খালেক, আবদুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
৩০ নং লাইন: ৩০ নং লাইন:


আমরা একথাই মনে রাখব যে- আমরা বাংলাদেশের সন্তান- বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম- আমাদের বাচাঁর সংগ্রাম। আমরা লড়েছি সত্যের জন্য, ন্যায়ের জন্য। এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হবই।
আমরা একথাই মনে রাখব যে- আমরা বাংলাদেশের সন্তান- বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম- আমাদের বাচাঁর সংগ্রাম। আমরা লড়েছি সত্যের জন্য, ন্যায়ের জন্য। এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হবই।
                        ''জয় বাংলা''
 
                          ''আবদুল খালেক।''  
''জয় বাংলা''
''আবদুল খালেক।''


আবদুল খালেক পুলিশ সদর দপ্তর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী পুলিশ সদরদপ্তর প্রত্যেক জোনে একজন জোনাল পুলিশ অফিসার এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের নিযুক্তি প্রদান করেন। বিভিন্ন জোনে নিয়োজিত এ পুলিশ কর্মকর্তাগণ মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন কেন্দ্রে প্রশিক্ষক, শরণার্থী শিবিরগুলোতে ব্যবস্থাপনা, দেশের অভ্যন্তরের যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ সংগ্রহ, পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সমস্ত মুক্তাঞ্চলে প্রশাসনিক কাঠামোর সাথে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের জন্য কার্যকরী পুলিশ কাঠামো স্থাপন ও পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ দান করেন। ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের সমস্ত পুলিশ রেঞ্জ এবং জেলাসমূহে পুলিশ সুপার নিয়োগ দেন। ২২শে ডিসেম্বর মুজিবনগর থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তর স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু করেন।
আবদুল খালেক পুলিশ সদর দপ্তর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী পুলিশ সদরদপ্তর প্রত্যেক জোনে একজন জোনাল পুলিশ অফিসার এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের নিযুক্তি প্রদান করেন। বিভিন্ন জোনে নিয়োজিত এ পুলিশ কর্মকর্তাগণ মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন কেন্দ্রে প্রশিক্ষক, শরণার্থী শিবিরগুলোতে ব্যবস্থাপনা, দেশের অভ্যন্তরের যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ সংগ্রহ, পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সমস্ত মুক্তাঞ্চলে প্রশাসনিক কাঠামোর সাথে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের জন্য কার্যকরী পুলিশ কাঠামো স্থাপন ও পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ দান করেন। ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের সমস্ত পুলিশ রেঞ্জ এবং জেলাসমূহে পুলিশ সুপার নিয়োগ দেন। ২২শে ডিসেম্বর মুজিবনগর থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তর স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু করেন।

১৬:২৬, ২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

আবদুল খালেক

খালেক, আবদুল (১৯২৭-২০১০) বাংলাদেশের প্রথম আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুল খালেক ১লা মার্চ ১৯২৭ সালে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থানার জিরুইন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মকবুল হোসেন এবং মাতার নাম আবিদা খাতুন। তিনি জিরুইন গ্রামে প্রাইমারি, সাহেববাদে পঞ্চম শ্রেণি,পরবর্তীতে দেবীদ্বার ও কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ পড়াশোনা করেন। তিনি কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে প্রথম হন। তিনি তিন বিষয়ে ৮০% এর বেশি নম্বর পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ^বিদ্যাল হতে নীতিশাস্ত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হন। এছাড়াও তিনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯৫১ সালে সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ সার্ভিসে যোগ দিয়ে সারদাহ পুলিশ একাডেমীতে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি গোপালগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের মহকুমা পুলিশ অফিসার ও বরিশাল এডিশনাল এস.পি এবং পাবনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার ছিলেন। তিনি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ও এন্টিকরাপশন-এ দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও সারদা পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল ছিলেন। তিনি দেশে-বিদেশে নানা ট্রেনিং ও কনফারেন্সেও যোগদান করেন। সারদাহে প্রিন্সিপাল থাকা অবস্থায় ১৯৭১-এর মার্চ মাসে তিনি বাড়িতে কালো পতাকা উত্তোলন করেন ও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ৩১শে মার্চ তিনি সারদাহে ফিরে আসেন। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের কারণে সারদা প্রত্যাবর্তনে ব্যর্থ হয়ে তিনি পরিবারসহ ভারতে চলে যান। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত সব পুলিশ সদস্যকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহবান জানিয়ে তিনি চিঠি লেখেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি কলকাতায় মুজিবনগর সরকারের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় পাকিস্তানের সামরিক আদালত তার অনুপস্থিতিতে বিচার করে সাজা প্রদান করে।

তিনি মুজিবনগর সরকারের সময় থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আইজিপি হিসেবে ২৩শে এপ্রিল, ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৭১ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৩ সালের ২৬শে জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পরবর্তী জিয়া-মোশতাক সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনে নিয়োগ দেয়া হয়, তখন তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে নিজেকে আইন পেশায় নিয়োজিত করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকালে ডিআইজি আবদুল খালেক সারদার পুলিশ একাডেমি প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২৫শে মার্চ কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা ও রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সসহ অন্যান্য স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ থেকে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই সংবাদ পেয়ে ডিআইজি আবদুল খালেক পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে পুলিশ একাডেমিতে প্রতিরোধযুদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি পুলিশ একাডেমীর ভাইস প্রিন্সিপাল শৈলেন্দ্র কিশোর চৌধুরী ও ইন্সপেক্টর গাজী আব্দুর রহমানের তত্ত্বাবধানে প্রতিরোধযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে একাডেমি এলাকার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। ইন্সপেক্টর গাজী আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে স্থানীয় জনতাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থাও করেন। ১৩ই এপ্রিল ১৯৭১ পাকিস্তানি বাহিনী পুলিশ একাডেমি সারদা আক্রমণ করে। আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে একাডেমির প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পুলিশ একাডেমিতে প্রবেশ করে হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়। এসময় অনেক পুলিশ সদস্য ও সিভিল স্টাফ শহীদ হন। প্রতিকূল পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিআইজি আবদুল খালেক ছদ্মবেশে নৌকায় পদ্মা নদী পার হয়ে ভারতে গমন করেন। তিনি ভারতে প্রবেশ করে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ পদে নিয়োগ লাভ করেন। একই সাথে তিনি বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্র সচিব হিসেবেও নিযুক্ত হন।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত তেত্রিশ হাজার নয়শত পঁচানব্বই জনের মধ্যে প্রায় চৌদ্দ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মস্থল ত্যাগ করে বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের সাথে যুক্ত হন। পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে যোগদান করার ঘোষণা প্রদান করলে আইজিপি আবদুল খালেক স্বহস্তে লিখিত এক বার্তার মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার এবং দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থলে যোগদান না করার উদাত্ত আহ্বান জানান। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে আইজিপি জনাব আব্দুল খালেক-এর প্রদত্ত বার্তাটি ছিল: 'বাংলাদেশের বীর পুলিশ ভাইসব, সাড়ে সাত কোটি নিরস্ত্র বাঙ্গালী আজ মরিয়া হয়ে ইয়াহিয়া খানের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমরা বাংলাদেশের সন্তান, আমরা বাঙ্গালী, আমরা বাংলাদেশের পুলিশ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের'।

“অতীতে এবং বিগত ২৫ শে মার্চ থেকে পাকফৌজ বাংলাদেশে যে নিধনযজ্ঞ ও বর্বরতা চালিয়েছে তার নজির ইতিহাসে নেই। সোনার বাংলা আজ এক প্রেতপুরী। সেখানে এখন কবরের শান্তি বিরাজ করছে। এই হত্যাযজ্ঞের প্রথম শিকার হয়েছিল বাংলার পুলিশ বাহিনী। রাজারবাগ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা ও অন্যান্য জেলাসমূহের পুলিশ বাহিনীকে কিভাবে মেশিনগানের গুলিতে ও বোমার আঘাতে হত্যা করা হয়েছে তার করুন দৃশ্য আমরা কোনদিন ভুলতে পারবনা।”

“আপনারা স্বচক্ষে দেখেছেন নারী হত্যা, নারী ধর্ষণ, শিশু-ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী হত্যার বীভৎস দৃশ্য। হারিয়েছি আমরা প্রিয়জন, আত্মীয় স্বজন, বেদনাক্লিষ্ট জীবনের সব সঞ্চয় ও সম্বল। ধংসের ঢেউ শহর বন্দর ছাড়িয়ে এখন পৌঁেছছে গ্রামে গ্রামান্তরে। রাস্তাঘাটে হাটে মাঠে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে নিরীহ বাংঙ্গালী পুলিশ বাহিনীকে। ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের পরিবারকে দুঃখের অতল সাগরে। এই গণহত্যা ও ধ্বংসের তুলনা ইতিহাসে মেলেনা।

তাই আজ বাংলাদেশের মানুষ বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলেছেন- স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পাকফৌজকে দাঁড়াতে দেবেনা। পশ্চিম পাকফৌজের সর্বশেষ প্রাণীটি বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

হালকা অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী মেশিনগান, ট্যাঙ্ক ও বোমার মুখে যে বীরত্ব দেখিয়েছে তা কখনও ভোলা যায়না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে পুলিশের ত্যাগ ও অবদান ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

বাংলাদেশ পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য পুলিশ কর্তাদেরকে মেশিনগানের মুখে রেখে বাধ্য করা হয়েছে একথা ঘোষণা করতে- যেন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী ইয়াহিয়ার জঙ্গী শাসকদের কাজে যোগদান করেন। মুক্তিফৌজের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে আঘাত হানার জন্যই এই হীন প্রচেষ্টা। এই ঘোষণা বা ডাকে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী সাড়া দেবেনা। নানা কৌশলে পুলিশ বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলাই পাকফৌজের উদ্দেশ্য- একথা আমাদের ভুললে চলবেনা। একবার ভেবে দেখুন- কেন পাকফৌজ আমাদের সহকর্মী পুলিশ ভাইদেরকে অকাতরে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে- কেন তারা বাংলাদেশের পুলিশ লাইন পুড়িয়ে জ্বালিয়ে ধ্বংস করেছে। জঙ্গী সরকার অস্ত্রের শক্তিতে শক্তিশালী এবং সেই শক্তির দাপটে ইয়াহিয়া সরকার আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা চলাচ্ছে। এই শত্রু সরকারের সাথে সহযোগিতা করা বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা ছাড়া আর কিছু নয়।

আমরা বাংলাদেশের সন্তান- বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে আমরা বহু ত্যাগ করেছি। আমরা আমাদের সর্বস্ব ত্যাগ করেছি। মুক্তিযুদ্ধে হাসিমুখে প্রাণ দিয়েছি। বাংলাদেশের শত্রুদের সাথে লড়াই করে বহু কর্মচারি শহীদ হয়েছেন। তাদের কাছে আমরা চিরঋণী। তাদেরকে চিরদিন জানাব শ্রদ্ধা। তাদের পারিবারকে জানাব সহানুভূতি-যারা শত্রুসেনার হাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে মৃত্যুর সংগে লড়াই করেছে। তাদের জীবন বাঁচাবার জন্য আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত। বর্বর পাকফৌজের অমানুষিক অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য অনেক পুলিশ কর্মচারি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে আহবান জানাচ্ছি তারা যেন অবিলম্বে মুক্তিফৌজে যোগদান করেন।

আমরা পুলিশ আমরা অস্ত্র চালনা জানি। বাংলাদেশের এই মুহূর্তে আমাদের অনেক কিছু করবার আছে। আমরা শত্রু শিবিরে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে যাবনা- শত্রুর কাছে মাথানত করবনা। তাদের সাথে সহযোগিতা করার আহবানে আমরা সাড়া দেবনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে প্রাণ দেব। আমরা জানি যারা শত্রুর সংগে হাত মিলিয়ে চলেছেন বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা তাদের কোনদিন ক্ষমা করবেনা। পুলিশের সংগে যারা অফিসের কাজ করেছেন তাদের প্রতি আমাদের এই একই আবেদন।

পুলিশ ভাইয়েরা যারা সীমান্তের ওপারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা ৯নং র্সাকাস এভেনিউ, কলিকাতায় (বাংলাদেশ মিশন) অথবা সুবিধামত মুজিব নগরে পুলিশ সদর দপ্তরের সংগে যোগাযোগ স্থাপন করবেন।

আমরা একথাই মনে রাখব যে- আমরা বাংলাদেশের সন্তান- বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম- আমাদের বাচাঁর সংগ্রাম। আমরা লড়েছি সত্যের জন্য, ন্যায়ের জন্য। এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হবই।

জয় বাংলা আবদুল খালেক।

আবদুল খালেক পুলিশ সদর দপ্তর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী পুলিশ সদরদপ্তর প্রত্যেক জোনে একজন জোনাল পুলিশ অফিসার এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের নিযুক্তি প্রদান করেন। বিভিন্ন জোনে নিয়োজিত এ পুলিশ কর্মকর্তাগণ মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন কেন্দ্রে প্রশিক্ষক, শরণার্থী শিবিরগুলোতে ব্যবস্থাপনা, দেশের অভ্যন্তরের যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ সংগ্রহ, পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সমস্ত মুক্তাঞ্চলে প্রশাসনিক কাঠামোর সাথে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের জন্য কার্যকরী পুলিশ কাঠামো স্থাপন ও পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ দান করেন। ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের সমস্ত পুলিশ রেঞ্জ এবং জেলাসমূহে পুলিশ সুপার নিয়োগ দেন। ২২শে ডিসেম্বর মুজিবনগর থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তর স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু করেন।

তিনি বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। তার রচিত গ্রন্থগুলো হলো- Political Economy and Foreign Aid; Transfer of Technology; Peace, Police, Crime and Violence; Three Decades of Foreign Aid; Educational Reforms; Sheikh Mujib Liberation War Bangladesh, স্মৃতিকথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ১০ই জুন ২০১৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [আবিদা সুলতানা]

তথ্যসূত্র মিসেস সেলিনা খালেক, বাংলাদেশের প্রথম আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুল খালেক; আবদুল খালেক স্মৃতিকথা, নন্দিনী প্রকাশনী, ঢাকা ২০১০; মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভুমিকা ১ম খণ্ড, পৃ ৬৮; আবিদা সুলতানা, শহীদ পুলিশের রক্তের ঋণ, সময় প্রকাশনী।