সিলেট জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
(হালনাগাদ)
 
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:Table]]
'''সিলেট জেলা''' ([[সিলেট বিভাগ|সিলেট বিভাগ]])  আয়তন: ৩২১৭.২৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৬´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৮´ থেকে ৯২°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা।
'''সিলেট জেলা''' ([[সিলেট বিভাগ|সিলেট বিভাগ]])  আয়তন: ৩৪৯০.৪০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৬´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৮´ থেকে ৯২°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা।


''জনসংখ্যা'' ২৫৫৫৫৬৬; পুরুষ ১৩১৪৩১৭, মহিলা ১২৪১২৪৯। মুসলিম ২৩৬৫৭২৮, হিন্দু ১৮৬৫৬৫, বৌদ্ধ ১৮৩১, খ্রিস্টান ৩৫২ এবং অন্যান্য ১০৯০। এ উপজেলায় খাসিয়া, মণিপুরী, পাত্র (পাথর) প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
''জনসংখ্যা'' ৩২৩২৮৩৪; পুরুষ ১৬২৬৯৪৭, মহিলা ১৬০৫৮৮৭। মুসলিম ২৯৯৫৫২৯, হিন্দু ২৩২১৫৮, বৌদ্ধ ৬৪৩, খ্রিস্টান ২৪৪২ এবং অন্যান্য ২০৬২। এ উপজেলায় খাসিয়া, মণিপুরী, পাত্র (পাথর) প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।


''জলাশয়'' প্রধান নদী: সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, গড়াই।
''জলাশয়'' প্রধান নদী: সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, গড়াই।


''প্রশাসন'' ১৭৮২ সালের ৩ জানুয়ারি সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছিল ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ওই বছরেই ১২ সেপ্টেম্বর ভারতে নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের সাথে সিলেটকে সংযুক্ত করা হয়। সিলেট পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৭৮ সালে। ১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত (১৯০৫-১৯১১) পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামেরই অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে সম্পৃক্ত হয়। তখন প্রশাসনিকভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮৩-৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠন এর সময় বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ৪ টি নতুন জেলায় (সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার) বিভক্ত করা হয়। ১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসাবে মর্যাদা পায়। জেলার এগারোটি উপজেলার মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৮৬.১০ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা ফেঞ্চুগঞ্জ (১১৪.৪৮ বর্গ কিমি)।
''প্রশাসন'' ১৭৮২ সালের ৩ জানুয়ারি সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছিল ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ওই বছরেই ১২ সেপ্টেম্বর ভারতে নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের সাথে সিলেটকে সংযুক্ত করা হয়। সিলেট পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৭৮ সালে। ১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত (১৯০৫-১৯১১) পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামেরই অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে সম্পৃক্ত হয়। তখন প্রশাসনিকভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮৩-৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠন এর সময় বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ৪ টি নতুন জেলায় (সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার) বিভক্ত করা হয়। ১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসাবে মর্যাদা পায়। জেলার এগারোটি উপজেলার মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৮১.১২ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা ফেঞ্চুগঞ্জ (১১৪.০৯ বর্গ কিমি)।


{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
১৭ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
| শহর  || গ্রাম  
| শহর  || গ্রাম  
|-
|-
| ৩৪৯০.৪০  || ১২ || ৪  || ৯৮  || ১৬৯৩  || ৩২২৫  || ৪৩৩৫৯৮  || ২১২১৯৬৮  || ৭৩২  || ৪৫.৫৯
| ৩২১৭.২৮ || ১২ || || ৯৪ || ১৪৫০ || ২৯১৫ || ৭৫৩৫৪৯ || ২৪৭৯২৮৫ || ১০০৫ || ৫১.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
|-
| colspan= "10" | সিটি কর্পোরেশন
| colspan= "10" | সিটি কর্পোরেশন (আদমশুমারি ২০০১)
|-
|-
| সিটি কর্পোরেশন  || মেট্রোপলিটন থানা  || ওয়ার্ড  || মহল্লা
| সিটি কর্পোরেশন  || মেট্রোপলিটন থানা  || ওয়ার্ড  || মহল্লা
৫২ নং লাইন: ৫১ নং লাইন:
| উপজেলার নাম  || আয়তন(বর্গ কিমি)  || পৌরসভা  || ইউনিয়ন  || মৌজা  || গ্রাম  || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
| উপজেলার নাম  || আয়তন(বর্গ কিমি)  || পৌরসভা  || ইউনিয়ন  || মৌজা  || গ্রাম  || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
|-
|-
| কানাইঘাট || ৪১২.২৫  || ১ || ৯ || ২৫২  || ২৯২  || ২১৬৪৯৫  || ৫২৫  || ২৯.৬২
| কানাইঘাট || ৩৯১.৭৯ || ১ || ৯ || ২০৩ || ২৬৪ || ২৬৩৯৬৯ || ৬৭৪ || ৪৩.
|-
|-
| কোম্পানীগঞ্জ || ২৭৮.৫৫  || - || ৩  || ৭৪  || ১৩৮ || ১১৩৭৮৪  || ৪০৮  || ২২.৭৫
| কোম্পানীগঞ্জ || ২৯৬.৭৫ || - || || ৭৯ || ১৩৮ || ১৭৪০২৯ || ৫৮৬ || ২৮.
|-
|-
| গোয়াইনঘাট || ৪৮৬.১০  || - || ৮ || ২৬০  || ২৬৭  || ২০৭১৭০  || ৪২৬  || ২২.৮১
| গোয়াইনঘাট || ৪৮১.১২ || - || ৮ || ২৩৯ || ২৬৬ || ২৮৭৫১২ || ৫৯৮ || ৩২.
|-
|-
| গোলাপগঞ্জ || ২৭৮.৩৪  || ১ || ১১ || ১০৮  || ২৫৬  || ২৬৩৯৫৩  || ৯৪৮  || ৪৮.২৪
| গোলাপগঞ্জ || ২৭৮.৩৩ || ১ || ১১ || ৯৮ || ২৪৪ || ৩১৬১৪৯ || ১১৩৬ || ৫৬.
|-
|-
| জকিগঞ্জ || ২৮৭.৩৩  || ১ || ৯ || ১১৯  || ২৭৬  || ১৯৮৩৯৯  || ৬৯০  || ৪৫.২২
| জকিগঞ্জ || ২৬৫.৬৮ || ১ || ৯ || ১১৭ || ২৭৮ || ২৩৭১৩৭ || ৮৯৩ || ৪৯.
|-
|-
| জৈন্তাপুর || ২৫৮.৬৯  || - || ৫  || ১৬০  || ১৭৭  || ১২১৪৫৮  || ৪৭০  || ৩৫.১১
| জৈন্তাপুর || ২৬৬.১১ || - || || ১৪২ || ১৭৪ || ১৬১৭৪৪ || ৬০১ || ৪১.
|-
|-
| দক্ষিণ সুরমা || ১৯৪.২৬  || - || ৯ || ১০২  || ৩২৬  || ১৮৮৬৭৫  || ৯৭১  || ৫৮.৭০
| দক্ষিণ সুরমা || ১৮৭.৬৬ || - || ৯ || ১০৪ || ৩০৯ || ২৫৩৩৮৮ || ১৩৫০ || ৫৬.
|-
|-
| ফেঞ্চুগঞ্জ || ১১৪.৪৮  || - || ৩ || ৩০  || ৮৫  || ৯৫১৬১  || ৮৩১  || ৪৬.২৯
| ফেঞ্চুগঞ্জ || ১১৪.০৯ || - || ৩ || ২৯ || ৮৯ || ১০৪৭৪১ || ৯১৮ || ৫০.
|-
|-
| বালাগঞ্জ || ৩৮৯.৫১  || - || ১৪  || ২৪১  || ৪৭১  || ২৫৬২৩৯  || ৩৫৮  || ৪৭.৮৫
| বালাগঞ্জ || ১৬৭.৫৫ || - || || ৯৪ || ১৮২ || ১১৮৮৭৩ || ৭০৯ || ৫০.
|-
|-
| বিয়ানীবাজার || ২৫৩.২২  || ১ || ১১  || ১৪৫  || ১৮৩  || ২১০৬৭৩  || ৮৩২  || ৫২.৫২
| বিয়ানীবাজার || ২৫৩.২৪ || ১ || ১০ || ১৩৪ || ১৭৪ || ২৫৩৬১৬ || ১০০১ || ৫৯.
|-
|-
| বিশ্বনাথ || ২১৪.৫০  || - || ৮ || ১১৮  || ৪৪৬  || ১৮৯৭৭৫  || ৮৮৫  || ৩৯.৯৪
| বিশ্বনাথ || ২১৩.১৬ || - || ৮ || ১২৩ || ৪৪৪ || ২৩২৫৭৩ || ১০৯১ || ৪৬.
|-
|-
| সিলেট সদর || ৩২৩.১৭  || || ৮  || ৮৪  || ৩৭২  || ৪৯৩৭৮৪  || ১৫২৮  || ৫৯.১৪
| সিলেট সদর || ৩০১.৮০ || || || ৮৮ || ৩৫৩ || ৮২৯১০৩ || ২৭৪৭ || ৪১.
|}
|}
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


[[Image:SylhetDistrict.jpg|thumb|right|400px]]
[[Image:SylhetDistrict.jpg|thumb|right|400px]]
''মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি'' ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সিলেট সদরের সিটি হাসপাতাল এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে বেশসংখ্যক পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। ৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট বিমানবন্দরে বোমা হামলা চালায়। এতে বিমানবন্দরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় সকল পাকসেনা বিমানবন্দর এলাকায় চলে যায়। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট কারাগার থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষসহ প্রায় ২৫০০ জনকে মুক্ত করে আনেন। ১৭ এপ্রিল জৈন্তাপুরের হেমো গ্রামে পাকবাহিনী জঙ্গিবিমান হামলা চালিয়ে অনেক নিরীহ লোককে হত্যা করে। এছাড়া পাকবাহিনী খান চা বাগানে শ্রমিকসহ প্রায় ৩০ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় বিমানবন্দর আক্রমণ করেন। লালটিলা, উরিয়াটিলা, মালনীছড়া চা বাগান, টুলটিকর, জিন্দাবাজার পুলিশ লাইন, জালালাবাদ প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ হতাহত হয়। ৬ মে পাকবাহিনী বালাগঞ্জের ইলাশপুরে গণহত্যা চালায় এবং আদিত্যপুরে ৩৬ জনকে হত্যা করে। শেরপুর ও সাদীপুরে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর বড় ধরনের দুটি খন্ডলড়াই হয়। দুটি লড়াইতেই পাকবাহিনী পরাজিত হয়। মে মাসে সিলেট থেকে পাকবাহিনী  প্রথমে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সার কারখানা চত্বরে ঢুকে কারখানার প্রথম ফটকে ২ জন মালিকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর পাকবাহিনী মনিপুর চা কারখানায় ঢুকে ২ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে। ২৮ নভেম্বর গভীর রাতে পাকবাহিনী গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের উজুহাত গ্রামে অতর্কিত হামলা করলে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কানাইঘাটে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও রাজাকারেরা উপজেলার মালিগ্রাম, গৌরিপুর সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, নির্যাতন ও নিরীহ লোকদের হত্যা করে। বিশ্বনাথ উপজেলায় পাকবাহিনী নারায়ন সেন, জিতেন্দ্র দাশ, ব্যোমকেশ চৌধুরী, বসন্ত কুমার দাশ ও ধীরেন্দ্র কুমার দাশসহ অনেক নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিয়ানীবাজার সদরের ডাকবাংলোর পিছনে, থানা চত্বরে এবং বর্তমান শহীদ টিলায় বহুলোককে হত্যা করে। কোম্পানীগঞ্জে পাকবাহিনীর সাথে বিভিন্ন লড়াইয়ে প্রায় ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।


''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' বধ্যভূমি ৯, গণকবর ১৩, স্মৃতিস্তম্ভ ১৪, ভাস্কর্য ১।
''মুক্তিযুদ্ধ'' ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সিলেট সদরের সিটি হাসপাতাল এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে বেশসংখ্যক পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। ৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট বিমানবন্দরে বোমা হামলা চালায়। এতে বিমানবন্দরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় সকল পাকসেনা বিমানবন্দর এলাকায় চলে যায়। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট কারাগার থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষসহ প্রায় ২৫০০ জনকে মুক্ত করে আনেন। ১৭ এপ্রিল জৈন্তাপুরের হেমো গ্রামে পাকবাহিনী জঙ্গিবিমান হামলা চালিয়ে অনেক নিরীহ লোককে হত্যা করে। এছাড়া পাকবাহিনী খান চা বাগানে শ্রমিকসহ প্রায় ৩০ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় বিমানবন্দর আক্রমণ করেন। লালটিলা, উরিয়াটিলা, মালনীছড়া চা বাগান, টুলটিকর, জিন্দাবাজার পুলিশ লাইন, জালালাবাদ প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ হতাহত হয়। ৬ মে পাকবাহিনী বালাগঞ্জের ইলাশপুরে গণহত্যা চালায় এবং আদিত্যপুরে ৩৬ জনকে হত্যা করে। শেরপুর ও সাদীপুরে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর বড় ধরনের দুটি খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। দুটি লড়াইতেই পাকবাহিনী পরাজিত হয়। মে মাসে সিলেট থেকে পাকবাহিনী  প্রথমে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সার কারখানা চত্বরে ঢুকে কারখানার প্রথম ফটকে ২ জন মালিকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর পাকবাহিনী মনিপুর চা কারখানায় ঢুকে ২ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে। ২৮ নভেম্বর গভীর রাতে পাকবাহিনী গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের উজুহাত গ্রামে অতর্কিত হামলা করলে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কানাইঘাটে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও রাজাকারেরা উপজেলার মালিগ্রাম, গৌরিপুর সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, নির্যাতন ও নিরীহ লোকদের হত্যা করে। বিয়ানীবাজার সদরের ডাকবাংলোর পিছনে, থানা চত্বরে এবং বর্তমান শহীদ টিলায় বহুলোককে হত্যা করে। কোম্পানীগঞ্জে পাকবাহিনীর সাথে বিভিন্ন লড়াইয়ে প্রায় ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। সিলেট জেলার ৯টি স্থানে বধ্যভূমি এবং ১৩টি স্থানে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে; বিভিন্ন স্থানে ১৪টি স্মৃতিস্তম্ভ এবং ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।


''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৪৫.৫৯%; পুরুষ ৪৯.৪৩%, মহিলা ৪১.৫৫। বিশ্ববিদ্যালয় ৫, মেডিকেল কলেজ ৪, কারিগরি কলেজ ৩, কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, কিন্ডার গার্টেন ৮০, মাদ্রাসা ৩০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮৭), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, দারুল আহসান বিশ্ববিদ্যালয়, এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ (১৯৭৫), সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জালালাবাদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, এম সি কলেজ (১৮৮৯), সিলেট সংস্কৃত কলেজ (১৯০২), সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৩৬), রাজা জিমি হাইস্কুল (১৮৮৬), অগ্রগামী সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯০৩), মডেল হাইস্কুল (১৯৩২), সরকারি মদন মোহন কলেজ (১৯৪০), দি এইডেড হাইস্কুল (১৯৪২), কিশোরী মোহন বালিকা বিদ্যালয় (১৯৪৪), হযরত শাহজালাল  উচ্চ বিদ্যালয়, হযরত শাহ পরান (রহ) উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা (১৯৪৮)।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৫১.%; পুরুষ ৫৩.%, মহিলা ৪৮.৯%। বিশ্ববিদ্যালয় ৫, মেডিকেল কলেজ ৪, কারিগরি কলেজ ৩, কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, কিন্ডার গার্টেন ৮০, মাদ্রাসা ৩০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮৭), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, দারুল আহসান বিশ্ববিদ্যালয়, এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ (১৯৭৫), সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জালালাবাদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, এম সি কলেজ (১৮৮৯), সিলেট সংস্কৃত কলেজ (১৯০২), সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৩৬), রাজা জিমি হাইস্কুল (১৮৮৬), অগ্রগামী সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯০৩), মডেল হাইস্কুল (১৯৩২), সরকারি মদন মোহন কলেজ (১৯৪০), দি এইডেড হাইস্কুল (১৯৪২), কিশোরী মোহন বালিকা বিদ্যালয় (১৯৪৪), হযরত শাহজালাল  উচ্চ বিদ্যালয়, হযরত শাহ পরান (রহ) উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা (১৯৪৮)।


''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৩৮.৫৮%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৭৩%, শিল্প ০.৮৯%, ব্যবসা ১৪.৮৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০১%, নির্মাণ ২.২২%, ধর্মীয় সেবা ০.৫৬%, চাকরি ৭.৩৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১০.৫০% এবং অন্যান্য ১৪.২৯%।
''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৩৮.৫৮%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৭৩%, শিল্প ০.৮৯%, ব্যবসা ১৪.৮৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০১%, নির্মাণ ২.২২%, ধর্মীয় সেবা ০.৫৬%, চাকরি ৭.৩৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১০.৫০% এবং অন্যান্য ১৪.২৯%।
৯৫ নং লাইন: ৯৩ নং লাইন:
''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।


'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সিলেট জেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০; সিলেট জেলার উপজেলাসমূহের মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।
'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সিলেট জেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০; সিলেট জেলার উপজেলাসমূহের মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।


[[en:Sylhet District]]
[[en:Sylhet District]]

১৮:১৮, ৩০ মে ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সিলেট জেলা (সিলেট বিভাগ)  আয়তন: ৩২১৭.২৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৬´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৮´ থেকে ৯২°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা।

জনসংখ্যা ৩২৩২৮৩৪; পুরুষ ১৬২৬৯৪৭, মহিলা ১৬০৫৮৮৭। মুসলিম ২৯৯৫৫২৯, হিন্দু ২৩২১৫৮, বৌদ্ধ ৬৪৩, খ্রিস্টান ২৪৪২ এবং অন্যান্য ২০৬২। এ উপজেলায় খাসিয়া, মণিপুরী, পাত্র (পাথর) প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, গড়াই।

প্রশাসন ১৭৮২ সালের ৩ জানুয়ারি সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছিল ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ওই বছরেই ১২ সেপ্টেম্বর ভারতে নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের সাথে সিলেটকে সংযুক্ত করা হয়। সিলেট পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৭৮ সালে। ১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত (১৯০৫-১৯১১) পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামেরই অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে সম্পৃক্ত হয়। তখন প্রশাসনিকভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮৩-৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠন এর সময় বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ৪ টি নতুন জেলায় (সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার) বিভক্ত করা হয়। ১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসাবে মর্যাদা পায়। জেলার এগারোটি উপজেলার মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৮১.১২ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা ফেঞ্চুগঞ্জ (১১৪.০৯ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
৩২১৭.২৮ ১২ ৯৪ ১৪৫০ ২৯১৫ ৭৫৩৫৪৯ ২৪৭৯২৮৫ ১০০৫ ৫১.২
সিটি কর্পোরেশন (আদমশুমারি ২০০১)
সিটি কর্পোরেশন মেট্রোপলিটন থানা ওয়ার্ড মহল্লা
২৭ ২২৪
অন্যান্য তথ্য
মেট্রোপলিটন থানার নাম আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন মহল্লা ও মৌজা জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
বিমানবন্দর (আংশিক) ১১০.৫৯ ২+২ (আংশিক) ৩৯ ৯৭৫২৪ ৮৮২ ৫৮.০৭
কোতোয়ালী ১৭.২২ ১৮ ১৪৪ ১৬৮২৭১ ৯৭৭২ ৭১.৭৫
জালালাবাদ ১৩৩.৩৬ ৪২ ৯১৮২২ ৬৮৯ ৩৭.৭১
দক্ষিণ সুরমা (আংশিক) ৭৮.৮২ ৫৪ ১১৪৩৭০ ১৪৫১ ৬২.১৬
মোগলাবাজার ১১৫.৮৩ ৫৭ ৯৪২১৫ ৮১৩ ৫৫.৩৬
শাহপরান (আংশিক) ৬৩.৫৬ ৪৮ ৯৯২২৪ ১৫৬১ ৬৩.৩৮
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলার নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
কানাইঘাট ৩৯১.৭৯ ২০৩ ২৬৪ ২৬৩৯৬৯ ৬৭৪ ৪৩.৫
কোম্পানীগঞ্জ ২৯৬.৭৫ - ৭৯ ১৩৮ ১৭৪০২৯ ৫৮৬ ২৮.৮
গোয়াইনঘাট ৪৮১.১২ - ২৩৯ ২৬৬ ২৮৭৫১২ ৫৯৮ ৩২.৭
গোলাপগঞ্জ ২৭৮.৩৩ ১১ ৯৮ ২৪৪ ৩১৬১৪৯ ১১৩৬ ৫৬.০
জকিগঞ্জ ২৬৫.৬৮ ১১৭ ২৭৮ ২৩৭১৩৭ ৮৯৩ ৪৯.৪
জৈন্তাপুর ২৬৬.১১ - ১৪২ ১৭৪ ১৬১৭৪৪ ৬০১ ৪১.২
দক্ষিণ সুরমা ১৮৭.৬৬ - ১০৪ ৩০৯ ২৫৩৩৮৮ ১৩৫০ ৫৬.০
ফেঞ্চুগঞ্জ ১১৪.০৯ - ২৯ ৮৯ ১০৪৭৪১ ৯১৮ ৫০.৫
বালাগঞ্জ ১৬৭.৫৫ - ৯৪ ১৮২ ১১৮৮৭৩ ৭০৯ ৫০.২
বিয়ানীবাজার ২৫৩.২৪ ১০ ১৩৪ ১৭৪ ২৫৩৬১৬ ১০০১ ৫৯.৭
বিশ্বনাথ ২১৩.১৬ - ১২৩ ৪৪৪ ২৩২৫৭৩ ১০৯১ ৪৬.৯
সিলেট সদর ৩০১.৮০ ৮৮ ৩৫৩ ৮২৯১০৩ ২৭৪৭ ৪১.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সিলেট সদরের সিটি হাসপাতাল এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে বেশসংখ্যক পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। ৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট বিমানবন্দরে বোমা হামলা চালায়। এতে বিমানবন্দরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় সকল পাকসেনা বিমানবন্দর এলাকায় চলে যায়। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট কারাগার থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষসহ প্রায় ২৫০০ জনকে মুক্ত করে আনেন। ১৭ এপ্রিল জৈন্তাপুরের হেমো গ্রামে পাকবাহিনী জঙ্গিবিমান হামলা চালিয়ে অনেক নিরীহ লোককে হত্যা করে। এছাড়া পাকবাহিনী খান চা বাগানে শ্রমিকসহ প্রায় ৩০ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় বিমানবন্দর আক্রমণ করেন। লালটিলা, উরিয়াটিলা, মালনীছড়া চা বাগান, টুলটিকর, জিন্দাবাজার পুলিশ লাইন, জালালাবাদ প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ হতাহত হয়। ৬ মে পাকবাহিনী বালাগঞ্জের ইলাশপুরে গণহত্যা চালায় এবং আদিত্যপুরে ৩৬ জনকে হত্যা করে। শেরপুর ও সাদীপুরে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর বড় ধরনের দুটি খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। দুটি লড়াইতেই পাকবাহিনী পরাজিত হয়। মে মাসে সিলেট থেকে পাকবাহিনী প্রথমে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সার কারখানা চত্বরে ঢুকে কারখানার প্রথম ফটকে ২ জন মালিকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর পাকবাহিনী মনিপুর চা কারখানায় ঢুকে ২ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে। ২৮ নভেম্বর গভীর রাতে পাকবাহিনী গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের উজুহাত গ্রামে অতর্কিত হামলা করলে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কানাইঘাটে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও রাজাকারেরা উপজেলার মালিগ্রাম, গৌরিপুর সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, নির্যাতন ও নিরীহ লোকদের হত্যা করে। বিয়ানীবাজার সদরের ডাকবাংলোর পিছনে, থানা চত্বরে এবং বর্তমান শহীদ টিলায় বহুলোককে হত্যা করে। কোম্পানীগঞ্জে পাকবাহিনীর সাথে বিভিন্ন লড়াইয়ে প্রায় ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। সিলেট জেলার ৯টি স্থানে বধ্যভূমি এবং ১৩টি স্থানে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে; বিভিন্ন স্থানে ১৪টি স্মৃতিস্তম্ভ এবং ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.২%; পুরুষ ৫৩.৫%, মহিলা ৪৮.৯%। বিশ্ববিদ্যালয় ৫, মেডিকেল কলেজ ৪, কারিগরি কলেজ ৩, কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, কিন্ডার গার্টেন ৮০, মাদ্রাসা ৩০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮৭), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, দারুল আহসান বিশ্ববিদ্যালয়, এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ (১৯৭৫), সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জালালাবাদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, এম সি কলেজ (১৮৮৯), সিলেট সংস্কৃত কলেজ (১৯০২), সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৩৬), রাজা জিমি হাইস্কুল (১৮৮৬), অগ্রগামী সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯০৩), মডেল হাইস্কুল (১৯৩২), সরকারি মদন মোহন কলেজ (১৯৪০), দি এইডেড হাইস্কুল (১৯৪২), কিশোরী মোহন বালিকা বিদ্যালয় (১৯৪৪), হযরত শাহজালাল  উচ্চ বিদ্যালয়, হযরত শাহ পরান (রহ) উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা (১৯৪৮)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৮.৫৮%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৭৩%, শিল্প ০.৮৯%, ব্যবসা ১৪.৮৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০১%, নির্মাণ ২.২২%, ধর্মীয় সেবা ০.৫৬%, চাকরি ৭.৩৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১০.৫০% এবং অন্যান্য ১৪.২৯%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: সিলেটের ডাক, আজকের সিলেট, সুদিন, জাগরণ, সবুজ সিলেট, সিলেট সংলাপ, মানচিত্র, যুগভেরী, সিলেট বাণী, আলোকিত সিলেট, জালালাবাদ; অবলুপ্ত: শ্রীহট্ট প্রকাশ (১৮৭৫), পরিদর্শক (১৮৭৫-৮০), শ্রীহট্টমিহির (১৮৮৯), শ্রীহট্টবাসী (১৮৯৫), জনশক্তি (১৯২০), যুগবাণী (১৯২৫), আল ইসলাহ্ (১৯৩১), জ্ঞানান্বেষন (১৯৩১), জাগরণ (১৯৩৮), আল জালাল (১৯৪১), সিলেট সমাচার (১৯৭৭), সিলেট কণ্ঠ (১৯৮১), সাপ্তাহিক জালালাবাদ (১৯৮২), দৈনিক জালালাবাদী (১৯৮৪), আজকের বিশ্ব সংবাদ (১৯৯২), পরিদর্শক (উনিশ শতক)।

লোকসংস্কৃতি ধর্মীয় চেতনা সমৃদ্ধ মুর্শিদি ও মারফতি গান, লাই হারাওবা নৃত্য, মণিপুরী নৃত্য, কুমারি নৃত্য, জুম নৃত্য উল্লেখযোগ্য।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হযরত শাহজালালের (রহ) মাযার, হযরত শাহ পরানের (রহ) মাযার, গৌর গোবিন্দের টিলা, মালনী ছড়া চা বাগান, এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওসমানী যাদুঘর, মিউজিয়াম অব রজার্স, পর্যটন মোটেল, ক্রীন ব্রিজ, শাহী ঈদগাহ এবং লালখাল (সিলেট সদর); হাকালকি হাওড় (ফেঞ্চুগজ্ঞ), ড্রিমল্যান্ড পার্ক (গোলাপগজ্ঞ)।  [আশফাক হোসেন]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সিলেট জেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০; সিলেট জেলার উপজেলাসমূহের মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।