মোসলেম ভারত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''মোসলেম ভারত''' মাসিক সাহিত্য সাময়িকী হিসেবে ১৯২০ সালে [[কলকাতা|কলকাতা]] থেকে প্রকাশিত হয়। পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে শান্তিপুরের কবি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের নাম মুদ্রিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এর যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হতো তাঁর পুত্র এবং নির্বাহী সম্পাদক আফজালুল হক কর্তৃক। পত্রিকার প্রথম সংখ্যা ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (এপ্রিল-মে, ১৯২০) এবং সর্বশেষ সংখ্যা ১৩২৮ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি, ১৯২১-২২) প্রকাশিত হয়। এর বর্ণবহুল প্রচ্ছদে ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শিল্পকলা তুলে ধরা হতো। পত্রিকার প্রতি সংখ্যার প্রথম পাতার শীর্ষে রবীন্দ্রনাথের একটি বাণী সংকলিত হতো এবং তা হলো: ‘মানব-সংসারে জ্ঞানালোকের দিয়ালি-উৎসব চলিতেছে। প্রত্যেক জাতি আপনার আলোটীকে বড় করিয়া জ্বালাইলে তবে সকলে মিলিয়া এই উৎসব সমাধা হইবে।’ | '''মোসলেম ভারত''' মাসিক সাহিত্য সাময়িকী হিসেবে ১৯২০ সালে [[কলকাতা|কলকাতা]] থেকে প্রকাশিত হয়। পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে শান্তিপুরের কবি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের নাম মুদ্রিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এর যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হতো তাঁর পুত্র এবং নির্বাহী সম্পাদক আফজালুল হক কর্তৃক। পত্রিকার প্রথম সংখ্যা ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (এপ্রিল-মে, ১৯২০) এবং সর্বশেষ সংখ্যা ১৩২৮ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি, ১৯২১-২২) প্রকাশিত হয়। এর বর্ণবহুল প্রচ্ছদে ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শিল্পকলা তুলে ধরা হতো। পত্রিকার প্রতি সংখ্যার প্রথম পাতার শীর্ষে রবীন্দ্রনাথের একটি বাণী সংকলিত হতো এবং তা হলো: ‘মানব-সংসারে জ্ঞানালোকের দিয়ালি-উৎসব চলিতেছে। প্রত্যেক জাতি আপনার আলোটীকে বড় করিয়া জ্বালাইলে তবে সকলে মিলিয়া এই উৎসব সমাধা হইবে।’ | ||
[[Image:MoslemBharat.jpg|thumb|400px|right|মোসলেম ভারত-এর প্রচ্চদ]] | |||
আখ্যাপত্রে ‘মোসলেম’ শব্দটি থাকলেও এটি ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন পত্রিকা। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে খ্যাতিমান লেখকদের লেখা এতে প্রকাশিত হতো। | আখ্যাপত্রে ‘মোসলেম’ শব্দটি থাকলেও এটি ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন পত্রিকা। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে খ্যাতিমান লেখকদের লেখা এতে প্রকাশিত হতো। | ||
নজরুলের কবিপ্রতিভার বিকাশে মোসলেম ভারত বিরাট ভূমিকা পালন করে। ১৯২০ সালের মার্চ মাসে নজরুল করাচির সৈনিকজীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে এলে আফজালুল হকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তিনি নজরুলকে তাঁর নতুন পত্রিকা মোসলেম ভারতে লেখার জন্য অনুরোধ জানান। | নজরুলের কবিপ্রতিভার বিকাশে মোসলেম ভারত বিরাট ভূমিকা পালন করে। ১৯২০ সালের মার্চ মাসে নজরুল করাচির সৈনিকজীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে এলে আফজালুল হকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তিনি নজরুলকে তাঁর নতুন পত্রিকা মোসলেম ভারতে লেখার জন্য অনুরোধ জানান। | ||
কাজী নজরুল ইসলামের পত্রোপন্যাস বাঁধনহারার প্রথম কিস্তি মোসলেম ভারতের প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এর চতুর্থ সংখ্যায় তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘খেয়াপারের তরণী’ মুদ্রিত হয়। এ কবিতাটির অনুপ্রেরণা ছিল ঢাকার নবাব আহসানুল্লাহ্র মেয়ে [[খানম, মেহেরবানু|মেহেরবানু খানম]] অঙ্কিত একটি চিত্র, যা এ সংখ্যারই প্রচ্ছদে মুদ্রিত হয়। কবিতাটি পাঠ করার পর বিশিষ্ট সমালোচক [[মজুমদার, মোহিতলাল|মোহিতলাল মজুমদার]] নজরুলের কবিতার প্রশংসাজ্ঞাপক একটি পত্র পত্রিকার সম্পাদকের নিকট প্রেরণ করেন। নজরুলের মোট ৪০টি লেখা মোসলেম ভারতে প্রকাশিত হয়। সেগুলির মধ্যে রয়েছে বাঁধনহারার নয় কিস্তি এবং কিছু বিখ্যাত কবিতা, যেমন ‘শাত-ইল-আরব’, ‘মহরর্ম’, ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজ্দাহম্’, ‘কামাল পাশা’, ‘বিদ্রোহী’ ইত্যাদি। পত্রিকার প্রচ্ছদে সৈনিকের পোশাকে নজরুলের প্রতিকৃতিসহ তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে (১৯২১)। কবিতাটি বঙ্গীয় সাহিত্য সমাজে বিপুল সাড়া জাগায়। এটি বিভিন্ন পত্রিকায় পুনর্মুদ্রিতও হয় এবং নজরুল ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। নজরুল ব্যতীত আরও কয়েকজন বিশিষ্ট মুসলিম লেখকের রচনা মোসলেম ভারতে প্রকাশিত হয়। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কাজী ইমদাদুল হকের আবদুল্লাহ (উপন্যাস), সৈয়দ এমদাদ আলীর হাফেজা (জীবনী), শেখ ফজলুল করিমের রাজর্ষি এবরাহীম (জীবনী) এবং মোহাম্মদ বরকতউল্লাহর ‘পারস্য সাহিত্য’ (প্রবন্ধ)। | কাজী নজরুল ইসলামের পত্রোপন্যাস বাঁধনহারার প্রথম কিস্তি মোসলেম ভারতের প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এর চতুর্থ সংখ্যায় তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘খেয়াপারের তরণী’ মুদ্রিত হয়। এ কবিতাটির অনুপ্রেরণা ছিল ঢাকার নবাব আহসানুল্লাহ্র মেয়ে [[খানম, মেহেরবানু|মেহেরবানু খানম]] অঙ্কিত একটি চিত্র, যা এ সংখ্যারই প্রচ্ছদে মুদ্রিত হয়। কবিতাটি পাঠ করার পর বিশিষ্ট সমালোচক [[মজুমদার, মোহিতলাল|মোহিতলাল মজুমদার]] নজরুলের কবিতার প্রশংসাজ্ঞাপক একটি পত্র পত্রিকার সম্পাদকের নিকট প্রেরণ করেন। নজরুলের মোট ৪০টি লেখা মোসলেম ভারতে প্রকাশিত হয়। সেগুলির মধ্যে রয়েছে বাঁধনহারার নয় কিস্তি এবং কিছু বিখ্যাত কবিতা, যেমন ‘শাত-ইল-আরব’, ‘মহরর্ম’, ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজ্দাহম্’, ‘কামাল পাশা’, ‘বিদ্রোহী’ ইত্যাদি। পত্রিকার প্রচ্ছদে সৈনিকের পোশাকে নজরুলের প্রতিকৃতিসহ তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে (১৯২১)। কবিতাটি বঙ্গীয় সাহিত্য সমাজে বিপুল সাড়া জাগায়। এটি বিভিন্ন পত্রিকায় পুনর্মুদ্রিতও হয় এবং নজরুল ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। নজরুল ব্যতীত আরও কয়েকজন বিশিষ্ট মুসলিম লেখকের রচনা মোসলেম ভারতে প্রকাশিত হয়। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কাজী ইমদাদুল হকের আবদুল্লাহ (উপন্যাস), সৈয়দ এমদাদ আলীর হাফেজা (জীবনী), শেখ ফজলুল করিমের রাজর্ষি এবরাহীম (জীবনী) এবং মোহাম্মদ বরকতউল্লাহর ‘পারস্য সাহিত্য’ (প্রবন্ধ)। [মোহাম্মদ আবদুল কাইউম] | ||
[মোহাম্মদ আবদুল কাইউম] | |||
[[en:Moslem Bharat, The]] | [[en:Moslem Bharat, The]] |
০৭:০৯, ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মোসলেম ভারত মাসিক সাহিত্য সাময়িকী হিসেবে ১৯২০ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে শান্তিপুরের কবি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের নাম মুদ্রিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এর যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হতো তাঁর পুত্র এবং নির্বাহী সম্পাদক আফজালুল হক কর্তৃক। পত্রিকার প্রথম সংখ্যা ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (এপ্রিল-মে, ১৯২০) এবং সর্বশেষ সংখ্যা ১৩২৮ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি, ১৯২১-২২) প্রকাশিত হয়। এর বর্ণবহুল প্রচ্ছদে ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শিল্পকলা তুলে ধরা হতো। পত্রিকার প্রতি সংখ্যার প্রথম পাতার শীর্ষে রবীন্দ্রনাথের একটি বাণী সংকলিত হতো এবং তা হলো: ‘মানব-সংসারে জ্ঞানালোকের দিয়ালি-উৎসব চলিতেছে। প্রত্যেক জাতি আপনার আলোটীকে বড় করিয়া জ্বালাইলে তবে সকলে মিলিয়া এই উৎসব সমাধা হইবে।’
আখ্যাপত্রে ‘মোসলেম’ শব্দটি থাকলেও এটি ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন পত্রিকা। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে খ্যাতিমান লেখকদের লেখা এতে প্রকাশিত হতো।
নজরুলের কবিপ্রতিভার বিকাশে মোসলেম ভারত বিরাট ভূমিকা পালন করে। ১৯২০ সালের মার্চ মাসে নজরুল করাচির সৈনিকজীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে এলে আফজালুল হকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তিনি নজরুলকে তাঁর নতুন পত্রিকা মোসলেম ভারতে লেখার জন্য অনুরোধ জানান।
কাজী নজরুল ইসলামের পত্রোপন্যাস বাঁধনহারার প্রথম কিস্তি মোসলেম ভারতের প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এর চতুর্থ সংখ্যায় তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘খেয়াপারের তরণী’ মুদ্রিত হয়। এ কবিতাটির অনুপ্রেরণা ছিল ঢাকার নবাব আহসানুল্লাহ্র মেয়ে মেহেরবানু খানম অঙ্কিত একটি চিত্র, যা এ সংখ্যারই প্রচ্ছদে মুদ্রিত হয়। কবিতাটি পাঠ করার পর বিশিষ্ট সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার নজরুলের কবিতার প্রশংসাজ্ঞাপক একটি পত্র পত্রিকার সম্পাদকের নিকট প্রেরণ করেন। নজরুলের মোট ৪০টি লেখা মোসলেম ভারতে প্রকাশিত হয়। সেগুলির মধ্যে রয়েছে বাঁধনহারার নয় কিস্তি এবং কিছু বিখ্যাত কবিতা, যেমন ‘শাত-ইল-আরব’, ‘মহরর্ম’, ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজ্দাহম্’, ‘কামাল পাশা’, ‘বিদ্রোহী’ ইত্যাদি। পত্রিকার প্রচ্ছদে সৈনিকের পোশাকে নজরুলের প্রতিকৃতিসহ তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে (১৯২১)। কবিতাটি বঙ্গীয় সাহিত্য সমাজে বিপুল সাড়া জাগায়। এটি বিভিন্ন পত্রিকায় পুনর্মুদ্রিতও হয় এবং নজরুল ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। নজরুল ব্যতীত আরও কয়েকজন বিশিষ্ট মুসলিম লেখকের রচনা মোসলেম ভারতে প্রকাশিত হয়। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কাজী ইমদাদুল হকের আবদুল্লাহ (উপন্যাস), সৈয়দ এমদাদ আলীর হাফেজা (জীবনী), শেখ ফজলুল করিমের রাজর্ষি এবরাহীম (জীবনী) এবং মোহাম্মদ বরকতউল্লাহর ‘পারস্য সাহিত্য’ (প্রবন্ধ)। [মোহাম্মদ আবদুল কাইউম]