কুন্ডু, নিতুন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''কুন্ডু, নিতুন''' (১৯৩৫-২০০৬) চিত্রশিল্পী, নকশাবিদ, ভাস্কর, শিল্পপতি। জন্ম ১৯৩৫ সালের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুরে। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুন্ডু, মাতা বীণাপাণি কুন্ডু।
[[Image:KunduNitun.jpg|thumb|400px|right|নিতুন কুন্ডু]]
 
'''কুন্ডু, নিতুন''' (১৯৩৫-২০০৬) চিত্রশিল্পী, নকশাবিদ, ভাস্কর, শিল্পপতি। জন্ম ১৯৩৫ সালের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুরে। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুন্ডু, মাতা বীণাপাণি কুন্ডু। নিতুন কুন্ডু সিনেমার ব্যানার এঁকে নিজের আয়ে শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে চিত্রশিল্পে স্নাতক সমমানের পাঁচ বছরের কোর্স সমাপ্ত করেন।
নিতুন কুন্ডু সিনেমার ব্যানার এঁকে নিজের আয়ে শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে চিত্রশিল্পে স্নাতক সমমানের পাঁচ বছরের কোর্স সমাপ্ত করেন।


নিতুন কুন্ডু ঢাকাস্থ মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে যোগ দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে তথ্য ও প্রচার বিভাগে ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে তাঁর অাঁকা একটি পোস্টারের স্লোগান ছিল: ‘সদাজাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’। এ প্রসঙ্গে ষাটের দশকের স্বাধিকার আন্দোলনে বামপন্থি রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
নিতুন কুন্ডু ঢাকাস্থ মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে যোগ দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে তথ্য ও প্রচার বিভাগে ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে তাঁর অাঁকা একটি পোস্টারের স্লোগান ছিল: ‘সদাজাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’। এ প্রসঙ্গে ষাটের দশকের স্বাধিকার আন্দোলনে বামপন্থি রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।


স্বাধীনতার পরে চাকরি না করে নিতুন কুন্ডু স্বাধীনভাবে সৃজনশীল কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সে লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে গড়ে তোলেন ‘অটবি’ নামে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা বর্তমানে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। এ প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালির রুচিবোধ উন্নত করার চেষ্টা করেন।
স্বাধীনতার পরে চাকরি না করে নিতুন কুন্ডু স্বাধীনভাবে সৃজনশীল কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সে লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে গড়ে তোলেন ‘অটবি’ নামে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা বর্তমানে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। এ প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালির রুচিবোধ উন্নত করার চেষ্টা করেন।
[[Image:KunduNitun.jpg|thumb|400px|right|নিতুন কুন্ডু]]


একজন সৃজনশীল চিত্রশিল্পী হিসেবে ঢাকা (১৯৬৫, ১৯৬৬), চট্টগ্রাম (১৯৬৬) ও রাজশাহীতে (১৯৬৮) তাঁর মোট চারটি একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। এছাড়া ১৯৫৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশে-বিদেশে বহু উল্লেখযোগ্য যৌথ প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নিয়েছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ শিল্পী তেলরঙ, জলরঙ, অ্যাক্রিলিক, এচিং, সেরিগ্রাফ, পেনসিল বা কালিকলম মাধ্যমে চিত্র রচনা করেন। প্রথম দিকে অবয়বধর্মী কাজ করলেও পরবর্তীকালে তিনি ঝুঁকেছেন বিমূর্ত ছবির দিকে। এছাড়া তিনি নির্মাণ করেছেন ভাস্কর্য (‘মা ও শিশু’, ১৯৭৫; স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মারক ‘সাবাস বাংলাদেশ’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯২ এবং ঐতিহ্যবাহী নৌকার প্রতীক ‘সাম্পান’, চট্টগ্রাম বিমান বন্দর, ২০০১), ফোয়ারা (‘কদমফুল’, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়কদ্বীপ, ঢাকা, আশির দশক; ‘সার্ক ফোয়ারা’,  সোনারগাঁ সড়কদ্বীপ, ঢাকা, ১৯৯৩) ও ম্যুরাল (ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হল, ১৯৬৬-৬৭; হোটেল শেরাটন ও গুলশান জনতা ব্যাংক)। জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পুরস্কার ও পদকের ট্রফি, ক্রেস্ট, মেডেল প্রভৃতির নকশাকার তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ, এশিয়া কাপ ক্রিকেট পুরস্কার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ি পুরস্কার, আন্তর্জাতিক শিল্পমেলা ট্রফি, প্রেসিডেন্ট শিশুকিশোর ফুটবল কাপ প্রভৃতি। প্যাভিলিয়ন ও তোরণ নির্মাণ, মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা, নানা স্মরণিকার প্রচ্ছদ ও পোস্টার অঙ্কন, লোগো তৈরি প্রভৃতিতেও তাঁর পারদর্শিতা উল্লেখযোগ্য। তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর পাওয়া যায় প্রকৌশলভাবনায়, মেশিনের যন্ত্রাংশ কিংবা নাট-বল্টু তৈরিতে, নতুন মেশিনের পরিকল্পনায় কিংবা লিফট নির্মাণে।
একজন সৃজনশীল চিত্রশিল্পী হিসেবে ঢাকা (১৯৬৫, ১৯৬৬), চট্টগ্রাম (১৯৬৬) ও রাজশাহীতে (১৯৬৮) তাঁর মোট চারটি একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। এছাড়া ১৯৫৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশে-বিদেশে বহু উল্লেখযোগ্য যৌথ প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নিয়েছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ শিল্পী তেলরঙ, জলরঙ, অ্যাক্রিলিক, এচিং, সেরিগ্রাফ, পেনসিল বা কালিকলম মাধ্যমে চিত্র রচনা করেন। প্রথম দিকে অবয়বধর্মী কাজ করলেও পরবর্তীকালে তিনি ঝুঁকেছেন বিমূর্ত ছবির দিকে। এছাড়া তিনি নির্মাণ করেছেন ভাস্কর্য (‘মা ও শিশু’, ১৯৭৫; স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মারক ‘সাবাস বাংলাদেশ’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯২ এবং ঐতিহ্যবাহী নৌকার প্রতীক ‘সাম্পান’, চট্টগ্রাম বিমান বন্দর, ২০০১), ফোয়ারা (‘কদমফুল’, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়কদ্বীপ, ঢাকা, আশির দশক; ‘সার্ক ফোয়ারা’,  সোনারগাঁ সড়কদ্বীপ, ঢাকা, ১৯৯৩) ও ম্যুরাল (ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হল, ১৯৬৬-৬৭; হোটেল শেরাটন ও গুলশান জনতা ব্যাংক)। জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পুরস্কার ও পদকের ট্রফি, ক্রেস্ট, মেডেল প্রভৃতির নকশাকার তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ, এশিয়া কাপ ক্রিকেট পুরস্কার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ি পুরস্কার, আন্তর্জাতিক শিল্পমেলা ট্রফি, প্রেসিডেন্ট শিশুকিশোর ফুটবল কাপ প্রভৃতি। প্যাভিলিয়ন ও তোরণ নির্মাণ, মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা, নানা স্মরণিকার প্রচ্ছদ ও পোস্টার অঙ্কন, লোগো তৈরি প্রভৃতিতেও তাঁর পারদর্শিতা উল্লেখযোগ্য। তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর পাওয়া যায় প্রকৌশলভাবনায়, মেশিনের যন্ত্রাংশ কিংবা নাট-বল্টু তৈরিতে, নতুন মেশিনের পরিকল্পনায় কিংবা লিফট নির্মাণে।

১০:৩৫, ১৮ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

নিতুন কুন্ডু

কুন্ডু, নিতুন (১৯৩৫-২০০৬) চিত্রশিল্পী, নকশাবিদ, ভাস্কর, শিল্পপতি। জন্ম ১৯৩৫ সালের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুরে। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুন্ডু, মাতা বীণাপাণি কুন্ডু। নিতুন কুন্ডু সিনেমার ব্যানার এঁকে নিজের আয়ে শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে চিত্রশিল্পে স্নাতক সমমানের পাঁচ বছরের কোর্স সমাপ্ত করেন।

নিতুন কুন্ডু ঢাকাস্থ মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে যোগ দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে তথ্য ও প্রচার বিভাগে ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে তাঁর অাঁকা একটি পোস্টারের স্লোগান ছিল: ‘সদাজাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’। এ প্রসঙ্গে ষাটের দশকের স্বাধিকার আন্দোলনে বামপন্থি রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

স্বাধীনতার পরে চাকরি না করে নিতুন কুন্ডু স্বাধীনভাবে সৃজনশীল কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সে লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে গড়ে তোলেন ‘অটবি’ নামে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা বর্তমানে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। এ প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালির রুচিবোধ উন্নত করার চেষ্টা করেন।

একজন সৃজনশীল চিত্রশিল্পী হিসেবে ঢাকা (১৯৬৫, ১৯৬৬), চট্টগ্রাম (১৯৬৬) ও রাজশাহীতে (১৯৬৮) তাঁর মোট চারটি একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। এছাড়া ১৯৫৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশে-বিদেশে বহু উল্লেখযোগ্য যৌথ প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নিয়েছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ শিল্পী তেলরঙ, জলরঙ, অ্যাক্রিলিক, এচিং, সেরিগ্রাফ, পেনসিল বা কালিকলম মাধ্যমে চিত্র রচনা করেন। প্রথম দিকে অবয়বধর্মী কাজ করলেও পরবর্তীকালে তিনি ঝুঁকেছেন বিমূর্ত ছবির দিকে। এছাড়া তিনি নির্মাণ করেছেন ভাস্কর্য (‘মা ও শিশু’, ১৯৭৫; স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মারক ‘সাবাস বাংলাদেশ’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯২ এবং ঐতিহ্যবাহী নৌকার প্রতীক ‘সাম্পান’, চট্টগ্রাম বিমান বন্দর, ২০০১), ফোয়ারা (‘কদমফুল’, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়কদ্বীপ, ঢাকা, আশির দশক; ‘সার্ক ফোয়ারা’,  সোনারগাঁ সড়কদ্বীপ, ঢাকা, ১৯৯৩) ও ম্যুরাল (ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হল, ১৯৬৬-৬৭; হোটেল শেরাটন ও গুলশান জনতা ব্যাংক)। জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পুরস্কার ও পদকের ট্রফি, ক্রেস্ট, মেডেল প্রভৃতির নকশাকার তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ, এশিয়া কাপ ক্রিকেট পুরস্কার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ি পুরস্কার, আন্তর্জাতিক শিল্পমেলা ট্রফি, প্রেসিডেন্ট শিশুকিশোর ফুটবল কাপ প্রভৃতি। প্যাভিলিয়ন ও তোরণ নির্মাণ, মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা, নানা স্মরণিকার প্রচ্ছদ ও পোস্টার অঙ্কন, লোগো তৈরি প্রভৃতিতেও তাঁর পারদর্শিতা উল্লেখযোগ্য। তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর পাওয়া যায় প্রকৌশলভাবনায়, মেশিনের যন্ত্রাংশ কিংবা নাট-বল্টু তৈরিতে, নতুন মেশিনের পরিকল্পনায় কিংবা লিফট নির্মাণে।

চিত্রশিল্পী ও শিল্পপতি হিসেবে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি লাভ করেন জাতীয় চিত্রকলা পুরস্কার (১৯৬৫), চিত্রকলায় স্বর্ণপদক (মোবাইল প্রদর্শনী: ১৯৬৮), ঢাকা বাণিজ্য মেলায় প্যাভিলিয়ন নকশার জন্য প্রথম পুরস্কার (নয় বার: ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৮২, ১৯৮৩, ১৯৮৫, ১৯৯০, ১৯৯৬, ১৯৯৮) ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ (১৯৯৭)।

তাঁর মৃত্যু ঢাকায়, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬। [সৈয়দ আজিজুল হক]