বসু, চন্দ্রনাথ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৪ নং লাইন: | ৪ নং লাইন: | ||
চন্দ্রনাথ বসুর সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় Calcatta University Magazine নামে একটি ইংরেজি মাসিকপত্র প্রকাশ করার মাধ্যমে। একজন সাংবাদিক হিসেবে অচিরেই তিনি যশস্বী হয়ে উঠেন। বাঙালি সমাজের জাগড়ন সৃষ্টি করা ছিল তাঁর লেখালেখির প্রধান লক্ষ্য। তাঁর অধিকাংশ লেখা প্রকাশিত হয় বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন, গিরিশচন্দ্র ঘোষের Bengalee, অক্ষয়চন্দ্রের নবজীবন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতী ও নব্যভারত, প্রচার প্রভৃতি সাময়িকীতে। | চন্দ্রনাথ বসুর সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় Calcatta University Magazine নামে একটি ইংরেজি মাসিকপত্র প্রকাশ করার মাধ্যমে। একজন সাংবাদিক হিসেবে অচিরেই তিনি যশস্বী হয়ে উঠেন। বাঙালি সমাজের জাগড়ন সৃষ্টি করা ছিল তাঁর লেখালেখির প্রধান লক্ষ্য। তাঁর অধিকাংশ লেখা প্রকাশিত হয় বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন, গিরিশচন্দ্র ঘোষের Bengalee, অক্ষয়চন্দ্রের নবজীবন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতী ও নব্যভারত, প্রচার প্রভৃতি সাময়িকীতে। | ||
চাকরি জীবনের শুরুতে চন্দ্রনাথ বসু সরকারের ‘শিক্ষা-বিভাগ’-এ কাজ করেন। তাঁর বিদ্যা ও অগ্রসর চিন্তাধারার স্বীকৃতিতে সরকার চন্দ্রনাথ বসুকে ১৮৭৮ সালে একজন মনোনীত ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত করে। কিন্তু আমলা জীবন তাঁর মেজাজের সঙ্গে মেলেনি বিধায় তিনি ছয় মাস পরই ম্যাজিস্ট্রেট-এর পদ থেকে অব্যাহতি নেন। কর্মজীবনে তিনি ‘শিক্ষা-বিভাগ’কে বেছে নেন। ম্যাজিস্ট্রেট-এর পদ ছেড়ে তিনি কলকাতার জয়পুর কলেজের প্রিন্সিপাল-এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইতোপূর্বে তিনি বেঙ্গল লাইব্রেরির অধ্যক্ষের পদ অলংকৃত করেন। উল্লেখ্য, বেঙ্গল লাইব্রেরি ছিল এদেশের প্রথম সরকারি প্রতিষ্ঠান। জয়পুর কলেজ ছেড়ে তিনি ১৮৮৭ তিনি বেঙ্গল গভর্ণমেন্টের অনুবাদকের পদে যোগদান করেন। উপনিবেশিক শাসনামলে সরকারের অনুবাদকের পদটি ছিল প্রথম শ্রেণিভুক্ত এবং অতিশয় দায়িত্বপূর্ণ। এ পদ থেকে তিনি ১৯০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৯৬ সালে চন্দ্রনাথ বসু [[বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ|বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ]]-এর সহকারী সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৮৯৭ সালে এর সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। উল্লেখ্য যে, ১৮৯৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হলে এর প্রথম সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত হন যথাক্রমে [[দত্ত, রমেশচন্দ্র|রমেশ চন্দ্র দত্ত]] (আই.সি.এস) এবং যৌথভাবে [[ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ও [[সেন, নবীনচন্দ্র|নবীনচন্দ্র সেন]]। | চাকরি জীবনের শুরুতে চন্দ্রনাথ বসু সরকারের ‘শিক্ষা-বিভাগ’-এ কাজ করেন। তাঁর বিদ্যা ও অগ্রসর চিন্তাধারার স্বীকৃতিতে সরকার চন্দ্রনাথ বসুকে ১৮৭৮ সালে একজন মনোনীত ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত করে। কিন্তু আমলা জীবন তাঁর মেজাজের সঙ্গে মেলেনি বিধায় তিনি ছয় মাস পরই ম্যাজিস্ট্রেট-এর পদ থেকে অব্যাহতি নেন। কর্মজীবনে তিনি ‘শিক্ষা-বিভাগ’কে বেছে নেন। ম্যাজিস্ট্রেট-এর পদ ছেড়ে তিনি কলকাতার জয়পুর কলেজের প্রিন্সিপাল-এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইতোপূর্বে তিনি বেঙ্গল লাইব্রেরির অধ্যক্ষের পদ অলংকৃত করেন। উল্লেখ্য, বেঙ্গল লাইব্রেরি ছিল এদেশের প্রথম সরকারি প্রতিষ্ঠান। জয়পুর কলেজ ছেড়ে তিনি ১৮৮৭ তিনি বেঙ্গল গভর্ণমেন্টের অনুবাদকের পদে যোগদান করেন। উপনিবেশিক শাসনামলে সরকারের অনুবাদকের পদটি ছিল প্রথম শ্রেণিভুক্ত এবং অতিশয় দায়িত্বপূর্ণ। এ পদ থেকে তিনি ১৯০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৯৬ সালে চন্দ্রনাথ বসু [[বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ|বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ]]-এর সহকারী সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৮৯৭ সালে এর সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। উল্লেখ্য যে, ১৮৯৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হলে এর প্রথম সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত হন যথাক্রমে [[দত্ত, রমেশচন্দ্র|রমেশ চন্দ্র দত্ত]] (আই.সি.এস) এবং যৌথভাবে [[ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ও [[সেন, নবীনচন্দ্র|নবীনচন্দ্র সেন]]। | ||
চন্দ্রনাথ বসুর রচনাবলীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য শকুন্তলা তত্ত্ব (১৮৮১), ফুল ও ফল (১৮৮৫), হিন্দু বিবাহ (১৮৮৭); পশুপতি-সম্বাদ (ঐতিহাসিক উপন্যাস, ১৮৮৪), ত্রিধারা (১৮৯১), হিন্দুত্ব (১৮৯২); বর্ত্তমান বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রকৃতি (১৮৯৯), সাবিত্রীতত্ত্ব (১৯০০)। তাছাড়া তিনি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন তার মধ্যে প্রথম নীতিপুস্তক ও নূতন পাঠ উল্লেখযোগ্য। চন্দ্রনাথ বসু ২০ জুন ১৯১০ প্রয়াত হন। | চন্দ্রনাথ বসুর রচনাবলীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য শকুন্তলা তত্ত্ব (১৮৮১), ফুল ও ফল (১৮৮৫), হিন্দু বিবাহ (১৮৮৭); পশুপতি-সম্বাদ (ঐতিহাসিক উপন্যাস, ১৮৮৪), ত্রিধারা (১৮৯১), হিন্দুত্ব (১৮৯২); বর্ত্তমান বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রকৃতি (১৮৯৯), সাবিত্রীতত্ত্ব (১৯০০)। তাছাড়া তিনি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন তার মধ্যে প্রথম নীতিপুস্তক ও নূতন পাঠ উল্লেখযোগ্য। চন্দ্রনাথ বসু ২০ জুন ১৯১০ প্রয়াত হন। [শামীমা আক্তার] | ||
[শামীমা আক্তার | |||
[[en:Basu, Chandranath]] | [[en:Basu, Chandranath]] |
০৭:৩৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
বসু, চন্দ্রনাথ (১৮৪৪-১৯১০) উনিশ শতকের অন্যতম সাংবাদিক, গবেষক, প্রাবন্ধিক। ১৮৪৪ সালের ৩১ আগস্ট হুগলী জেলার রামপুরা মহকুমার অধীন হরিপাল থানার অন্তর্গত কৈকালা গ্রামে চন্দ্রনাথ বসুর জন্ম। পিতার নাম সীতানাথ বসু। ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য পাঁচ বছর বয়সে তাঁকে শিমলা বাজারের নিকটবর্তী হেদোর স্কুলে ভর্তি করানো হয়। হেদোর স্কুলে ছয় মাস ইংরেজি ভাষা শেখার পর তিনি ওরিয়েন্টাল সেমিনারির স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে তিনি ১৮৬০ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করে ১৮৬১ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। ১৮৬২ সালে তিনি উক্ত কলেজ থেকে ফার্স্ট আর্টস পরীক্ষা এবং ১৮৬৫ সালে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৮৬৬ সালে ইতিহাসে অনার্সসহ এমএ এবং ১৮৬৭ সালে বিএল পরীক্ষা পাস করেন। তবে তিনি কখনো আইন পেশা গ্রহণ করেননি।
চন্দ্রনাথ বসুর সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় Calcatta University Magazine নামে একটি ইংরেজি মাসিকপত্র প্রকাশ করার মাধ্যমে। একজন সাংবাদিক হিসেবে অচিরেই তিনি যশস্বী হয়ে উঠেন। বাঙালি সমাজের জাগড়ন সৃষ্টি করা ছিল তাঁর লেখালেখির প্রধান লক্ষ্য। তাঁর অধিকাংশ লেখা প্রকাশিত হয় বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন, গিরিশচন্দ্র ঘোষের Bengalee, অক্ষয়চন্দ্রের নবজীবন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতী ও নব্যভারত, প্রচার প্রভৃতি সাময়িকীতে।
চাকরি জীবনের শুরুতে চন্দ্রনাথ বসু সরকারের ‘শিক্ষা-বিভাগ’-এ কাজ করেন। তাঁর বিদ্যা ও অগ্রসর চিন্তাধারার স্বীকৃতিতে সরকার চন্দ্রনাথ বসুকে ১৮৭৮ সালে একজন মনোনীত ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত করে। কিন্তু আমলা জীবন তাঁর মেজাজের সঙ্গে মেলেনি বিধায় তিনি ছয় মাস পরই ম্যাজিস্ট্রেট-এর পদ থেকে অব্যাহতি নেন। কর্মজীবনে তিনি ‘শিক্ষা-বিভাগ’কে বেছে নেন। ম্যাজিস্ট্রেট-এর পদ ছেড়ে তিনি কলকাতার জয়পুর কলেজের প্রিন্সিপাল-এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইতোপূর্বে তিনি বেঙ্গল লাইব্রেরির অধ্যক্ষের পদ অলংকৃত করেন। উল্লেখ্য, বেঙ্গল লাইব্রেরি ছিল এদেশের প্রথম সরকারি প্রতিষ্ঠান। জয়পুর কলেজ ছেড়ে তিনি ১৮৮৭ তিনি বেঙ্গল গভর্ণমেন্টের অনুবাদকের পদে যোগদান করেন। উপনিবেশিক শাসনামলে সরকারের অনুবাদকের পদটি ছিল প্রথম শ্রেণিভুক্ত এবং অতিশয় দায়িত্বপূর্ণ। এ পদ থেকে তিনি ১৯০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৯৬ সালে চন্দ্রনাথ বসু বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ-এর সহকারী সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৮৯৭ সালে এর সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। উল্লেখ্য যে, ১৮৯৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হলে এর প্রথম সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত হন যথাক্রমে রমেশ চন্দ্র দত্ত (আই.সি.এস) এবং যৌথভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নবীনচন্দ্র সেন।
চন্দ্রনাথ বসুর রচনাবলীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য শকুন্তলা তত্ত্ব (১৮৮১), ফুল ও ফল (১৮৮৫), হিন্দু বিবাহ (১৮৮৭); পশুপতি-সম্বাদ (ঐতিহাসিক উপন্যাস, ১৮৮৪), ত্রিধারা (১৮৯১), হিন্দুত্ব (১৮৯২); বর্ত্তমান বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রকৃতি (১৮৯৯), সাবিত্রীতত্ত্ব (১৯০০)। তাছাড়া তিনি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন তার মধ্যে প্রথম নীতিপুস্তক ও নূতন পাঠ উল্লেখযোগ্য। চন্দ্রনাথ বসু ২০ জুন ১৯১০ প্রয়াত হন। [শামীমা আক্তার]