ্যম। | নিম্ন আত্রাই অববাহিকা মৃত্তিকা এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ, ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা ও উর্বরতা অবস্থা মধ্যম। | ||
নিম্ন পুনর্ভবা পললভূমি মৃত্তিকা এসিডীয়; অধিক ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতাসহ জৈবপদার্থের পরিমাণ মধ্যম থেকে অধিক। স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা মধ্যম কিন্তু পটাশিয়ামের পরিমাণ অধিক। | ''নিম্ন পুনর্ভবা পললভূমি মৃত্তিকা'' এসিডীয়; অধিক ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতাসহ জৈবপদার্থের পরিমাণ মধ্যম থেকে অধিক। স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা মধ্যম কিন্তু পটাশিয়ামের পরিমাণ অধিক। | ||
সক্রিয় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা | ''সক্রিয় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা পললভূমি'' মৃত্তিকার বিক্রিয়া মৃদু ক্ষারীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং উর্বরতা অবস্থা স্বল্প থেকে মধ্যম। সাধারণত নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের পরিমাণ শস্য উৎপাদনে অন্তরায় সৃষ্টি করে, কিন্তু পরিমিত পরিমাণে পটাশিয়াম, সালফার ও দস্তা বিদ্যমান। | ||
নতুন ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা | ''নতুন ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা পললভূমি'' মৃত্তিকা নিরপেক্ষ থেকে মৃদু এসিডীয় বিক্রিয়াসম্পন্ন; উঁচু এলাকায় জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং অববাহিকা এলাকায় মধ্যম। মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও সালফারের অভাব রয়েছে, কিন্তু পটাশিয়াম ও দস্তার অবস্থা পরিমিত। | ||
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র | ''পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললভূমি'' পৃষ্ঠমৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয় কিন্তু অন্তঃমৃত্তিকা নিরপেক্ষ বিক্রিয়াসম্পন্ন। উঁচু এলাকায় জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং অববাহিকা এলাকায় মধ্যম। স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা কম। ফসফরাস ও ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতার মান মধ্যম এবং উঁচুভূমিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ কম কিন্তু নিচুভূমিতে মধ্যম। | ||
সক্রিয় গঙ্গা | ''সক্রিয় গঙ্গা পললভূমি'' মৃত্তিকার বিক্রিয়া মৃদু ক্ষারীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা অধিকসহ স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা মধ্যম, কিন্তু এসব মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন এবং লভ্য ফসফরাস ও দস্তার অভাব রয়েছে। | ||
উঁচু গঙ্গা নদী পললভূমি মৃদু ক্ষারীয় বিক্রিয়াসম্পন্ন; বাদামি উঁচু মৃত্তিকার জৈবপদার্থের পরিমাণ কম, কিন্তু গাঢ় ধূসর মৃত্তিকার জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি। যদিও ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা মধ্যম মানের, কিন্তু স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা স্বল্প। | উঁচু গঙ্গা নদী পললভূমি মৃদু ক্ষারীয় বিক্রিয়াসম্পন্ন; বাদামি উঁচু মৃত্তিকার জৈবপদার্থের পরিমাণ কম, কিন্তু গাঢ় ধূসর মৃত্তিকার জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি। যদিও ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা মধ্যম মানের, কিন্তু স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা স্বল্প। | ||
নিম্ন গঙ্গা নদী | ''নিম্ন গঙ্গা নদী পললভূমি'' মৃত্তিকার বিক্রিয়া নিরপেক্ষ থেকে মৃদু ক্ষারীয়; উঁচু এলাকায় জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং অববাহিকা এলাকায় মধ্যম। স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা মধ্যম, কিন্তু ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। | ||
গঙ্গা কটাল (tidal) | ''গঙ্গা কটাল (tidal) পললভূমি'' অধিকাংশ পৃষ্ঠমৃত্তিকা এসিডীয় এবং অন্তঃমৃত্তিকা নিরপেক্ষ থেকে মৃদু ক্ষারীয়। স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা বেশি এবং সেসঙ্গে জৈবপদার্থের পরিমাণ মধ্যম থেকে অধিক ও ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা অতি বেশি। অধিক পরিমাণের বিনিময়যোগ্য সোডিয়াম এবং স্বল্প Ca/Mg অনুপাত শস্য উৎপাদনে সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। | ||
গোপালগঞ্জ-খুলনা | ''গোপালগঞ্জ-খুলনা বিল'' অবিকশিত প্রবল এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ সাধারণত দুই শতাংশের বেশি। ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা অধিক এবং স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা মধ্যম থেকে অধিক। | ||
মধ্য মেঘনা নদী | ''মধ্য মেঘনা নদী পললভূমি'' পৃষ্ঠমৃত্তিকা প্রবলভাবে এসিডীয় এবং অন্তঃমৃত্তিকা মৃদু এসিডীয় থেকে মৃদু ক্ষারীয়। স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা মধ্যম, কিন্তু নাইট্রোজেন ও জৈবপদার্থের মাত্রা পরিমাণে কম। | ||
লোয়ার মেঘনা নদী | ''লোয়ার মেঘনা নদী পললভূমি'' পৃষ্ঠমৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয় এবং অন্তঃমৃত্তিকা নিরপেক্ষ বিক্রিয়া সম্পন্ন। জৈবপদার্থের পরিমাণ স্বল্প থেকে মধ্যম এবং স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা মধ্যম। | ||
মেঘনা মোহনাজ নতুন | ''মেঘনা মোহনাজ নতুন পললভূমি'' মৃত্তিকা মৃদু ক্ষারীয়। স্বাভাবিক উর্বরতা মধ্যম কিন্তু নাইট্রোজেন ও জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। সালফারের পরিমাণ মধ্যম থেকে অধিক। | ||
মেঘনা মোহনাজ পুরাতন | ''মেঘনা মোহনাজ পুরাতন পললভূমি'' পৃষ্ঠমৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়, কিন্তু অন্তঃমৃত্তিকা নিরপেক্ষ। স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা মধ্যম। উঁচুভূমিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ কম কিন্তু নিচুভূমিতে স্বল্প থেকে মধ্যম। | ||
পূর্বাঞ্চলীয় সুরমা কুশিয়ারা | ''পূর্বাঞ্চলীয় সুরমা কুশিয়ারা পললভূমি'' মৃত্তিকার বিক্রিয়া চরম এসিডীয় থেকে নিরপেক্ষ। মৃত্তিকাতে মধ্যম মাত্রায় জৈবপদার্থ বিদ্যমান। ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা ও দস্তার পরিমাণ অধিক, অন্যান্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ মধ্যম। | ||
সিলেট বিল প্রধানত এসিডীয় বিক্রিয়া সম্পন্ন; জৈবপদার্থের পরিমাণ মধ্যম। উর্বরতার মাত্রা মধ্যম থেকে অধিক, ফসফরাসের পরিমাণ কম কিন্তু দস্তার পরিমাণ বেশি। | সিলেট বিল প্রধানত এসিডীয় বিক্রিয়া সম্পন্ন; জৈবপদার্থের পরিমাণ মধ্যম। উর্বরতার মাত্রা মধ্যম থেকে অধিক, ফসফরাসের পরিমাণ কম কিন্তু দস্তার পরিমাণ বেশি। | ||
উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাদদেশীয় | ''উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাদদেশীয় সমতলভূমি'' মৃত্তিকার বিক্রিয়া মৃদু থেকে প্রবল এসিডীয়। স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা স্বল্প থেকে মধ্যম। চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমতলভূমি মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়। জৈবপদার্থের পরিমাণ স্বল্প থেকে মধ্যম। মৃত্তিকার স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা মধ্যম, কিন্তু শস্য উৎপাদন সীমিতকারী মাত্রায় নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম বিদ্যমান। সালফারের পরিমাণ অধিক। | ||
সেন্টমার্টিন প্রবাল | ''সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ'' মৃত্তিকার বিক্রিয়া নিরপেক্ষ, স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা কম। | ||
সমতল | ''সমতল বরেন্দ্রভূমি'' মৃদু এসিডীয় থেকে এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ অত্যন্ত কম। অধিকাংশ লভ্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ শস্য উৎপাদন ব্যাহতকারী মাত্রার নিচে। | ||
উঁচু | ''উঁচু বরেন্দ্রভূমি'' মৃত্তিকা বিক্রিয়া এসিডীয় থেকে প্রবল এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা কম। দস্তার পরিমাণ মধ্যম থেকে অধিক। | ||
উত্তর-পূর্ব | ''উত্তর-পূর্ব বরেন্দ্রভূমি'' প্রবল এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। অধিক পরিমাণে বিদ্যমান দস্তাসহ স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা কম। | ||
মধুপুর | ''মধুপুর গড়'' প্রবল এসিডীয় বিক্রিয়াসম্পন্ন মৃত্তিকা এবং জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। উর্বরতার মাত্রা কম। মৃত্তিকাগুলো প্রধানত ফসফেট আবদ্ধকারী ধর্মসম্পন্ন এবং পটাশিয়াম, সালফার ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম। | ||
উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় | ''উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়'' মৃত্তিকার বিক্রিয়া এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা কম। | ||
আখাউড়া চালাভূমি'' | ''আখাউড়া চালাভূমি'' প্রবল এসিডীয় বিক্রিয়াসম্পন্ন মৃত্তিকা; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম; স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা কম। | ||
'''দূষক '''(contaminants) বর্তমানে বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ একক দূষক হিসেবে আর্সেনিককে (As) বিবেচনা করা হয়। ভূ-জলে আর্সেনিকের উৎস হলো ভূতাত্ত্বিকভাবে মিশ্রিত আর্সেনিক। আর্সেনিক ভারাক্রান্ত ভূজলের গভীরতায় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যা নির্ভর করে জারণ-বিজারণে সক্ষম আর্সেনিক মণিক সংবলিত স্তরের গভীরতার উপর। আর্সেনিক সংবলিত পানি দ্বারা সেচ দেওয়া হলে মৃত্তিকা দূষিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির কৈশিক উত্থানের মাধ্যমে উপরের ক্ষিতিজে আর্সেনিকের সঞ্চয়ন ঘটাও স্বাভাবিক। মৃত্তিকায় আর্সেনিকের সর্বোচ্চ মানের পরিসর ১০-১২ পিপিএস। সীসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম এবং আরও অনেক জৈবপদার্থ মৃত্তিকাকে দূষিত করছে। এ প্রকারের দূষণের ঘটনা শিল্প-কারখানা অঞ্চলের চারদিকে এবং নগর-প্রান্তের (peri-urban) যেখানে নর্দমার ময়লা নিক্ষেপ করা হয় সেসব এলাকাতে ঘটে। যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া কৃষি জমিতে প্রচুর পরিমাণে সীসা সঞ্চয়নে অবদান রাখে। অসমঞ্জস নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার কখনো কখনো ভূগর্ভস্থ ও পৃষ্ঠ পানিতে নাইট্রেট দূষণের সৃষ্টি করে। যদিও এ উৎস থেকে সৃষ্ট দূষণ তেমন লক্ষণীয় নয়, তবুও অবহেলা করা যায় না এবং যথাযথভাবে এবং সময়মতো দৃষ্টিগোচরে আনা প্রয়োজন। | '''''দূষক''''' (contaminants) বর্তমানে বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ একক দূষক হিসেবে আর্সেনিককে (As) বিবেচনা করা হয়। ভূ-জলে আর্সেনিকের উৎস হলো ভূতাত্ত্বিকভাবে মিশ্রিত আর্সেনিক। আর্সেনিক ভারাক্রান্ত ভূজলের গভীরতায় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যা নির্ভর করে জারণ-বিজারণে সক্ষম আর্সেনিক মণিক সংবলিত স্তরের গভীরতার উপর। আর্সেনিক সংবলিত পানি দ্বারা সেচ দেওয়া হলে মৃত্তিকা দূষিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির কৈশিক উত্থানের মাধ্যমে উপরের ক্ষিতিজে আর্সেনিকের সঞ্চয়ন ঘটাও স্বাভাবিক। মৃত্তিকায় আর্সেনিকের সর্বোচ্চ মানের পরিসর ১০-১২ পিপিএস। সীসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম এবং আরও অনেক জৈবপদার্থ মৃত্তিকাকে দূষিত করছে। এ প্রকারের দূষণের ঘটনা শিল্প-কারখানা অঞ্চলের চারদিকে এবং নগর-প্রান্তের (peri-urban) যেখানে নর্দমার ময়লা নিক্ষেপ করা হয় সেসব এলাকাতে ঘটে। যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া কৃষি জমিতে প্রচুর পরিমাণে সীসা সঞ্চয়নে অবদান রাখে। অসমঞ্জস নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার কখনো কখনো ভূগর্ভস্থ ও পৃষ্ঠ পানিতে নাইট্রেট দূষণের সৃষ্টি করে। যদিও এ উৎস থেকে সৃষ্ট দূষণ তেমন লক্ষণীয় নয়, তবুও অবহেলা করা যায় না এবং যথাযথভাবে এবং সময়মতো দৃষ্টিগোচরে আনা প্রয়োজন। | ||
'''মৃত্তিকার অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার''' কৃষি আবাদী মৃত্তিকাকে ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্য আইন তৈরি করা এখনই প্রয়োজন। অনেক কৃষিযোগ্য ভূমিকে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের আওতাধীনে আনা হয়েছে। প্রধান জনপথ বরাবর উর্বর কৃষি ভূমিতে ইটের ভাঁটি তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এসব ভূমি ব্যক্তি মালিকানাধীন সেহেতু এসব ভূমি ব্যবহারের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বনভূমিকেও নগরায়ণ ও শিল্পায়নের আওতাধীনে আনা হয়েছে। বর্তমানে বনাঞ্চলের পরিমাণ মোট ভূমির কেবলমাত্র ৭ শতাংশের কাছাকাছি। নিজস্ব স্বার্থে অতি মাত্রায় ভূমি ব্যবহার, অর্থাৎ নতুনভাবে সরবরাহ ব্যতীত নিবিড় চাষাবাদের জন্য ভূমি ব্যবহারের ফলে মৃত্তিকাতে পুষ্টি উপাদান শূন্য হয়ে পড়ছে এবং এর পরিণতিতে মৃত্তিকা নিষ্ফলা হয়ে যাবে। মাত্রাতিরিক্ত লোভ, অদূরদর্শিতার অভাব, যথাযথ সতর্কতা ও শাস্তিমূলক আইনের অভাব এদেশের সীমিত ভূমির অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারকে অধিক গুরুতর করে তুলেছে এবং এর ফলে মৃত্তিকাকে অতিমাত্রায় মাশুল দিতে হচ্ছে। | '''''মৃত্তিকার অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার''''' কৃষি আবাদী মৃত্তিকাকে ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্য আইন তৈরি করা এখনই প্রয়োজন। অনেক কৃষিযোগ্য ভূমিকে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের আওতাধীনে আনা হয়েছে। প্রধান জনপথ বরাবর উর্বর কৃষি ভূমিতে ইটের ভাঁটি তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এসব ভূমি ব্যক্তি মালিকানাধীন সেহেতু এসব ভূমি ব্যবহারের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বনভূমিকেও নগরায়ণ ও শিল্পায়নের আওতাধীনে আনা হয়েছে। বর্তমানে বনাঞ্চলের পরিমাণ মোট ভূমির কেবলমাত্র ৭ শতাংশের কাছাকাছি। নিজস্ব স্বার্থে অতি মাত্রায় ভূমি ব্যবহার, অর্থাৎ নতুনভাবে সরবরাহ ব্যতীত নিবিড় চাষাবাদের জন্য ভূমি ব্যবহারের ফলে মৃত্তিকাতে পুষ্টি উপাদান শূন্য হয়ে পড়ছে এবং এর পরিণতিতে মৃত্তিকা নিষ্ফলা হয়ে যাবে। মাত্রাতিরিক্ত লোভ, অদূরদর্শিতার অভাব, যথাযথ সতর্কতা ও শাস্তিমূলক আইনের অভাব এদেশের সীমিত ভূমির অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারকে অধিক গুরুতর করে তুলেছে এবং এর ফলে মৃত্তিকাকে অতিমাত্রায় মাশুল দিতে হচ্ছে। | ||
এসব প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছর ধরে দানাশস্য ও অন্যান্য শস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। [এস.এম ইমামুল হক] | এসব প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছর ধরে দানাশস্য ও অন্যান্য শস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। [এস.এম ইমামুল হক] |
০৪:৫৫, ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মৃত্তিকা উর্বরতা (Soil Fertility) গাছের বৃদ্ধিতে কোন মৌলের দ্বারা সৃষ্ট বিষাক্ত প্রভাব ব্যতীত অপরিহার্য মৌলসমূহ সরবরাহ করার মৃত্তিকার ক্ষমতা। মৃত্তিকাতে জন্মে এমন সব শস্যের জন্য ১৭টি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ১৪টি পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার মৃত্তিকার একটি স্বাভাবিক ক্ষমতাই হলো মৃত্তিকার উর্বরতা। যখন গাছের বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য নিয়ামক, যেমন- আলো, পানি, তাপমাত্রা এবং মৃত্তিকার ভৌত অবস্থা অনুকূল থাকে তখন সুনির্দিষ্ট গাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং সঠিক ভারসাম্যে যৌগ বা মৌল প্রদান করার ক্ষমতা মৃত্তিকার একটি গুণ। সুতরাং উর্বরতা হলো শস্য উৎপাদন করতে কোন মৃত্তিকার পুষ্টি উপাদান সরবরাহের কর্মক্ষম অবস্থা। যেহেতু গাছপালা বিভিন্ন মৃত্তিকাতে এবং বিভিন্ন জলবায়ুগত অবস্থায় বিকশিত হয়, সেহেতু অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজনও এদের জন্য ভিন্ন হয় এবং বিষাক্ত মৌলের প্রতিও এদের সহনশীলতা ভিন্ন হয়ে থাকে। কোন মৃত্তিকা কোন এক প্রকার গাছের জন্য উর্বর হতে পারে, কিন্তু অন্য গাছের জন্য অনুর্বর হয়ে থাকে। অন্যদিকে, মৃত্তিকার উৎপাদনশীলতা হলো একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট শস্য বা ক্রমান্বয়ে জন্মানো শস্য উৎপাদনে মৃত্তিকার ক্ষমতার পরিমাপ। বাংলাদেশের মৃত্তিকার স্বাভাবিক উর্বরতা ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহে প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলো সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হলো।
মৃত্তিকা বিক্রিয়া বাংলাদেশের মৃত্তিকার গড় পিএইচ মান এসিডীয় এবং এ মানের পরিসর ৫.৫ থেকে ৬.৫। গাঙ্গেয় পলল মৃত্তিকা, বিশেষ করে চুনযুক্ত মৃত্তিকার পিএইচ মান ৭.০-এর চেয়ে বেশি এবং এ মান ৮.৫ পর্যন্ত হতে পারে। এসব মৃত্তিকাতে মুক্ত কার্বনেট ও বাইকার্বনেট থাকে। উঁচুভূমি এবং পাহাড়ের মৃত্তিকা সাধারণত এসিডীয় প্রকৃতির। পিএইচ মানের পার্থক্যের কারণে পুষ্টি উপাদানের লভ্যতা, বিশেষ করে ফসফরাস ও অণুপুষ্টি উপাদানের লভ্যতা প্রভাবিত হয়। অন্যদিকে নিচু ভূমিতে ধান চাষ মৃত্তিকার আদি বিক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয় না, কারণ জলমগ্ন করা হলে মৃত্তিকার পিএইচ মানের পরিসর ৬.৫ থেকে ৭.৫-এর মধ্যে বিদ্যমান থাকে। চা জন্মে এমন মৃত্তিকা ব্যতীত অন্য যেসব মৃত্তিকার পিএইচ মান ৪.৫-এর কম থাকে, সেসব মৃত্তিকাতে চুন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। সাধারণত এসিড সালফেট মৃত্তিকা ও পাহাড়ি মৃত্তিকার পিএইচ মান ৪.৫-এর কম থাকে। উঁচু ভূমিতে উৎপাদিত শস্যগুলো স্থানীয় মৃত্তিকা পিএইচ মানে নিজেদেরকে অভিযোজিত করে নেয়। পিএইচ মানের ভিত্তিতে মৃত্তিকার শ্রেণীবিন্যাসটি হলো: (ক) চরম এসিডীয়, পিএইচ মান ৪-এর কম; (খ) প্রবল এসিডীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৪.৫ থেকে ৫.৫; (গ) মধ্যম এসিডীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৫.৬ থেকে ৬.৫; (ঘ) নিরপেক্ষ, পিএইচ মানের পরিসর ৬.৬ থেকে ৭.৩; (ঙ) মধ্যম ক্ষারীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৭.৪ থেকে ৮.৪; (চ) প্রবল ক্ষারীয়, পিএইচ মানের পরিসর ৮.৫ থেকে ৯.০ এবং (ছ) অত্যন্ত প্রবল ক্ষারীয়, পিএইচ মান ৯.০।
জৈবপদার্থের অবস্থা মৃত্তিকার জৈবপদার্থের পরিমাণের দিক থেকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা কম জৈবপদার্থ সংবলিত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। এ দেশের মৃত্তিকার গড় জৈবপদার্থের পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম এবং এ মানের পরিসর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ০.০৫ থেকে ০.৯ শতাংশ। পিট অঞ্চল ও কিছু কিছু নিচুভূমি এলাকাতে জৈবপদার্থের গড় পরিমাণ সাধারণত ২ শতাংশের বেশি। দেশের কৃষিতে বিদ্যমান প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহের মধ্যে একটি হলো মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থ সরবরাহ। তৎসত্ত্বেও দেশে ভালো শস্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০০০ সালে দানা শস্যের উৎপাদন ছিল ২৭ মিলিয়ন টনেরও বেশি, যার মধ্যে ৯ মিলিয়ন টন ছিল উদ্বৃত্ত। এটা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র অধিক মাত্রায় সাংশ্লেষিক সার এবং উন্নত জাতের বীজ ব্যবহারের কারণে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকা সাংশ্লেষিক সারের সঙ্গে যখন জৈবপদার্থ প্রয়াগ করা হয় তখন অধিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।
নাইট্রোজেনের অবস্থা বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থের পরিমাণ কম থাকার কারণে নাইট্রোজেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম এবং সব মৃত্তিকাতে উৎপাদিত অধিকাংশ শস্য নাইট্রোজেন প্রয়োগের ফলে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। প্রকৃতপক্ষে, নাইট্রোজেন সারই এদেশে ব্যবহূত অতি পরিচিত সার। এদেশে ছয়টি সার কারখানায় মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হয়। ধানসহ অধিকাংশ শস্য সারবিহীন অবস্থায় উৎপাদনের তুলনায় সারসহ সাধারণত দুই থেকে তিন গুণ বেশি উৎপাদিত হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে বাংলাদেশে নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার ২ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও অধিক ছিল।
ফসফরাসের অবস্থা বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে লভ্য ফসফরাসের পরিমাণকে স্বল্প থেকে মধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মৃত্তিকাতে সার প্রয়োগ করা হলে অধিকাংশ শস্য প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। ফসফরাসের লভ্যতা পিএইচের উপর নির্ভরশীল। মৃত্তিকাতে ফসফরাস সরবরাহের উৎস হলো অজৈব সার। কিন্তু এ সারের ব্যবহার নাইট্রোজেন সার সরবরাহের সঙ্গে আনুপাতিক নয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ট্রিপল সুপার ফসফেট (TSP) ও সিঙ্গেল সুপার ফসফেটের (SSP) ব্যবহার ছিল মাত্র ১১২,০০০ টন।
পটাশিয়ামের অবস্থা বাংলাদেশের মৃত্তিকা পটাশিয়াম ঘাটতিসম্পন্ন নয়, কিন্তু অধিকাংশ মৃত্তিকাতে পটাশ সার প্রয়োগে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে দেখা গিয়েছে। অ-পাললিক (non-alluvial) ও উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকাতেই বিশেষভাবে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বাংলাদেশের মৃত্তিকার জন্য অ্যামোনিয়াম অ্যাসিটেট দ্বারা নির্যাসযোগ্য (extractable) পটাশিয়ামের পরিমাণ প্রায় ০.১২ মিলিতুল্য শতাংশকে (me/100g soil) সন্ধিক্ষণ মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সালফারের অবস্থা অধিকাংশ মৃত্তিকাতেই সালফার প্রয়োগের ফলে শস্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, কিন্তু উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকা, এসিড সালফেট মৃত্তিকা ও কিছু কিছু এসিডীয় মৃত্তিকাতে এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাসমূহে সেচের মাধ্যমে জন্মানো শস্যগুলো সালফার প্রয়োগে লক্ষণীয় প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। প্রায় চার মিলিয়ন হেক্টর জমি সালফার প্রয়োগে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে বলে মনে করা হয়। সালফারের প্রধান উৎস হলো জিপসাম।
দস্তা ও বোরন সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে যে বাংলাদেশের মৃত্তিকা, বিশেষ করে স্থায়িভাবে জলমগ্ন মৃত্তিকা ও যেসব মৃত্তিকাতে সেচ দেওয়া হয় সেসব মৃত্তিকাতে দস্তা ও বোরন প্রয়োগের ফলে শস্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এসব মৃত্তিকার মধ্যে চুনযুক্ত পললভূমি মৃত্তিকা একটি। প্রায় ১.৭ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে দস্তার ঘাটতি রয়েছে বলে হিসাব করা হয়েছে।
অন্যান্য অণুপুষ্টি উপাদান দস্তা ও বোরনের মতো অন্যান্য অণুপুষ্টি উপাদান প্রয়োগের প্রতিক্রিয়া কোন মৃত্তিকাতে কোন বিশেষ গাছের জন্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু পিট এলাকা ও অন্যান্য মৃত্তিকাতে Mn প্রয়োগের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিবেশ অঞ্চলে Mo প্রয়োগের ফলে শস্যে প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে।
ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং অধিকাংশ মৃত্তিকাতেই ১:১ এঁটেল ও মিহি দানাদার মাইকা (ইলাইট) বিদ্যমান। এ কারণে বাংলাদেশের মৃত্তিকার ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা সাধারণত বেশি নয়। ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতার (মিলিতুল্য শতাংশ) ভিত্তিতে তৈরি বাংলাদেশের মৃত্তিকার শ্রেণীবিন্যাসটি হলো: অতি অধিক (৩০); অধিক (১৫-৩০); মধ্যম (৭.৫-১৫.০); কম (৩.০-৭.৫) এবং অতি কম (৩.০)।
মৃত্তিকা লবণাক্ততা উপকূলীয় অঞ্চলের বিরাট এলাকাতে মৌসুম মাফিক লবণাক্ততার সৃষ্টি হয়। এ এলাকার লবণাক্ততা প্রধানত Cl-SO4 ধরনের। যেহেতু সামুদ্রিক পানির অনুপ্রবেশের দ্বারা লবণাক্ততার সৃষ্টি হয়, সেহেতু উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকাতে বিদ্যমান Ca:Mg অনুপাত ১-এর চেয়ে কম, যা মারাত্মক উর্বরতা সমস্যার সৃষ্টি করে। লবণাক্ত এলাকার অধিকাংশ জমিতেই বছরে একটি শস্য জন্মানো হয়।
কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের উর্বরতা অবস্থা পুরাতন হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমতলভূমি পৃষ্ঠমৃত্তিকার বিক্রিয়া প্রবল এসিডীয় এবং অন্তঃমৃত্তিকার বিক্রিয়া মধ্যম এসিডীয়। জৈবপদার্থের পরিমাণ অন্যান্য পললভূমি মৃত্তিকার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। স্থূল গ্রথনের মৃত্তিকা ব্যতীত মৃত্তিকার স্বাভাবিক উর্বরতা মধ্যম মাত্রার, কিন্তু উর্বরতা বজায় রাখার জন্য উত্তম। মৃত্তিকা উর্বরতা সংক্রান্ত সমস্যার মধ্যে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, সালফার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরনের দ্রুত ক্ষালন অন্তর্ভুক্ত।
সক্রিয় তিস্তা পললভূমি মৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়, জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা মধ্যম। মৃত্তিকা উর্বরতা অবস্থা স্বল্প থেকে মধ্যম।
তিস্তা বিসর্প (meander) পললভূমি মৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়, উঁচু অবস্থানের ভূমির জৈবপদার্থের পরিমাণ স্বল্প, কিন্তু নিচু অবস্থানের মৃত্তিকাতে এর পরিমাণ মধ্যম। উর্বরতার মাত্রা সাধারণত স্বল্প থেকে মধ্যম, কিন্তু অধিকাংশ স্থানের পটাশিয়ামের পরিমাণ ও ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা মধ্যম।
করতোয়া বাঙ্গালী পললভূমি মৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়, উঁচু এলাকার জৈবপদার্থের পরিমাণ কম, কিন্তু অববাহিকা এলাকার মধ্যম। স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা মধ্যম।
নিম্ন আত্রাই অববাহিকা মৃত্তিকা এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ, ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা ও উর্বরতা অবস্থা মধ্যম।
নিম্ন পুনর্ভবা পললভূমি মৃত্তিকা এসিডীয়; অধিক ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতাসহ জৈবপদার্থের পরিমাণ মধ্যম থেকে অধিক। স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা মধ্যম কিন্তু পটাশিয়ামের পরিমাণ অধিক।
সক্রিয় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা পললভূমি মৃত্তিকার বিক্রিয়া মৃদু ক্ষারীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং উর্বরতা অবস্থা স্বল্প থেকে মধ্যম। সাধারণত নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের পরিমাণ শস্য উৎপাদনে অন্তরায় সৃষ্টি করে, কিন্তু পরিমিত পরিমাণে পটাশিয়াম, সালফার ও দস্তা বিদ্যমান।
নতুন ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা পললভূমি মৃত্তিকা নিরপেক্ষ থেকে মৃদু এসিডীয় বিক্রিয়াসম্পন্ন; উঁচু এলাকায় জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং অববাহিকা এলাকায় মধ্যম। মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও সালফারের অভাব রয়েছে, কিন্তু পটাশিয়াম ও দস্তার অবস্থা পরিমিত।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললভূমি পৃষ্ঠমৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয় কিন্তু অন্তঃমৃত্তিকা নিরপেক্ষ বিক্রিয়াসম্পন্ন। উঁচু এলাকায় জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং অববাহিকা এলাকায় মধ্যম। স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা কম। ফসফরাস ও ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতার মান মধ্যম এবং উঁচুভূমিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ কম কিন্তু নিচুভূমিতে মধ্যম।
সক্রিয় গঙ্গা পললভূমি মৃত্তিকার বিক্রিয়া মৃদু ক্ষারীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা অধিকসহ স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা মধ্যম, কিন্তু এসব মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন এবং লভ্য ফসফরাস ও দস্তার অভাব রয়েছে।
উঁচু গঙ্গা নদী পললভূমি মৃদু ক্ষারীয় বিক্রিয়াসম্পন্ন; বাদামি উঁচু মৃত্তিকার জৈবপদার্থের পরিমাণ কম, কিন্তু গাঢ় ধূসর মৃত্তিকার জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি। যদিও ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা মধ্যম মানের, কিন্তু স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা স্বল্প।
নিম্ন গঙ্গা নদী পললভূমি মৃত্তিকার বিক্রিয়া নিরপেক্ষ থেকে মৃদু ক্ষারীয়; উঁচু এলাকায় জৈবপদার্থের পরিমাণ কম এবং অববাহিকা এলাকায় মধ্যম। স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা মধ্যম, কিন্তু ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি।
গঙ্গা কটাল (tidal) পললভূমি অধিকাংশ পৃষ্ঠমৃত্তিকা এসিডীয় এবং অন্তঃমৃত্তিকা নিরপেক্ষ থেকে মৃদু ক্ষারীয়। স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা বেশি এবং সেসঙ্গে জৈবপদার্থের পরিমাণ মধ্যম থেকে অধিক ও ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা অতি বেশি। অধিক পরিমাণের বিনিময়যোগ্য সোডিয়াম এবং স্বল্প Ca/Mg অনুপাত শস্য উৎপাদনে সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।
গোপালগঞ্জ-খুলনা বিল অবিকশিত প্রবল এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ সাধারণত দুই শতাংশের বেশি। ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা অধিক এবং স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা মধ্যম থেকে অধিক।
মধ্য মেঘনা নদী পললভূমি পৃষ্ঠমৃত্তিকা প্রবলভাবে এসিডীয় এবং অন্তঃমৃত্তিকা মৃদু এসিডীয় থেকে মৃদু ক্ষারীয়। স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা মধ্যম, কিন্তু নাইট্রোজেন ও জৈবপদার্থের মাত্রা পরিমাণে কম।
লোয়ার মেঘনা নদী পললভূমি পৃষ্ঠমৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয় এবং অন্তঃমৃত্তিকা নিরপেক্ষ বিক্রিয়া সম্পন্ন। জৈবপদার্থের পরিমাণ স্বল্প থেকে মধ্যম এবং স্বাভাবিক উর্বরতা অবস্থা মধ্যম।
মেঘনা মোহনাজ নতুন পললভূমি মৃত্তিকা মৃদু ক্ষারীয়। স্বাভাবিক উর্বরতা মধ্যম কিন্তু নাইট্রোজেন ও জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। সালফারের পরিমাণ মধ্যম থেকে অধিক।
মেঘনা মোহনাজ পুরাতন পললভূমি পৃষ্ঠমৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়, কিন্তু অন্তঃমৃত্তিকা নিরপেক্ষ। স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা মধ্যম। উঁচুভূমিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ কম কিন্তু নিচুভূমিতে স্বল্প থেকে মধ্যম।
পূর্বাঞ্চলীয় সুরমা কুশিয়ারা পললভূমি মৃত্তিকার বিক্রিয়া চরম এসিডীয় থেকে নিরপেক্ষ। মৃত্তিকাতে মধ্যম মাত্রায় জৈবপদার্থ বিদ্যমান। ধনাত্মক আয়ন বিনিময় ক্ষমতা ও দস্তার পরিমাণ অধিক, অন্যান্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ মধ্যম।
সিলেট বিল প্রধানত এসিডীয় বিক্রিয়া সম্পন্ন; জৈবপদার্থের পরিমাণ মধ্যম। উর্বরতার মাত্রা মধ্যম থেকে অধিক, ফসফরাসের পরিমাণ কম কিন্তু দস্তার পরিমাণ বেশি।
উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাদদেশীয় সমতলভূমি মৃত্তিকার বিক্রিয়া মৃদু থেকে প্রবল এসিডীয়। স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা স্বল্প থেকে মধ্যম। চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমতলভূমি মধ্যম মাত্রায় এসিডীয়। জৈবপদার্থের পরিমাণ স্বল্প থেকে মধ্যম। মৃত্তিকার স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা মধ্যম, কিন্তু শস্য উৎপাদন সীমিতকারী মাত্রায় নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম বিদ্যমান। সালফারের পরিমাণ অধিক।
সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ মৃত্তিকার বিক্রিয়া নিরপেক্ষ, স্বাভাবিক উর্বরতা মাত্রা কম।
সমতল বরেন্দ্রভূমি মৃদু এসিডীয় থেকে এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ অত্যন্ত কম। অধিকাংশ লভ্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ শস্য উৎপাদন ব্যাহতকারী মাত্রার নিচে।
উঁচু বরেন্দ্রভূমি মৃত্তিকা বিক্রিয়া এসিডীয় থেকে প্রবল এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা কম। দস্তার পরিমাণ মধ্যম থেকে অধিক।
উত্তর-পূর্ব বরেন্দ্রভূমি প্রবল এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। অধিক পরিমাণে বিদ্যমান দস্তাসহ স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা কম।
মধুপুর গড় প্রবল এসিডীয় বিক্রিয়াসম্পন্ন মৃত্তিকা এবং জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। উর্বরতার মাত্রা কম। মৃত্তিকাগুলো প্রধানত ফসফেট আবদ্ধকারী ধর্মসম্পন্ন এবং পটাশিয়াম, সালফার ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম।
উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় মৃত্তিকার বিক্রিয়া এসিডীয়; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম। স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা কম।
আখাউড়া চালাভূমি প্রবল এসিডীয় বিক্রিয়াসম্পন্ন মৃত্তিকা; জৈবপদার্থের পরিমাণ কম; স্বাভাবিক উর্বরতার মাত্রা কম।
দূষক (contaminants) বর্তমানে বাংলাদেশের মৃত্তিকাতে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ একক দূষক হিসেবে আর্সেনিককে (As) বিবেচনা করা হয়। ভূ-জলে আর্সেনিকের উৎস হলো ভূতাত্ত্বিকভাবে মিশ্রিত আর্সেনিক। আর্সেনিক ভারাক্রান্ত ভূজলের গভীরতায় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যা নির্ভর করে জারণ-বিজারণে সক্ষম আর্সেনিক মণিক সংবলিত স্তরের গভীরতার উপর। আর্সেনিক সংবলিত পানি দ্বারা সেচ দেওয়া হলে মৃত্তিকা দূষিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির কৈশিক উত্থানের মাধ্যমে উপরের ক্ষিতিজে আর্সেনিকের সঞ্চয়ন ঘটাও স্বাভাবিক। মৃত্তিকায় আর্সেনিকের সর্বোচ্চ মানের পরিসর ১০-১২ পিপিএস। সীসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম এবং আরও অনেক জৈবপদার্থ মৃত্তিকাকে দূষিত করছে। এ প্রকারের দূষণের ঘটনা শিল্প-কারখানা অঞ্চলের চারদিকে এবং নগর-প্রান্তের (peri-urban) যেখানে নর্দমার ময়লা নিক্ষেপ করা হয় সেসব এলাকাতে ঘটে। যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া কৃষি জমিতে প্রচুর পরিমাণে সীসা সঞ্চয়নে অবদান রাখে। অসমঞ্জস নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার কখনো কখনো ভূগর্ভস্থ ও পৃষ্ঠ পানিতে নাইট্রেট দূষণের সৃষ্টি করে। যদিও এ উৎস থেকে সৃষ্ট দূষণ তেমন লক্ষণীয় নয়, তবুও অবহেলা করা যায় না এবং যথাযথভাবে এবং সময়মতো দৃষ্টিগোচরে আনা প্রয়োজন।
মৃত্তিকার অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার কৃষি আবাদী মৃত্তিকাকে ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্য আইন তৈরি করা এখনই প্রয়োজন। অনেক কৃষিযোগ্য ভূমিকে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের আওতাধীনে আনা হয়েছে। প্রধান জনপথ বরাবর উর্বর কৃষি ভূমিতে ইটের ভাঁটি তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এসব ভূমি ব্যক্তি মালিকানাধীন সেহেতু এসব ভূমি ব্যবহারের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বনভূমিকেও নগরায়ণ ও শিল্পায়নের আওতাধীনে আনা হয়েছে। বর্তমানে বনাঞ্চলের পরিমাণ মোট ভূমির কেবলমাত্র ৭ শতাংশের কাছাকাছি। নিজস্ব স্বার্থে অতি মাত্রায় ভূমি ব্যবহার, অর্থাৎ নতুনভাবে সরবরাহ ব্যতীত নিবিড় চাষাবাদের জন্য ভূমি ব্যবহারের ফলে মৃত্তিকাতে পুষ্টি উপাদান শূন্য হয়ে পড়ছে এবং এর পরিণতিতে মৃত্তিকা নিষ্ফলা হয়ে যাবে। মাত্রাতিরিক্ত লোভ, অদূরদর্শিতার অভাব, যথাযথ সতর্কতা ও শাস্তিমূলক আইনের অভাব এদেশের সীমিত ভূমির অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারকে অধিক গুরুতর করে তুলেছে এবং এর ফলে মৃত্তিকাকে অতিমাত্রায় মাশুল দিতে হচ্ছে।
এসব প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছর ধরে দানাশস্য ও অন্যান্য শস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। [এস.এম ইমামুল হক]