কার্জন হল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:CurzonHall.jpg|thumb|400px|কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] | |||
'''কার্জন হল''' ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের নামানুসারে এ ভবনটি টাউন হল হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। ১৯০৪ সালে [[কার্জন, লর্ড|লর্ড কার্জন]] এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরের বছরই বাংলাকে বিভক্ত করা হয় এবং ঢাকা হয় নতুন প্রদেশ পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে এটি [[ঢাকা কলেজ|ঢাকা কলেজ]] ভবন হিসেবে ব্যবহূত হতে থাকে। পরে ১৯২১ সালে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] প্রতিষ্ঠিত হলে এ ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অংশ হিসেবে ব্যবহূত হতে শুরু করে এবং এখনও এভাবেই চলছে। অত্যন্ত যত্নসহকারে গড়ে তোলা প্রশস্ত বাগানে নির্মিত ইটের এ দ্বিতল ভবনে রয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্রীয় হল। সে সাথে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পার্শ্বে রয়েছে সংযোজিত কাঠামো যা অসংখ্য কক্ষ সমৃদ্ধ এবং চারপাশ দিয়ে বারান্দা ঘেরা। | '''কার্জন হল''' ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের নামানুসারে এ ভবনটি টাউন হল হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। ১৯০৪ সালে [[কার্জন, লর্ড|লর্ড কার্জন]] এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরের বছরই বাংলাকে বিভক্ত করা হয় এবং ঢাকা হয় নতুন প্রদেশ পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে এটি [[ঢাকা কলেজ|ঢাকা কলেজ]] ভবন হিসেবে ব্যবহূত হতে থাকে। পরে ১৯২১ সালে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] প্রতিষ্ঠিত হলে এ ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অংশ হিসেবে ব্যবহূত হতে শুরু করে এবং এখনও এভাবেই চলছে। অত্যন্ত যত্নসহকারে গড়ে তোলা প্রশস্ত বাগানে নির্মিত ইটের এ দ্বিতল ভবনে রয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্রীয় হল। সে সাথে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পার্শ্বে রয়েছে সংযোজিত কাঠামো যা অসংখ্য কক্ষ সমৃদ্ধ এবং চারপাশ দিয়ে বারান্দা ঘেরা। | ||
ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচিত এ ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে ইউরোপ ও মুগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ। এটি বিশেষ করে পরিলক্ষিত হয় অভিক্ষিপ্ত উত্তর দিকের সম্মুখভাগের অশ্বখুরাকৃতি ও খাঁজকাটা খিলানের মাঝে। ঐতিহ্যিক শিল্পের সাথে আধুনিক কারিগরিবিদ্যার মিশ্রিত রীতি এবং মুগল কাঠামোর আনুকূল্য যা খিলান ও গম্বুজে বিধৃত, সম্ভবত পাশ্চাত্য থেকে ইসলামিক স্থাপত্য জগতে প্রবেশ করেছে। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর প্রচ্ছন্ন ক্ষমতা পরিহার করে ভারতকে সরাসরি ব্রিটিশ শাসনাধীনে নেওয়ার পর মুগল যোগসূত্র রক্ষা করে এর বৈধতা প্রদানের প্রয়াস এতে পরিলক্ষিত হয়। | ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচিত এ ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে ইউরোপ ও মুগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ। এটি বিশেষ করে পরিলক্ষিত হয় অভিক্ষিপ্ত উত্তর দিকের সম্মুখভাগের অশ্বখুরাকৃতি ও খাঁজকাটা খিলানের মাঝে। ঐতিহ্যিক শিল্পের সাথে আধুনিক কারিগরিবিদ্যার মিশ্রিত রীতি এবং মুগল কাঠামোর আনুকূল্য যা খিলান ও গম্বুজে বিধৃত, সম্ভবত পাশ্চাত্য থেকে ইসলামিক স্থাপত্য জগতে প্রবেশ করেছে। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর প্রচ্ছন্ন ক্ষমতা পরিহার করে ভারতকে সরাসরি ব্রিটিশ শাসনাধীনে নেওয়ার পর মুগল যোগসূত্র রক্ষা করে এর বৈধতা প্রদানের প্রয়াস এতে পরিলক্ষিত হয়। | ||
লাল রঙ ব্যবহূত হয়েছে মুগল আমলের লাল বেলেপাথরের পরিবর্তে; আর অলংকৃত বন্ধনী, গভীর ছাঁইচ (eaves), গম্বুজ বিশিষ্ট প্যাভিলিয়ন, বিশেষকরে মাঝের অংশগুলি ১৫৭০ থেকে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সম্রাট আকবরের রাজধানী প্রাসাদ সমৃদ্ধ নগরদুর্গ ফতেহপুর সিক্রির ছোট কিন্তু সুপরিচিত দীউয়ান-ই-খাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় নগরই নতুন রাজধানী ছিল। শুধু তাই নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে ফতেহপুর সিক্রি রীতি গ্রহণের পেছনে কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, ব্রিটিশরা আকবরকেই সবচেয়ে বিজ্ঞ ও সর্বাধিক সহিষ্ণু মুগল সম্রাট হিসেবে গণ্য করত এবং তারা দেখাতে চাইত যে ভারতে তাদেরও ভূমিকা অনুরূপ। | লাল রঙ ব্যবহূত হয়েছে মুগল আমলের লাল বেলেপাথরের পরিবর্তে; আর অলংকৃত বন্ধনী, গভীর ছাঁইচ (eaves), গম্বুজ বিশিষ্ট প্যাভিলিয়ন, বিশেষকরে মাঝের অংশগুলি ১৫৭০ থেকে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সম্রাট আকবরের রাজধানী প্রাসাদ সমৃদ্ধ নগরদুর্গ ফতেহপুর সিক্রির ছোট কিন্তু সুপরিচিত দীউয়ান-ই-খাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় নগরই নতুন রাজধানী ছিল। শুধু তাই নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে ফতেহপুর সিক্রি রীতি গ্রহণের পেছনে কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, ব্রিটিশরা আকবরকেই সবচেয়ে বিজ্ঞ ও সর্বাধিক সহিষ্ণু মুগল সম্রাট হিসেবে গণ্য করত এবং তারা দেখাতে চাইত যে ভারতে তাদেরও ভূমিকা অনুরূপ। |
০৫:১৮, ১২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
কার্জন হল ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের নামানুসারে এ ভবনটি টাউন হল হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরের বছরই বাংলাকে বিভক্ত করা হয় এবং ঢাকা হয় নতুন প্রদেশ পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে এটি ঢাকা কলেজ ভবন হিসেবে ব্যবহূত হতে থাকে। পরে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এ ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অংশ হিসেবে ব্যবহূত হতে শুরু করে এবং এখনও এভাবেই চলছে। অত্যন্ত যত্নসহকারে গড়ে তোলা প্রশস্ত বাগানে নির্মিত ইটের এ দ্বিতল ভবনে রয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্রীয় হল। সে সাথে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পার্শ্বে রয়েছে সংযোজিত কাঠামো যা অসংখ্য কক্ষ সমৃদ্ধ এবং চারপাশ দিয়ে বারান্দা ঘেরা।
ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচিত এ ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে ইউরোপ ও মুগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ। এটি বিশেষ করে পরিলক্ষিত হয় অভিক্ষিপ্ত উত্তর দিকের সম্মুখভাগের অশ্বখুরাকৃতি ও খাঁজকাটা খিলানের মাঝে। ঐতিহ্যিক শিল্পের সাথে আধুনিক কারিগরিবিদ্যার মিশ্রিত রীতি এবং মুগল কাঠামোর আনুকূল্য যা খিলান ও গম্বুজে বিধৃত, সম্ভবত পাশ্চাত্য থেকে ইসলামিক স্থাপত্য জগতে প্রবেশ করেছে। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর প্রচ্ছন্ন ক্ষমতা পরিহার করে ভারতকে সরাসরি ব্রিটিশ শাসনাধীনে নেওয়ার পর মুগল যোগসূত্র রক্ষা করে এর বৈধতা প্রদানের প্রয়াস এতে পরিলক্ষিত হয়।
লাল রঙ ব্যবহূত হয়েছে মুগল আমলের লাল বেলেপাথরের পরিবর্তে; আর অলংকৃত বন্ধনী, গভীর ছাঁইচ (eaves), গম্বুজ বিশিষ্ট প্যাভিলিয়ন, বিশেষকরে মাঝের অংশগুলি ১৫৭০ থেকে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সম্রাট আকবরের রাজধানী প্রাসাদ সমৃদ্ধ নগরদুর্গ ফতেহপুর সিক্রির ছোট কিন্তু সুপরিচিত দীউয়ান-ই-খাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় নগরই নতুন রাজধানী ছিল। শুধু তাই নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে ফতেহপুর সিক্রি রীতি গ্রহণের পেছনে কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, ব্রিটিশরা আকবরকেই সবচেয়ে বিজ্ঞ ও সর্বাধিক সহিষ্ণু মুগল সম্রাট হিসেবে গণ্য করত এবং তারা দেখাতে চাইত যে ভারতে তাদেরও ভূমিকা অনুরূপ।
ভাষা আন্দোলন এর ইতিহাসে কার্জন হল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ১৯৪৮ সালে এখানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ তদানীন্তন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এতদসংক্রান্ত জিন্নাহর ঘোষণার প্রতি প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিল। [পারভীন হাসান]