পেট্রোবাংলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''পেট্রোবাংলা''' (Petrobangla) | '''পেট্রোবাংলা''' (Petrobangla) বাংলাদেশে তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উন্নয়ন, পরিবহন, বিতরণ এবং বিপণনের লক্ষ্যে গঠিত সরকারি মালিকানার প্রতিষ্ঠান। দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ২৭ এর মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশন (বিএমওজিসি)’ গঠিত হয়। একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর জারি করা রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-১২০ এর মাধ্যমে দেশের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠান, ‘বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএমইডিসি)’ গঠন করা হয়। খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম পৃথক হবার পর বিএমওজিসি পূনর্গঠন করে, ‘বাংলাদেশ তেল, গ্যাস কর্পোরেশন (বিওজিসি)’ গঠিত হয় এবং রাষ্ট্রপতির ১৯৭৪ সনের ২২ আগস্ট এর জারি করা অধ্যাদেশ নং ১৫ এর ক্ষমতা বলে ‘বিওজিসি’ এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয় ‘পেট্রোবাংলা’। অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানি, পরিশোধন, বিতরণ ও বিপণনের কাজ পেট্রোবাংলার কাছ থেকে পৃথক করে ১৯৭৬ সালের ১৩ নভেম্বর সরকারি অধ্যাদেশ নং ৮৮-এর মাধ্যমে গঠিত নতুন প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)’ এর উপর অর্পণ করা হয়। ১৯৮৫ সালের ১১ এপ্রিল জারি করা সরকারি আদেশ নং ২১ অনুযায়ী বিওজিসি এবং বিএমইডিসি একীভুত করে ‘বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (বিওজিএমসি)’ গঠন করা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অপর এক সরকারি আদেশ বলে বিওজিএমসি-কে পেট্রোবাংলা নামে অভিহিত করা হয় এবং দেশে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উন্নয়ন, উত্তোলন, পরিবহন, বিতরণ এবং বিপণনের যাবতীয় কর্মকা- পরিচালনার জন্য পেট্রোবাংলাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক তেল কোম্পনির সাথে উৎপাদন-বন্টন চুক্তি (পিএসসি) স্বাক্ষর এবং পিএসসির অধীনে পরিচালিত তেল, গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন সম্পর্কিত কর্মকা- তদারকি করার দায়িত্ব পেট্রোবাংলার উপর ন্যাস্ত হয়েছে। | ||
বর্তমানে পেট্রোবাংলার অধীনস্ত ১৩টি পৃথক কোম্পনির মাধ্যমে পেট্রোবাংলা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে। কোম্পানিগুলির নাম: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফসিএল), গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল), বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড (বিজিএসএল), পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল), কর্নফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল), সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল), রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল), বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) এবং মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। | |||
'''''বাংলাদেশ | '''''বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি লিমিটেড''''' (বাপেক্স) তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে পেট্রোবাংলার ভূতপূর্ব গ্যাস অনুসন্ধান বিভাগ বিলুপ্ত করে গঠন করা রাষ্ট্রীয় মালিকানার একটি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাপেক্স দেশে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। বাপেক্স ৮টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কার করেছে এবং বর্তমানে উৎপাদনক্ষম ৭টি গ্যাসক্ষেত্র (সালদানদী, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাহবাজপুর, সেমুতাং, সুন্দলপুর, বেগমগঞ্জ এবং শ্রীকাইল) থেকে দৈনিক প্রায় ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ করছে। ২০০০ সালে বাপেক্স তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলন কোম্পানি হিসেবে কর্মকা- পরিচালনার অনুমতি পায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাপেক্স তার গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে মোট ৪২.৩ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করে তা পেট্রোবাংলার অধীনস্ত বিভিন্ন বিতরণ ও বিপণন কোম্পনির নিকট বিক্রি করেছে। একই সময়ে বাপেক্স প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত হিসেবে ৪০, ১৫৭ ব্যারেল কন্ডেনসেট উৎপাদন করে তা বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের নিকট বিক্রি করেছে। | ||
বাংলাদেশ সরকার বাপেক্সকে অগভীর সমুদ্রবক্ষে অবস্থিত এসএস-৪, এ্সএস-৯ এবং এসএস-১১ ব্লক সমূহের জন্য ২০১২ সালে যথাক্রমে ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড, অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং স্যান্তোস-ক্রিস এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড এর সাথে স্বাক্ষরিত উৎপাদন বন্টন চুক্তি বা পিএসসির ১০% শেয়ারের মালিকানা (ক্যারিড ওভার ইন্টারেস্ট) দিয়েছে। তাছাড়া, তাল্লো বাংলাদেশ এবং নাইকো রিসোর্স এর সাথে স্বাক্ষরিত ৯ নং ব্লকের জন্য স্বাক্ষরিত পিএসসির আওতায় আবিস্কৃত বাঙ্গুরা গ্যাস ক্ষেত্রের পরিবীক্ষণ কাজে বাপেক্স (১০% শেয়ারের মালিক হিসেবে) সম্পৃক্ত রয়েছে। | |||
'''''গ্যাস | '''''বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড''''' (বিজিএফসিএল) রাষ্ট্রীয় মালিকানায় দেশের প্রধান গ্যাস উৎপাদনকারী কোম্পানি। ১৯৫৬ সনে করাচিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানির উত্তরসূরী হিসেবে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ শেল অয়েল কোম্পানি (বিএসওসি) দেশের প্রধান গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা বহাল রাখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেল অয়েল কোম্পানির নিকট থেকে দেশের প্রধান ৫টি (রশিদপুর, কৈলাসটিলা, তিতাস, হবিগঞ্জ এবং বাখরাবাদ) গ্যাসক্ষেত্র ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানায় কিনে নেন। ১৯৭৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) গঠন করে এর অধীনে উক্ত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানা এবং তা পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৮৫ সালে কামতা এবং ১৯৯২ সালে নরসিংদি ও মেঘনা গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনার দায়িত্ব বিজিএফসিএল উপর অর্পণ করা হয়। বিজিএফসিএল বর্তমানে ৫টি (তিতাস, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ, নরসিংদি ও মেঘনা) গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন অব্যহত রেখেছে। ১৯১৮-১৯ অর্থবছরে বিজিএফসিএল প্রায় ২৮৭.৭০ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস ও গ্যাসের উপজাত হিসেবে ১,৮৬,৫৭৬ ব্যারেল কন্ডেনসেট উত্তোলন করেছে। বিজিএফসিএল উৎপাদিত গ্যাস জিটিসিএল এবং টিজিটিডিসিএল এর সঞ্চালন নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে টিজিটিডিসিএল, বিজিডিসিএল, কেজিডিসিএল, জেজিটিডিসিএল, পিজিসিএল এবং এসজিসিএল কোম্পনিকে সরবরাহ করেছে। তাছাড়া কন্ডেনসেট থেকে উৎপাদিত ডিজেল ও পেট্রোল বিপিসি’র অধীন তেল বিপণন কোম্পানিকে সরবরাহ করেছে। | ||
''''' | '''''সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পনি লিমিটেড''''' (এসজিএফসিএল) বার্মা অয়েল কোম্পনির (বিওসি) উত্তরসূরী রাষ্ট্রীয় মালিকানার কোম্পানি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর বিওসি পরিত্যাক্ত হলে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে এবং কোম্পানির নতুন নামকরণ করে ‘সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পনি লিমিটেড’ (এসজিসিএল)। তাছাড়া স্বাধীনতার পর পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম কোম্পানির মালিকানাধীন ছাতক গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির সকল সম্পদ সরকার অধিগ্রহন করে এসজিসিএল এর উপর অর্পণ করে। বর্তমানে এসজিসিএল সিলেট (হরিপুর), কৈলাসটিলা, রশিদপুর এবং বিয়ানিবাজার গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস ও কন্ডেনসেট উৎপাদন করছে। ছাতক ও হরিপুর ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে গ্যাস উৎপাদন স্থগিত রয়েছে। হরিপুর তেলক্ষেত্র ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের জুলাই পর্যন্ত তেল উৎপাদনের পর থেকে উৎপাদন স্থগিত করেছে। | ||
১৯১৮-১৯ অর্থবছরে এসজিসিএল নিজ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ৪৬.২২ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস, ২,৭২,৬৬৮.৯১ ব্যারেল কন্ডেনসেট এবং ১,৭২.৭২৯.৫৬ ব্যারেল ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইড (এনজিএল) উৎপাদন করেছে। উৎপাদিত গ্যাস জেজিটিডিসিএল, বিজিডিসিএল, পিজিসিএল এবং কেজিডিসিএল নেটওয়ার্কে সরবরাহ করা হয়েছে। | |||
''''' | '''''গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড''''' (জিটিসিএল) উচ্চ চাপে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য নির্মিত দেশের সকল পাইপলাইন কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। ইতিপূর্বে পেট্রোবাংলার নির্মিত কৈলাসটিলা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত ১৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের নর্থ-সাউথ পাইপলাইন পরিচালনার মাধ্যমে জিটিসিএল এর যাত্রা শুরু হয়। জিটিসিএল এর কাছে ১৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ ইঞ্চি ব্যাসের কন্ডেনসেট পরিবহনের পাইপলাইনও হস্তান্তর করা হয়। এরপর জিটিসিএল আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিটিসিএল ৮৭৪.৯৬ বিসিএফ পরিমান গ্যাস টিজিটিডিসিএল, বিজিএসএল, কেজিডিসিএল, জেজিটিডিসিএল, পিজিসিএল এবং এসজিসিএল নেটওয়ার্কে সঞ্চালন করেছে। একই সময়ে জিটিসিএল পাইপলাইনে ১৫,৬৯,৮৭৪ ব্যারেল কন্ডেনসেট পরিবহন করেছে। | ||
আমদানি করা এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাস পরিবহনের জন্য জিটিসিএল মহেশখালি থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৯১ মিলোমিটার দীর্ঘ ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন এবং আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৪৩ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করেছে। দেশের গ্যাস সরবরাহ সম্প্রসারণ ও জাতীয় গ্রিড এর সামর্থ্য বাড়াতে জিটিসিএল বর্তমানে বিভিন্ন দৈর্ঘ ও ব্যাসের কয়েকটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করছে। | |||
''''' | '''''তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড''''' (টিজিটিডিসিএল) বিস্তৃত সঞ্চালন ও বিতরণের পাইপলাইনসহ দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানার গ্যাস বিপণন কোম্পানি। ১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর কোম্পনির যাত্রা শুরু হয়। টিজিটিডিসিএল ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কর্মকা- পরিচালনা শুরু করে। টিজিটিডসিএল ১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে খ্যাতিমান লেখক শওকত ওসমানের ঢাকার বাসায় রান্নার গ্যাস সরবরাহের মধ্য দিয়ে গৃহস্থালী ব্যবহারের গ্যাস সংযোগ দেয়া শুরু করে। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ২৭-এর মাধ্যমে টিজিটিডিসিএলকে পেট্রোবাংলার অধীনস্ত কোম্পানি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত টিজিটিডিসিএল এর বিভিন্ন শ্রেণীর মোট গ্রাহক ছিল ২৮,৬৫,৯০৭ এবং দেশের গ্যাস বিপণনের ৫৬.১৭% এই কোম্পানির আওতাভুক্ত। বর্তমানে টিজিটিডিসিএল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় গ্যাস বিতরণ করে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে টিজিটিডিসিএল বিভিন্ন শ্রেণীর পাইকারি ও খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে মোট ৫৮৪.৮৪ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিপণন করেছে। | ||
''''' | '''''জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড''''' (জেজিটিডিএসএল) বৃহত্তর সিলেট এলাকায় গ্যাস সরবাহ ব্যবস্থা গড়বার লক্ষ্যে হবিগঞ্জ টি ভ্যালি এবং সিলেট শহর গ্যাস বিতরণ প্রকল্পের সমন্বয়ে ১৯৭৭ সালে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। ১৯৭৮ সালে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাযারে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে এই কোম্পানি তার আনুষ্ঠানিক কর্মকা- শুরু করে। জেজিটিডিএসএল এর বিভিন্ন শ্রেনীর ২,২৩,৬৬৬ গ্রাহককে (৩০ জুন ২০২৯ পর্যন্ত) গ্যাস সরবরাহের জন্য কোম্পানির অধীন ৩,৮২২.৭৩ কিলোমিটার সঞ্চালন ও বিতরণ গ্যাস লাইন রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেজিটিডিএসএল গ্রাহকদের কাছে প্রায় ১৩৪.১৬ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে। | ||
''''' | '''''বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড''''' (বিজিএসএল) বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদিত গ্যাস উৎপাদন এবং বিপণন করার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের ৭ জুন পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। ১৯৮৪ সালের ২০ মে থেকে বিজিডিএসএল বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস বিতরণ শুরু করে। পরবর্তীতে কোম্পানিকে গ্যাস সঞ্চালন ও বিপণন কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয় এবং বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা ১৯৮৯ সালের মে মাসে বিজিএফসিএলকে ন্যাস্ত করা হয়। ফলে বিজিএসএল এর উৎপাদন কোম্পানি হিসেবে অবস্থান পরিবর্তন হয়। পরবর্তীতে কোম্পানির অধীন দুটি প্রধান গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন (১১০ কিেিলামিটার দীর্ঘ বাখরাবাদ-চৌদ্দগ্রাম এবং ৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বাখরাবাদ-ডেমরা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন) জিটিসিএল এর নিকট হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে বিজিএসএল বৃহত্তর কুমিল্লা এবং বৃহত্তর নোয়াখালি জেলা ও ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলায় গ্যাস সরবরাহ করে। বিজিএসএল এর মালিকানায় বর্তমানে (৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত) প্রায় ৩,৮৯০.৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বিজিএসএল তার বিভিন্ন শ্রেণির ৪,৯১,২১২ (৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত ) গ্রাহকের কাছে ১২৫.২৫ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে। | ||
''''' | '''''পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড''''' (পিজিসিএল) দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস বিতরণ এবং বিপণনের লক্ষ্যে ২০০০ সালে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। পিজিসিএল তার ১,৬৪২.০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন (জুন ২০১৯ পর্যন্ত) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ, বাঘাবাড়ি, বেড়া, সাথিয়া, শাহজাদপুর, পাবনা, ঈশ^রদি, বগুড়া, রাজশাহীসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য এলাকায় গ্যাস সরবরাহ ব্যাবস্থা সম্প্রসারিত করেছে। পিজিসিএল পরবর্তীতে রংপুর, নিলফামারী, কুড়িগ্রাম এবং পঞ্চগড় জেলায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে পিজিসিএল তার বিভিন্ন শ্রেণির ১,২৯,৩২২ গ্রাহককে মোট ৪৫.১৬ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে। | ||
'' | '''''কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড''''' (কেজিডিসিএল) চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস বিতরণ উন্নয়ন এবং যৌক্তিকিকরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। উল্লিখিত এলাকা ইতিপূর্বে বিজিডিএসএল এর গ্যাস বিতরণ এলাকার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কেজিডিসিএল তার বিভিন্ন শ্রেণীর ৬,০২,২২০ জন গ্রাহকের (ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত) কাছে মোট ১১৩.৮৮ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে। | ||
'''''সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড''''' (এসজিসিএল) দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, বরিশাল বিভাগ এবং বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। ২০২৮-২৯ অর্থ বছরে এসজিসিএল তার ২,৩৮৬ গ্রাহকের (প্রধানত বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য খুচরা ও আবাসিক গ্রাহক) কাছে মোট ৩৪.৫৯ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে। | |||
'''''রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড''''' (আরপিজিসিএল) পেট্রোবাংলার অধীনস্ত কোম্পানি হিসেবে ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে। যানবাহনে সঙ্কুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান, ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও সমন্বয় করা, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) উৎপাদন ও বিতরণ, ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইড (এনজিএল) থেকে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদনের জন্য আরপিজিসিএএলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রতিমাসে প্রায় ৩.৬৪ বিসিএফ (দেশের মোট ব্যবহৃত গ্যাসের প্রায় ৫%) পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের ৬০০ সিএনজি স্টেশনের সহায়তায় সিএনজি হিসেবে ব্যাবহৃত হয়েছে। একই সময়ে আরপিজিসিএল সিলেটের কৈলাসটিলায় অবস্থিত তার ‘ফ্রাকশেনেশন’ প্লান্টে এনজিএল প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ৬,৫৪৮ মেট্রিক টন এলপিজি উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করেছে। | |||
কক্সবাজারের মহেশখালিতে দুটি ‘ফ্লটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ)’ স্থাপনের জন্য পেট্রোবাংলা এবং এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড (ইইবিএল) এবং সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি (প্রাইভেট) লি. এর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আরপিজিসিএলকে অর্পণ করা হয়। ২০১৮ সালের আগস্টে ইইবিএল এর এফএসআরইউ এবং ২০১৯ সালের এপ্রিলে সামিট এর এমফএসআরইউ আমদানি করা এলএনজি কে গ্যাসে রূপান্তরিত করে জাতীয় গ্যাস গ্রিড-এ সরবরাহ করার কাজ শুরু করে। প্রতিটি এফএসআরইউ এর দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ পরিমাণ এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা (স্থাপিত) রয়েছে। পেট্রোবাংলা প্রতিমাসে প্রয়োজনীয় পরিমাণ এলএনজি আন্তর্জাতিক ‘স্পট মার্কেট’ এবং কিছু পরিমাণ দীর্ঘ মেয়াদি চুিক্তর অধীনে ‘কাতার গ্যাস’ এর কাছ থেকে আমদানি করে। | |||
'''''বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড''''' (বিসিএমসিএল) দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনি পরিচালনা এবং কয়লা বিপণনের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের আগস্টে পেট্রোবাংলার অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে খনির কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে খনি থেকে ৮,০৫,৬৯৬ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। উৎপাদন শুরু থেকে ২০২০ সালের জুন মাস অবধি বড়পুুকরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত মোট কয়লার পরিমাণ ১,১৭,৮০,৮২৮ টন। পাশর্^বর্তী ৫৭৫ মেগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র খনি থেকে উত্তোলিত সম্পূর্ণ কয়লা ব্যাবহার করে। | |||
[ | '''''মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পনি লিমিটেড''''' (এমজিএমসিএল) নির্মাণ কাজে ব্যবহার উপযোগী পাথর উত্তোলনের মধ্যপাড়া খনি পরিচালনা এবং উত্তোলিত পাথর বিপণনের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সনে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। ইতিপূর্বে ১৯৯৪-২০০৭ সময়কালে দিনাজপুরের মধ্যপাড়ায় পেট্রোবাংলার একটি প্রকল্প হিসেবে মধ্যপাড়া খনি নির্মিত হয়। ২০০৭ সালের মে মাসে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পনি লিমিটেড খনির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। ২০১৮-১৯ সময়কালে এমজিএমসিএল খনি থেকে মোট ১০,৬৭,৬৪৬.৬৩ টন পাথর উত্তোলন এবং ৭,৩১,৪৯৩.৫৬ টন পাথর বিক্রি করে। খনির উৎপাদনের শুরু থেকে ২০১৯ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট উৎপাদিত পাথরের পরিমাণ ৫.৬ মিলিয়ন টন। এই পাথর ঘরবাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন, সড়ক-মহাসড়ক, সেতু, বাঁধ, নদীশাসন, রেলপথের ব্যালাস্ট, স্লিপার ইত্যাদি নির্র্মাণ কাজে ব্যবহার হয়। [মো. মুশফিকুর রহমান] | ||
'''গ্রন্থপঞ্জি''' Peterobangla 2020, Petrobangla Annual Report 2019 | |||
[[ | ''আরও দেখুন'' [[খনিজ সম্পদ|খনিজ সম্পদ]]; [[প্রাকৃতিক গ্যাস|প্রাকৃতিক গ্যাস]]। | ||
[[en:Petrobangla]] | [[en:Petrobangla]] |
১৪:৫৭, ১৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
পেট্রোবাংলা (Petrobangla) বাংলাদেশে তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উন্নয়ন, পরিবহন, বিতরণ এবং বিপণনের লক্ষ্যে গঠিত সরকারি মালিকানার প্রতিষ্ঠান। দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ২৭ এর মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশন (বিএমওজিসি)’ গঠিত হয়। একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর জারি করা রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-১২০ এর মাধ্যমে দেশের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠান, ‘বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএমইডিসি)’ গঠন করা হয়। খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম পৃথক হবার পর বিএমওজিসি পূনর্গঠন করে, ‘বাংলাদেশ তেল, গ্যাস কর্পোরেশন (বিওজিসি)’ গঠিত হয় এবং রাষ্ট্রপতির ১৯৭৪ সনের ২২ আগস্ট এর জারি করা অধ্যাদেশ নং ১৫ এর ক্ষমতা বলে ‘বিওজিসি’ এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয় ‘পেট্রোবাংলা’। অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানি, পরিশোধন, বিতরণ ও বিপণনের কাজ পেট্রোবাংলার কাছ থেকে পৃথক করে ১৯৭৬ সালের ১৩ নভেম্বর সরকারি অধ্যাদেশ নং ৮৮-এর মাধ্যমে গঠিত নতুন প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)’ এর উপর অর্পণ করা হয়। ১৯৮৫ সালের ১১ এপ্রিল জারি করা সরকারি আদেশ নং ২১ অনুযায়ী বিওজিসি এবং বিএমইডিসি একীভুত করে ‘বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (বিওজিএমসি)’ গঠন করা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অপর এক সরকারি আদেশ বলে বিওজিএমসি-কে পেট্রোবাংলা নামে অভিহিত করা হয় এবং দেশে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উন্নয়ন, উত্তোলন, পরিবহন, বিতরণ এবং বিপণনের যাবতীয় কর্মকা- পরিচালনার জন্য পেট্রোবাংলাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক তেল কোম্পনির সাথে উৎপাদন-বন্টন চুক্তি (পিএসসি) স্বাক্ষর এবং পিএসসির অধীনে পরিচালিত তেল, গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন সম্পর্কিত কর্মকা- তদারকি করার দায়িত্ব পেট্রোবাংলার উপর ন্যাস্ত হয়েছে।
বর্তমানে পেট্রোবাংলার অধীনস্ত ১৩টি পৃথক কোম্পনির মাধ্যমে পেট্রোবাংলা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে। কোম্পানিগুলির নাম: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফসিএল), গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল), বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড (বিজিএসএল), পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল), কর্নফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল), সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল), রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল), বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) এবং মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে পেট্রোবাংলার ভূতপূর্ব গ্যাস অনুসন্ধান বিভাগ বিলুপ্ত করে গঠন করা রাষ্ট্রীয় মালিকানার একটি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাপেক্স দেশে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। বাপেক্স ৮টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কার করেছে এবং বর্তমানে উৎপাদনক্ষম ৭টি গ্যাসক্ষেত্র (সালদানদী, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাহবাজপুর, সেমুতাং, সুন্দলপুর, বেগমগঞ্জ এবং শ্রীকাইল) থেকে দৈনিক প্রায় ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ করছে। ২০০০ সালে বাপেক্স তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলন কোম্পানি হিসেবে কর্মকা- পরিচালনার অনুমতি পায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাপেক্স তার গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে মোট ৪২.৩ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করে তা পেট্রোবাংলার অধীনস্ত বিভিন্ন বিতরণ ও বিপণন কোম্পনির নিকট বিক্রি করেছে। একই সময়ে বাপেক্স প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত হিসেবে ৪০, ১৫৭ ব্যারেল কন্ডেনসেট উৎপাদন করে তা বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের নিকট বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ সরকার বাপেক্সকে অগভীর সমুদ্রবক্ষে অবস্থিত এসএস-৪, এ্সএস-৯ এবং এসএস-১১ ব্লক সমূহের জন্য ২০১২ সালে যথাক্রমে ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড, অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং স্যান্তোস-ক্রিস এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড এর সাথে স্বাক্ষরিত উৎপাদন বন্টন চুক্তি বা পিএসসির ১০% শেয়ারের মালিকানা (ক্যারিড ওভার ইন্টারেস্ট) দিয়েছে। তাছাড়া, তাল্লো বাংলাদেশ এবং নাইকো রিসোর্স এর সাথে স্বাক্ষরিত ৯ নং ব্লকের জন্য স্বাক্ষরিত পিএসসির আওতায় আবিস্কৃত বাঙ্গুরা গ্যাস ক্ষেত্রের পরিবীক্ষণ কাজে বাপেক্স (১০% শেয়ারের মালিক হিসেবে) সম্পৃক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) রাষ্ট্রীয় মালিকানায় দেশের প্রধান গ্যাস উৎপাদনকারী কোম্পানি। ১৯৫৬ সনে করাচিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানির উত্তরসূরী হিসেবে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ শেল অয়েল কোম্পানি (বিএসওসি) দেশের প্রধান গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা বহাল রাখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেল অয়েল কোম্পানির নিকট থেকে দেশের প্রধান ৫টি (রশিদপুর, কৈলাসটিলা, তিতাস, হবিগঞ্জ এবং বাখরাবাদ) গ্যাসক্ষেত্র ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানায় কিনে নেন। ১৯৭৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) গঠন করে এর অধীনে উক্ত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানা এবং তা পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৮৫ সালে কামতা এবং ১৯৯২ সালে নরসিংদি ও মেঘনা গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনার দায়িত্ব বিজিএফসিএল উপর অর্পণ করা হয়। বিজিএফসিএল বর্তমানে ৫টি (তিতাস, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ, নরসিংদি ও মেঘনা) গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন অব্যহত রেখেছে। ১৯১৮-১৯ অর্থবছরে বিজিএফসিএল প্রায় ২৮৭.৭০ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস ও গ্যাসের উপজাত হিসেবে ১,৮৬,৫৭৬ ব্যারেল কন্ডেনসেট উত্তোলন করেছে। বিজিএফসিএল উৎপাদিত গ্যাস জিটিসিএল এবং টিজিটিডিসিএল এর সঞ্চালন নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে টিজিটিডিসিএল, বিজিডিসিএল, কেজিডিসিএল, জেজিটিডিসিএল, পিজিসিএল এবং এসজিসিএল কোম্পনিকে সরবরাহ করেছে। তাছাড়া কন্ডেনসেট থেকে উৎপাদিত ডিজেল ও পেট্রোল বিপিসি’র অধীন তেল বিপণন কোম্পানিকে সরবরাহ করেছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পনি লিমিটেড (এসজিএফসিএল) বার্মা অয়েল কোম্পনির (বিওসি) উত্তরসূরী রাষ্ট্রীয় মালিকানার কোম্পানি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর বিওসি পরিত্যাক্ত হলে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে এবং কোম্পানির নতুন নামকরণ করে ‘সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পনি লিমিটেড’ (এসজিসিএল)। তাছাড়া স্বাধীনতার পর পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম কোম্পানির মালিকানাধীন ছাতক গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির সকল সম্পদ সরকার অধিগ্রহন করে এসজিসিএল এর উপর অর্পণ করে। বর্তমানে এসজিসিএল সিলেট (হরিপুর), কৈলাসটিলা, রশিদপুর এবং বিয়ানিবাজার গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস ও কন্ডেনসেট উৎপাদন করছে। ছাতক ও হরিপুর ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে গ্যাস উৎপাদন স্থগিত রয়েছে। হরিপুর তেলক্ষেত্র ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের জুলাই পর্যন্ত তেল উৎপাদনের পর থেকে উৎপাদন স্থগিত করেছে।
১৯১৮-১৯ অর্থবছরে এসজিসিএল নিজ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ৪৬.২২ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস, ২,৭২,৬৬৮.৯১ ব্যারেল কন্ডেনসেট এবং ১,৭২.৭২৯.৫৬ ব্যারেল ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইড (এনজিএল) উৎপাদন করেছে। উৎপাদিত গ্যাস জেজিটিডিসিএল, বিজিডিসিএল, পিজিসিএল এবং কেজিডিসিএল নেটওয়ার্কে সরবরাহ করা হয়েছে।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) উচ্চ চাপে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য নির্মিত দেশের সকল পাইপলাইন কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। ইতিপূর্বে পেট্রোবাংলার নির্মিত কৈলাসটিলা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত ১৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের নর্থ-সাউথ পাইপলাইন পরিচালনার মাধ্যমে জিটিসিএল এর যাত্রা শুরু হয়। জিটিসিএল এর কাছে ১৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ ইঞ্চি ব্যাসের কন্ডেনসেট পরিবহনের পাইপলাইনও হস্তান্তর করা হয়। এরপর জিটিসিএল আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিটিসিএল ৮৭৪.৯৬ বিসিএফ পরিমান গ্যাস টিজিটিডিসিএল, বিজিএসএল, কেজিডিসিএল, জেজিটিডিসিএল, পিজিসিএল এবং এসজিসিএল নেটওয়ার্কে সঞ্চালন করেছে। একই সময়ে জিটিসিএল পাইপলাইনে ১৫,৬৯,৮৭৪ ব্যারেল কন্ডেনসেট পরিবহন করেছে।
আমদানি করা এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাস পরিবহনের জন্য জিটিসিএল মহেশখালি থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৯১ মিলোমিটার দীর্ঘ ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন এবং আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৪৩ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করেছে। দেশের গ্যাস সরবরাহ সম্প্রসারণ ও জাতীয় গ্রিড এর সামর্থ্য বাড়াতে জিটিসিএল বর্তমানে বিভিন্ন দৈর্ঘ ও ব্যাসের কয়েকটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) বিস্তৃত সঞ্চালন ও বিতরণের পাইপলাইনসহ দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানার গ্যাস বিপণন কোম্পানি। ১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর কোম্পনির যাত্রা শুরু হয়। টিজিটিডিসিএল ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কর্মকা- পরিচালনা শুরু করে। টিজিটিডসিএল ১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে খ্যাতিমান লেখক শওকত ওসমানের ঢাকার বাসায় রান্নার গ্যাস সরবরাহের মধ্য দিয়ে গৃহস্থালী ব্যবহারের গ্যাস সংযোগ দেয়া শুরু করে। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ২৭-এর মাধ্যমে টিজিটিডিসিএলকে পেট্রোবাংলার অধীনস্ত কোম্পানি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত টিজিটিডিসিএল এর বিভিন্ন শ্রেণীর মোট গ্রাহক ছিল ২৮,৬৫,৯০৭ এবং দেশের গ্যাস বিপণনের ৫৬.১৭% এই কোম্পানির আওতাভুক্ত। বর্তমানে টিজিটিডিসিএল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় গ্যাস বিতরণ করে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে টিজিটিডিসিএল বিভিন্ন শ্রেণীর পাইকারি ও খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে মোট ৫৮৪.৮৪ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিপণন করেছে।
জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল) বৃহত্তর সিলেট এলাকায় গ্যাস সরবাহ ব্যবস্থা গড়বার লক্ষ্যে হবিগঞ্জ টি ভ্যালি এবং সিলেট শহর গ্যাস বিতরণ প্রকল্পের সমন্বয়ে ১৯৭৭ সালে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। ১৯৭৮ সালে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাযারে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে এই কোম্পানি তার আনুষ্ঠানিক কর্মকা- শুরু করে। জেজিটিডিএসএল এর বিভিন্ন শ্রেনীর ২,২৩,৬৬৬ গ্রাহককে (৩০ জুন ২০২৯ পর্যন্ত) গ্যাস সরবরাহের জন্য কোম্পানির অধীন ৩,৮২২.৭৩ কিলোমিটার সঞ্চালন ও বিতরণ গ্যাস লাইন রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেজিটিডিএসএল গ্রাহকদের কাছে প্রায় ১৩৪.১৬ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে।
বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড (বিজিএসএল) বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদিত গ্যাস উৎপাদন এবং বিপণন করার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের ৭ জুন পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। ১৯৮৪ সালের ২০ মে থেকে বিজিডিএসএল বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস বিতরণ শুরু করে। পরবর্তীতে কোম্পানিকে গ্যাস সঞ্চালন ও বিপণন কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয় এবং বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা ১৯৮৯ সালের মে মাসে বিজিএফসিএলকে ন্যাস্ত করা হয়। ফলে বিজিএসএল এর উৎপাদন কোম্পানি হিসেবে অবস্থান পরিবর্তন হয়। পরবর্তীতে কোম্পানির অধীন দুটি প্রধান গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন (১১০ কিেিলামিটার দীর্ঘ বাখরাবাদ-চৌদ্দগ্রাম এবং ৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বাখরাবাদ-ডেমরা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন) জিটিসিএল এর নিকট হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে বিজিএসএল বৃহত্তর কুমিল্লা এবং বৃহত্তর নোয়াখালি জেলা ও ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলায় গ্যাস সরবরাহ করে। বিজিএসএল এর মালিকানায় বর্তমানে (৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত) প্রায় ৩,৮৯০.৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বিজিএসএল তার বিভিন্ন শ্রেণির ৪,৯১,২১২ (৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত ) গ্রাহকের কাছে ১২৫.২৫ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে।
পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস বিতরণ এবং বিপণনের লক্ষ্যে ২০০০ সালে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। পিজিসিএল তার ১,৬৪২.০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন (জুন ২০১৯ পর্যন্ত) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ, বাঘাবাড়ি, বেড়া, সাথিয়া, শাহজাদপুর, পাবনা, ঈশ^রদি, বগুড়া, রাজশাহীসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য এলাকায় গ্যাস সরবরাহ ব্যাবস্থা সম্প্রসারিত করেছে। পিজিসিএল পরবর্তীতে রংপুর, নিলফামারী, কুড়িগ্রাম এবং পঞ্চগড় জেলায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে পিজিসিএল তার বিভিন্ন শ্রেণির ১,২৯,৩২২ গ্রাহককে মোট ৪৫.১৬ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে।
কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস বিতরণ উন্নয়ন এবং যৌক্তিকিকরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। উল্লিখিত এলাকা ইতিপূর্বে বিজিডিএসএল এর গ্যাস বিতরণ এলাকার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কেজিডিসিএল তার বিভিন্ন শ্রেণীর ৬,০২,২২০ জন গ্রাহকের (ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত) কাছে মোট ১১৩.৮৮ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল) দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, বরিশাল বিভাগ এবং বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। ২০২৮-২৯ অর্থ বছরে এসজিসিএল তার ২,৩৮৬ গ্রাহকের (প্রধানত বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য খুচরা ও আবাসিক গ্রাহক) কাছে মোট ৩৪.৫৯ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) পেট্রোবাংলার অধীনস্ত কোম্পানি হিসেবে ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে। যানবাহনে সঙ্কুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান, ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও সমন্বয় করা, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) উৎপাদন ও বিতরণ, ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইড (এনজিএল) থেকে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদনের জন্য আরপিজিসিএএলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রতিমাসে প্রায় ৩.৬৪ বিসিএফ (দেশের মোট ব্যবহৃত গ্যাসের প্রায় ৫%) পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের ৬০০ সিএনজি স্টেশনের সহায়তায় সিএনজি হিসেবে ব্যাবহৃত হয়েছে। একই সময়ে আরপিজিসিএল সিলেটের কৈলাসটিলায় অবস্থিত তার ‘ফ্রাকশেনেশন’ প্লান্টে এনজিএল প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ৬,৫৪৮ মেট্রিক টন এলপিজি উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করেছে।
কক্সবাজারের মহেশখালিতে দুটি ‘ফ্লটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ)’ স্থাপনের জন্য পেট্রোবাংলা এবং এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড (ইইবিএল) এবং সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি (প্রাইভেট) লি. এর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আরপিজিসিএলকে অর্পণ করা হয়। ২০১৮ সালের আগস্টে ইইবিএল এর এফএসআরইউ এবং ২০১৯ সালের এপ্রিলে সামিট এর এমফএসআরইউ আমদানি করা এলএনজি কে গ্যাসে রূপান্তরিত করে জাতীয় গ্যাস গ্রিড-এ সরবরাহ করার কাজ শুরু করে। প্রতিটি এফএসআরইউ এর দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ পরিমাণ এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা (স্থাপিত) রয়েছে। পেট্রোবাংলা প্রতিমাসে প্রয়োজনীয় পরিমাণ এলএনজি আন্তর্জাতিক ‘স্পট মার্কেট’ এবং কিছু পরিমাণ দীর্ঘ মেয়াদি চুিক্তর অধীনে ‘কাতার গ্যাস’ এর কাছ থেকে আমদানি করে।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনি পরিচালনা এবং কয়লা বিপণনের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের আগস্টে পেট্রোবাংলার অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে খনির কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে খনি থেকে ৮,০৫,৬৯৬ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। উৎপাদন শুরু থেকে ২০২০ সালের জুন মাস অবধি বড়পুুকরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত মোট কয়লার পরিমাণ ১,১৭,৮০,৮২৮ টন। পাশর্^বর্তী ৫৭৫ মেগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র খনি থেকে উত্তোলিত সম্পূর্ণ কয়লা ব্যাবহার করে।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পনি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) নির্মাণ কাজে ব্যবহার উপযোগী পাথর উত্তোলনের মধ্যপাড়া খনি পরিচালনা এবং উত্তোলিত পাথর বিপণনের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সনে পেট্রোবাংলার অধীনে গঠিত কোম্পানি। ইতিপূর্বে ১৯৯৪-২০০৭ সময়কালে দিনাজপুরের মধ্যপাড়ায় পেট্রোবাংলার একটি প্রকল্প হিসেবে মধ্যপাড়া খনি নির্মিত হয়। ২০০৭ সালের মে মাসে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পনি লিমিটেড খনির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। ২০১৮-১৯ সময়কালে এমজিএমসিএল খনি থেকে মোট ১০,৬৭,৬৪৬.৬৩ টন পাথর উত্তোলন এবং ৭,৩১,৪৯৩.৫৬ টন পাথর বিক্রি করে। খনির উৎপাদনের শুরু থেকে ২০১৯ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট উৎপাদিত পাথরের পরিমাণ ৫.৬ মিলিয়ন টন। এই পাথর ঘরবাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন, সড়ক-মহাসড়ক, সেতু, বাঁধ, নদীশাসন, রেলপথের ব্যালাস্ট, স্লিপার ইত্যাদি নির্র্মাণ কাজে ব্যবহার হয়। [মো. মুশফিকুর রহমান]
গ্রন্থপঞ্জি Peterobangla 2020, Petrobangla Annual Report 2019
আরও দেখুন খনিজ সম্পদ; প্রাকৃতিক গ্যাস।