মংলা বন্দর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''মংলা বন্দর'''  খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। প্রথমে এই বন্দর গড়ে ওঠে চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে। ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটি বিদেশি জাহাজ নোঙরের জন্য প্রথম উন্মুক্ত হয়। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে মংলা অধিকতর সুবিধাজনক বিধায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মংলায় স্থানান্তরিত হয়। মংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালনা নামেই পরিচিত হতে থাকে। বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার সেলাবুনিয়া মৌজায় পশুর ও মংলা নদীর সঙ্গমস্থলে এই বন্দরের অবস্থান। পাকিস্তান আমলে একজন বন্দর পরিচালকের ওপর মংলা বন্দরের প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। এর প্রধান কার্যালয় ছিল খুলনা শহরে। ২৫ ফুট পর্যন্ত ক্লিয়ারেন্সের সমুদ্রগামী জাহাজ এখানে নোঙর করার অনুমতি দেওয়া হতো। ছোট বন্দর হলেও কখনও কখনও প্রায় দুই ডজন সমুদ্রগামী জাহাজ মংলা বন্দরে নোঙর করতে দেখা যায়। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীরতা হারিয়ে ফেলায় পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ করে দেওয়া হতো, এবং প্রতিবারই খননের পর এটি আবার জাহাজ নোঙরের জন্য উন্মুক্ত করা হতো। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৪০০টি জাহাজ এই বন্দরে নোঙর করে এবং বন্দরটির মাধ্যমে বছরে গড়ে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্যের আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন হয়। এ বন্দরে রয়েছে ১১টি জেটি, পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ। নদীর গভীরে রয়েছে ১২টি ঝুলন্ত বা ভাসমান নোঙরস্থান। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ হিরণ পয়েন্ট নামক স্থানে নাবিকদের জন্য একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে।
'''মংলা বন্দর'''  খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। প্রথমে এই বন্দর গড়ে ওঠে চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে। ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটি বিদেশি জাহাজ নোঙরের জন্য প্রথম উন্মুক্ত হয়। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে মংলা অধিকতর সুবিধাজনক বিধায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মংলায় স্থানান্তরিত হয়। মংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালনা নামেই পরিচিত হতে থাকে। বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার সেলাবুনিয়া মৌজায় পশুর ও মংলা নদীর সঙ্গমস্থলে এই বন্দরের অবস্থান। পাকিস্তান আমলে একজন বন্দর পরিচালকের ওপর মংলা বন্দরের প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। এর প্রধান কার্যালয় ছিল খুলনা শহরে। ২৫ ফুট পর্যন্ত ক্লিয়ারেন্সের সমুদ্রগামী জাহাজ এখানে নোঙর করার অনুমতি দেওয়া হতো। ছোট বন্দর হলেও কখনও কখনও প্রায় দুই ডজন সমুদ্রগামী জাহাজ মংলা বন্দরে নোঙর করতে দেখা যায়। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীরতা হারিয়ে ফেলায় পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ করে দেওয়া হতো, এবং প্রতিবারই খননের পর এটি আবার জাহাজ নোঙরের জন্য উন্মুক্ত করা হতো। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৪০০টি জাহাজ এই বন্দরে নোঙর করে এবং বন্দরটির মাধ্যমে বছরে গড়ে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্যের আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন হয়। এ বন্দরে রয়েছে ১১টি জেটি, পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ। নদীর গভীরে রয়েছে ১২টি ঝুলন্ত বা ভাসমান নোঙরস্থান। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ হিরণ পয়েন্ট নামক স্থানে নাবিকদের জন্য একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে।


[[Image:MonglaPort.jpg|thumb|right|মংলা বন্দর]]
[[Image:MonglaPort.jpg|thumb|right|400px|মংলা বন্দর]]
 
পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান বন্দরের সঙ্গেই মংলা বন্দরের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তবে প্রধানত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার জাহাজগুলিই এই বন্দরে নোঙর করে থাকে। আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকার জাহাজও এখানে আসে। বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ইদানীং মংলা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ভারত ও নেপালের সাথে সরকারের চুক্তির ফলে এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত, নেপাল, ভূটানকে মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। এ বিষয়কে সামনে রেখে বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। নির্মিতব্য পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে এবং এ বন্দরের কার্যক্রম আরও বেড়ে যাবে।
পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান বন্দরের সঙ্গেই মংলা বন্দরের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তবে প্রধানত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার জাহাজগুলিই এই বন্দরে নোঙর করে থাকে। আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকার জাহাজও এখানে আসে। বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ইদানীং মংলা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ভারত ও নেপালের সাথে সরকারের চুক্তির ফলে এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত, নেপাল, ভূটানকে মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। এ বিষয়কে সামনে রেখে বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। নির্মিতব্য পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে এবং এ বন্দরের কার্যক্রম আরও বেড়ে যাবে।


এছাড়া, এর চারপাশে বহু শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় অনেক নতুন কর্মোদ্যোগ ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিপুলসংখ্যক স্থানীয় লোক মংলা বন্দরে মালামাল বোঝাই ও খালাসের কাজে সরাসরি নিয়োজিত রয়েছে।
এছাড়া, এর চারপাশে বহু শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় অনেক নতুন কর্মোদ্যোগ ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিপুলসংখ্যক স্থানীয় লোক মংলা বন্দরে মালামাল বোঝাই ও খালাসের কাজে সরাসরি নিয়োজিত রয়েছে। [সৈয়দ মো সালেহ উদ্দীন]
 
[সৈয়দ মো সালেহ উদ্দীন]


''আরও দেখুন'' সমুদ্রবন্দর।
''আরও দেখুন'' [[সমুদ্রবন্দর|সমুদ্রবন্দর]]।


[[en:Mongla Port]]
[[en:Mongla Port]]

০৬:৫০, ২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মংলা বন্দর  খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। প্রথমে এই বন্দর গড়ে ওঠে চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে। ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটি বিদেশি জাহাজ নোঙরের জন্য প্রথম উন্মুক্ত হয়। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে মংলা অধিকতর সুবিধাজনক বিধায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মংলায় স্থানান্তরিত হয়। মংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালনা নামেই পরিচিত হতে থাকে। বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার সেলাবুনিয়া মৌজায় পশুর ও মংলা নদীর সঙ্গমস্থলে এই বন্দরের অবস্থান। পাকিস্তান আমলে একজন বন্দর পরিচালকের ওপর মংলা বন্দরের প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। এর প্রধান কার্যালয় ছিল খুলনা শহরে। ২৫ ফুট পর্যন্ত ক্লিয়ারেন্সের সমুদ্রগামী জাহাজ এখানে নোঙর করার অনুমতি দেওয়া হতো। ছোট বন্দর হলেও কখনও কখনও প্রায় দুই ডজন সমুদ্রগামী জাহাজ মংলা বন্দরে নোঙর করতে দেখা যায়। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীরতা হারিয়ে ফেলায় পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ করে দেওয়া হতো, এবং প্রতিবারই খননের পর এটি আবার জাহাজ নোঙরের জন্য উন্মুক্ত করা হতো। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৪০০টি জাহাজ এই বন্দরে নোঙর করে এবং বন্দরটির মাধ্যমে বছরে গড়ে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্যের আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন হয়। এ বন্দরে রয়েছে ১১টি জেটি, পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ। নদীর গভীরে রয়েছে ১২টি ঝুলন্ত বা ভাসমান নোঙরস্থান। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ হিরণ পয়েন্ট নামক স্থানে নাবিকদের জন্য একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে।

মংলা বন্দর

পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান বন্দরের সঙ্গেই মংলা বন্দরের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তবে প্রধানত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার জাহাজগুলিই এই বন্দরে নোঙর করে থাকে। আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকার জাহাজও এখানে আসে। বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ইদানীং মংলা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ভারত ও নেপালের সাথে সরকারের চুক্তির ফলে এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত, নেপাল, ভূটানকে মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। এ বিষয়কে সামনে রেখে বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। নির্মিতব্য পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে এবং এ বন্দরের কার্যক্রম আরও বেড়ে যাবে।

এছাড়া, এর চারপাশে বহু শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় অনেক নতুন কর্মোদ্যোগ ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিপুলসংখ্যক স্থানীয় লোক মংলা বন্দরে মালামাল বোঝাই ও খালাসের কাজে সরাসরি নিয়োজিত রয়েছে। [সৈয়দ মো সালেহ উদ্দীন]

আরও দেখুন সমুদ্রবন্দর