|
|
১ নং লাইন: |
১ নং লাইন: |
|
| |
|
| শরণার্থী নির্যাতনের শিকার হয়ে বা বিপজ্জনক রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সামরিক সংঘাতজনিত পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে স্বীয় ভূমি বা দেশ ত্যাগ করে অন্য কোন জায়গায় বা দেশে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয়প্রার্থী। কোন নির্দিষ্ট জাতি বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিপে সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে আশ্রয়ের নিশ্চয়তা ছাড়াই তাদেরকে দেশ ত্যাগ করতে হয় এবং নতুন জায়গায় সামর্থ্য অনুযায়ী নিজ নিজ জীবন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়। ২০০০ সালের শেষার্ধে এশিয়ায় শরণার্থীর প্রাক্কলিত মোট সংখ্যা ছিল ৭৩,০৮,৮৬০ জন। তন্মধ্যে বাংলাদেশে আসে ২১,৬২৭ জন (২১,৫৫৬ জন মায়ানমারের, ৩৪ জন সোমালিয়ার, ২৭ জন ইরানের, ২ জন শ্রীলঙ্কার, ২ জন আফগানিস্তানের এবং ৬ জন সিয়েরা লিয়নের)।
| |
| ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ফলে সৃষ্ট ভারত ও নবগঠিত পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক উত্তেজনায় সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হয় পূর্ববাংলা, এ অঞ্চলের অধিক জনসংখ্যা ও দুর্বল অর্থনীতির ওপর দেশভাগজনিত শরণার্থীদের প্রচণ্ড চাপ পড়ে। পান্তরে, পশ্চিম পাকিস্তান ছিল কম জনসংখ্যাবিশিষ্ট এবং অধিক শিল্পোন্নত। দেশভাগের প্রতিক্রিয়ায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকহারে শুরু হয় জনগণের বাস্তুত্যাগ। ফলে শরণার্থীর চাপে ভারত ও পাকিস্তান উভয় সীমান্তের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ পরিগ্রহ করে। দুদেশের মধ্যে পূর্বেকার অঞ্চলভিত্তিক জনসংখ্যা বণ্টনের ক্ষেত্রে এ সময় দেখা দেয় ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে ভিন্নতর বণ্টন। দেশ ভাগের কিছুকালের মধ্যেই দেখা গেল যে, ধর্মই হয়ে উঠেছে জনসংখ্যার অভিবাসন ও ঘনত্ব সৃষ্টির শর্ত ও বৈশিষ্ট্য। ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ল ল মুসলিম ও হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে উভয় দেশে অভিবাসিত হয়েছিল।
| |
| ভারতের আদমশুমারির এক হিসাবমতে, পূর্ববাংলা থেকে ২.৫৫ মিলিয়ন হিন্দু ভারতে অভিবাসিত হয়। পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার থেকে পূর্ববাংলায় আসে ০.৭০ মিলিয়ন মুসলমান। এর ফলে পরবর্তী এক দশকেরও কম সময়ে জনসংখ্যার বিভাজনে (ফবসড়মৎধঢ়যরপ ফরারফব) দেখা দেয় অসমতা, অচলতা ও দেশ-বহির্ভূত উদ্বাস্তুদের আধিক্য।
| |
| ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের স্থানীয় দোসরদের নৃশংসতার হাত থেকে রা পাওয়ার জন্য ১০ মিলিয়ন শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে পার্শ্ববর্তী ভারতে আশ্রয় নেয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণের এক মাসের মধ্যে প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করে। মে মাসের শেষ নাগাদ ভারতে প্রবেশের দৈনিক গড় শরণার্থী সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ্যের বেশি এবং তাদের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৪ মিলিয়ন। জাতিসংঘকে প্রদত্ত ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী ১৯৭১ সালের শেষে মোট শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ মিলিয়ন। এই ব্যাপক সংখ্যক শরণার্থীর প্রবেশ প্রত্যক্ষ করে ভারত দ্রুত ঘোষণা দেয় যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর যারা ভারতে প্রবেশ করেছে তাদেরকে ১৯৭২ সালের ফেব্র“য়ারির শেষ তারিখের পূর্বে বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে। বেঁধে দেওয়া এ সময়সীমা খুব অযৌক্তিক ছিল না, তবে ১০ মিলিয়ন শরণার্থীর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবহণের বন্দোবস্ত করা ছিল খুবই দুরূহ। তারপরও বৈরী পরিস্থিতির অবসান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীরা স্বেচ্ছায় বা স্বীয় উদ্যোগে বাড়ি ফেরা শুরু করে। এমনকি যুদ্ধ চলাকালেও কেউ কেউ দেশে ফিরতে থাকে।
| |
| ফেরার সময় শরণার্থীদেরকে যাত্রাপথে খাবার, মেডিক্যাল সহায়তা এবং দু সপ্তাহের প্রাথমিক রেশন প্রদান করা হয়। ফেব্রুয়ারি ১৯৭২-এর মধ্যে ৯ মিলিয়নেরও অধিক শরণার্থী দেশে ফিরে আসে। নানাবিধ বাস্তব সমস্যা সত্ত্বেও দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষাই এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চ তারিখে ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনের মাত্র ৬০ হাজার শরণার্থী বাকি ছিল। প্রত্যাবর্তনকারীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচির জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী-বিষয়ক হাইকমিশনের নিকট বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে জানুয়ারি মাসে ১৪.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য চায় এবং ঐ বছর মে মাসের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে এই খাতে ৬.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য হস্তান্তর করা হয়।
| |
| বাংলাদেশের দ্রুত স্বাধীনতালাভ গণহারে শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের বিষয়টিকে সহজতর করে। শরণার্থী প্রত্যাবর্তনে বড় কোন অসুবিধা বা দ্বন্দ্ব না থাকলেও নিজেদেরকে গুছিয়ে নেওয়ার মতো তাদের তেমন সামর্থ্য ছিল না। প্রত্যাবর্তনকারী শরণার্থীদের বাংলাদেশে স্থাপিত ২৭১টি আশ্রয় শিবিরের কোন না কোনটিতে কিছু সময় থাকতে হয়। শরণার্থীদের বেশির ভাগই ভারতে শরণার্থী শিবিরের রেজিস্ট্রেশন অফিসে দেখা না করে বা বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে না ওঠে সরাসরি নিজ নিজ আবাস বা সমাজে প্রত্যাবর্তন করে।
| |
| ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে নয়াদিল্লি চুক্তি সম্পাদিত হয়। পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি, ভারতে প্রবেশকারী বেসামরিক ব্যক্তি ও পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালি এবং পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুক বাংলাদেশে অবস্থানকারী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবাঙালিদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
| |
| ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পূর্ব জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য থেকে ধার করা বিমানে প্রত্যাবাসনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়। নভেম্বরের মধ্যে এ কাজে ৬টি বিমান ব্যবহৃত হয় এবং প্রতিদিন গড়ে ১,২০০ জন লোকের প্রত্যাবাসন চলতে থাকে। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি শেষে এ কর্মসূচির আওতায় পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ৯০,০০০ এবং বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে ৪৪,০০০-এর বেশি লোক পরিবাহিত হয়। ১৯৭৪ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লি চুক্তির শর্তানুযায়ী ২,০০,০০০ লোকের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করা হয়। চুক্তির সফল বাস্তবায়ন ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখে নি। ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই সংশ্লিষ্ট সরকারসমূহের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন পূর্ববর্তী সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পিত বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সমুদ্রপথে ৯,০০০ এবং বিমানে ২,৭০,০০০ লোক বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবাহিত হয়। বিমানে পরিবাহিতদের মধ্যে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসে ১,৬৬,০০০ জন বাঙালি এবং বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে ফেরত যায় ১,০৪,০০০ জন অবাঙালি। সে সময় সমগ্র বিশ্বে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিমানে জরুরি পরিবহণের এটিই ছিল সর্ববৃহৎ ঘটনা।
| |
| ১৯৪৭-এর দেশভাগের সময় ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যেসব বিহারি এসেছিল তাদের অবস্থা ও নাগরিকত্বের বিষয়টি ছিল সে সময়ের অন্যতম অমীমাংসিত ইস্যু এবং এটি অনেকাংশে এখনও একটি বিশেষ সমস্যা। বেশির ভাগ বিহারি ছিল উর্দুভাষী যা তাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে নৈতিক বন্ধনে আবদ্ধ করে, যদিও পূর্ব পাকিস্তানে তাদের জীবনযাত্রা অপোকৃত ভাল ছিল। ১৯৭১ সালে অনেক বিহারি রাজাকার এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে। ফলে ১৯৭১ সালের মধ্য ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বিহারিরা বাঙালিদের তীব্র রোষের সম্মুখীন হয়। এ সময় অনেক বিহারিকে হত্যা করা হয় এবং তাদের অনেক সম্পত্তি দখল করা হয়।
| |
| ১৯৭৩ সালের আগস্ট মাসে বিহারিদের স্বেচ্ছায় পাকিস্তানে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি মেনে নিলেও পাকিস্তান সরকার তাদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র প্রদানে বিলম্ব করতে থাকে। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ২য় দফা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন প্রশ্নে তিন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা নতুন এক ত্রিপীয় চুক্তি স্বার করেন। এ চুক্তির অধীনে ১,৭০,০০০ জনেরও বেশি বিহারি বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যায়। কিন্তু পাকিস্তান চুক্তিতে উল্লেখিত অবাঙালি শব্দটির ব্যাখ্যায় নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে সকল বিহারিকে ফেরত নেয় নি। পূর্বে ফেরত যাওয়া সংখ্যার বাইরে ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সময়কালের মধ্যে অতিরিক্ত প্রায় ৯,৯০০ জন এবং ১৯৮২ সালে আরও ৪,৮০০ জন বিহারি পাকিস্তানে প্রত্যাবাসন করে। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে পাকিস্তান ৫৩টি বিহারি পরিবারকে গ্রহণ করে এবং তারপর এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
| |
| ১৯৯৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬৬টি আশ্রয় শিবিরে ২,০০,০০০ জনের বেশি বিহারি এখনও দরিদ্র অবস্থায় বসবাস করছে। তাদের অনেকে ইতোমধ্যে এ দেশের জনগণের সঙ্গে মিশে গেলেও তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি এখনও একটি বড় সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে।
| |
| ১৯৭০ সালের শেষ দিকে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে এক জটিল ও বিতর্কিত প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। বেশির ভাগ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের সংখ্যালঘিষ্ট মুসলিম রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণ ও তার দরুন সমস্যার কারণে উক্ত কার্যক্রম হাতে নিতে হয়। ১৯৪৮ সালে মায়ানমার স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরপরই আরাকানের রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় রাখাইন জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। মায়ানমার সরকার দাবি করে যে, রোহিঙ্গারা অপোকৃত সাম্প্রতিক সময়ে ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য এলাকা থেকে মায়ানমারে এসে বসবাস করছে এবং মায়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী তাদেরকে এই দেশের আদিবাসী নাগরিক বলে গণ্য করা যায় না। এ পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের কোণঠাসা করে ফেলে এবং এতে সামাজিক জীবন, শিা ও স্বাস্থ্যসেবায় তাদের মৌলিক অধিকারভোগের বিষয়টি দুরূহ হয়ে ওঠে। ১৯৭৮ সালের মার্চে মায়ানমার সরকারের ব্যাপক ধরপাকড় এবং বহিষ্কারের ফলে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশ সরকারের দাবি অনুযায়ী এর পরিমাণ ছিল ২,৫০,০০০ জনের বেশি, যদিও মায়ানমার কর্তৃপ এই সংখ্যাকে ১,৫০,০০০-এর কম বলে উল্লেখ করে। এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমন ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমার সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দেয়। শরণার্থীর চাপ এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি মুসলিম বিশ্বের উদ্বেগের কারণে জাতিসংঘের কাছে সাহায্যের জন্য আহ্বান জানাতে হয়। অনেক শরণার্থীই করুণ অবস্থায় বসবাস করছিল এবং বাংলাদেশের সরকারও জোরালোভাবে প্রচার করছিল যে, এখানে তাদেরকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আশ্রয় দেওয়া যাবে না। ফলে ১৯৭৮ সালের মে মাসে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন এক বিরাট ত্রাণ কর্মসূচি শুরু করে। এ কর্মসূচির আওতায় সর্বাগ্রে ১৩টি শরণার্থী শিবির স্থাপন করা হয়। সংকট কিছুটা সহজ হলে, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রয়াস পায়। এ দুটি দেশের কোনটিই ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেশনে স্বার করে নি।
| |
| ১৯৭৮ সালে জুলাই মাসে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপীয় চুক্তি সম্পন্ন হয় যাতে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন জড়িত ছিল না। কিন্তু শরণার্থীরা ফেরত যেতে ইচ্ছুক ছিল না এবং তারা বাংলাদেশ কর্তৃপ ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিয়োজিত হয়। এর ফলে শত শত প্রাণহানি ঘটে। আশ্রয় শিবিরের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। পরবর্তীকালে একাধিক রোহিঙ্গা নেতাকে গ্রেফতার করায় এবং খাদ্যের রেশন কমানোর ফলে শরণার্থীরা ফেরত যেতে বাধ্য হয়। ১৯৭৯ সালের শেষ পর্যন্ত ১,৮০,০০০ জনেরও বেশি শরণার্থী মায়ানমারে ফেরত যায়।
| |
|
| |
| ১৯৯১-১৯৯২ সময়কালে বাংলাদেশে মায়ানমার থেকে প্রায় ২,৫০,০০০ জন শরণার্থী প্রবেশ করে। ঘটনাটি ছিল রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উপাদানের জটিলতা থেকে উদ্ভূত এবং মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন। বাংলাদেশ সরকার তাদের জন্য ২০টি আশ্রয় শিবির স্থাপন করে। ১৯৯৬ এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশ সীমান্তবাহিনী সাধ্যমতো তাদের অনেকের প্রবেশ রোধ করে এবং মায়ানমারে ফেরত পাঠায়। কিন্তু জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনের হস্তক্ষেপে এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয় এবং এই সংস্থা এসব শরণার্থী ও তাদের প্রত্যাবাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ২,০০,০০০ জনের মতো শরণার্থী ফেরত পাঠানো সম্ভব হয় এবং এক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও প্রায় ২২,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়ে গেছে। বিগত বৎসরসমূহে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের ঘটনা যেসব কারণে ঘটেছে সেগুলি অনেকটা প্রশমিত হয়ে এলেও মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এখনও আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয়। [এ.কে.এম মাজহারুল ইসলাম]
| |