সাংবিধানিক সংশোধনী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''সাংবিধানিক সংশোধনী''' গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত | '''সাংবিধানিক সংশোধনী''' গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। সেসব সংশোধনীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ: | ||
প্রথম সংশোধনী | '''''প্রথম সংশোধনী আইন''''' ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই সংবিধান (প্রথম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৩ গৃহীত হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদে একটি অতিরিক্ত দফা সংযুক্ত করা হয়, যা ‘গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনে অন্যান্য অপরাধ’-এর দায়ে যে কোনো ব্যক্তির বিচার ও শাস্তি অনুমোদন করে। ৪৭ অনুচ্ছেদের পরে একটি নতুন অনুচ্ছেদ ৪৭ক সংযুক্ত করা হয়, যাতে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয় যে, উপরে বর্ণিত অপরাধসমূহের ক্ষেত্রে কতিপয় মৌলিক অধিকার প্রযোজ্য হবে না। | ||
দ্বিতীয় সংশোধনী আইন সংবিধান (দ্বিতীয় সংশোধনী) | '''''দ্বিতীয় সংশোধনী আইন''''' সংবিধান (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইন, ১৯৭৩ গৃহীত হয় ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। এই আইনের ফলে (১) সংবিধানের ২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২ নং অনুচ্ছেদ সংশোধিত হয়; (২) ৩৩ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হয়, এবং (৩) সংবিধানে একটি নতুন ভাগ, যথা ভাগ ৯ক সংযুক্ত হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরি অবস্থাকালীন সময়ে নাগরিকদের কতিপয় মৌলিক অধিকার স্থগিত করা হয়। | ||
তৃতীয় সংশোধনী আইন সংবিধান (তৃতীয় সংশোধনী) আইন ১৯৭৪ বলবৎ হয় ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর। এর দ্বারা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কতিপয় ছিটমহল বিনিময় ও সীমান্ত রেখা নির্ধারণের ব্যাপারে একটি চুক্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে সংবিধানের ২ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়। | '''''তৃতীয় সংশোধনী আইন''''' সংবিধান (তৃতীয় সংশোধনী) আইন, ১৯৭৪ বলবৎ হয় ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর। এর দ্বারা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কতিপয় ছিটমহল বিনিময় ও সীমান্ত রেখা নির্ধারণের ব্যাপারে একটি চুক্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে সংবিধানের ২ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়। | ||
চতুর্থ সংশোধনী আইন সংবিধান (চতুর্থ সংশোধনী) আইন ১৯৭৫ গৃহীত হয় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। এই সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানে কতিপয় বড় পরিবর্তন আনা হয়। সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়; বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থলে আনা হয় একদলীয় ব্যবস্থা; জাতীয় সংসদের কতক ক্ষমতা খর্ব করা হয়; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অনেকটা খর্ব হয়; সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ রক্ষা ও প্রয়োগের এখতিয়ার থেকে বঞ্চিত হয়। এই আইন দ্বারা (১) সংবিধানের ১১, ৬৬, ৬৭, ৭২, ৭৪, ৭৬, ৮০, ৮৮, ৯৫, ৯৮, ১০৯, ১১৬, ১১৭, ১১৯, ১২২, ১২৩, ১৪১ক এবং ১৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়; (২) ৪৪, ৭০, ১০২, ১১৫ ও ১২৪ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়; (৩) সংবিধানের তৃতীয় ভাগ সংশোধন করা হয়; (৪) তৃতীয় ও চতুর্থ তফসিল পরিবর্তন করা হয়; (৫) প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়; (৬) রাষ্ট্রপতির পদ ও এই পদের প্রার্থী সম্পর্কে বিশেষ বিধান করা হয়; (৭) সংবিধানে একটি নতুন (একাদশ) ভাগ সংযুক্ত করা হয়; এবং (৮) সংবিধানে ৭৩ক ও ১১৬ক অনুচ্ছেদ দুটি সংযুক্ত করা হয়। | '''''চতুর্থ সংশোধনী আইন''''' সংবিধান (চতুর্থ সংশোধনী) আইন, ১৯৭৫ গৃহীত হয় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। এই সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানে কতিপয় বড় পরিবর্তন আনা হয়। সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়; বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থলে আনা হয় একদলীয় ব্যবস্থা; জাতীয় সংসদের কতক ক্ষমতা খর্ব করা হয়; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অনেকটা খর্ব হয়; সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ রক্ষা ও প্রয়োগের এখতিয়ার থেকে বঞ্চিত হয়। এই আইন দ্বারা (১) সংবিধানের ১১, ৬৬, ৬৭, ৭২, ৭৪, ৭৬, ৮০, ৮৮, ৯৫, ৯৮, ১০৯, ১১৬, ১১৭, ১১৯, ১২২, ১২৩, ১৪১ক এবং ১৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়; (২) ৪৪, ৭০, ১০২, ১১৫ ও ১২৪ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়; (৩) সংবিধানের তৃতীয় ভাগ সংশোধন করা হয়; (৪) তৃতীয় ও চতুর্থ তফসিল পরিবর্তন করা হয়; (৫) প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়; (৬) রাষ্ট্রপতির পদ ও এই পদের প্রার্থী সম্পর্কে বিশেষ বিধান করা হয়; (৭) সংবিধানে একটি নতুন (একাদশ) ভাগ সংযুক্ত করা হয়; এবং (৮) সংবিধানে ৭৩ক ও ১১৬ক অনুচ্ছেদ দুটি সংযুক্ত করা হয়। | ||
পঞ্চম সংশোধনী | '''''পঞ্চম সংশোধনী আইন''''' এই সংবিধান আইন জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। এই আইন দ্বারা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের সংশোধন করা হয় এবং তাতে ১৮ প্যারাগ্রাফ নামে একটি নতুন প্যারাগ্রাফ যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখসহ ওই দিন থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত (ঐ দিনসহ) সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের যে কোনো ঘোষণা বা আদেশ বলে সম্পাদিত সংবিধানের সকল সংশোধনী, সংযুক্তি, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন ও বিলুপ্তি বৈধভাবে সম্পাদিত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনো কারণেই কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে এসবের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। | ||
'''''ষষ্ঠ সংশোধনী আইন''''' ১৯৮১ সালের সংবিধানের ৫১ ও ৬৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ কর্তৃক এই আইন কার্যকর হয়। | |||
সপ্তম সংশোধনী | '''''সপ্তম সংশোধনী আইন''''' ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর এই আইন পাস হয়। এই আইন দ্বারা সংবিধানের ৮৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়; এর দ্বারা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের সংশোধন করা হয় এবং তাতে ১৯ প্যারাগ্রাফ নামে একটি নতুন প্যারাগ্রাফ যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয় যে, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তারিখসহ ঐ দিন থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত (ঐ দিনসহ) সময়কালের মধ্যে গৃহীত সকল ঘোষণা, ঘোষণা আদেশ, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, সামরিক আইন বিধানাবলি, সামরিক আইন আদেশসমূহ, সামরিক আইন নির্দেশনাসমূহ, অধ্যাদেশসমূহ এবং অন্যান্য আইন বৈধভাবে সম্পাদিত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনো কারণে এসবের বিরুদ্ধে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। | ||
অষ্টম সংশোধী | '''''অষ্টম সংশোধী আইন''''' ১৯৮৮ সালের ৭ জুন এই সংশোধনী আইন পাস হয়। এর দ্বারা সংবিধানের ২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনী আইনবলে (১) ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষিত হয়; (২) ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়; (৩) সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদে ইবহমধষর শব্দটি পরিবর্তন করে ইধহমষধ করা হয় এবং উধপপধ পরিবর্তন করে উযধশধ করা হয়; (৪) সংবিধানের ৩০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতি ছাড়া এদেশের কোনো নাগরিক কর্তৃক কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রদত্ত কোনো খেতাব, সম্মাননা, পুরস্কার বা অভিধা গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পরবর্তী সময়ে সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদের সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, কারণ তার দ্বারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তিত হয়েছে। | ||
নবম সংশোধনী | '''''নবম সংশোধনী আইন''''' সংবিধান আইন, ১৯৮৯ (নবম সংশোধনী) পাস হয় ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে। এই সংশোধনী দ্বারা রাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রপতি পদে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বিধান করা হয়; রাষ্ট্রপতির পদে একই ব্যক্তির দায়িত্ব পালন পর পর দুই মেয়াদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয় (প্রতি মেয়াদকাল ৫ বছর)। এই সংশোধনীতে আরও বলা হয় যে, শূন্যতা সৃষ্টি হলে একজন উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা যেতে পারে, তবে সেই নিয়োগের পক্ষে জাতীয় সংসদের অনুমোদন আবশ্যক হবে। | ||
দশম সংশোধনী | '''''দশম সংশোধনী আইন''''' ১৯৯০ সালের ১২ জুন দশম সংশোধনী আইন কার্যকর হয়। এর দ্বারা, অন্যান্যের মধ্যে, সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়, যেসব আসনে নারীরা নির্বাচিত হবেন সংসদ সদস্যদের ভোটে। | ||
একাদশ সংশোধনী | '''''একাদশ সংশোধনী আইন''''' এই আইন পাস হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট। এ আইনবলে সংবিধানের চতুর্থ তফসিল সংশোধন করা হয় এবং তাতে ২১ নং নতুন প্যারাগ্রাফ সংযুক্ত করা হয়; এই প্যারাগ্রাফ বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি পদে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নিয়োগ ও শপথ গ্রহণ এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর নিকট রাষ্ট্রপতি এইচ.এম এরশাদের পদত্যাগ পত্র পেশ, এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস কর্তৃক ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণকে বৈধতা দান করে। এই সংশোধনী আইন ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর সময়কালের মধ্যে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে উপ-রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রয়োগকৃত সকল ক্ষমতা, প্রবর্তিত সকল আইন ও অধ্যাদেশ, জারিকৃত সকল আদেশ ও আইন এবং গৃহীত সকল পদক্ষেপ ও কার্যপ্রণালীকে অনুমোদন দেয়, নিশ্চিত করে ও বৈধতা দেয়। এই আইন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের পূর্ববর্তী পদ, অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদে প্রত্যাবর্তনকে সম্ভব করে ও এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়। | ||
দ্বাদশ সংশোধনী | '''''দ্বাদশ সংশোধনী আইন''''' বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিকাশের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে খ্যাত এই সংশোধনী আইন পাস হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট। এর দ্বারা সংবিধানের ৪৮, ৫৫, ৫৬, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৭০, ৭২. ১০৯, ১১৯, ১২৪, ১৪১ক এবং ১৪২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পুনঃপ্রবর্তন ঘটে; রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান হন; প্রধানমন্ত্রী হন রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী; প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ জাতীয় সংসদের কাছে দায়বদ্ধ হয়; উপ-রাষ্ট্রপতির পদ বিলোপ করা হয়, জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। তাছাড়া, সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এই আইনে স্থানীয় সরকার কাঠামোতে জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়, যা দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করে। | ||
ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন | '''''ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন''''' সংবিধান আইন, ১৯৯৬ (ত্রয়োদশ সংশোধনী) পাস হয় ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ। এর দ্বারা একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান করা হয়, যা একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে কাজ করবে এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বতোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। একজন প্রধান উপদেষ্টা ও অনূর্ধ্ব ১০ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে গঠিতব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমষ্টিগতভাবে রাষ্ট্রপতির নিকট দায়বদ্ধ থাকবে এবং নতুন সংসদ গঠনের পর নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের তারিখে বিলুপ্ত হবে। | ||
চতুর্দশ সংশোধনী | '''''চতুর্দশ সংশোধনী আইন''''' সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী আইন ২০০৪ সালের ১৬ মে সংসদে পাস হয়। বিভিন্ন বিধান সংবিধানে যুক্ত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৩০ থেকে ৪৫ এ উন্নীত করা হয়, যা পরবর্তী দশ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এছাড়াও এই সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরগ্রহণের বয়স ৬৫ থেকে ৬৭-তে বর্ধিত করা হয়। এর পাশাপাশি এই সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি তাদের স্ব স্ব কার্যলয়সহ সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে টানানোর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়। | ||
পঞ্চদশ সংশোধনী | '''''পঞ্চদশ সংশোধনী আইন''''' সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ২৫ জুন সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হয়। রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা আবারও প্রতিষ্ঠিত হয়। সংবিধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আরও যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা হলোÑ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০-এ উন্নীতকরণ এবং সংবিধানের পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদ ৭-এর স্থলে ৭(১) এবং ৭(খ) যুক্ত করা হয়, যার উদ্দেশ্য অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের সমাপ্তি ঘটানো। | ||
[ | '''''ষোড়শ ও সপ্তদশ সংশোধনী আইন''''' ষোড়শ সংশোধনীর ফলে উচ্চ আদালতের বিচারপতিগণের অভিশংসন প্রক্রিয়াটির জাতীয় সংসদের নিকট অর্পিত হয়। পূর্বে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অসদাচরণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে সংশোধনীটি বিচারিক সিদ্ধান্তে বাতিল ঘোষিত হয়েছে। সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী সাংসদদের আসনের মেয়াদ পরবর্তী ২৫ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ২০১৮ সালের ৮ জুলাই বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। [এমাজউদ্দীন আহমদ] | ||
[[en:Constitutional Amendments]] | [[en:Constitutional Amendments]] |
১৩:৫৯, ১৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
সাংবিধানিক সংশোধনী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। সেসব সংশোধনীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ:
প্রথম সংশোধনী আইন ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই সংবিধান (প্রথম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৩ গৃহীত হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদে একটি অতিরিক্ত দফা সংযুক্ত করা হয়, যা ‘গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনে অন্যান্য অপরাধ’-এর দায়ে যে কোনো ব্যক্তির বিচার ও শাস্তি অনুমোদন করে। ৪৭ অনুচ্ছেদের পরে একটি নতুন অনুচ্ছেদ ৪৭ক সংযুক্ত করা হয়, যাতে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয় যে, উপরে বর্ণিত অপরাধসমূহের ক্ষেত্রে কতিপয় মৌলিক অধিকার প্রযোজ্য হবে না।
দ্বিতীয় সংশোধনী আইন সংবিধান (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইন, ১৯৭৩ গৃহীত হয় ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। এই আইনের ফলে (১) সংবিধানের ২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২ নং অনুচ্ছেদ সংশোধিত হয়; (২) ৩৩ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হয়, এবং (৩) সংবিধানে একটি নতুন ভাগ, যথা ভাগ ৯ক সংযুক্ত হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরি অবস্থাকালীন সময়ে নাগরিকদের কতিপয় মৌলিক অধিকার স্থগিত করা হয়।
তৃতীয় সংশোধনী আইন সংবিধান (তৃতীয় সংশোধনী) আইন, ১৯৭৪ বলবৎ হয় ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর। এর দ্বারা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কতিপয় ছিটমহল বিনিময় ও সীমান্ত রেখা নির্ধারণের ব্যাপারে একটি চুক্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে সংবিধানের ২ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়।
চতুর্থ সংশোধনী আইন সংবিধান (চতুর্থ সংশোধনী) আইন, ১৯৭৫ গৃহীত হয় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। এই সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানে কতিপয় বড় পরিবর্তন আনা হয়। সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়; বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থলে আনা হয় একদলীয় ব্যবস্থা; জাতীয় সংসদের কতক ক্ষমতা খর্ব করা হয়; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অনেকটা খর্ব হয়; সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ রক্ষা ও প্রয়োগের এখতিয়ার থেকে বঞ্চিত হয়। এই আইন দ্বারা (১) সংবিধানের ১১, ৬৬, ৬৭, ৭২, ৭৪, ৭৬, ৮০, ৮৮, ৯৫, ৯৮, ১০৯, ১১৬, ১১৭, ১১৯, ১২২, ১২৩, ১৪১ক এবং ১৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়; (২) ৪৪, ৭০, ১০২, ১১৫ ও ১২৪ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়; (৩) সংবিধানের তৃতীয় ভাগ সংশোধন করা হয়; (৪) তৃতীয় ও চতুর্থ তফসিল পরিবর্তন করা হয়; (৫) প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়; (৬) রাষ্ট্রপতির পদ ও এই পদের প্রার্থী সম্পর্কে বিশেষ বিধান করা হয়; (৭) সংবিধানে একটি নতুন (একাদশ) ভাগ সংযুক্ত করা হয়; এবং (৮) সংবিধানে ৭৩ক ও ১১৬ক অনুচ্ছেদ দুটি সংযুক্ত করা হয়।
পঞ্চম সংশোধনী আইন এই সংবিধান আইন জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। এই আইন দ্বারা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের সংশোধন করা হয় এবং তাতে ১৮ প্যারাগ্রাফ নামে একটি নতুন প্যারাগ্রাফ যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখসহ ওই দিন থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত (ঐ দিনসহ) সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের যে কোনো ঘোষণা বা আদেশ বলে সম্পাদিত সংবিধানের সকল সংশোধনী, সংযুক্তি, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন ও বিলুপ্তি বৈধভাবে সম্পাদিত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনো কারণেই কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে এসবের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।
ষষ্ঠ সংশোধনী আইন ১৯৮১ সালের সংবিধানের ৫১ ও ৬৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ কর্তৃক এই আইন কার্যকর হয়।
সপ্তম সংশোধনী আইন ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর এই আইন পাস হয়। এই আইন দ্বারা সংবিধানের ৮৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়; এর দ্বারা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের সংশোধন করা হয় এবং তাতে ১৯ প্যারাগ্রাফ নামে একটি নতুন প্যারাগ্রাফ যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয় যে, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তারিখসহ ঐ দিন থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত (ঐ দিনসহ) সময়কালের মধ্যে গৃহীত সকল ঘোষণা, ঘোষণা আদেশ, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, সামরিক আইন বিধানাবলি, সামরিক আইন আদেশসমূহ, সামরিক আইন নির্দেশনাসমূহ, অধ্যাদেশসমূহ এবং অন্যান্য আইন বৈধভাবে সম্পাদিত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনো কারণে এসবের বিরুদ্ধে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।
অষ্টম সংশোধী আইন ১৯৮৮ সালের ৭ জুন এই সংশোধনী আইন পাস হয়। এর দ্বারা সংবিধানের ২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনী আইনবলে (১) ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষিত হয়; (২) ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়; (৩) সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদে ইবহমধষর শব্দটি পরিবর্তন করে ইধহমষধ করা হয় এবং উধপপধ পরিবর্তন করে উযধশধ করা হয়; (৪) সংবিধানের ৩০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতি ছাড়া এদেশের কোনো নাগরিক কর্তৃক কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রদত্ত কোনো খেতাব, সম্মাননা, পুরস্কার বা অভিধা গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পরবর্তী সময়ে সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদের সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, কারণ তার দ্বারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তিত হয়েছে।
নবম সংশোধনী আইন সংবিধান আইন, ১৯৮৯ (নবম সংশোধনী) পাস হয় ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে। এই সংশোধনী দ্বারা রাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রপতি পদে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বিধান করা হয়; রাষ্ট্রপতির পদে একই ব্যক্তির দায়িত্ব পালন পর পর দুই মেয়াদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয় (প্রতি মেয়াদকাল ৫ বছর)। এই সংশোধনীতে আরও বলা হয় যে, শূন্যতা সৃষ্টি হলে একজন উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা যেতে পারে, তবে সেই নিয়োগের পক্ষে জাতীয় সংসদের অনুমোদন আবশ্যক হবে।
দশম সংশোধনী আইন ১৯৯০ সালের ১২ জুন দশম সংশোধনী আইন কার্যকর হয়। এর দ্বারা, অন্যান্যের মধ্যে, সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়, যেসব আসনে নারীরা নির্বাচিত হবেন সংসদ সদস্যদের ভোটে।
একাদশ সংশোধনী আইন এই আইন পাস হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট। এ আইনবলে সংবিধানের চতুর্থ তফসিল সংশোধন করা হয় এবং তাতে ২১ নং নতুন প্যারাগ্রাফ সংযুক্ত করা হয়; এই প্যারাগ্রাফ বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি পদে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নিয়োগ ও শপথ গ্রহণ এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর নিকট রাষ্ট্রপতি এইচ.এম এরশাদের পদত্যাগ পত্র পেশ, এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস কর্তৃক ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণকে বৈধতা দান করে। এই সংশোধনী আইন ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর সময়কালের মধ্যে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে উপ-রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রয়োগকৃত সকল ক্ষমতা, প্রবর্তিত সকল আইন ও অধ্যাদেশ, জারিকৃত সকল আদেশ ও আইন এবং গৃহীত সকল পদক্ষেপ ও কার্যপ্রণালীকে অনুমোদন দেয়, নিশ্চিত করে ও বৈধতা দেয়। এই আইন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের পূর্ববর্তী পদ, অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদে প্রত্যাবর্তনকে সম্ভব করে ও এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়।
দ্বাদশ সংশোধনী আইন বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিকাশের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে খ্যাত এই সংশোধনী আইন পাস হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট। এর দ্বারা সংবিধানের ৪৮, ৫৫, ৫৬, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৭০, ৭২. ১০৯, ১১৯, ১২৪, ১৪১ক এবং ১৪২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পুনঃপ্রবর্তন ঘটে; রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান হন; প্রধানমন্ত্রী হন রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী; প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ জাতীয় সংসদের কাছে দায়বদ্ধ হয়; উপ-রাষ্ট্রপতির পদ বিলোপ করা হয়, জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। তাছাড়া, সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এই আইনে স্থানীয় সরকার কাঠামোতে জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়, যা দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করে।
ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন সংবিধান আইন, ১৯৯৬ (ত্রয়োদশ সংশোধনী) পাস হয় ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ। এর দ্বারা একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান করা হয়, যা একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে কাজ করবে এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বতোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। একজন প্রধান উপদেষ্টা ও অনূর্ধ্ব ১০ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে গঠিতব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমষ্টিগতভাবে রাষ্ট্রপতির নিকট দায়বদ্ধ থাকবে এবং নতুন সংসদ গঠনের পর নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের তারিখে বিলুপ্ত হবে।
চতুর্দশ সংশোধনী আইন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী আইন ২০০৪ সালের ১৬ মে সংসদে পাস হয়। বিভিন্ন বিধান সংবিধানে যুক্ত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৩০ থেকে ৪৫ এ উন্নীত করা হয়, যা পরবর্তী দশ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এছাড়াও এই সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরগ্রহণের বয়স ৬৫ থেকে ৬৭-তে বর্ধিত করা হয়। এর পাশাপাশি এই সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি তাদের স্ব স্ব কার্যলয়সহ সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে টানানোর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ২৫ জুন সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হয়। রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা আবারও প্রতিষ্ঠিত হয়। সংবিধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আরও যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা হলোÑ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০-এ উন্নীতকরণ এবং সংবিধানের পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদ ৭-এর স্থলে ৭(১) এবং ৭(খ) যুক্ত করা হয়, যার উদ্দেশ্য অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের সমাপ্তি ঘটানো।
ষোড়শ ও সপ্তদশ সংশোধনী আইন ষোড়শ সংশোধনীর ফলে উচ্চ আদালতের বিচারপতিগণের অভিশংসন প্রক্রিয়াটির জাতীয় সংসদের নিকট অর্পিত হয়। পূর্বে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অসদাচরণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে সংশোধনীটি বিচারিক সিদ্ধান্তে বাতিল ঘোষিত হয়েছে। সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী সাংসদদের আসনের মেয়াদ পরবর্তী ২৫ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ২০১৮ সালের ৮ জুলাই বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। [এমাজউদ্দীন আহমদ]