কাউখালী উপজেলা (পিরোজপুর): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Robot: Automated text replacement (-\|\s''জনসংখ্যা''\s\|\| +| জনসংখ্যা ||)) |
(হালনাগাদ) |
||
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''কাউখালী উপজেলা ([[পিরোজপুর জেলা| | '''কাউখালী উপজেলা''' ([[পিরোজপুর জেলা|পিরোজপুর জেলা]]) আয়তন: ৭৯.৫৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩১´ থেকে ২২°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০১´ থেকে ৯০°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা, দক্ষিণে ভান্ডারিয়া উপজেলা, পূর্বে ঝালকাঠি সদর ও রাজাপুর উপজেলা, পশ্চিমে পিরোজপুর সদর উপজেলা। | ||
''জনসংখ্যা'' | ''জনসংখ্যা'' ৭০১৩০; পুরুষ ৩৪৮৯৩, মহিলা ৩৫২৩৭। মুসলিম ৫৯৪১৮, হিন্দু ১০৭০৫, খ্রিস্টান ৫ এবং অন্যান্য ২। | ||
''জলাশয়'' প্রধান নদী: স্বরূপকাঠি, নলছিটি, কালীগঙ্গা ও কচা। | ''জলাশয়'' প্রধান নদী: স্বরূপকাঠি, নলছিটি, কালীগঙ্গা ও কচা। | ||
১২ নং লাইন: | ১২ নং লাইন: | ||
| colspan="9" | উপজেলা | | colspan="9" | উপজেলা | ||
|- | |- | ||
| rowspan="2" | পৌরসভা || rowspan="2" | ইউনিয়ন || rowspan="2" | মৌজা || rowspan="2" | গ্রাম || colspan="2" | জনসংখ্যা || rowspan="2" | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) || colspan="2" | শিক্ষার হার (%) | | rowspan="2" | পৌরসভা || rowspan="2" | ইউনিয়ন || rowspan="2" | মৌজা || rowspan="2" | গ্রাম || colspan="2" | জনসংখ্যা || rowspan="2" | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) || colspan="2" | শিক্ষার হার (%) | ||
|- | |- | ||
| শহর || গ্রাম || শহর || গ্রাম | | শহর || গ্রাম || শহর || গ্রাম | ||
|- | |- | ||
| - | | - || ৫ || ৪৫ || ৫৯ || ৯৬৪১ || ৬০৪৮৯ || ৮৮১ || ৭২.১ || ৬৩.৪ | ||
|} | |} | ||
২৩ নং লাইন: | ২৩ নং লাইন: | ||
{| class="table table-bordered table-hover" | {| class="table table-bordered table-hover" | ||
|- | |- | ||
| উপজেলা শহর | | colspan="9" | উপজেলা শহর | ||
|- | |- | ||
| আয়তন (বর্গ কিমি) || মৌজা || লোকসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) || শিক্ষার হার (%) | | আয়তন (বর্গ কিমি) || মৌজা || লোকসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) || শিক্ষার হার (%) | ||
|- | |- | ||
| | | ৫.২৬ || ৩ || ৯৬৪১ || ১৮৩৩ || ৭২.১ | ||
|} | |} | ||
৩৩ নং লাইন: | ৩৩ নং লাইন: | ||
{| class="table table-bordered table-hover" | {| class="table table-bordered table-hover" | ||
|- | |- | ||
| ইউনিয়ন | | colspan="9" | ইউনিয়ন | ||
|- | |- | ||
| rowspan="2" | ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড || rowspan="2" | আয়তন (একর) || colspan="2" | লোকসংখ্যা || rowspan="2" | শিক্ষার হার (%) | | rowspan="2" | ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড || rowspan="2" | আয়তন (একর) || colspan="2" | লোকসংখ্যা || rowspan="2" | শিক্ষার হার (%) | ||
৩৯ নং লাইন: | ৩৯ নং লাইন: | ||
| পুরুষ || মহিলা | | পুরুষ || মহিলা | ||
|- | |- | ||
| | | আমড়াঝুড়ি ১৫ || ৩২১১ || ৪২৭৮ || ৪২৪৮ || ৫০.১ | ||
|- | |||
| কাউখালী ৪৭ || ৫২৪৫ || ১২৬৫৭ || ১৩১১১ || ৬২.৯ | |||
|- | |- | ||
| | | চিড়াপাড়া পাড় সাটুুরিয়া ৩১ || ৪০০২ || ৬৮১৩ || ৬৬১২ || ৭৩.৫ | ||
|- | |- | ||
| | | শিয়ালকাটি ৭৯ || ৩৮৫১ || ৫৭৪০ || ৫৭৩০ || ৬৯.৭ | ||
|- | |- | ||
| | | সেনা রঘুনাথপুর ৬৩ || ৩৩৫১ || ৫৪০৫ || ৫৫৩৬ || ৬৪.৩ | ||
|} | |} | ||
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট | ''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। | ||
'' | ''মুক্তিযুদ্ধ'' ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পিরোজপুর মহকুমায় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। কাউখালী উপজেলার কেউন্দিয়া গ্রামে মুক্তিবাহিনীর শক্ত ঘাটি ছিল। আগস্ট মাসে মুক্তিযোদ্ধারা কাউখালী থানা আক্রমণ করে অস্ত্র দখল করে নেয়। সেপ্টেম্বর মাসে কেউন্দিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনা ও রাজাকারদের লড়াইয়ে ১৭ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। এছাড়া আমড়াঝুড়িতে পাকসেনারা ৩০ জন লোককে হত্যা করে এবং অসংখ্য ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। উপজেলার লঞ্চঘাটে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে। | ||
''বিস্তারিত দেখুন'' কাউখালী উপজেলা, ''বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ'', বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬। | |||
[[Image:KawkhaliUpazilaPirojpur.jpg|thumb|400px|right]] | [[Image:KawkhaliUpazilaPirojpur.jpg|thumb|400px|right]] | ||
''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান'' মসজিদ ১০৫, মন্দির ২০, তীর্থস্থান ২। | ''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান'' মসজিদ ১০৫, মন্দির ২০, তীর্থস্থান ২। | ||
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার | ''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৬৪.৬%; পুরুষ ৬৫.১%, মহিলা ৬৪.২%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭২, মাদ্রাসা ৪৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাউখালী ডিগ্রি কলেজ, কাউখালী সরকারি কেজি ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়, কাউখালী সরকারি এস.বি. বালিকা বিদ্যালয়, কাউখালী আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাউখালী কেন্দ্রীয় আলিম মাদ্রাসা। | ||
''সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান'' লাইব্রেরি ৪, নাট্যদল ২, সিনেমা হল ১। | ''সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান'' লাইব্রেরি ৪, নাট্যদল ২, সিনেমা হল ১। | ||
''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৩৭.০১%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৪৮%, শিল্প ১.১৩%, ব্যবসা ২৩.৬৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৮২%, চাকরি ১৩.৩১%, নির্মাণ ১.৫১%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.১৩% এবং অন্যান্য ১৫.৫০%। | ''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৩৭.০১%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৪৮%, শিল্প ১.১৩%, ব্যবসা ২৩.৬৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৮২%, চাকরি ১৩.৩১%, নির্মাণ ১.৫১%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.১৩% এবং অন্যান্য ১৫.৫০%। | ||
''কৃষিভূমির মালিকানা'' ভূমিমালিক ৫৯.৫৮%, ভূমিহীন ৪০.৪২%। শহরে ৫৭.৪৮% এবং গ্রামে ৫৯.৮৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে। | ''কৃষিভূমির মালিকানা'' ভূমিমালিক ৫৯.৫৮%, ভূমিহীন ৪০.৪২%। শহরে ৫৭.৪৮% এবং গ্রামে ৫৯.৮৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে। | ||
''প্রধান কৃষি ফসল'' ধান, মরিচ, পান, ডাল। উপজেলায় উৎপন্ন আমড়া ও মানকচু উল্লেখযোগ্য অর্থকরী ফসল। এ অঞ্চলের অধিকাংশ ধানী জমি দু‘ফসলা, আউশ ও আমন। সম্প্রতি কৃষকরা উচ্চফলনশীল ধানের চাষে আকৃষ্ট হয়েছে। উপজেলায় উৎপন্ন প্রধান জাতের ধানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কার্তিক বালাম, বাশপাইর, জয়না, মোটা, বেতি চিকন, রাজাশাইল ইত্যাদি। উপজেলায় পান চাষের সাথে স্থানীয় ‘বিরাট’ সম্প্রদায় জড়িত। তাদের বারুজীবীও বলা হয়। এখানের উৎপাদিত পান দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়ে থাকে। | ''প্রধান কৃষি ফসল'' ধান, মরিচ, পান, ডাল। উপজেলায় উৎপন্ন আমড়া ও মানকচু উল্লেখযোগ্য অর্থকরী ফসল। এ অঞ্চলের অধিকাংশ ধানী জমি দু‘ফসলা, আউশ ও আমন। সম্প্রতি কৃষকরা উচ্চফলনশীল ধানের চাষে আকৃষ্ট হয়েছে। উপজেলায় উৎপন্ন প্রধান জাতের ধানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কার্তিক বালাম, বাশপাইর, জয়না, মোটা, বেতি চিকন, রাজাশাইল ইত্যাদি। উপজেলায় পান চাষের সাথে স্থানীয় ‘বিরাট’ সম্প্রদায় জড়িত। তাদের বারুজীবীও বলা হয়। এখানের উৎপাদিত পান দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়ে থাকে। | ||
''প্রধান ফল- | ''প্রধান ফল-ফলাদি'' আম, নারিকেল, সুপারি, তাল, চালতা, আমড়া। | ||
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির | ''মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার'' মৎস্য ১০৯, গবাদিপশু ৫৫, হাঁস-মুরগি ২০। | ||
''যোগাযোগ বিশেষত্ব'' | ''যোগাযোগ বিশেষত্ব'' পাকা রাস্তা ৪৮ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ১২২ কিমি, কাঁচা রাস্তা ২৩৬ কিমি; নৌপথ ৫৫ কিমি। | ||
''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন'' পালকি। | ''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন'' পালকি। | ||
''উল্লেখযোগ্য শিল্প ও কলকারখানা'' অয়েল মিল, ফ্লাওয়ার মিল, রাইস মিল, স’মিল। | |||
''কুটিরশিল্প'' এ উপজেলা শীতল পাটির জন্য বিখ্যাত। মৃৎশিল্প, কাঠের নকশি কাজ, নকশি কাঁথা এ উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক। | ''কুটিরশিল্প'' এ উপজেলা শীতল পাটির জন্য বিখ্যাত। মৃৎশিল্প, কাঠের নকশি কাজ, নকশি কাঁথা এ উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক। | ||
৮৬ নং লাইন: | ৮৫ নং লাইন: | ||
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য'' আমড়া, পান, নারিকেল। | ''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য'' আমড়া, পান, নারিকেল। | ||
''বিদ্যুৎ ব্যবহার'' এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে | ''বিদ্যুৎ ব্যবহার'' এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৪.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। | ||
''পানীয়জলের উৎস'' নলকূপ ৯৮.৮%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ১.০%। কাউখালী অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে যে, রঘুনাথপুর ইউনিয়নে ৬৯%, আমড়াঝুড়ি ইউনিয়নে ৭০%, কাউখালী ইউনিয়নে ৭১%, চিরাপাড়া পার সাতুরিয়া ইউনিয়নে ২৪% এবং শিয়ালকাঠি ইউনিয়নে ২৫% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। | |||
''স্যানিটেশন ব্যবস্থা'' এ উপজেলার | ''স্যানিটেশন ব্যবস্থা'' এ উপজেলার ৪৯.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫০.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ০.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই। | ||
''স্বাস্থ্যকেন্দ্র'' উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ৭, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫। | ''স্বাস্থ্যকেন্দ্র'' উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ৭, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫। | ||
৯৬ নং লাইন: | ৯৫ নং লাইন: | ||
''প্রাকৃতিক দুর্যোগ'' উপজেলাটি ১৭৬২ সালের ভূমিকম্প ও ঘূর্নিঝড়, ১৮২২ ও ১৯০৯ সালের জলোচ্ছ্বাস, ১৭৭০ ও ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৬০, ১৯৬৫, ১৯৭০, ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। | ''প্রাকৃতিক দুর্যোগ'' উপজেলাটি ১৭৬২ সালের ভূমিকম্প ও ঘূর্নিঝড়, ১৮২২ ও ১৯০৯ সালের জলোচ্ছ্বাস, ১৭৭০ ও ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৬০, ১৯৬৫, ১৯৭০, ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। | ||
''এনজিও'' ৭। কেয়ার, ব্র্যাক, কারিতাস, আশা ও পল্লী পুনর্গঠন উল্লেখযোগ্য। [তপন কুমার রায়] | ''এনজিও'' ৭। কেয়ার, ব্র্যাক, কারিতাস, আশা ও পল্লী পুনর্গঠন উল্লেখযোগ্য। [তপন কুমার রায়] | ||
'''তথ্যসূত্র''' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কাউখালী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭। | |||
[[en:Kawkhali Upazila (Pirojpur District)]] | [[en:Kawkhali Upazila (Pirojpur District)]] |
১৭:০৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
কাউখালী উপজেলা (পিরোজপুর জেলা) আয়তন: ৭৯.৫৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩১´ থেকে ২২°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০১´ থেকে ৯০°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা, দক্ষিণে ভান্ডারিয়া উপজেলা, পূর্বে ঝালকাঠি সদর ও রাজাপুর উপজেলা, পশ্চিমে পিরোজপুর সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৭০১৩০; পুরুষ ৩৪৮৯৩, মহিলা ৩৫২৩৭। মুসলিম ৫৯৪১৮, হিন্দু ১০৭০৫, খ্রিস্টান ৫ এবং অন্যান্য ২।
জলাশয় প্রধান নদী: স্বরূপকাঠি, নলছিটি, কালীগঙ্গা ও কচা।
প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯০৬ সালে এবং থানা উপজেলায় রূপান্তর হয় ১ আগস্ট ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৫ | ৪৫ | ৫৯ | ৯৬৪১ | ৬০৪৮৯ | ৮৮১ | ৭২.১ | ৬৩.৪ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৫.২৬ | ৩ | ৯৬৪১ | ১৮৩৩ | ৭২.১ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আমড়াঝুড়ি ১৫ | ৩২১১ | ৪২৭৮ | ৪২৪৮ | ৫০.১ | ||||
কাউখালী ৪৭ | ৫২৪৫ | ১২৬৫৭ | ১৩১১১ | ৬২.৯ | ||||
চিড়াপাড়া পাড় সাটুুরিয়া ৩১ | ৪০০২ | ৬৮১৩ | ৬৬১২ | ৭৩.৫ | ||||
শিয়ালকাটি ৭৯ | ৩৮৫১ | ৫৭৪০ | ৫৭৩০ | ৬৯.৭ | ||||
সেনা রঘুনাথপুর ৬৩ | ৩৩৫১ | ৫৪০৫ | ৫৫৩৬ | ৬৪.৩ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পিরোজপুর মহকুমায় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। কাউখালী উপজেলার কেউন্দিয়া গ্রামে মুক্তিবাহিনীর শক্ত ঘাটি ছিল। আগস্ট মাসে মুক্তিযোদ্ধারা কাউখালী থানা আক্রমণ করে অস্ত্র দখল করে নেয়। সেপ্টেম্বর মাসে কেউন্দিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনা ও রাজাকারদের লড়াইয়ে ১৭ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। এছাড়া আমড়াঝুড়িতে পাকসেনারা ৩০ জন লোককে হত্যা করে এবং অসংখ্য ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। উপজেলার লঞ্চঘাটে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন কাউখালী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১০৫, মন্দির ২০, তীর্থস্থান ২।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৪.৬%; পুরুষ ৬৫.১%, মহিলা ৬৪.২%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭২, মাদ্রাসা ৪৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাউখালী ডিগ্রি কলেজ, কাউখালী সরকারি কেজি ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়, কাউখালী সরকারি এস.বি. বালিকা বিদ্যালয়, কাউখালী আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাউখালী কেন্দ্রীয় আলিম মাদ্রাসা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, নাট্যদল ২, সিনেমা হল ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৭.০১%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৪৮%, শিল্প ১.১৩%, ব্যবসা ২৩.৬৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৮২%, চাকরি ১৩.৩১%, নির্মাণ ১.৫১%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.১৩% এবং অন্যান্য ১৫.৫০%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৫৮%, ভূমিহীন ৪০.৪২%। শহরে ৫৭.৪৮% এবং গ্রামে ৫৯.৮৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, মরিচ, পান, ডাল। উপজেলায় উৎপন্ন আমড়া ও মানকচু উল্লেখযোগ্য অর্থকরী ফসল। এ অঞ্চলের অধিকাংশ ধানী জমি দু‘ফসলা, আউশ ও আমন। সম্প্রতি কৃষকরা উচ্চফলনশীল ধানের চাষে আকৃষ্ট হয়েছে। উপজেলায় উৎপন্ন প্রধান জাতের ধানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কার্তিক বালাম, বাশপাইর, জয়না, মোটা, বেতি চিকন, রাজাশাইল ইত্যাদি। উপজেলায় পান চাষের সাথে স্থানীয় ‘বিরাট’ সম্প্রদায় জড়িত। তাদের বারুজীবীও বলা হয়। এখানের উৎপাদিত পান দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়ে থাকে।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, নারিকেল, সুপারি, তাল, চালতা, আমড়া।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০৯, গবাদিপশু ৫৫, হাঁস-মুরগি ২০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ৪৮ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ১২২ কিমি, কাঁচা রাস্তা ২৩৬ কিমি; নৌপথ ৫৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি।
উল্লেখযোগ্য শিল্প ও কলকারখানা অয়েল মিল, ফ্লাওয়ার মিল, রাইস মিল, স’মিল।
কুটিরশিল্প এ উপজেলা শীতল পাটির জন্য বিখ্যাত। মৃৎশিল্প, কাঠের নকশি কাজ, নকশি কাঁথা এ উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক।
হাটবাজার, মেলা হাটবাজার ১২। কাউখালী হাট, আমড়াঝুড়ি হাট ও কেউন্দিয়া হাট এবং দুর্গাপূজা ও রাস পূর্ণিমার মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য আমড়া, পান, নারিকেল।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৪.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.৮%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ১.০%। কাউখালী অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে যে, রঘুনাথপুর ইউনিয়নে ৬৯%, আমড়াঝুড়ি ইউনিয়নে ৭০%, কাউখালী ইউনিয়নে ৭১%, চিরাপাড়া পার সাতুরিয়া ইউনিয়নে ২৪% এবং শিয়ালকাঠি ইউনিয়নে ২৫% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৯.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫০.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ০.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ৭, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপজেলাটি ১৭৬২ সালের ভূমিকম্প ও ঘূর্নিঝড়, ১৮২২ ও ১৯০৯ সালের জলোচ্ছ্বাস, ১৭৭০ ও ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৬০, ১৯৬৫, ১৯৭০, ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এনজিও ৭। কেয়ার, ব্র্যাক, কারিতাস, আশা ও পল্লী পুনর্গঠন উল্লেখযোগ্য। [তপন কুমার রায়]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কাউখালী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।