পরিকল্পনা কমিশন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ৬টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''পরিকল্পনা কমিশন'''  বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রতিষ্ঠান। দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন রূপকল্পের আলোকে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা কাঠামোর উদ্দেশ্যে লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করে থাকে পরিকল্পনা কমিশন। কিভাবে ইপ্সিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে তার নীতি ও বাস্তবায়ন কাঠামো এবং অগ্রগতি পরিমাপের মানদন্ড নির্ধারণও পরিকল্পনা কমিশনের কাজ।
'''পরিকল্পনা কমিশন''' বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রতিষ্ঠান। দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন রূপকল্পের আলোকে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা কাঠামোর উদ্দেশ্যে লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করে থাকে পরিকল্পনা কমিশন। কিভাবে ইপ্সিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে তার নীতি ও বাস্তবায়ন কাঠামো এবং অগ্রগতি পরিমাপের মানদণ্ড নির্ধারণও পরিকল্পনা কমিশনের কাজ।  


স্বাধীন স্বার্বভৌম জনগনের জীবনযাত্রার মানের দ্রুত উন্নতি সাধনই ছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা। বাংলাদেশের সংবিধানেও গণমানুষের উন্নত জীবনযাত্রার স্বপ্ন পূরণের নিশ্চয়তা স্বীকৃত হয়েছে। সংবিধানের ১৫ ধারায় রাষ্ট্রকে উপযুক্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ তথা উন্নততর জীবনযাত্রা নিশ্চিত করণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দেশের পরিকল্পিত উন্নয়নের এই দায়িত্ব অর্পন করে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়।
স্বাধীন স্বার্বভৌম জনগণের জীবনযাত্রার মানের দ্রুত উন্নতি সাধনই ছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা। বাংলাদেশের সংবিধানেও গণমানুষের উন্নত জীবনযাত্রার স্বপ্ন পূরণের নিশ্চয়তা স্বীকৃত হয়েছে। সংবিধানের ১৫ ধারায় রাষ্ট্রকে উপযুক্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ তথা উন্নততর জীবনযাত্রা নিশ্চিত করণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দেশের পরিকল্পিত উন্নয়নের এই দায়িত্ব অর্পন করে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়।  


স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশেই বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের ভিত্তি রচিত হয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে প্রাদেশিক পরিকল্পনা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সরকারি বিনিয়োগে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তাতে অর্থ সংস্থানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে দেনদরবার করা। পরিকল্পনা বোর্ড পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রযোজ্য উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রকল্প মূল্যায়ন এবং সেসব প্রকল্পের আকার ও অবয়ব নির্ধারণ করত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারও একটি ক্ষুদ্রকায় পরিকল্পনা সেল তৈরি করে, যাকে আজকের পরিকল্পনা কমিশনের সুতিকাগার বললে অত্যুক্তি হয় না। সে সময় প্লানিং সেলের কাজ ছিল স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে পুনর্বাসন পুনর্গঠন কাজে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তার কর্মকাঠামো ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পরই নতুন সরকারের প্রথম ও প্রধান একটি পদক্ষেপ ছিল ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশন গঠন এবং এর ডেপুটি চেয়ারপার্সন ও সদস্যদের নিয়োগদান। মন্ত্রি পরিষদে নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:
স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশেই বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের ভিত্তি রচিত হয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে প্রাদেশিক পরিকল্পনা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সরকারি বিনিয়োগে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তাতে অর্থ সংস্থানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে দেনদরবার করা। পরিকল্পনা বোর্ড পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রযোজ্য উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রকল্প মূল্যায়ন এবং সেসব প্রকল্পের আকার ও অবয়ব নির্ধারণ করত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারও একটি ক্ষুদ্রকায় পরিকল্পনা সেল তৈরি করে, যাকে আজকের পরিকল্পনা কমিশনের সুতিকাগার বললে অত্যুক্তি হয় না। সে সময় প্লানিং সেলের কাজ ছিল স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে পুনর্বাসন পুনর্গঠন কাজে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তার কর্মকাঠামো ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পরই নতুন সরকারের প্রথম ও প্রধান একটি পদক্ষেপ ছিল ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশন গঠন এবং এর ডেপুটি চেয়ারপার্সন ও সদস্যদের নিয়োগদান।  


বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন রূপকল্প নির্মাণ।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের কার্যপরিধি (১) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আর্থসামাজিক উদ্দেশ্যবলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য জাতীয়, বার্ষিক, পঞ্চবার্ষিক এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন; (২) জাতীয় পরিকল্পনার আলোকে বার্ষিক কর্মসূচি প্রণয়ন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন; (৩) পরিকল্পনার দক্ষতা মূল্যায়ন এবং জাতীয় পরিকল্পনা মূল্যায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ; (৪) গুরুত্বর্পূণ অর্থনৈতিক বিষয়ের উপর সমীক্ষা পরিচালনা করা এবং অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; (৫) বৈদেশিক সাহায্য-চাহিদা নিরূপণ এবং প্রয়োজনীয় সাহায্যের পরিমাণ এবং আঙ্গিক গঠন নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা; (৬) বৈদেশিক ঋণের প্রাক্কলন এবং এ বিষয়ে জাতীয় পরিকল্পনার মূল্যায়নসহ প্রতিবেদন প্রণয়ন; (৭) অর্থনৈতিক গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ ও প্রণোদনা প্রদান এবং কার্যকর পরিকল্পনা ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় জরীপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম গ্রহণ; (৮) জাতীয় পরিকল্পনা, বার্ষিক কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক নীতিমালার ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করণের জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক অবকাঠামো সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান; (৯) প্রকল্প প্রণয়ন প্রক্রিয়া উজ্জ্বীবিতকরণ এবং প্রয়োজনবোধে প্রকল্প প্রণয়নের দায়িত্ব গ্রহণ, জাতীয় উদ্দেশ্যাবলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার্থে কর্মসূচি ও প্রকল্পসমূহের পরীক্ষা এবং এ বিষয়ে পরামর্শ প্রদান; (১০) অনুমোদিত প্রকল্প, বিশেষত সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যাসমূহ ও বিলম্বের কারণসমূহ নিরূপণ এবং এ জাতীয় সমস্যা সমাধানের পন্থা নির্ধারণ; (১১) দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা; (১২) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে উপস্থাপনের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং দারিদ্র্য নিরসন কৌশল বাস্তবায়ন পর্যালোচনা ও হালনাগাদকরণের নির্দেশনা প্রদান; (১৩) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে উপস্থাপনের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ; (১৫) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে উপস্থাপনের জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ; (১৬) পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবদি; এবং (১৭) পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয়াবদি সম্পর্কে আন্তঃমন্ত্রণালয় মত পার্থক্য দূরীকরণ।


উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা ও নীতিমালা প্রণয়ন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অর্থ সংস্থান ও কার্যবিধি সংরক্ষণে সুপারিশ দান এবং ক্ষেত্রবিশেষে সরাসরি সংশ্লিষ্ট হওয়া।
অধিকন্ত, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ বা ন্যাশনাল ইকনোমিক কাউন্সিলের (এনইসি) পক্ষে উন্নয়ন ও নীতি নির্দেশনা পরীক্ষা পর্যালোচনার কাজও পরিকল্পনা কমিশনের। এনইসিকে একটি মিনি মন্ত্রিপরিষদ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়, মন্ত্রিপরিষদের অর্থনৈতিক কার্যাবলি বিষয়ক মন্ত্রীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনইসি গঠিত হয়। একই সাথে এনইসির নির্বাহী কমিটি সংক্ষেপে একনেক-এর কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়: (ক) উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বিবেচনান্তে অনুমোদন, (খ) উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং (গ) অর্থনীতির সার্বিক অগ্রগতি এবং তদসংশ্লিষ্ট নীতিসমূহ বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করা, তথা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা।  
 
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে গৃহীতব্য উন্নয়ন পরিকল্পনার নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে সমন্বয় সাধন।
 
অধিকন্ত, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ বা ন্যাশনাল ইকনোমিক কাউন্সিলের (এনইসি) পক্ষে উন্নয়ন ও নীতি নির্দেশনা পরীক্ষা পর্যালোচনার কাজও পরিকল্পনা কমিশনের। এনইসিকে একটি মিনি মন্ত্রিপরিষদ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়, মন্ত্রিপরিষদের অর্থনৈতিক কার্যাবলি বিষয়ক মন্ত্রীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনইসি গঠিত হয়। একই সাথে এনইসির নির্বাহী কমিটি সংক্ষেপে একনেক-এর কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়: (ক) উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বিবেচনান্তে অনুমোদন, (খ) উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং (গ) অর্থনীতির সার্বিক অগ্রগতি এবং তদসংশ্লিষ্ট নীতিসমূহ বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করা, তথা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা।


দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্র ও বিষয়াদি পরিকল্পনা কমিশনের কর্মধারার আওতায় পরিচালিত হয়:
দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্র ও বিষয়াদি পরিকল্পনা কমিশনের কর্মধারার আওতায় পরিচালিত হয়:


পরিকল্পনা নীতি নির্ধারণ  উন্নয়ন পরিকল্পনা সমূহের উদ্দেশ্য, লক্ষ্যমাত্রা, প্রাধিকার, বাস্তবায়ন কৌশল এবং নীতি নিচয় নিরূপণ বা নির্ধারণ।
''পরিকল্পনা নীতি নির্ধারণ''  উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহের উদ্দেশ্য, লক্ষ্যমাত্রা, প্রাধিকার, বাস্তবায়ন কৌশল এবং নীতি নিরূপণ বা নির্ধারণ।  
 
খাত ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন  অর্থনীতির খাত ও ক্ষেত্র ভিত্তিক উন্নয়নে উন্নয়ন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা শনাক্তকরণ।
 
আর্থিক সংশ্লেষ নির্ধারণ  উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণ ও সম্পদের সংস্থান নির্দেশ।
 
প্রকল্প-পরিকল্পনা  খাতভিত্তিক পরিকল্পনা দর্শনের ভিত্তিতে যথা উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে একক প্রকল্প প্রণয়ন।
 
মূল্যায়ন  প্রকল্পের প্রভাবক ভূমিকা মূল্যায়ন, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রকল্প ব্যয়ে সংশ্লিষ্টতা ও যথার্থতা যাচাই।
 
বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের কার্যাবলি:
 
দীর্ঘমেয়াদী (১৫-২০) রূপকল্পের আওতায় ৫ বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন।


পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ছায়া অবলম্বনে ত্রিবার্ষিক প্রবহমান বিনিয়োগ পরিকল্পনা (TYRIP)  প্রণয়ন।
''খাতভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন''  অর্থনীতির খাত ও ক্ষেত্রভিত্তিক উন্নয়নে উন্নয়ন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা শনাক্তকরণ।


দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) প্রণয়ন।
''আর্থিক সংশ্লেষ নির্ধারণ''  উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণ ও সম্পদের সংস্থান নির্দেশ।


ত্রিবার্ষিক পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসমূহের ভাবদর্শনের আওতায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন।
''প্রকল্প-পরিকল্পনা''  খাতভিত্তিক পরিকল্পনা দর্শনের ভিত্তিতে যথা উদ্দেশ্য লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে একক প্রকল্প প্রণয়ন।  


একনেক সভা ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর জন্য প্রকল্প মূল্যায়ন পর্যালোচনা সারপত্র প্রণয়ন।
''মূল্যায়ন'' প্রকল্পের প্রভাবক ভূমিকা মূল্যায়ন, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রকল্প ব্যয়ে সংশ্লিষ্টতা যথার্থতা যাচাই।


প্রকল্প মূল্যায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের প্রভাবক ভূমিকা বা অবদান বিশ্লেষণ।
'''''বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের কার্যাবলি'''''
* দীর্ঘমেয়াদী (১৫-২০) রূপকল্পের আওতায় ৫ বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন। 


উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে উৎকর্ষতা বিধানের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ।
* পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ছায়া অবলম্বনে ত্রিবার্ষিক প্রবহমান বিনিয়োগ পরিকল্পনা (TYRIP) প্রণয়ন।


পরিকল্পনা কমিশন পাঁচ বছর মেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। বাংলাদেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ইতিহাসে দুটি পর্ব বা পর্যায় শনাক্ত করা চলে: প্রথম পর্ব ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসনামল; দ্বিতীয় পর্ব বাংলাদেশ আমল। প্রথম পর্বে ১৯৫১-১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রণীত হয় একটি ষষ্ঠ বার্ষিকসহ তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। দ্বিতীয় পর্বে প্রথমদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনগর্ঠন কাজে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, ক্ষয়ক্ষতির সুমার পরিসংখ্যান সংগ্রহে কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়। বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয় ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য। এরপর দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পরিবর্তে একটি অন্তবর্তীকালীন দ্বিবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (১৯৭৮-৮০) কাজ হাতে নেয়া হয়। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সময়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শুরু হয় ২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৭-২০০২ সময়ের জন্য। ২০০৩-২০১১ সালের জন্য সরকার ষষ্ঠবার্ষিক পরিকল্পনার স্থলে দারিদ্র্য নিরসন কৌশল পত্র (অন্তবর্তীকালীন ও পূর্ণাঙ্গ) প্রণয়ন করে।
* দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) প্রণয়ন।


পরিকল্পনা কমিশন অনিবার্যভাবে একটি পেশাদারী প্রতিষ্ঠান। যেহেতু উন্নয়ন কর্মকান্ড রাজনীতি-দর্শন সংশ্লিষ্ট সেহেতু একজন মন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনায় কমিশন তার ভূমিকা পালন করে। তবে প্রকৃত প্রস্তাবে কমিশনের যাবতীয় কর্মকান্ডের প্রধান নিয়ন্তা দেশের সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী যিনি পরিকল্পনা কমিশনেরও সভাপতি। পরিকল্পনা মন্ত্রী কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান। নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন পর্যায়ে কমিশন একজন মন্ত্রী ও পাঁচ জন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত। পরিকল্পনা সচিব মূখ্যত কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করেন। পরিকল্পনা বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনকে প্রশাসনিক সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। কমিশনের সদস্যগণের অধীনে আছে ছয়টি খাতভিত্তিক কর্ম বিভাগ এবং বিভাগসমূহ ৩০টি কার্যকরী উইং-এ বিভক্ত। দুটি বিভাগ সাধারণ অর্থনৈতিক ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সমন্বয় সংক্রান্ত কাজ করে। বিভাগ দু’টির নাম যথাক্রমে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এবং কার্যক্রম বিভাগ। খাতভিত্তিক চারটি বিভাগ, যথা কৃষি পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ; শিল্প শক্তি বিভাগ, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। এসব বিভাগ অর্থনীতির সংশ্লিষ্ট খাত সমূহের উন্নয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি যথা উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, পরীক্ষা পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের কাজ করে থাকে।
*  ত্রিবার্ষিক পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসমূহের ভাবদর্শনের আওতায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন। 


পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের অধীনস্থ কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (ইকনোমিক) সদস্য এবং তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা বিভাগ। বিভাগীয় প্রধানগণ চীফ বা প্রধান এবং উইং-এর প্রধানগণ যুগ্ম প্রধান পর্যায়ের কর্মকর্তা। উইংসমূহ আবার অধি শাখায় বিভক্ত যেগুলো ডেপুটি চীফ বা উপ প্রধানের নেতৃত্বে। সর্বশেষ স্তর হল ডেস্ক যা সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট। অ্যাসিস্ট্যান্ট চীফ বা সহকারি প্রধান পর্যায়ের কর্মকর্তারা এর দেখাশুনা করে।
* একনেক সভা ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর জন্য প্রকল্প মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা সারপত্র প্রণয়ন। 


পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং প্রকল্প পর্যালোচনা মূল্যায়ন অনুমোদন কাজে পরিকল্পনা কমিশন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়ধর্মী যোগাযোগ রক্ষা করে।
প্রকল্প মূল্যায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের প্রভাবক ভূমিকা বা অবদান বিশ্লেষণ। 


বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সাথে পরিকল্পনা কমিশনের যোগাযোগের লেখচিত্র-ছক
* উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে উৎকর্ষতা বিধানের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ।


[[Image:পরিকল্পনা কমিশন_html_88407781.png]]
পরিকল্পনা কমিশন পাঁচ বছর মেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। বাংলাদেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ইতিহাসে দুটি পর্ব বা পর্যায় শনাক্ত করা চলে: প্রথম পর্ব ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসনামল; দ্বিতীয় পর্ব বাংলাদেশ আমল। প্রথম পর্বে ১৯৫১-১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রণীত হয় একটি ষষ্ঠ বার্ষিকসহ তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। দ্বিতীয় পর্বে প্রথমদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুর্নগঠন কাজে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, ক্ষয়ক্ষতির সুমার পরিসংখ্যান সংগ্রহে কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়। বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয় ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য। এরপর দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পরিবর্তে একটি অন্তবর্তীকালীন দ্বিবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (১৯৭৮-৮০) কাজ হাতে নেয়া হয়। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সময়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শুরু হয় ২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৭-২০০২ সময়ের জন্য। ২০০৩-২০১১ সালের জন্য সরকার ষষ্ঠবার্ষিক পরিকল্পনার স্থলে দারিদ্র্য নিরসন কৌশল পত্র (অন্তবর্তীকালীন ও পূর্ণাঙ্গ) প্রণয়ন করে। এর পর পুনরায় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রথায় ফিরে এসে ২০১১-১৫ সময়ের জন্য ষষ্ঠ, ২০১৬-২০২০ সময়ের জন্য সপ্তম এবং ২০২১-২৫ সময়ের জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে।


পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য তথ্য উপাত্ত পরিসংখ্যান অন্যতম প্রয়োজনীয় শর্ত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিকল্পনা কমিশনকে তথ্য উপাত্ত পরিসংখ্যান সরবরাহ করে। অর্থ বিভাগ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনকে আর্থিক সংশ্লেষ, অর্থ বরাদ্দ, রাজস্ব আহরণ ও ব্যবস্থাপনা এবং রীতিনীতি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মধারায় বাস্তবায়ন মূল্যায়ন পরীবিক্ষণ বিভাগের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সমূহের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণের কাজ আইএমইডির। আইএমইডির পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে পরিকল্পনা কমিশন যাবতীয় প্রতিবিধান মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশি সাহায্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাথে পরিকল্পনা কমিশনের আন্তযোগাযোগ অত্যধিক। সামষ্টিক পর্যায়ে এডিপিতে প্রকল্পওয়ারী বৈদেশিক সাহায্যের সংস্থান করে থাকে ইআরডি। বিআইডিএস পরিকল্পনা কমিশনকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গবেষণালব্ধ উপাত্ত ও পরামর্শ পর্যালোচনা প্রদান করে থাকে। কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানে পরিকল্পনা উন্নয়ন একাডেমী ভূমিকা পালন করে থাকে। কমিশন এনইসি/ একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের যাবতীয় পরিকল্পনা, মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ কার্যপত্র পেশ করে থাকে।  [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]
পরিকল্পনা কমিশন অনিবার্যভাবে একটি পেশাদারী প্রতিষ্ঠান। যেহেতু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রাজনীতি-দর্শন সংশ্লিষ্ট সেহেতু একজন মন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনায় কমিশন তার ভূমিকা পালন করে। তবে প্রকৃত প্রস্তাবে কমিশনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের প্রধান নিয়ন্তা দেশের সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী যিনি পরিকল্পনা কমিশনেরও সভাপতি। পরিকল্পনা মন্ত্রী কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান। নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন পর্যায়ে কমিশন একজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং পাঁচ জন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত। পরিকল্পনা সচিব মূখ্যত কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করেন। পরিকল্পনা বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনকে প্রশাসনিক সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। কমিশনের সদস্যগণের অধীনে আছে ছয়টি খাতভিত্তিক কর্ম বিভাগ এবং বিভাগসমূহ ৩০টি কার্যকরী উইং-এ বিভক্ত। দুটি বিভাগ সাধারণ অর্থনৈতিক ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সমন্বয় সংক্রান্ত কাজ করে। বিভাগ দু’টির নাম যথাক্রমে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এবং কার্যক্রম বিভাগ। খাতভিত্তিক চারটি বিভাগ, যথা কৃষি পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ; শিল্প ও শক্তি বিভাগ, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। এসব বিভাগ অর্থনীতির সংশ্লিষ্ট খাতসমূহের উন্নয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি যথা উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, পরীক্ষা পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের কাজ করে থাকে।


[[en:Planning Commission]]
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের অধীনস্থ বিসিএিস ইকোনোমিক ক্যাডার কর্মকর্তাগণ বিসিএিস প্রশাসন ক্যাডারের সাথে একীভুত, তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা বিভাগ। বিভাগীয় প্রধানগণ চীফ বা প্রধান এবং উইং-এর প্রধানগণ যুগ্ম প্রধান পর্যায়ের কর্মকর্তা। উইংসমূহ আবার অধি শাখায় বিভক্ত যেগুলো ডেপুটি চীফ বা উপপ্রধানের নেতৃত্বে। সর্বশেষ স্তর হল ডেস্ক যা সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট। অ্যাসিস্ট্যান্ট চীফ বা সহকারি প্রধান পর্যায়ের কর্মকর্তারা এর দেখাশুনা করে।


[[en:Planning Commission]]
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং প্রকল্প পর্যালোচনা মূল্যায়ন অনুমোদন কাজে পরিকল্পনা কমিশন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়ধর্মী যোগাযোগ রক্ষা করে।


[[en:Planning Commission]]
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সাথে পরিকল্পনা কমিশনের যোগাযোগের লেখচিত্র-
[[Image:PlanningCommissionChartB.jpg|thumb|400px]]
পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য তথ্য উপাত্ত পরিসংখ্যান অন্যতম প্রয়োজনীয় শর্ত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিকল্পনা কমিশনকে তথ্য উপাত্ত পরিসংখ্যান সরবরাহ করে। অর্থ বিভাগ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনকে আর্থিক সংশ্লেষ, অর্থ বরাদ্দ, রাজস্ব আহরণ ও ব্যবস্থাপনা এবং রীতিনীতি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মধারায় বাস্তবায়ন মূল্যায়ন ও পরীবিক্ষণ বিভাগের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণের কাজ আইএমইডির। আইএমইডির পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে পরিকল্পনা কমিশন যাবতীয় প্রতিবিধান মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশী সাহায্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাথে পরিকল্পনা কমিশনের আন্তযোগাযোগ অত্যধিক। সামষ্টিক পর্যায়ে এডিপিতে প্রকল্পওয়ারী বৈদেশিক সাহায্যের সংস্থান করে থাকে ইআরডি। বিআইডিএস পরিকল্পনা কমিশনকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গবেষণালব্ধ উপাত্ত ও পরামর্শ পর্যালোচনা প্রদান করে থাকে। কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানে পরিকল্পনা উন্নয়ন একাডেমী ভূমিকা পালন করে থাকে। কমিশন এনইসি/একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের যাবতীয় পরিকল্পনা, মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ কার্যপত্র পেশ করে থাকে।  [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]  


[[en:Planning Commission]]
[[en:Planning Commission]]

০৫:০১, ৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

পরিকল্পনা কমিশন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রতিষ্ঠান। দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন রূপকল্পের আলোকে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা কাঠামোর উদ্দেশ্যে লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করে থাকে পরিকল্পনা কমিশন। কিভাবে ইপ্সিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে তার নীতি ও বাস্তবায়ন কাঠামো এবং অগ্রগতি পরিমাপের মানদণ্ড নির্ধারণও পরিকল্পনা কমিশনের কাজ।

স্বাধীন স্বার্বভৌম জনগণের জীবনযাত্রার মানের দ্রুত উন্নতি সাধনই ছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা। বাংলাদেশের সংবিধানেও গণমানুষের উন্নত জীবনযাত্রার স্বপ্ন পূরণের নিশ্চয়তা স্বীকৃত হয়েছে। সংবিধানের ১৫ ধারায় রাষ্ট্রকে উপযুক্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ তথা উন্নততর জীবনযাত্রা নিশ্চিত করণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দেশের পরিকল্পিত উন্নয়নের এই দায়িত্ব অর্পন করে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়।

স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশেই বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের ভিত্তি রচিত হয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে প্রাদেশিক পরিকল্পনা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সরকারি বিনিয়োগে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তাতে অর্থ সংস্থানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে দেনদরবার করা। পরিকল্পনা বোর্ড পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রযোজ্য উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রকল্প মূল্যায়ন এবং সেসব প্রকল্পের আকার ও অবয়ব নির্ধারণ করত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারও একটি ক্ষুদ্রকায় পরিকল্পনা সেল তৈরি করে, যাকে আজকের পরিকল্পনা কমিশনের সুতিকাগার বললে অত্যুক্তি হয় না। সে সময় প্লানিং সেলের কাজ ছিল স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে পুনর্বাসন পুনর্গঠন কাজে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তার কর্মকাঠামো ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পরই নতুন সরকারের প্রথম ও প্রধান একটি পদক্ষেপ ছিল ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশন গঠন এবং এর ডেপুটি চেয়ারপার্সন ও সদস্যদের নিয়োগদান।

বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের কার্যপরিধি (১) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আর্থসামাজিক উদ্দেশ্যবলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য জাতীয়, বার্ষিক, পঞ্চবার্ষিক এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন; (২) জাতীয় পরিকল্পনার আলোকে বার্ষিক কর্মসূচি প্রণয়ন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন; (৩) পরিকল্পনার দক্ষতা মূল্যায়ন এবং জাতীয় পরিকল্পনা মূল্যায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ; (৪) গুরুত্বর্পূণ অর্থনৈতিক বিষয়ের উপর সমীক্ষা পরিচালনা করা এবং অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; (৫) বৈদেশিক সাহায্য-চাহিদা নিরূপণ এবং প্রয়োজনীয় সাহায্যের পরিমাণ এবং আঙ্গিক গঠন নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা; (৬) বৈদেশিক ঋণের প্রাক্কলন এবং এ বিষয়ে জাতীয় পরিকল্পনার মূল্যায়নসহ প্রতিবেদন প্রণয়ন; (৭) অর্থনৈতিক গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ ও প্রণোদনা প্রদান এবং কার্যকর পরিকল্পনা ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় জরীপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম গ্রহণ; (৮) জাতীয় পরিকল্পনা, বার্ষিক কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক নীতিমালার ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করণের জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক অবকাঠামো সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান; (৯) প্রকল্প প্রণয়ন প্রক্রিয়া উজ্জ্বীবিতকরণ এবং প্রয়োজনবোধে প্রকল্প প্রণয়নের দায়িত্ব গ্রহণ, জাতীয় উদ্দেশ্যাবলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার্থে কর্মসূচি ও প্রকল্পসমূহের পরীক্ষা এবং এ বিষয়ে পরামর্শ প্রদান; (১০) অনুমোদিত প্রকল্প, বিশেষত সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যাসমূহ ও বিলম্বের কারণসমূহ নিরূপণ এবং এ জাতীয় সমস্যা সমাধানের পন্থা নির্ধারণ; (১১) দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা; (১২) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে উপস্থাপনের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং দারিদ্র্য নিরসন কৌশল বাস্তবায়ন পর্যালোচনা ও হালনাগাদকরণের নির্দেশনা প্রদান; (১৩) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে উপস্থাপনের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ; (১৫) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে উপস্থাপনের জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ; (১৬) পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবদি; এবং (১৭) পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয়াবদি সম্পর্কে আন্তঃমন্ত্রণালয় মত পার্থক্য দূরীকরণ।

অধিকন্ত, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ বা ন্যাশনাল ইকনোমিক কাউন্সিলের (এনইসি) পক্ষে উন্নয়ন ও নীতি নির্দেশনা পরীক্ষা পর্যালোচনার কাজও পরিকল্পনা কমিশনের। এনইসিকে একটি মিনি মন্ত্রিপরিষদ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়, মন্ত্রিপরিষদের অর্থনৈতিক কার্যাবলি বিষয়ক মন্ত্রীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনইসি গঠিত হয়। একই সাথে এনইসির নির্বাহী কমিটি সংক্ষেপে একনেক-এর কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়: (ক) উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বিবেচনান্তে অনুমোদন, (খ) উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং (গ) অর্থনীতির সার্বিক অগ্রগতি এবং তদসংশ্লিষ্ট নীতিসমূহ বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করা, তথা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা।

দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্র ও বিষয়াদি পরিকল্পনা কমিশনের কর্মধারার আওতায় পরিচালিত হয়:

পরিকল্পনা নীতি নির্ধারণ উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহের উদ্দেশ্য, লক্ষ্যমাত্রা, প্রাধিকার, বাস্তবায়ন কৌশল এবং নীতি নিরূপণ বা নির্ধারণ।

খাতভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন অর্থনীতির খাত ও ক্ষেত্রভিত্তিক উন্নয়নে উন্নয়ন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা শনাক্তকরণ।

আর্থিক সংশ্লেষ নির্ধারণ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণ ও সম্পদের সংস্থান নির্দেশ।

প্রকল্প-পরিকল্পনা খাতভিত্তিক পরিকল্পনা দর্শনের ভিত্তিতে যথা উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে একক প্রকল্প প্রণয়ন।

মূল্যায়ন প্রকল্পের প্রভাবক ভূমিকা মূল্যায়ন, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রকল্প ব্যয়ে সংশ্লিষ্টতা ও যথার্থতা যাচাই।

বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের কার্যাবলি

  • দীর্ঘমেয়াদী (১৫-২০) রূপকল্পের আওতায় ৫ বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন।
  • পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ছায়া অবলম্বনে ত্রিবার্ষিক প্রবহমান বিনিয়োগ পরিকল্পনা (TYRIP) প্রণয়ন।
  • দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) প্রণয়ন।
  • ত্রিবার্ষিক ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসমূহের ভাবদর্শনের আওতায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন।
  • একনেক সভা ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর জন্য প্রকল্প মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা সারপত্র প্রণয়ন।
  • প্রকল্প মূল্যায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের প্রভাবক ভূমিকা বা অবদান বিশ্লেষণ।
  • উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে উৎকর্ষতা বিধানের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ।

পরিকল্পনা কমিশন পাঁচ বছর মেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। বাংলাদেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ইতিহাসে দুটি পর্ব বা পর্যায় শনাক্ত করা চলে: প্রথম পর্ব ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসনামল; দ্বিতীয় পর্ব বাংলাদেশ আমল। প্রথম পর্বে ১৯৫১-১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রণীত হয় একটি ষষ্ঠ বার্ষিকসহ তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। দ্বিতীয় পর্বে প্রথমদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুর্নগঠন কাজে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, ক্ষয়ক্ষতির সুমার পরিসংখ্যান সংগ্রহে কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়। বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয় ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য। এরপর দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পরিবর্তে একটি অন্তবর্তীকালীন দ্বিবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (১৯৭৮-৮০) কাজ হাতে নেয়া হয়। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সময়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শুরু হয় ২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৭-২০০২ সময়ের জন্য। ২০০৩-২০১১ সালের জন্য সরকার ষষ্ঠবার্ষিক পরিকল্পনার স্থলে দারিদ্র্য নিরসন কৌশল পত্র (অন্তবর্তীকালীন ও পূর্ণাঙ্গ) প্রণয়ন করে। এর পর পুনরায় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রথায় ফিরে এসে ২০১১-১৫ সময়ের জন্য ষষ্ঠ, ২০১৬-২০২০ সময়ের জন্য সপ্তম এবং ২০২১-২৫ সময়ের জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন অনিবার্যভাবে একটি পেশাদারী প্রতিষ্ঠান। যেহেতু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রাজনীতি-দর্শন সংশ্লিষ্ট সেহেতু একজন মন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনায় কমিশন তার ভূমিকা পালন করে। তবে প্রকৃত প্রস্তাবে কমিশনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের প্রধান নিয়ন্তা দেশের সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী যিনি পরিকল্পনা কমিশনেরও সভাপতি। পরিকল্পনা মন্ত্রী কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান। নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন পর্যায়ে কমিশন একজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং পাঁচ জন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত। পরিকল্পনা সচিব মূখ্যত কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করেন। পরিকল্পনা বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনকে প্রশাসনিক সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। কমিশনের সদস্যগণের অধীনে আছে ছয়টি খাতভিত্তিক কর্ম বিভাগ এবং বিভাগসমূহ ৩০টি কার্যকরী উইং-এ বিভক্ত। দুটি বিভাগ সাধারণ অর্থনৈতিক ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সমন্বয় সংক্রান্ত কাজ করে। বিভাগ দু’টির নাম যথাক্রমে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এবং কার্যক্রম বিভাগ। খাতভিত্তিক চারটি বিভাগ, যথা কৃষি পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ; শিল্প ও শক্তি বিভাগ, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। এসব বিভাগ অর্থনীতির সংশ্লিষ্ট খাতসমূহের উন্নয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি যথা উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, পরীক্ষা পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের কাজ করে থাকে।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের অধীনস্থ বিসিএিস ইকোনোমিক ক্যাডার কর্মকর্তাগণ বিসিএিস প্রশাসন ক্যাডারের সাথে একীভুত, তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা বিভাগ। বিভাগীয় প্রধানগণ চীফ বা প্রধান এবং উইং-এর প্রধানগণ যুগ্ম প্রধান পর্যায়ের কর্মকর্তা। উইংসমূহ আবার অধি শাখায় বিভক্ত যেগুলো ডেপুটি চীফ বা উপপ্রধানের নেতৃত্বে। সর্বশেষ স্তর হল ডেস্ক যা সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট। অ্যাসিস্ট্যান্ট চীফ বা সহকারি প্রধান পর্যায়ের কর্মকর্তারা এর দেখাশুনা করে।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং প্রকল্প পর্যালোচনা মূল্যায়ন অনুমোদন কাজে পরিকল্পনা কমিশন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়ধর্মী যোগাযোগ রক্ষা করে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সাথে পরিকল্পনা কমিশনের যোগাযোগের লেখচিত্র-

পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য তথ্য উপাত্ত পরিসংখ্যান অন্যতম প্রয়োজনীয় শর্ত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিকল্পনা কমিশনকে তথ্য উপাত্ত পরিসংখ্যান সরবরাহ করে। অর্থ বিভাগ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনকে আর্থিক সংশ্লেষ, অর্থ বরাদ্দ, রাজস্ব আহরণ ও ব্যবস্থাপনা এবং রীতিনীতি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মধারায় বাস্তবায়ন মূল্যায়ন ও পরীবিক্ষণ বিভাগের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণের কাজ আইএমইডির। আইএমইডির পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে পরিকল্পনা কমিশন যাবতীয় প্রতিবিধান মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশী সাহায্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাথে পরিকল্পনা কমিশনের আন্তযোগাযোগ অত্যধিক। সামষ্টিক পর্যায়ে এডিপিতে প্রকল্পওয়ারী বৈদেশিক সাহায্যের সংস্থান করে থাকে ইআরডি। বিআইডিএস পরিকল্পনা কমিশনকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গবেষণালব্ধ উপাত্ত ও পরামর্শ পর্যালোচনা প্রদান করে থাকে। কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানে পরিকল্পনা উন্নয়ন একাডেমী ভূমিকা পালন করে থাকে। কমিশন এনইসি/একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের যাবতীয় পরিকল্পনা, মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ কার্যপত্র পেশ করে থাকে। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]