মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১৭ নং লাইন: | ১৭ নং লাইন: | ||
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক পদক ও পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে লন্ডনের International Who’s Who in Poetry তাঁকে ‘Certificate of Merit for Distinguished Contribution to Poetry’ প্রদান করে। তিনি ১৯৭২ সালে লাভ করেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার। ১৯৮৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক প্রদান করে। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [ভীষ্মদেব চৌধুরী ] | মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক পদক ও পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে লন্ডনের International Who’s Who in Poetry তাঁকে ‘Certificate of Merit for Distinguished Contribution to Poetry’ প্রদান করে। তিনি ১৯৭২ সালে লাভ করেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার। ১৯৮৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক প্রদান করে। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [ভীষ্মদেব চৌধুরী ] | ||
[[en:Moniruzzaman, Mohammad]] | [[en:Moniruzzaman, Mohammad]] |
০৫:৪১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ (১৯৩৬-২০০৮) শিক্ষাবিদ, কবি, গীতিকার, গবেষক। জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৫ আগস্ট যশোর শহরের খড়কী পাড়ায়। পিতা মোহাম্মদ শাহাদাত আলী, মাতা রাহেলা খাতুন।
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স (১৯৫৮) ও এমএ (১৯৫৯) পাস করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রথমে শিক্ষক-ফেলো (১৯৫৯), পরে লেকচারার পদে নিয়োগ (১৯৬২) লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ১৯৭৮-৮১ সালে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান দৈনিক মিল্লাত (১৯৫২) পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্য-গবেষণা এবং কবিতা লেখা ছিল তাঁর নেশা। কিছুকাল তিনি বাংলাদেশের লোকসাহিত্য সংগ্রহ ও সম্পাদনায় আগ্রহ দেখালেও পরে তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। আধুনিক কাহিনীকাব্যে মুসলিম জীবন ও চিত্র (১৯৬২) তাঁর প্রথম গবেষণাগ্রন্থ। তিনি ১৯৬৯ সালে ‘আধুনিক বাংলাকাব্যে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৬৯-৭০ সালে লন্ডন বিশ্বাবদ্যালয়ের School of Oriental and African Studies-এ Post-Doctoral গবেষণা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা কালে তিনি বাংলা বিভাগ থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায় এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা। তিনি পনেরো বছর (১৯৭৮-৯৩) এ পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। গবেষণা-তত্ত্বাবধায়ক হিসেবেও তাঁর দায়িত্ব ও নিষ্ঠা উল্লেখ করা যেতে পারে। অধ্যাপনাকালে তাঁর তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন চল্লিশজন গবেষক।
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লন্ডনের রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটি ও ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমীর ফেলো মনোনীত হন এবং এদেশের দুটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৮২ সালে। ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬-৮৭ বর্ষে রোটারি আন্তর্জাতিক (৩২৮/বাংলাদেশ)-এর গভর্নর পদে নির্বাচিত হন।
তবে এসব প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডের চেয়ে সৃজনশীলতায় মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন পঞ্চাশের দশকের কাব্যসাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান কবি। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় সমকাল (১৩৬৪) পত্রিকার মধ্য দিয়ে নতুন একটি কবিগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে। এ কবিগোষ্ঠীর অন্যতম ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তাঁর কাব্য: দুর্লভ দিন (১৯৬১), শঙ্কিত আলোকে (১৯৬৮), বিপন্ন বিষাদ (১৯৬৮), ভালবাসার হাতে (১৯৭৬), ভূমিহীন কৃষিজীবী ইচ্ছে তার (১৯৮৪), মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান কাব্য সংগ্রহ (১৯৯৮), Selected Poems (Honolulu,1979) প্রভৃতি। নিসর্গপ্রীতি, মানবপ্রেম, দেশাত্ববোধ, নাগরিক জীবনের জটিলতা তাঁর কবিতার বিষয়বস্ত্ত। ‘কবিতায় আর কী লিখব?/ যখন বুকের রক্তে লিখেছি/ একটি নাম/ বাংলাদেশ।’ এমন প্রত্যয়দীপ্ত কাব্য পঙ্ক্তি মোহাম্মদ মনিরুজ্জানের কবি-সত্তাকে স্বাতন্ত্র্য রূপ দিয়েছে, যাতে স্বাজাত্যবোধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁর শিল্পী-মন। এটা লক্ষ করা যায় তাঁর রচিত অসাধারণ সুন্দর গানেও।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে কাজী নজরুল ইসলাম পর্যন্ত বাংলা আধুনিক গানের উত্তরাধিকার যাঁরা বহন করছেন, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। কবি হিসেবে তাঁর বিশিষ্টতা স্বীকার করেও বলা যায় আধুনিক গান রচনায় তাঁর ভূমিকা অনন্য। তিনি চলচ্চিত্রের প্লে-ব্যাক এবং দেশাত্মবোধক গান রচনা করে বাঙালি শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় ও সম্মানিত হয়েছেন। বলা যেতে পারে গান রচনার জন্যেই তিনি বাঙালি সংস্কৃতিতে স্মরণীয় হবেন দীর্ঘদিন। তাঁর জননন্দিত একটি গানের কয়েক পঙ্ক্তি: ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে/ ভরে আছে সারা মন/ শ্যামল কোমল পরশ ছাড়ায়ে/ নেই কিছু প্রয়োজন।’ স্বদেশের সরস মাটির গন্ধ যেন তাঁর ভাষায় বাণীমূর্তি লাভ করেছে। গানের সঙ্কলনের মধ্যে অনির্বাণ (১৯৬৭) ও নির্বাচিত গান (১৯৮৪) প্রধান।
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান কবি ও গীতিকার হিসেবে বিখ্যাত হলেও সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রে- সম্পাদনা, অনুবাদ, গবেষণায়ও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। সব মিলে তাঁর গ্রন্থ-সংখ্যা অর্ধশতাধিক। তাঁর অনূদিত গ্রন্থ: এমিলি ডিকিনসনের কবিতা (১৯৭৩), ইউজিন ও’নীলের জাম্বুবান (দি হেয়ারি এপ); গবেষণা-গ্রন্থ : আধুনিক বাংলা সাহিত্য (১৯৬৫), আধুনিক বাংলা কাব্যে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক (১৯৭০), বাংলা কবিতার ছন্দ (১৯৭০), বাংলা সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণা (১৯৭৮), সাময়িকপত্রে সাহিত্য চিন্তা: সওগাত (১৯৮১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের ইতিহাস (১৯৮১); সম্পাদিত গ্রন্থ, ঢাকার লোককাহিনী (১৯৬৫), নজরুল সমীক্ষণ (১৯৭২), যশোরের লোককাহিনী (১৯৭৪), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী রচনাবলী (১ম ও ২য় খন্ড, ১৯৭৮), মুহম্মদ এনামুল হক স্মারকগ্রন্থ (১৯৮৫), সৈয়দ আলী আহসান সংবর্ধনা গ্রন্থ (১৯৮৫), আবদুল গনি হাজারী রচনাবলী (১৯৯৪) প্রভৃতি।
অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে আত্মগোপনে থাকার কারণে ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং ‘বি’ জোনের সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল টিক্কা খান এক ফরমান জারি করে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করেন এবং ছয় মাস কারাদন্ড ঘোষণা করেন। এসব সত্ত্বেও তিনি গভীরভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনড় থাকেন।
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক পদক ও পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে লন্ডনের International Who’s Who in Poetry তাঁকে ‘Certificate of Merit for Distinguished Contribution to Poetry’ প্রদান করে। তিনি ১৯৭২ সালে লাভ করেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার। ১৯৮৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক প্রদান করে। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [ভীষ্মদেব চৌধুরী ]