গাছি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:Gachhi.jpg|thumb|right|গাছি [''ছবি: মনিরুল এইচ খান'']]] | |||
'''গাছি''' গাছ থেকে রস সংগ্রহ, চারা লাগানো ও গাছের আগাছা পরিষ্কার করে এমন একদল পেশাজীবী শ্রেণি। গ্রামীণ বাংলাদেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাছিরা শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে থাকে। অনেক গাছি আবার [[তাল|তাল]] গাছ থেকেও রস সংগ্রহ করে। কিছু এলাকার গাছিদের পাশি বা শিউলিও বলা হয়। | '''গাছি''' গাছ থেকে রস সংগ্রহ, চারা লাগানো ও গাছের আগাছা পরিষ্কার করে এমন একদল পেশাজীবী শ্রেণি। গ্রামীণ বাংলাদেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাছিরা শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে থাকে। অনেক গাছি আবার [[তাল|তাল]] গাছ থেকেও রস সংগ্রহ করে। কিছু এলাকার গাছিদের পাশি বা শিউলিও বলা হয়। | ||
তারা প্রথমে ধারালো দায়ের সাহায্যে কান্ডের শীর্ষভাগে পাতার ঠিক নিচে গাছের নরম অংশ কেটে ফেলে। এ কাটা অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ‘ভি’ আকৃতির হয়ে থাকে। পরে বাঁশের একটি ছোট নল গাছে ঢুকানো হয় যার মধ্য দিয়ে রস চুইয়ে গাছের সাথে লাগানো মাটির পাত্রে জমা হয়। তালগাছ থেকে দিনে দুইবার সকাল এবং বিকালে রস আহরণ করা হয়। খেজুর গাছ সপ্তাহে ২/৩ দিন কাটা হয় এবং সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। খুব সকালে রস থাকে মিষ্টি ও টাটকা। কিন্তু যদি সকালে গাছ হতে রস সংগ্রহ না করা হয়, তবে দু ঘণ্টা বা অধিককাল অতিবাহিত হলে এটি ক্রমান্বয়ে গাঁজিয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তাড়ি নামক এক ধরনের মাদক পানীয়ে পরিণত হয়। জ্বাল দিয়ে খেজুর ও তাল গাছের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। বিশেষ একধরণের গুড় রয়েছে যাকে বলা হয় পাটালি। এ পাটালি গুড় দুধভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে বেশ সুস্বাদু। তালগাছের রস থেকে তৈরি করা হয় তালমিছরি। | তারা প্রথমে ধারালো দায়ের সাহায্যে কান্ডের শীর্ষভাগে পাতার ঠিক নিচে গাছের নরম অংশ কেটে ফেলে। এ কাটা অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ‘ভি’ আকৃতির হয়ে থাকে। পরে বাঁশের একটি ছোট নল গাছে ঢুকানো হয় যার মধ্য দিয়ে রস চুইয়ে গাছের সাথে লাগানো মাটির পাত্রে জমা হয়। তালগাছ থেকে দিনে দুইবার সকাল এবং বিকালে রস আহরণ করা হয়। খেজুর গাছ সপ্তাহে ২/৩ দিন কাটা হয় এবং সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। খুব সকালে রস থাকে মিষ্টি ও টাটকা। কিন্তু যদি সকালে গাছ হতে রস সংগ্রহ না করা হয়, তবে দু ঘণ্টা বা অধিককাল অতিবাহিত হলে এটি ক্রমান্বয়ে গাঁজিয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তাড়ি নামক এক ধরনের মাদক পানীয়ে পরিণত হয়। জ্বাল দিয়ে খেজুর ও তাল গাছের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। বিশেষ একধরণের গুড় রয়েছে যাকে বলা হয় পাটালি। এ পাটালি গুড় দুধভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে বেশ সুস্বাদু। তালগাছের রস থেকে তৈরি করা হয় তালমিছরি। | ||
বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে অনেক গাছি আবার আখের চারা লাগানো, চারাগাছের মাটিতে হেলে পড়া ঠেকাতে তাদের গুচ্ছ করে বাঁধা, আখের রস সংগ্রহ করা, রস বিক্রয় করা বা গুড়ে পরিণত করা ইত্যাদি কাজ করে। ইক্ষু মাড়াতে একজোড়া বলদ ব্যবহার করা হয় এবং রসকে গুড়ে পরিণত করার জন্য একটি বড় পাত্রে সিদ্ধ করা হয়। আখের রস থেকে চিনি তৈরি করতে বর্তমানে দেশে অনেক চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে গাছিরা এখন বিলুপ্তপ্রায়। গাছিদের ঐতিহ্যবাহী কাজকর্ম, বিশেষ করে তালগাছ বা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ অথবা গাছের আগাছা পরিষ্কার ইত্যাদি বর্তমানে গ্রামে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তিই করতে পারে। [গোফরান ফারুকী] | |||
বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে অনেক গাছি আবার আখের চারা লাগানো, চারাগাছের মাটিতে হেলে পড়া ঠেকাতে তাদের গুচ্ছ করে বাঁধা, আখের রস সংগ্রহ করা, রস বিক্রয় করা বা গুড়ে পরিণত করা ইত্যাদি কাজ করে। ইক্ষু মাড়াতে একজোড়া বলদ ব্যবহার করা হয় এবং রসকে গুড়ে পরিণত করার জন্য একটি বড় পাত্রে সিদ্ধ করা হয়। আখের রস থেকে চিনি তৈরি করতে বর্তমানে দেশে অনেক চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে গাছিরা এখন বিলুপ্তপ্রায়। গাছিদের ঐতিহ্যবাহী কাজকর্ম, বিশেষ করে তালগাছ বা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ অথবা গাছের আগাছা পরিষ্কার ইত্যাদি বর্তমানে গ্রামে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তিই করতে পারে। [গোফরান ফারুকী] | |||
[[en:Gachhi]] | [[en:Gachhi]] |
০৪:৪৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
গাছি গাছ থেকে রস সংগ্রহ, চারা লাগানো ও গাছের আগাছা পরিষ্কার করে এমন একদল পেশাজীবী শ্রেণি। গ্রামীণ বাংলাদেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাছিরা শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে থাকে। অনেক গাছি আবার তাল গাছ থেকেও রস সংগ্রহ করে। কিছু এলাকার গাছিদের পাশি বা শিউলিও বলা হয়।
তারা প্রথমে ধারালো দায়ের সাহায্যে কান্ডের শীর্ষভাগে পাতার ঠিক নিচে গাছের নরম অংশ কেটে ফেলে। এ কাটা অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ‘ভি’ আকৃতির হয়ে থাকে। পরে বাঁশের একটি ছোট নল গাছে ঢুকানো হয় যার মধ্য দিয়ে রস চুইয়ে গাছের সাথে লাগানো মাটির পাত্রে জমা হয়। তালগাছ থেকে দিনে দুইবার সকাল এবং বিকালে রস আহরণ করা হয়। খেজুর গাছ সপ্তাহে ২/৩ দিন কাটা হয় এবং সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। খুব সকালে রস থাকে মিষ্টি ও টাটকা। কিন্তু যদি সকালে গাছ হতে রস সংগ্রহ না করা হয়, তবে দু ঘণ্টা বা অধিককাল অতিবাহিত হলে এটি ক্রমান্বয়ে গাঁজিয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তাড়ি নামক এক ধরনের মাদক পানীয়ে পরিণত হয়। জ্বাল দিয়ে খেজুর ও তাল গাছের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। বিশেষ একধরণের গুড় রয়েছে যাকে বলা হয় পাটালি। এ পাটালি গুড় দুধভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে বেশ সুস্বাদু। তালগাছের রস থেকে তৈরি করা হয় তালমিছরি।
বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে অনেক গাছি আবার আখের চারা লাগানো, চারাগাছের মাটিতে হেলে পড়া ঠেকাতে তাদের গুচ্ছ করে বাঁধা, আখের রস সংগ্রহ করা, রস বিক্রয় করা বা গুড়ে পরিণত করা ইত্যাদি কাজ করে। ইক্ষু মাড়াতে একজোড়া বলদ ব্যবহার করা হয় এবং রসকে গুড়ে পরিণত করার জন্য একটি বড় পাত্রে সিদ্ধ করা হয়। আখের রস থেকে চিনি তৈরি করতে বর্তমানে দেশে অনেক চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে গাছিরা এখন বিলুপ্তপ্রায়। গাছিদের ঐতিহ্যবাহী কাজকর্ম, বিশেষ করে তালগাছ বা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ অথবা গাছের আগাছা পরিষ্কার ইত্যাদি বর্তমানে গ্রামে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তিই করতে পারে। [গোফরান ফারুকী]