বম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''বম''' (Bawm) পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি ক্ষুদ্র কৌমসত্তার নাম। বমরা মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর লোক। এরা দেখতে [[চাকমা|চাকমা]] এবং [[মারমা|মারমা]] দের মতোই। ‘বম’ শব্দের অর্থ হলো বন্ধন। জীবনের যাবতীয় কর্ম, শিকার পর্ব, নৃত্যগীত, পানাহার, দেবতার উদ্দেশে যজ্ঞ নিবেদন সবকিছুই একত্র হয়ে সম্মিলিতভাবে সম্পাদন করার রীতি থেকে ‘বম‘ বা ‘বন্ধন’-এর ধারণাটি এসেছে। বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও সদর থানা এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানায় মোট ৭০টি গ্রামে বমদের বসবাস। ১৯৯১ সালের [[আদমশুমারি|আদমশুমারি]] অনুযায়ী বাংলাদেশে বম জনসংখ্যা ৬ হাজার ৯৭৮ জন। তাদের পরিবার সংখ্যা ১,৩৪৯টি। বমরা স্বভাবে অতি নম্র। সামাজিক আচার-আচরণ, বিচার সালিশ এবং বিবাদ মীমাংসার জন্য এদের নিজস্ব সামাজিক অবকাঠামো আছে। এই কাঠামো সামগ্রিকভাবে সামাজিক আচার-ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বম সমাজের কেউ এ যাবৎ নিজেদের মধ্যে সংঘটিত কোন বিবাদ মীমাংসার জন্য আদালত বা অন্যকোন সরকারি সংস্থার শরণাপন্ন হয়েছে বলে জানা যায় না। আজও বমরা তাদের জীবন পরিচালনা করে বম কাস্টমারি ল’ গ্রন্থের নির্দেশিকা অনুযায়ী। | '''বম''' (Bawm) পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি ক্ষুদ্র কৌমসত্তার নাম। বমরা মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর লোক। এরা দেখতে [[চাকমা|চাকমা]] এবং [[মারমা|মারমা]] দের মতোই। ‘বম’ শব্দের অর্থ হলো বন্ধন। জীবনের যাবতীয় কর্ম, শিকার পর্ব, নৃত্যগীত, পানাহার, দেবতার উদ্দেশে যজ্ঞ নিবেদন সবকিছুই একত্র হয়ে সম্মিলিতভাবে সম্পাদন করার রীতি থেকে ‘বম‘ বা ‘বন্ধন’-এর ধারণাটি এসেছে। বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও সদর থানা এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানায় মোট ৭০টি গ্রামে বমদের বসবাস। ১৯৯১ সালের [[আদমশুমারি|আদমশুমারি]] অনুযায়ী বাংলাদেশে বম জনসংখ্যা ৬ হাজার ৯৭৮ জন। তাদের পরিবার সংখ্যা ১,৩৪৯টি। বমরা স্বভাবে অতি নম্র। সামাজিক আচার-আচরণ, বিচার সালিশ এবং বিবাদ মীমাংসার জন্য এদের নিজস্ব সামাজিক অবকাঠামো আছে। এই কাঠামো সামগ্রিকভাবে সামাজিক আচার-ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বম সমাজের কেউ এ যাবৎ নিজেদের মধ্যে সংঘটিত কোন বিবাদ মীমাংসার জন্য আদালত বা অন্যকোন সরকারি সংস্থার শরণাপন্ন হয়েছে বলে জানা যায় না। আজও বমরা তাদের জীবন পরিচালনা করে বম কাস্টমারি ল’ গ্রন্থের নির্দেশিকা অনুযায়ী। | ||
[[Image:BawmDance.jpg|thumb|400px|right|বম নৃত্য]] | |||
বমদের সঙ্গে দেশের মূলস্রোতের মানুষের যোগাযোগ ও জানাশোনা অতি সামান্যই। বান্দরবান পার্বত্য জেলার মারমা ও আরাকানিরা বমদের লাঙ্গি বা লাঙ্গে বলে অভিহিত করে। | বমদের সঙ্গে দেশের মূলস্রোতের মানুষের যোগাযোগ ও জানাশোনা অতি সামান্যই। বান্দরবান পার্বত্য জেলার মারমা ও আরাকানিরা বমদের লাঙ্গি বা লাঙ্গে বলে অভিহিত করে। | ||
বমদের প্রধান পেশা [[জুমচাষ|জুমচাষ]]। পাহাড়ের ঢালে বিশেষ কায়দায় জুমচাষ করা হয়। জুমক্ষেতে ধান, পেঁপে, কলা, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল হয়। বমরা সমতল এলাকায় খুব কম আসে, দুর্গম পাহাড় অরণ্যেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। জুমচাষের জমির অভাব এবং ক্রমাগত বনভূমি উজাড় হওয়ার ফলে বমদের জীবনধারা অনেকখানি বদলে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। খ্রিস্টান মিশনারিগণ বমদের মধ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার শুরু করে। তখন থেকে বমরা খ্রিস্টান হতে থাকে। ১৯৫৯ সাল থেকে ব্যাংককের বাইবেল সোসাইটির তত্ত্বাবধানে [[লুসাই|লুসাই ]]ভাষায় লিখিত বাইবেল বম ভাষায় অনুবাদের কাজ শুরু হয়। | বমদের প্রধান পেশা [[জুমচাষ|জুমচাষ]]। পাহাড়ের ঢালে বিশেষ কায়দায় জুমচাষ করা হয়। জুমক্ষেতে ধান, পেঁপে, কলা, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল হয়। বমরা সমতল এলাকায় খুব কম আসে, দুর্গম পাহাড় অরণ্যেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। জুমচাষের জমির অভাব এবং ক্রমাগত বনভূমি উজাড় হওয়ার ফলে বমদের জীবনধারা অনেকখানি বদলে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। খ্রিস্টান মিশনারিগণ বমদের মধ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার শুরু করে। তখন থেকে বমরা খ্রিস্টান হতে থাকে। ১৯৫৯ সাল থেকে ব্যাংককের বাইবেল সোসাইটির তত্ত্বাবধানে [[লুসাই|লুসাই ]]ভাষায় লিখিত বাইবেল বম ভাষায় অনুবাদের কাজ শুরু হয়। | ||
১৯৬৬ সালে এসে বমদের ৮৬% লোক খ্রিস্টান হয় বলে জানা যায়। ২০০১ সালে বমদের প্রায় সকলেই খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। ফলে বমদের মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবও এখন বেশ দৃঢ়। | ১৯৬৬ সালে এসে বমদের ৮৬% লোক খ্রিস্টান হয় বলে জানা যায়। ২০০১ সালে বমদের প্রায় সকলেই খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। ফলে বমদের মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবও এখন বেশ দৃঢ়। | ||
১৬ নং লাইন: | ১৫ নং লাইন: | ||
বম সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। তাদের পরিবারে পিতাই হলেন প্রধান ব্যক্তি। আর পিতার সূত্র ধরেই সন্তানদের বংশ গণনা করা হয়। [সাদাত উল্লাহ খান] | বম সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। তাদের পরিবারে পিতাই হলেন প্রধান ব্যক্তি। আর পিতার সূত্র ধরেই সন্তানদের বংশ গণনা করা হয়। [সাদাত উল্লাহ খান] | ||
[[en:Bawm, The]] | [[en:Bawm, The]] |
০৪:৫৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
বম (Bawm) পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি ক্ষুদ্র কৌমসত্তার নাম। বমরা মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর লোক। এরা দেখতে চাকমা এবং মারমা দের মতোই। ‘বম’ শব্দের অর্থ হলো বন্ধন। জীবনের যাবতীয় কর্ম, শিকার পর্ব, নৃত্যগীত, পানাহার, দেবতার উদ্দেশে যজ্ঞ নিবেদন সবকিছুই একত্র হয়ে সম্মিলিতভাবে সম্পাদন করার রীতি থেকে ‘বম‘ বা ‘বন্ধন’-এর ধারণাটি এসেছে। বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও সদর থানা এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানায় মোট ৭০টি গ্রামে বমদের বসবাস। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে বম জনসংখ্যা ৬ হাজার ৯৭৮ জন। তাদের পরিবার সংখ্যা ১,৩৪৯টি। বমরা স্বভাবে অতি নম্র। সামাজিক আচার-আচরণ, বিচার সালিশ এবং বিবাদ মীমাংসার জন্য এদের নিজস্ব সামাজিক অবকাঠামো আছে। এই কাঠামো সামগ্রিকভাবে সামাজিক আচার-ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বম সমাজের কেউ এ যাবৎ নিজেদের মধ্যে সংঘটিত কোন বিবাদ মীমাংসার জন্য আদালত বা অন্যকোন সরকারি সংস্থার শরণাপন্ন হয়েছে বলে জানা যায় না। আজও বমরা তাদের জীবন পরিচালনা করে বম কাস্টমারি ল’ গ্রন্থের নির্দেশিকা অনুযায়ী।
বমদের সঙ্গে দেশের মূলস্রোতের মানুষের যোগাযোগ ও জানাশোনা অতি সামান্যই। বান্দরবান পার্বত্য জেলার মারমা ও আরাকানিরা বমদের লাঙ্গি বা লাঙ্গে বলে অভিহিত করে।
বমদের প্রধান পেশা জুমচাষ। পাহাড়ের ঢালে বিশেষ কায়দায় জুমচাষ করা হয়। জুমক্ষেতে ধান, পেঁপে, কলা, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল হয়। বমরা সমতল এলাকায় খুব কম আসে, দুর্গম পাহাড় অরণ্যেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। জুমচাষের জমির অভাব এবং ক্রমাগত বনভূমি উজাড় হওয়ার ফলে বমদের জীবনধারা অনেকখানি বদলে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। খ্রিস্টান মিশনারিগণ বমদের মধ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার শুরু করে। তখন থেকে বমরা খ্রিস্টান হতে থাকে। ১৯৫৯ সাল থেকে ব্যাংককের বাইবেল সোসাইটির তত্ত্বাবধানে লুসাই ভাষায় লিখিত বাইবেল বম ভাষায় অনুবাদের কাজ শুরু হয়।
১৯৬৬ সালে এসে বমদের ৮৬% লোক খ্রিস্টান হয় বলে জানা যায়। ২০০১ সালে বমদের প্রায় সকলেই খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। ফলে বমদের মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবও এখন বেশ দৃঢ়।
অতীতে বম জনগোষ্ঠীর লোকজন নদী থেকে দূরে দুর্গম পর্বত শিখরে তাদের গ্রামগুলি নির্মাণ করত। গ্রামগুলির চারদিকে শক্ত গাছের খুঁটি পুঁতে বেষ্টনী তৈরি করা হতো। বমরা মাটিতে খুঁটি পুঁতে উঁচু পাহাড়ের উপর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তাতে বাড়িঘর নির্মাণ করে। তাদের ঘরকে মাচাং বলা হয়। মাচাং বাঁশ বা কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়।
বমদের বাঁশনৃত্য তাদের জীবনেরই অপরিহার্য অংশ। এটি পরিবেশ থেকে নেওয়া নৃত্যানুষ্ঠান। বমদের বাঁশনৃত্য ও গান আসলে কোন আনন্দের বা উৎসবের নৃত্য বা গান নয়। এ নৃত্য ও গান পরিবেশিত হয় বম পরিবারের দুঃখ ও শোকের দিনে। বিশেষ করে পরিবারের কারও অকাল বা অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে এই গান করা হয়। শোকের সময় মানুষকে সান্ত্বনা ও সাহস দেওয়ার এটাই বমদের রীতি।
বম সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। তাদের পরিবারে পিতাই হলেন প্রধান ব্যক্তি। আর পিতার সূত্র ধরেই সন্তানদের বংশ গণনা করা হয়। [সাদাত উল্লাহ খান]