সরকার, লুৎফর রহমান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
("'''সরকার, লুৎফর রহমান''' (১৯৩৪-২০১৩) বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব..." দিয়ে পাতা তৈরি) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Image:SarkarLutfarRahman.jpg|right|thumbnail|400px|লুৎফর রহমান সরকার]] | |||
'''সরকার, লুৎফর রহমান''' (১৯৩৪-২০১৩) বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ষষ্ঠ গভর্নর। তিনি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার সদর থানাধীন আমরুল ইউনিয়ন বোর্ডের ফুলকোর্ট গ্রামে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব দেরাজতুল্লাহ সরকার। তিনি দীর্ঘকাল সুনামের সাথে আমরুল ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। বগুড়া জজকোর্টের বিচারকের জুরি হিসেবে তিনি দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। লুৎফর রহমান পড়াশোনার পাশাপাশি নৌকা চালনা, সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, ফুটবল খেলায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। নম্র ও ভদ্র স্বভাবের জন্য তিনি ছিলেন মানুষের প্রিয়পাত্র। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন। এছাড়া তার বাড়িতে তিনি আজানও দিতেন। কিশোর বয়স থেকেই তিনি গল্প কবিতা ও ছড়া লেখা চর্চা করতে থাকেন। তিনি একজন পাঠকনন্দিত ছড়াকার ও ছিলেন। | '''সরকার, লুৎফর রহমান''' (১৯৩৪-২০১৩) বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ষষ্ঠ গভর্নর। তিনি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার সদর থানাধীন আমরুল ইউনিয়ন বোর্ডের ফুলকোর্ট গ্রামে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব দেরাজতুল্লাহ সরকার। তিনি দীর্ঘকাল সুনামের সাথে আমরুল ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। বগুড়া জজকোর্টের বিচারকের জুরি হিসেবে তিনি দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। লুৎফর রহমান পড়াশোনার পাশাপাশি নৌকা চালনা, সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, ফুটবল খেলায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। নম্র ও ভদ্র স্বভাবের জন্য তিনি ছিলেন মানুষের প্রিয়পাত্র। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন। এছাড়া তার বাড়িতে তিনি আজানও দিতেন। কিশোর বয়স থেকেই তিনি গল্প কবিতা ও ছড়া লেখা চর্চা করতে থাকেন। তিনি একজন পাঠকনন্দিত ছড়াকার ও ছিলেন। | ||
০৯:৩০, ২৬ মে ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
সরকার, লুৎফর রহমান (১৯৩৪-২০১৩) বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ষষ্ঠ গভর্নর। তিনি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার সদর থানাধীন আমরুল ইউনিয়ন বোর্ডের ফুলকোর্ট গ্রামে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব দেরাজতুল্লাহ সরকার। তিনি দীর্ঘকাল সুনামের সাথে আমরুল ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। বগুড়া জজকোর্টের বিচারকের জুরি হিসেবে তিনি দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। লুৎফর রহমান পড়াশোনার পাশাপাশি নৌকা চালনা, সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, ফুটবল খেলায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। নম্র ও ভদ্র স্বভাবের জন্য তিনি ছিলেন মানুষের প্রিয়পাত্র। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন। এছাড়া তার বাড়িতে তিনি আজানও দিতেন। কিশোর বয়স থেকেই তিনি গল্প কবিতা ও ছড়া লেখা চর্চা করতে থাকেন। তিনি একজন পাঠকনন্দিত ছড়াকার ও ছিলেন।
লুৎফর রহমান সরকার ১৯৪৯ ইং সালে বগুড়ার ডেমাজানি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৫১ ইং সালে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৩ সালে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এম এ পাশ করেন।
তিনি ১৯৫৬ সালে ব্রডকাষ্টিং অ্যানালিষ্ট অফিসার পদে রেডিও পাকিস্তানে চাকরি জীবন শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন হাবিব ব্যাংক লি.-এ অফিসার পদে যোগদান এবং ১৯৬৫ থেকে পরবর্তীতে ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্বরত ছিলেন। চীফ ম্যানেজার হিসেবে তদানিন্তন স্ট্যান্ডার্ড ব্যংকে লি.্-এ ১৯৬৫ সালে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী জেনারেল ম্যানেজার এবং সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালে সরকার কর্তৃক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লি.-এ এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর পদে নিয়োগ লাভ করেন। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১৯৭২ সালে রুপালী ব্যাংকের সাথে একীভুত হলে তিনি রুপালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকার কর্তৃক ১৯৭৫ সালে অগ্রণী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার পদে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনি ১৯৮২ সালে অগণী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পদে পদোন্নতি পান। ১৯৮৩ সালে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পদে বদলিপ্রাপ্ত হন। মানি ব্যাংকি এন্ড ক্রেডিট কমিশনে ১৯৮৫ সালে সরকার কর্তৃক সদস্য পদ লাভ করেন। ইসলামি ব্যাংক লি.-এর প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত প্রাইম ব্যাংক লি.-এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়ে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি গণমুখী ব্যাংকি ধারার প্রবর্তক ছিলেন। সমাজের সীমিত আয়ের মানুষের কথা ভেবে তিনি বিভিন্ন রকম সঞ্চয় প্রকল্প যেমন মাসিক মুনাফা প্রকল্প, মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প, দ্বিগুণ বৃদ্ধি আমানত প্রকল্প এগুলো প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি আজীবন, পেনশন স্কীম ও ডিপোজিট পেনশন স্কীম চালু করেছিলেন। তাছাড়া স্বল্প আয় ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মানুষের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন লোন প্রকল্প চালু করেন। এগুলোর মধ্যে হোম লোন কনজুমার ক্রেডিট, ক্ষুদ্র লোন উল্লেখযোগ্য। নারী উদ্যোক্তাদের কল্যাণের জন্য তিনি নারী উদ্যোক্তা লোন প্রকল্প প্রবর্তন করেন। এতে দেশের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত হয়। তিনি যে প্রকল্পগুলো প্রবর্তন করেছিল এর মধ্যে আরও আছে জ্ঞান অর্জনের সময়কালেই অর্থ উপার্জন (আর্ন হোয়াইল ইউ লার্ন), স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সঞ্চয় প্রকল্প (স্কুল ব্যাংকিং) রিকশা লোন প্রকল্প, কৃষি কেন্দ্র প্রকল্প এগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার উদ্ভাবিত প্রকল্প সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বি.আই.বি.এম) ও কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় তিনি ব্যাপক ভুমিকা পালন করেন। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ-এর নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর রিফর্মস টাস্কফোর্স-এর তিনি সদস্য ছিলেন এবং এই টাস্কফোর্সের কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ব্যাংক রিফর্ম কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
লুৎফর রহমান উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে দৈনন্দিন (১৯৬৭), সুর্যের সাত রং (১৯৭৬), টিয়ে পাখির বিয়ে (১৯৭৯), জীবন যখন যেমন (১৯৮০), নতুন বউ (১৯৮২), কতিপয় জনপ্রিয় কার্যকলাপ (১৯৮৮), খুকুমণির শ্বশুর বাড়ি (২০০৩) ইত্যাদি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান তাকে পদক এবং সম্মাননা প্রদান করে। যেমন 'সুফি মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৭৯), 'আমি তুমি সে' (কুমিল্লা) পুরস্কার ১৯৮৪, 'আসাফউদ্দৌলাহ স্মৃতি সাহিত্য' পুরস্কার (১৯৮৫), 'সেন্টার ফর বাংলাদেশ কালচার' পুরস্কার (১৯৮৮), 'বাংলাদেশ কৃষি সংসদ স্বর্ণপদক ও সংবর্ধনা' (১৯৯০), 'কবিতালাপ' (খুলনা) পুরস্কার ১৯৯১, 'বগুড়া লেখকচক্র' পুরস্কার (১৯৯১), 'বাংলা একাডেমি কর্তৃক সম্মাননাসূচক ফেলোশিপ' (১৯৯৯), 'মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিশেষ সম্মাননা' (২০০৯), 'এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স লি.' (এবিবি) ও 'ইন্সটিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ' (আইবিবি) কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা (২০১০)।
লুৎফর রহমান সরকার ২৪ জুন ২০১৩ পরলোক গমন করেন। [রফিকুল ইসলাম রফিক]